চলে গেলেন প্রিয় দাদার শ্রদ্ধেয় পিতৃদেব। আমার তরফ থেকে একটি শ্রদ্ধার্ঘ্য।

in hive-129948 •  5 months ago 

।।প্রিয়জনের মৃত্যু ও শ্রদ্ধার্ঘ্য।।


🙏🙏


1720282215293.jpg

সোর্স


🙏আমার আজকের পোস্টটি সদ্য আমাদের মধ্যে থেকে চলে যাওয়া আমাদের প্রিয় দাদার স্বর্গীয় পিতার পূণ্য আত্মার প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য 🙏


🙏প্রণাম হে মহাজীবন🙏

সব মৃত্যুর ঠিকানা হয় না। প্রতিটি দিন চলার পথে আমরাও হেঁটে যাই সেই অমোঘ ঠিকানাহীন পরিসরে। মৃত্যু এক সত্যের সন্ধান। আমরা প্রতিনিয়ত শুধুমাত্র সেই সত্যটির সন্ধান করতে করতে এগিয়ে যাই আলোর পথে। আলোর পথযাত্রী কারা? কারা নির্ভরতার কাছে রেখে যায় অব্যক্ত ঠিকানা। মৃত্যু আসলেই এক পরিণতি। জন্মের থাকে সৃষ্টির তাগিদ আর মৃত্যু এক বৃহৎ পরিসরে মানুষকে প্রদান করে আশ্রয়। কে বলে এই আশ্রয় ভিত্তিহীন? আসলে আমরা মৃত্যুর কথা শুনলে আঁতকে উঠি। নিজেদের যাপনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন মশগুল হয়ে যাই এই সংক্ষিপ্ত বাসর ঘরে। কিন্তু ঘরের বাইরে বেরোলে হালকা হয়ে আসে বুক। মৃত্যুর কথা ভাবলে চোখে নেমে আসে আতঙ্কের অশ্রু। আসলেই কি মৃত্যু যাতনাময়? যন্ত্রণার শেষ বিন্দুতে পৌঁছে মানুষ কি চায়? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছিলেন মৃত্যু জামা কাপড় বদলের মত একটি বিষয়। অর্থাৎ আমরা যেমন প্রতিদিন পরিহিত জামাকাপড় বদল করে নতুন জামা কাপড় ধারণ করি, ঠিক তেমনভাবেই আমরা মৃত্যুর পর পুরনো দেহ বদল করে নতুন দেহে প্রবেশ করি। মৃত্যুর ক্ষেত্রে জন্মান্তরবাদ তর্ক সাপেক্ষ। যদিও শ্রীকৃষ্ণের মতে, জন্মান্তরবাদ সত্য এবং তা প্রমাণিত। কিন্তু আজও বিজ্ঞানের সাথে জন্মান্তরবাদের বহু বিবাদ। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন স্থানে জাতিস্মর তত্ত্বের সপক্ষে বিভিন্ন ঘটনা উদাহরণস্বরূপ পাওয়া যায়। আসলে মৃত্যুকে নিয়ে আমাদের বিস্তর গবেষণা। এই সুন্দর জীবন এবং জন্মের পরে যে আবশ্যক সত্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে তা একমাত্র মৃত্যু। তাই মানব জীবনে সব থেকে বেশি চর্চিত যদি কোন বিষয় নিয়ে থেকে থাকে তা কেবল মৃত্যু। এই কৌতূহলের নিষ্পত্তি আজও হয়নি। প্রতিটি মানুষ ভাবে এই যে সুন্দর জীবন, আনন্দের জীবন, হাসিময় জীবন, তার সর্বশেষ বিন্দু অর্থাৎ মৃত্যুর ঠিক পরে আসলে কি অপেক্ষা করে আছে? এ বিষয়ে বিভিন্ন গবেষকদের বিভিন্ন মতামত। আত্মা নিয়ে বহু কাজ সারা পৃথিবীর বুকে হয়ে গেছে। এই বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ লিখেছেন এক আকর গ্রন্থ। যার নাম 'মরণের পারে'। তিনিও বলেছেন মৃত্যুই মানুষের সবশেষের ইঙ্গিত নয়। মৃত্যু আসলে এক নতুন শুরু। এই বিষয়ের কাজ সময় সাপেক্ষ এবং গবেষণাধর্মী। বিজ্ঞানের সমর্থন না থাকলেও এই কাজে মানুষের প্রবল কৌতুহল।

আজ আমাদের মধ্য থেকে চলে গেলেন আমার বাংলা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের প্রিয় @rme দাদার পিতৃদেব। তাই প্রথমেই বলি-

পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহি পরমন্তপঃ।
পিতাহি প্রীতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা।।

অর্থাৎ পিতাই স্বর্গ এবং পিতাই ধর্ম এবং পিতা সন্তুষ্ট হলে স্বয়ং দেবতারাও সন্তুষ্ট হন। দাদার জীবনে সেই জীবন্ত দেবতার হঠাৎ প্রয়াণ আমাদের সকলের মধ্যে এক বিষাদের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আকস্মিক পাওয়া এই খবরে স্তম্ভিত হওয়া ছাড়া কোন পথ ছিল না। আজ তাই অন্য কোন পোস্ট কল্পনাই করতে পারিনি। সেই মহাজীবনের উদ্দেশ্যে আজ আমার উৎসর্গিকৃত প্রণাম। আমি আশা করি আমাদের দাদার জীবনে তাঁর বাবার আশীর্বাদ আজীবন বট বৃক্ষের মতো ছেয়ে থাকবে। সবশেষে আবার দাদার শ্রদ্ধেয় বাবার প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। তিনি যেখানেই থাকুন পরম শান্তিতে থাকুন এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্য সদস্যদের প্রতি আমার শোকবার্তা পৌঁছে দিলাম। এই দুঃসময়ে শোকস্তব্ধ মনের অন্তঃস্থল থেকে একটি ছোট্ট শ্রদ্ধার্ঘ্য রইল আমাদের ভালোবাসার দাদার স্বর্গীয় পিতৃদেবের প্রতি।

🙏শ্রদ্ধার্ঘ্য কবিতা🙏

মৃত্যু / কৌশিক চক্রবর্ত্তী

মৃত্যু আমার জীবনযাপন...
মৃত্যু আমার দিন ফুরোনোর বার্তা নয়,
মৃত্যু যখন শেষ প্রহরেই অর্থবহ
সেই দিশাতেই অবিনশ্বর মৃত্যুভয়।

মৃত্যু আমার ধর্মকথা
মৃত্যু দিয়েই বাছবো নাহয় শ্রেষ্ঠ প্রাণ...
আমার জন্য শত ফিরিস্তি আড়াল করে
মৃত্যু সাক্ষী গীতায় কিংবা শেষ আজান।

মৃত্যু আমার অক্ষরজ্ঞান
মৃত্যু যখন পাতায় পাতায় অস্তাচল...
মেঘলা রাতের একলা আঁচড় আপন করে
মৃত্যু আমার স্নিগ্ধ ভোরের শেষ টহল।

মৃত্যু আমার শেষ উদযাপন
মৃত্যু নাহয় দ্ব্যর্থ প্রেমের শ্রেষ্ঠ দিন...
জন্ম যখন প্রহরবিহীন জড় সঞ্চয়
মৃত্যু শুধুই শিরায় জমানো বৈধ ঋণ।

🙏🙏

images__27_-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

বড্ড সত্যি কথাগুলো দিয়ে কবিতাটা লিখেছ৷ খুব বেশি কিছু বলার জায়গা থাকে না এই সব পোস্টে৷ নীরব হয়ে আসে মন৷ চোখ আবছা হয়৷

ভালো থেকো। সাবধানে থেকো৷

এমন পোস্ট লিখতেও যেন মন ভারাক্রান্ত হয়ে আসে। কত কথা বলা হয়ে যায়, অথচ যেন কিছুই বলা হয়ে ওঠে না৷ মৃত্যু বড় কঠিন৷ তবু কত নীরবে মেনে নিতে হয়৷ এই যন্ত্রণার নিরাময় নেই

বেশ সুন্দর হয়েছে কবিতাটি এবং তার সাথে সাথে কঠিন সত্যের উপলব্ধি পেলাম পাঠ করে। অনেক ধন্যবাদ

ধন্যবাদ হাফিজ ভাই৷ মৃত্যু সত্যিই যেমন সত্য তেমনই কঠিন। আমার কবিতা পড়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত ভালো লাগলো।

দাদার বাবার মৃত্যুর খবরটা শুনে একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। এমন মৃত্যু মেনে নিতে ভীষণ কষ্ট হয়। আমাদের দুই দাদা সহ উনার পুরো পরিবারকে সৃষ্টিকর্তা যাতে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা দেন, সেই কামনা করছি। যাইহোক পোস্টটি পড়ে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। তবে আপনি সত্যিই দারুণ লিখেছেন। পাশাপাশি কবিতার লাইনগুলো জাস্ট অসাধারণ হয়েছে। সবমিলিয়ে এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

কবিতাটি আপনার ভালো লাগায় আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সত্যিই প্রিয় মানুষ চলে যাওয়ার ভার অনেক। সেই ক্ষতি হয়তো এ জীবনে আর কোনদিনই পূরণ হবার নয়। তাও সকলকে জীবনের সবকিছুই মেনে নিতে হয়। এই অমোঘ সত্যের পাশে দাঁড়িয়ে জীবনে হেঁটে চলাও যেন আর এক সত্য। এই পোস্টটি দাদার বাবার মৃত্যুর খবর শোনার পর সাথে সাথেই লেখা। সামান্য এই পোষ্টের মাধ্যমেই যেটুকু শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা যায় তার চরণে, সেটাই উদ্দেশ্য। 🙏