প্রকাশ হল আমার ঐতিহাসিক প্রবন্ধের বই 'কেল্লা নিজামতের পথে'। কিছু অনুভূতি।

in hive-129948 •  12 days ago 

প্রকাশ হল ঐতিহাসিক প্রবন্ধের বই 'কেল্লা নিজামতের পথে'

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


IMG_20250207_183521_909.jpg

এই বছর বইমেলায় আমার যে বইটি প্রকাশিত হল সেটি একটি আঞ্চলিক ইতিহাসের বই। ইতিহাসকে শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক ভাবে পরিবেশন করতে আমি পছন্দ করি না। প্রবন্ধ লেখা আসলে একটি শিল্প। আর প্রবন্ধের মাধ্যমে যদি মানুষকে টেনে না রাখা যায় তবে সেই প্রবন্ধ খুব একটা চিত্তাকর্ষক হয় না। তাই প্রবন্ধকে গল্পের আকারে পরিবেশন করলে সেটি পাঠকের কাছে অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। তাই আমি আঞ্চলিক ইতিহাসগুলিকে গল্পের আকারে পরিবেশন করতে ভালোবাসি। এই বছর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশিত হল হারিয়ে যাওয়া শহর মুর্শিদাবাদ এবং নবাবদের নিয়ে একটি গ্রন্থ। সেই গ্রন্থে মূলত নবাব মুর্শিদকুলি খাঁয়ের মুর্শিদাবাদে আগমন থেকে শুরু করে সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু পর্যন্ত পরপর ঘটনাক্রমকে গল্পের আকারে পরিবেশন করবার চেষ্টা করেছি। ইতিহাসের গল্প যদি ঝরঝরে ভাবে বলা যায়, তবে তা মানুষ পড়তে ভালোবাসে। আর শুধু তথ্যভিত্তিক পরিবেশনা হয়ে গেলে তা কখনোই মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে না।

FB_IMG_1738584692085.jpg

এই বছর যে বইটি প্রকাশিত হল তার নাম 'কেল্লা নিজামতের পথে'। এই বইতে আমি সম্পূর্ণ মুর্শিদাবাদের ঘটনাক্রমকে লিপিবদ্ধ করেছি। আজকের মুর্শিদাবাদকে দেখলে কখনোই সেই প্রাচীন মুর্শিদাবাদ নগরীকে কল্পনা করা সম্ভব নয়। প্রাচীন মুর্শিদাবাদ নগরী ছিল ঝলমলে। আলোকোজ্জ্বল সেই নগরীতে তখন নবাবদের প্রতিপত্তি। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পর নগরের সম্পূর্ণ আলো নিভে যায় খুব তাড়াতাড়ি। আর সেখান থেকেই জন্ম হয় কলকাতা মহানগরীর। ইংরেজরা যেহেতু কলকাতা শহরে প্রথম পা দিয়েছিল, এবং জায়গাটা তাদের কাছে পছন্দ হয়েছিল, তাই তারা সম্পূর্ণ রাজধানীকে মুর্শিদাবাদ থেকে স্থানান্তর করে কলকাতায় নিয়ে চলে আসে। এমনকি মুর্শিদাবাদের সমস্ত ধন-সম্পদ এবং সরকারি জিনিসপত্র নৌকায় চাপিয়ে ভাগীরথী পথে তারা নিয়ে আসে কলকাতায়৷ সেই থেকেই কলকাতা মহানগরীর গোড়াপত্তন। এ এক অদ্ভুত ইতিহাস। এক নগরীর ধীরে ধীরে পতন আর এক নগরীর রাজকীয় উত্থান। সেই মধ্যবর্তী সময়টাতে দাঁড়াতে পারলে অনেক কিছু প্রত্যক্ষ করা যায় চোখের সামনে থেকে। এক শহর ডুবে গেছে অন্ধকার এর মধ্যে, আর এক শহরে ধীরে ধীরে বেড়েছে জৌলুশ। আমি এই বইটিতে চেষ্টা করেছি এই দুটি সময়ের ঠিক মধ্যবর্তী জায়গাটিতে দাঁড়াতে। যেখানে দাঁড়িয়ে খুব সহজেই মুর্শিদাবাদ এবং কলকাতা শহরকে দুই পাশে দেখা যায়। আর দেখা যায় নবাব এবং ইংরেজদের মধ্যে এক তীব্র বিরোধ। এই বিরোধের সূত্রপাত কোথায় তা জানতে চাইলে পড়তেই হবে আমার কেল্লা নিজামতের পথে বইটি।

বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দারুন সুন্দর সাড়া পড়ল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতে। প্রচুর মানুষ স্বেচ্ছায় বইটি হাতে তুলে নিলেন প্রকাশকের স্টল থেকে। আমার টেবিল থেকেও কয়েক কপি বিক্রি হলো সরাসরি। আর পড়ে যে কয়জন পাঠপ্রতিক্রিয়া দিলেন, তাতে বেশ পজেটিভ রেসপন্সই পেলাম। প্রকাশক বইটি বেশ যত্ন নিয়েই করেছেন। প্রায় আড়াইশো পাতার এই বইতে রয়েছে মুর্শিদাবাদ নগরীর বিভিন্ন হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস এবং তার ভগ্নাবশেষের ছবি। আমি চেষ্টা করেছি মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তিক জায়গাগুলিতে যাওয়ার। আর সেখান থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের সাথে সাথে তুলে এনেছি ছবি। চেষ্টা করেছি মানুষের সামনে সঠিক ইতিহাসের ঘটনাক্রমকে তুলে আনতে এবং সঠিক কিছু ছবি পরিবেশন করতে। যদিও ইতিহাসে বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়। তবুও আমি চেষ্টা করেছি সেই সব বিকৃতির বাইরে বেরিয়ে একটি সঠিক ইতিহাসের খোঁজ করা। যে মুর্শিদাবাদ নগরী এখনো কানে কানে ইতিহাসের কথা বলে, সেই নগরীর ভিতগুলো খুঁড়ে দেখলে অবাক হতে হয় আজও।

আপনারা যারা পারবেন, তারা অবশ্যই আমার কেল্লা নিজামতের পথে সংগ্রহ করে পড়বার চেষ্টা করবেন। যদিও বাংলাদেশে বইটি এখনো পাঠানো হয়নি, তবু আশা রাখছি খুব তাড়াতাড়ি বইটি ঢাকা বা বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে পাওয়া যাবে। তখন সকলে এই বইটি সংগ্রহ করে পড়লে মুর্শিদাবাদ নগরী এবং কলকাতার একটি বিশেষ সময়ের বর্ণনা খুব বিশদে পেতে পারবেন।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Daily tasks-

Screenshot_20250211-083624.jpg

Screenshot_20250211-083453.jpg

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

দাদা আপনার প্রকাশিত ঐতিহাসিক প্রবন্ধের বই 'কেল্লা নিজামতের পথে' বইটির জন্য আপনার অনুভূতি গুলো কিন্তু বেশ হৃদয় ছোঁয়া ছিল। বলতে হয় একজন লেখক হিসাবে লেখকের মতই নিজের অনুভূতি তুলে ধরেছেন। আশা করবো এই অনুভূতি গুলো আপনাকে আগামীর পথে টেনে নিবে। শুভ কামনা রইল দাদা।

বইটিকে মনের মত করে সাজাবার চেষ্টা করেছি আপু। বাকিটা পাঠকদের ভালোবাসার উপর নির্ভর করছে। আপনি এত সুন্দর মন্তব্য করলেন বলে খুব ভালো লাগলো।

বাহ,অনেক অভিনন্দন দাদা আপনাকে।আপনার বই প্রকাশিত হয়েছে জেনে ভালো লাগলো।তাছাড়া মুর্শিদাবাদের ঘটনাক্রমকে নিয়ে লেখা বইটি অবশ্যই চেষ্টা করবো পড়ার জন্য।আর বইটির নাম খুবই সুন্দর, ধন্যবাদ আপনাকে।

এই ধরনের কাজগুলো করা আমার নেশা বোন। ভবিষ্যতে আরো কাজ করবার ইচ্ছা আছে। যদি ঈশ্বর আয়ু দেন তবে অনেক কিছু লিখে যাবো হয়তো।।

ঢাকা বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যাবে কবে পাওয়া যাবে অবশ্যই জানাবেন দাদা। আপনার বইয়ের অপেক্ষায় আছি আমি। আপনার থেকে শুনেই আমার বেশ একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে। আর অপেক্ষা করতে পারছি না। জেনে অনেক ভালো লাগল।

বাংলাদেশের বই অ্যাভেলেবেল হলে আমি সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে জানাবো ভাই। বই পাঠানোর চেষ্টা করছি।