পয়লা জানুয়ারি বিখ্যাত ব্যান্ডেল গির্জায় কাটানো কিছু মুহূর্ত।

in hive-129948 •  last month 

ব্যান্ডেল গির্জায় কাটানো কিছু মুহূর্ত

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


1735873761334.jpg

🙏 নতুন বছরের শুভেচ্ছা 🙏


হুগলি জেলার ব্যান্ডেলে একটি উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য স্থান হল ব্যান্ডেল গির্জা। এই গির্জার বিশেষত্ব হল এটি পূর্ব ভারতের সব থেকে বড় গির্জা, যাকে পোশাকি ভাষায় ক্যাথলিকরা ব্যাসেলিকা বলে চিনে থাকেন। এই ব্যান্ডেল ব্যাসেলিকা ভারতবর্ষের একটি অন্যতম বড় গির্জা হিসেবে পরিচিত। নতুন বছরে প্রথম দিন আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম সেই ব্যান্ডের গির্জায়। হুগলি জেলার অন্যতম প্রাচীন এই দ্রষ্টব্য স্থানে ২৫শে ডিসেম্বর এবং পয়লা জানুয়ারি প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। যদিও এই দুই দিন গির্জার মূল উপাসনা গৃহ বন্ধ থাকে, তবু গির্জা চত্বরে প্রচুর পরিমাণ মানুষ আসেন শুধুমাত্র ঘুরতে।

IMG_20250101_143616_217.jpg

ব্যান্ডেল চার্চ বা ব্যান্ডের ব্যাসেলিকা বাংলার অন্যতম একটি ঐতিহ্যশালী ঐতিহাসিক জায়গা। কারণ এই চার্চের বয়স অনেক বেশি। হুগলি নদীর পাশে এই গির্জা দেখতে দেখতে প্রায় ৪০০ বছর অতিক্রম করে গেছে। আর তাই বাংলার উপনিবেশিক ইতিহাসে এই চার্চের গুরুত্ব সব থেকে বেশি। পর্তুগিজদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই ব্যান্ডের চার্চ আজও হুগলি নদীর ধারে ইউরোপীয় উপনিবেশের চিহ্ন বহন করে চলেছে। বাংলায় প্রথম পর্তুগিজরা আসে ১৫৭১ সাল নাগাদ। সম্রাট আকবরের থেকে হুগলিতে বাণিজ্য করার পরোয়ানা পেয়ে হুগলি নদীর ধারে তারা দুর্গ এবং শহর নির্মাণ করে। তখনো পর্যন্ত ইংরেজদের আগমন ঘটেনি বাংলায়। তারপর তারা নদীর ধারে তৈরি করে এই ব্যান্ডেল চার্চ। হুগলিরে যখন হাজার পাঁচেক খ্রিস্টান থাকতেন। আজও চার্চের সামনে রাখা আছে একটি জাহাজের মাস্তুল। বিশ্বাস সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া একটি জাহাজকে রক্ষা করেছিলেন মাতা মেরী। আর সেই জাহাজের মাস্তুলটি আজও রাখা আছে ব্যান্ডেল গির্জার সন্মুখে।

IMG_20250101_143833_335.jpg

বর্তমানেও হুগলি জেলার বিভিন্ন দ্রষ্টব্যগুলির মধ্যে ব্যান্ডেল গির্জা হল সব থেকে উল্লেখযোগ্য। প্রচুর পরিমাণ মানুষ সারা বছর এখানে ঘুরতে আসেন পরিবারবর্গ নিয়ে। এই গির্জার ভেতরে প্রবেশের অধিকার সকলের। আর সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যায় একদম উপরে। ফলে মানুষের কাছে এই দ্রষ্টব্য এক নতুন চমক হিসেবে পরিচিত বরাবরই। পর্তুগিজ নাবিকদের ইতিহাস রক্ষাকারী এই গির্জা বাংলার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হলেও বর্তমানে এর স্থাপত্য এক আধুনিকতার বার্তা বহন করে। আসলে ক্যাথলিকদের যত্নের এই গির্জা বহুবার পূননির্মাণ হয়েছে এবং নতুন করে তৈরি হয়েছে বিভিন্নভাবে। ফলে বর্তমানে এটি সুন্দরভাবে সংরক্ষিত বললে অত্যুক্তি করা হবে না। ব্যান্ডেল গির্জার আশপাশের পরিবেশ মানুষজনকে টেনে রাখে সারা বছর। পাশেই হুগলি নদীর শোভা এবং গির্জার ভিতরে বিশাল মাঠ গির্জার চারপাশের পরিবেশকে সুন্দর এবং আকর্ষণীয় রাখতে সাহায্য করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগ বর্তমানে এই চার্চ এবং সন্নিকটের বিভিন্ন কয়েকটি জায়গাকে পশ্চিমবঙ্গের ভ্রমণ মানচিত্রের অন্তর্গত করতে চেষ্টা করছেন। তাই বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ দর্শক এবং ভ্রমনপিপাশু বাঙালির ভিড় লেগেই রয়েছে এই চার্চের অভ্যন্তরে।

