।।আমার প্রতিদিনের যাতায়াতের পথ। আসুন ঘুরে যান আমার সাথে।।
আজ আমার দৈনন্দিন বৈচিত্র্যময় যাত্রাপথের গল্প আপনাদের সামনে তুলে আনব৷ প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে রওনা হতে হয় কর্মস্থলের পথে। সেই পথে অনেক বৈচিত্র্য। সাধারণত যে কোনো যাত্রাপথে আমার বাহন আমার বাধ্য বাইকটি৷ সে যে কদাচিৎ অবাধ্য হয় না তা নয়৷ কিন্তু বেশিরভাগ সময় সে আমায় কাঁধে চড়িয়ে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে৷ আমিও প্রকৃতির শোভা উপভোগ করতে করতে ও বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করে অনুভব করি সেই মধুর যাত্রাপথ।
আমার রোজকার পথকেও আমি প্রিয় করে তুলেছি এমন করেই। যে কাজ রোজ করতে হয়, যে কাজ অভ্যাসে পরিণত হয়, তাকে প্রিয় না বানাতে পারলে কোনোদিন মানসিক ভাবে নিজেকে ভালো রাখতে পারবেন না। তাই ভালোবেসে কাজ করা আর অভ্যাসে কাজ করার মধ্যে অনেক তফাৎ। বরাবরই আমি সেই কাজেই নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারি, যে কাজকে আমি ভালোবাসি। অনিচ্ছায় কোনোকিছুই সার্থকতা পায় না দিনের শেষে।
আমার রোজের চলার পথটা আজ আপনাদের একটু দেখাই৷ আমার বসতভিটে থেকে গঙ্গার দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। অর্থাৎ আমার বাহনটিতে চড়ে সেখানে পৌঁছাতে মিনিট দশেক লাগে। সকালে প্রকৃতির শুদ্ধ বায়ু সেবন করতে করতে বাইক নিয়ে চলে যাই গঙ্গার ঘাটে। এতো সকালে গঙ্গার ধার আমার জন্য অপেক্ষা করে নতুন নতুন বৈচিত্র্যময় পসরা সাজিয়ে। কখনো হালকা ছেঁড়া মেঘ যেন খেলে যায় জলের পিঠে। কখনও আবার সূর্যের রঙিন কিরণ ঠিকরে ওঠে জলের স্বচ্ছতায়। প্রতিদিন তার রূপে বহু নতুনত্ব। আমিও কখনো কখনো ধরে রাখি আমার ক্যামেরায়। এরপর বোটে উঠে পার হতে হয় নদী। সেখানে জল অগাধ। এপার থেকে ওপার যেতেই মিনিট পনেরো লেগে যায়। বর্ষার দিনে হাওয়ার দাপট বেশি থাকলে যে পরিমাণ ঢেউ তৈরি হয়, তা কাউকে ভয় পাইয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। তাও এখন বোটের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয় অপেক্ষাকৃত কম৷ কোন্নগরের উল্টোদিকে সোদপুর লাগোয়া পাণিহাটি জনপদ। অতি প্রাচীন বর্ধিষ্ণু এলাকা৷ যে এলাকাগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায় মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্যেও৷ আমি প্রতিদিন এই রুটের যাত্রী। একদিকে কোন্নগর ঘাটের পাশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি, আর উল্টোদিকে পাণিহাটিতে প্রাচীন মহোৎসবতলা। এই দুইয়ের মাঝে প্রবাহিত পূণ্যসলিলা গঙ্গা৷ তার ওপর দিয়েই আমার নিত্য যাতায়াত।
কোন্নগর জেটি থেকে বোটে চড়ে ওপারে যেতে হয়৷ আর সেখানেই মাঝিরা ধরে আমার বাইকটিকেও তুলে দেয় বোটে। তারপর আমি আর আমার বাইক নদীর শুদ্ধ হাওয়া খেয়ে পেরিয়ে যাই এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। হুগলী থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনা৷ এই যাত্রাপথ প্রতিদিন আমাকে সারাদিনের ধনাত্মক শক্তি প্রদান করে। আকাশ পরিস্কার থাকলে মাঝগঙ্গা থেকে দেখা যায় সূদুরে বিবেকানন্দ সেতু বা বালী ব্রিজ। ইংরেজ আমল থেকে এই সেতু গঙ্গার দুই তীরের যোগাযোগ স্থাপনে প্রধান ভূমিকা নিয়ে আসছে। কোনো একদিন লিখব এই প্রাচীন সেতু নিয়েও৷
গঙ্গা পার করবার পর আবার বাইক নিয়ে আমি এগিয়ে যাই কর্মস্থলের দিকে৷ ঘাট থেকে যা চার কিলোমিটারের পথ। এই পথ ইট, কাঠ, কংক্রিটের। কিন্তু যে গঙ্গার সুবাস বুক ভরে পুরে নিই সকালে, সারাদিন সেই বলেই সময় কেটে যায় নিমেষে। সেই গাঙ্গেয় ভোরই যেন আমার সারাদিনের নিঃশ্বাস।
আজ এই পোস্টে আমার নিত্য যাতায়াতের পথে তোলা কিছু ছবিও শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। ছবিগুলো ভালো লাগলে জানাবেন৷ আমার যাতায়াতের পথের শরিক হবেন? চলে আসুন। গন্তব্য কোন্নগর ফেরিঘাট। এসে আমায় চিনে নিতে ভুল করবেন না যেন।
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
দাদা তোমার যাতায়াতের পথটা আমার কাছে দারুন লেগেছে।। রোজ এভাবে পানিপথে মনোরম পরিবেশে যাতায়াত করাটা ভালোবাসার রূপান্তরিত না হয়ে কি পারে-?
তুমি একদম ঠিক বলেছ দাদা। অভ্যাসে পরিণত হওয়া আর ভালবেসে কাজ করা দুটো কিন্তু আলাদা আলাদা মানে বহন করে। আন্তরিকতা এবং ভালোবেসে যে কাজ করা যায় সে কাজের মধ্যে পরম তৃপ্তি থাকে। তোমার যাত্রা পথ সব সময় শুভ হোক এটাই প্রত্যাশা। 💞
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যিই গো। আমার যাতায়াতের পথ অতি মনোরম। তুমি পড়ে মন্তব্য করলে বলে ভালো লাগলো। প্রথম প্রথম জলের উপর দিয়ে যাতায়াত করি বলে বাড়িতে ভয় পেত। এখন সেটা অভ্যাস হয়ে গেছে। কেউ আর সেভাবে চিন্তা করে না। এভাবেই প্রতিদিন যাতায়াত চলে। আর কাল এই যাতায়াতের পথেই জলে কুমির দেখেছি। সেটা নিয়েও আজ পোস্ট করেছি। পোড়ো৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit