হুগলি জেলায় ঘোষাল বাড়ির অতি প্রাচীন দুর্গোৎসব।

in hive-129948 •  7 days ago 

হুগলি জেলায় ঘোষালবাড়ির দুর্গোৎসব

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


IMG_20241212_182020_528.jpg

🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏

হুগলী জেলার প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু গ্রাম কোন্নগর। যদিও আজ তা জনবহুল শহরতলীর রূপ নিয়েছে৷ সেই কোন্নগরেই রাজরাজেশ্বরী মন্দিরের পাশে ঘোষাল বাড়ি। পৌঁছে গেলাম প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছরের দূর্গাপুজোর টানে। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বাংলার ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। তাঁর ভূমিরাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল বাদশার আদেশেই বাংলায় এসে লেগে পড়েন ভূমিবন্টন ও রাজস্ব আদায়ের কাজে। সাহায্য নেন স্থানীয় জমিদারদের। তখনই প্রচলিত হয় তায়দাদ জমিদারী প্রথা। কোন্নগরের ঘোষাল বংশীয়রাও আকবরের তায়দাদ জমিদারী প্রথার অন্তর্ভুক্ত জমিদার।

অধুনা বাংলাদেশের বাখরগঞ্জ থেকে আগত এই বংশের আদি জমিদারী ছিল দক্ষিণে কাকদ্বীপে। পরে সম্রাটের তায়দাদ বা সনদ নিয়ে কোন্নগরে আগমন। ঘোষালরাই গঙ্গার তীরে এই অঞ্চলে আসা প্রথম ব্রাহ্মণ পরিবার। কোন্নগরের সেই প্রাচীন ভদ্রাসনে আজও বংশের সুসন্তানরা ভক্তিভরে করে চলেছেন মাতৃ আরাধনা। শোনা যায় এই বাড়ির মূখ্যদরজার সামনে আগে রাখা থাকতো দুটি কামান, যা স্বয়ং আকবর বাদশার দেওয়া। সেই যুগে গঙ্গাতীরবর্তী অঞ্চলগুলোয় পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণকালে মাঝেমাঝে গর্জে উঠতো এই কামান। কিন্তু পরে ইংরেজ শাসনামলে Arms Act পাশ হবার পরে এই কামানগুলো সরকারের হাতে প্রত্যার্পণ করা হয়। আজ আর নেই জমিদারীর দিনগুলো। কিন্তু ঘোষালবাড়ির পুজো আজও সাক্ষী দেয় সেই উজ্জ্বল অতীতের। দূর্গাপুজো উপলক্ষ্যে ঘোষালবাড়িতেই মেতে উঠতো সমস্ত কোন্নগর গ্রাম।

IMG_20241011_132834_944.jpg

এই বংশের বর্তমান পুরুষ এবং উত্তরপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক ও প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রী প্রবীর ঘোষালের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, একসময়ের জঙ্গলাকীর্ণ কোন্নগরে রাতে হিংস্র জানোয়ার ও দস্যু-ডাকাতের উপদ্রবের ভয়ে শুরু হয় দিনের আলোয় প্রতিমা বিসর্জনের রীতি। বিসর্জনের সময় পরিবারের সদস্যকে একসময় বাঘে নিয়ে যাওয়ার গা ছমছমে গল্পও যেন এক লহমায় পৌঁছে দেয় সেই যুগের প্রেক্ষাপটে। আজও তাই বাড়ির প্রথা মেনে দিনের আলোয় হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। ঘোষালবাড়ির আনাচেকানাচে আজও পুরনো গন্ধ। বাড়ির দূর্গামণ্ডপ ও কড়িবর্গাগুলোয় যেন মিশে রয়েছে ষোড়শ শতাব্দীর নবাবী কোন্নগর। মায়ের আরাধনাতেও চিরাচরিত পুরাতনী রীতি। বাড়ির আর এক সদস্য শ্রী অচিন্ত্য ঘোষাল জানালেন, একেবারে আলাদা রীতিতে সন্ধিপুজো অনুষ্ঠিত হয় এই বাড়িতে। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে মায়ের বেদী সেজে ওঠে ঝলমলে সাজে। তিনি জানালেন পুজোর দিনগুলোয় স্থানীয় হরিসভার রাধাগোবিন্দ মূর্তি ষষ্ঠীর দিন সাড়ম্বরে এই বাড়িতে আসেন। আবার পুজোর পরে ফিরে আসেন হরিসভায়। এইসকল পুরনো প্রথা নিয়ে এই বাড়ির দুর্গোৎসব আজও স্বমহিমায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হুগলীর কোন্নগর আজ হাওড়া রেল ডিভিশনের এক ব্যস্ততম শহর। প্রতিদিন হাজার হাজার নিত্যযাত্রী ছুটে চলেছেন কলকাতায় গন্তব্যের দিকে। কিন্তু তার মধ্যেও রাজরাজেশ্বরীতলার ঘোষালবাড়ি যেন একখণ্ড পুরনো সুবে বাংলার একছত্র অস্তিত্ব। ঠাকুরদালানের চাঁদোয়ার নীচে এক মুহূর্ত দাঁড়ালেই আজও যেন জানান দেয় ঘোষালদের তায়দাদি জমিদারীর ঝলমলে দিনগুলো।

IMG_20241212_182020_528.jpg


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

পুশ প্রোমোশনাল টাস্ক-

Screenshot_20241215-043846.jpgScreenshot_20241215-043825.jpgScreenshot_20241215-043731.jpgScreenshot_20241215-043646.jpg