মানুষ আজ কেন এত স্বার্থপর? অন্যের প্রয়োজনেও আমরা কেন পাশে দাঁড়াচ্ছি না। একটি বিশ্লেষণ।

in hive-129948 •  12 days ago 

মানুষ আজ কেন এত স্বার্থপর?

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


hands-5655424_1280.png
সোর্স

🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏

একটা জিনিস দিনে দিনে খুব খেয়াল করছি। এটা নিয়েই আজকে আলোচনা করতে চাই। মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে ধৈর্য যেন একদম তলানিতে চলে যাচ্ছে। এই বিষয়টা মনের মধ্যে খুব কষ্ট তৈরি করে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াত নির্ভাবনায়। কারো কোনো প্রয়োজন পড়লে অনায়াসে তার চারপাশে অনেক আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীরা এসে দাঁড়িয়ে যেত। ফলত সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে তার কোন সমস্যাই হতো না। কিন্তু বর্তমানে সময় বদলেছে। বর্তমানে আমরা যেন অনেক রুক্ষ। কখনোই কারো পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর মত সহনশীলতা আমরা ঠিক মতো দেখাতে পারি কি? একটু বিচার-বিবেচনা করলে দেখব যে আমরা আজ কতটা স্বার্থপর। কোন মানুষের প্রয়োজনে আমরা তার থেকে দূরে সরে আসতেই বেশি পছন্দ করি আজকাল। এমনকি রাস্তার পাশে কোন দুঃস্থ মানুষ পড়ে হাঁপালেও, আমরা তার মুখে জল তুলে দেওয়ার আগে দুবার ভাবি।

কেন আজ আমাদের মধ্যে এমন বৈপরীত্য? কিছুদিন আগেও তো এমন ছিল না। তখন মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত সহনশীলতা কাজ করতো। একজন মানুষ আরেকজনের পাশে দাঁড়াতেই বেশি পছন্দ করত। কিন্তু বর্তমানে তা আর নেই। এখন সবকিছুই যেন কত যান্ত্রিক। যাকে আমরা পোশাকি ভাষায় মেকানিক্যাল বলে থাকি। এই মেকানিক্যাল পৃথিবীতে আমরা সবাই যেন ধীরে ধীরে রোবট হয়ে যাচ্ছি। মানুষের মন বলে আর কিছু থাকছে না। আমরা এখন নিজেদের নিয়ে ভাবতেই বেশি পছন্দ করি। সেখানে কার কতটা ক্ষতি হলো, বাঁকে কতটা পিছিয়ে গেল, সেগুলো নিয়ে আমরা ভাবতে আগ্রহী নই। মানুষের মধ্যে এমন পরিবর্তনের জন্য সমাজগত দিক থেকে আমি কয়েকটি কারন তুলে আনতে চাই।

  1. প্রথমতঃ বেশি পরিমাণ যন্ত্রের ব্যবহার আমাদের মনকেও যান্ত্রিক করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে মানবিকতা বোধ আমাদের মধ্যে থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা দিনে দিনে যত যান্ত্রিক হবো, তত মানবিকতা হারিয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতেই। আর এর পিছনে প্রধান একটি কারণ হলো দৈনন্দিন জীবনে যন্ত্রের উপর নির্ভরতা। বিশেষ করে মোবাইল ফোনটি বর্তমানে আমাদের জীবনে প্রধান বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তাই এর বাইরে অন্য কোন কিছু আমাদের মাথায় আর আসছে না। সেখানে অন্যের স্বার্থ খুব তুচ্ছ ভাবে পরিগণিত হচ্ছে। অনেকগুলি বন্ধু বর্তমানে আড্ডা দিতে বসলেও তারা সকলে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকে। সেখানে নিজেদের মধ্যে গল্প করার থেকেও যন্ত্র-নির্ভর জীবন আমাদের পরিচালনা করে বেশি।
  2. দ্বিতীয়তঃ মানুষ বর্তমানে জীবন ধারণ করতেই ব্যস্ত। সে ক্ষেত্রে অর্থের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কোন কিছুর দিকেই নজর দেওয়ার যেন সময় নেই আমাদের। আমরা প্রত্যেকেই এক একজন অর্থ উপায় করার মেশিন হয়ে গেছি। সেখানে মানবিকতা বোধ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। মানুষ কাজ থেকে ফিরে এখন আর দুদন্ড গল্প করতে বসার সময় পাচ্ছে না।
  3. তৃতীয়তঃ মানুষের জীবনে এখন অনেক অসুস্থতা। বিভিন্ন রোগ জ্বালা-যন্ত্রণা নিয়ে মানুষ নিজেরাই এখন আর্থিকভাবে এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। তার সঙ্গে পরিবার-পরিজনের অসুস্থতা এবং সমস্যা তো আছেই। তাই এত সবকিছু সামলে মানুষ আর সচ্ছল থাকতে পারছে না। সেক্ষেত্রে বাইরের মানুষের স্বার্থে তার পাশে দাঁড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না মানসিকভাবে। বর্তমান যুগে নিজেকে নিয়ে ভাবতেই মানুষ বেশি ব্যস্ত। অন্যকে নিয়ে ভাববার অবকাশ কই?
  4. চতুর্থতঃ বর্তমান যুগে সবকিছুর ভেতরেই একটা অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না আমরা। মানুষকে কখন কি বেশ নিয়ে অন্যের পেছনে ছুরি মারে, তা বুঝে উঠবার আগেই যেন ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে চারপাশে। আজকাল খবরের কাগজ খুললে বা টিভি নিউজ চালালে বিভিন্ন খবর মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয় আমাদের। মানুষকে ঠকানো এবং বিভিন্নভাবে চুরি ছিনতাই আজকাল যে পরিমাণে বেড়েছে তাতে সকলেই চিন্তিত থাকে। তাই কেউ কারো উপকার করতে চাইলে প্রথমেই সন্দেহের তীর জাগ্রত হয় তার মধ্যে। এই সন্দেহ নিয়ে অন্য কারোর উপকার করা যায় না। বিশ্বাস ছাড়া কখনো কারো পাশে দাঁড়ানোও যায় না।