IMG_20250101_143203_100.jpg

IMG_20250101_143540_367.jpg

আমি পয়লা জানুয়ারির কিছুটা সময় এই বিখ্যাত গীর্জায় কাটিয়ে গেলাম। মাঝে মাঝে এখানে আসতে খুব ভালো লাগে।। এখানকার সুন্দর মনোরম পরিবেশ যেন মন ভালো করে দেয় কিছুক্ষণের জন্য। চারপাশের মনোরম পরিবেশ টেনে রাখে আগাগোড়া। তাই কিছুক্ষণ সময় খ্রিস্টান ধর্মযাজক যীশুখ্রীষ্টের সঙ্গে কাটাতে বেশ ভালোই লাগে। বিগত বছর ২৫শে ডিসেম্বর দিনটি কাটিয়েছিলাম শ্রীরামপুর গির্জায়। আর বছরের প্রথম দিনটি কাটালাম ব্যান্ডেল গির্জায়। তাই আমার এই গির্জায় ভ্রমণের অধ্যায়গুলি তুলে রাখলাম ব্লগের মাধ্যমে। বিভিন্ন গির্জায় আমি যে শান্তির পরিবেশ পাই তা সব জায়গায় পাওয়া যায় না। তাই খ্রিস্টান গির্জাগুলিতে ঘুরতে বেশ ভালো লাগে। বিশেষ করে শীতের মরশুমে এই ধরনের ভ্রমণ গুলি এক অন্য ভালোলাগার সৃষ্টি করে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
কভার ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1LsUc8S2zjHiaW6UcX2M5SAfbrPcxiCjQzCc6aZJSjUDgt85bSStrwGCUjZMWCDKxNata4NQ2cZTKGxsY.png

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3JpjTyYCF9oFoYfs1EV4VTnFw6faxzt5X7uHiwMAHmLS3ef2Jb2JcxHBkpRBd2y...Qa3Q3c7Biv4c8mKsr8DHNVYqqpVomFSv1wmkMCbhs7oCjb14sjkA3vxAfSRk8QPzNZ5UirrZUzvHCXygHCV49RVVZBeTFCeo47WcQXnjLYGy2RNdJQycJW4cN.jpeg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Daily tasks-

Screenshot_20250103-084536.jpgScreenshot_20250103-084445.jpgScreenshot_20250102-223629.jpg

২৫শে ডিসেম্বর আর পহেলা জানুয়ারিতে গির্জা চত্বরে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। আসলে দাদা আমাদের এখানে গির্জা নেই তো যার জন্য উৎসব সম্পর্কেও ধারণা কম রয়েছে আমার। তবে আপনার এই পোষ্টের মধ্য দিয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো জানতে পারলাম। এই দুইটা দিন মানুষের উপস্থিতি মানেই সুন্দরভাবে দিনগুলো উদযাপন করার প্রচেষ্টা। হয়তো মানুষে মানুষে মুখরিত হয়ে ওঠে স্থানটা।

২৫শে ডিসেম্বর আর পহেলা জানুয়ারি চার্চে যেতে সত্যিই খুব ভালো লাগে। আর সেই সময় চার্চগুলি এত সুন্দর করে সাজায় যে বলবার নয়। এত সুন্দর একটি মন্তব্য করে আমাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।।