উপরিউক্ত কারণগুলির জন্য মানুষ ধীরে ধীরে যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। আর আমরা ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছি কারো পাশে দ্বর্থভাবে দাঁড়াতে। তবে আমরা ভুলে যাই কারো জন্য কিছু করলে তবেই মানুষ আমার জন্যও কিছু করবে। তাই আমার মনে হয় সব সময় একজন মানুষ হিসাবে সকলকে অবিশ্বাস না করে, এবং সারাদিন যন্ত্র নির্ভর না হয়ে অন্যের পাশে দাঁড়ানোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে বিশ্বাস সব থেকে বড় জিনিস। একজন মানুষ যদি আর একজনকে বিশ্বাস না করতে পারে, তবে সামনে পা বাড়ানো মুশকিল হয়ে যায়। জীবনে হয়তো কয়েকবার ঠকতে হয় ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে ভুলে যাব। সমাজ অনেক মানুষ নিয়ে তৈরি হয়। আর মানুষ হল সমাজবদ্ধ জীব। কোন মানুষ কখনো একলা বাঁচতে পারে না। তাই সে দিক থেকে দেখতে হলে আমরা ধীরে ধীরে বড় একা হয়ে যাচ্ছি না কি? আর এই একাকীত্ব আমাদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে এই যন্ত্রণা যে তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ নেবে, তা আমাদের সমাজকে বদলে দেবে। বিবর্তনবাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বার্থপর হয়েই জন্মাবে।

তাই আমাদের অচিরেই উচিত সবকিছু বাদ দিয়ে আবার সমাজকে অন্যভাবে গড়ে তোলা। সহনশীলতার অভাব যেন কখনোই অন্য মানুষের ক্ষতি না করে দেয়। মানুষ হয়ে আরেকজনের পাশে না দাঁড়ালে কিসের মনুষ্যত্বের অহংকার? আমার এই লেখা থেকে আজ এই প্রশ্নটা আপনাদের সামনে রেখে গেলাম। বাকিটুকু আপনারা ভাবুন। আপনাদের মতামত নিশ্চয় মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

$PUSS প্রোমোশন -

Screenshot_20241209-211809.jpgScreenshot_20241209-211752.jpgScreenshot_20241209-211717.jpg

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

দাদা আমরা শুনেছি একটা সময় ছিল মানুষ মানুষের জন্য। কিন্তু এখন এমন একটা পর্যায়ে চলে এসেছে এখন যেন মানুষ শুধু স্বার্থের জন্য। তবুও সমাজে ভালো মানুষ আছে দাদা। ভালো মানুষ আছে বলেই তো সমাজটা টিকে রয়েছে। তবে নিজেদের মধ্যে সেই ভালো চিন্তা ধারা রাখতে হবে এবং অন্যদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। সুন্দর সমাজ গঠন করতে পারি আমরা সচেতন দৃষ্টিতে।

হ্যাঁ সুন্দর সমাজ গঠন করা বড় প্রয়োজন আজ। যেভাবে স্বার্থপরতা ছেয়ে যাচ্ছে, তাতে খুব তাড়াতাড়ি সমাজ ধ্বংস হতে বসেছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা খুব প্রয়োজন।

আপনি খুব সুন্দর একটি টপিকস নিয়ে আলোচনা করলেন দাদা পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। আপনি যে বিষয়টি তুলে ধরলেন আমাদের সাথে সেটি আসলে বাস্তব সম্মত কিছু কথা। কারণ এখন আমরা অন্যের কষ্ট দেখলেই কষ্ট পাই না। বিশেষ করে যখন আমরা চলতি পথে কোন অসুস্থ মানুষ কিংবা আঘাত প্রাপ্ত মানুষকে দেখি আমরা তার সেবা করার জন্য এগিয়ে যাই না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে মানুষ দেখে দেখে এখন মোবাইলে ভিডিও করে নিতে চেষ্টা করেন ভাইরাল হওয়ার জন্য। আপনার লেখাগুলো আমার কাছে পড়ে ভাল লেগেছে। আমাদেরকে এই বেড়িবাঁধ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমরা একটি সুস্থ জাতিতে পরিণত হব। আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্বপুর জাগ্রত হবে।

ঠিক বলেছেন। এখন কোন কিছু হলেই আগে মানুষ ভিডিও করে। এর থেকে অমানবিক ঘটনা আর কিছু নেই। এত সুন্দর করে গুছিয়ে একটি মন্তব্য করলেন বলে অনেক ভালো লাগলো।

বেশ সুন্দর লিখেছেন, আপনার লেখাগুলো এমনিতে পড়তে ভালো লাগে। সত্যি দিন দিন আমরা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি, ভেতরের আত্মাটা কেমন জানি মরে যাচ্ছে। যান্ত্রিকতা এবং অবিশ্বাস নিয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। অনেক ধন্যবাদ।