।।উড়িষ্যার নির্জন প্রান্তে সমুদ্র সৈকত চাঁদিপুর।।

in hive-129948 •  5 months ago 

দুদিনের ছুটিতে এলাম ভিন্নধর্মী সৈকত। চাঁদিপুর


AddText_06-16-04.23.47.jpg

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? ঘটনাচক্রে কর্মস্থল থেকে ছুটি পেয়ে গেলাম পরপর তিনদিন। শনি, রবি আর সোমবার। মনে পড়ে গেল দু'কলি রবীন্দ্রনাথ।

"
বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।
"

ভারত এক বিশাল দেশ৷ কত তার বৈচিত্র্য, কত তার সৌন্দর্য। যেন দেখে শেষই করা যায় না। ছুটি পেলেই তাই প্ল্যান সাজিয়ে বেরিয়ে পড়া যায় মনের মত গন্তব্যে। ঠিক তেমন ভাবেই এই তিনটি দিনের ছুটি কাটাতে চলে এলাম ভারতের পূর্ব উপকূলের উড়িষ্যা রাজ্যের সমুদ্র তীরবর্তী জনপদ চাঁদিপুরে৷ আপনারা চাঁদিপুরের নামটা একটি বিশেষ কারণে হয়ত জানেন। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে এই জায়গার নামডাক প্রচুর। সমুদ্র সৈকত, পাহাড় আর মনোরম প্রকৃতির সাক্ষী থাকতে চলে এলাম কলকাতা থেকে মাত্র ২৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থান চাঁদিপুরে।

কিভাবে এলাম

FunPic_20240616_162733581.jpg

ধৌলি এক্সপ্রেস

উড়িষ্যার রেল স্টেশন বালাসোর থেকে চাঁদিপুর সৈকত মাত্র ১৩ কিলোমিটার। গাড়িতে আধঘন্টার পথ। আর এইটুকু দূরত্ব পেরিয়ে এসে গেলাম এক নির্জন নিরিবিলি সৈকতে। হাওড়া স্টেশন থেকে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে শাখার অসংখ্য ট্রেন প্রতিদিন বালাসোরের উপর দিয়ে যায়। তবে সবথেকে ভালো ও সুবিধাজনক হল শালিমার থেকে সকাল ৯-১৫ মিনিটের পুরীগামী ধৌলি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। বালাসোরে নামিয়ে দেবে ঠিক দুপুর ১২-৪৫ মিনিটে৷ আমিও এসেছি এই ট্রেনেই। এরপর বালাসোর স্টেশন থেকে চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকত অটোতে ভাড়া ৪০০ টাকা। আর গাড়ি করলে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা নেবে।

সৈকতের বিশেষত্ব

FunPic_20240616_163411108.jpg

চাঁদিপুর সৈকত

দুদিনের প্ল্যানে চাঁদিপুর সত্যিই এক অনবদ্য গন্তব্য। যেখানে সমুদ্র সৈকত আর পাঁচটা সৈকতের থেকে একেবারেই আলাদা। অন্যান্য সৈকতের মত এখানে নেই প্রবল ঢেউ। শান্ত, মৌন সৈকতে পা ভিজিয়ে তিরতির করে বয়ে আসছে সমুদ্রের জল। অশান্ত, দামাল সমুদ্র এখানে একেবারেই অপরিচিত। আর এই সৈকতের বিশেষত্ব হলো জোয়ারের সময় জল একেবারে পায়ে এসে ঠেকলেও, ভাঁটায় জল সরে যায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। তখন আপনার সামনে শুধু ধুধু বেলাভূমি ছাড়া কিছুই দেখা যাবে না। জলের লেশমাত্র নেই। অদ্ভুত সে দৃশ্য। দিগন্ত বিস্তৃত শুধু চকচকে বেলাভূমি। রোদের রুপালি প্রতিফলন যেন ঠিকরে আসবে আপনার চোখে। প্রথমবার এই ভ্যানিশিং বীচের রোদ জলের খেলা যেন এক কথায় মাতিয়ে দিয়েছে আমার মন। সবথেকে বড় কথা সৈকতে পড়ে আছে অসংখ্য জীবন্ত শামুক, ঝিনুক তারামাছ এবং নাম না জানা বিভিন্ন জলজ প্রজাতি। পশ্চিমবাংলার এত কাছে সত্যিই এ এক মনে রাখবার মতো গন্তব্য।

কোথায় রইলাম

FunPic_20240616_163212438.jpg

পুরবী বীচ রিসর্ট

এর সাথে যোগ হয়েছে আমাদের থাকবার জন্য অনবদ্য রিসোর্টটি। কলকাতা থেকেই অগ্রিম বুকিং করে নিয়েছিলাম প্ল্যান ঠিক হবার পর। রিসর্টটির নাম পুরবী বীচ রিসর্ট। সমুদ্র সৈকতের একেবারে পাশেই সাজানো-গোছানো থাকবার এক অনবদ্য জায়গা। সামনে ফুলের বাগান ও পার্ক অতিথিদের মনোরঞ্জন করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর ঢিলছোঁড়া দূরত্বে সমুদ্র তো আছেই। তাই এখানে থেকে সমুদ্রের পাড়ে বসে চা কফি খাওয়ার স্মৃতি বহুদিন তাড়া করে বেড়াবে আপনাকে। সন্ধ্যা হলে আর এক শোভা। রিসোর্টটি সেজে ওঠে মনোরম আলোক সজ্জায়। সমুদ্রের গর্জন এবং ঠান্ডা হাওয়ায় তখন এক অন্যরকম ভালোলাগা। চা বা ঠান্ডা পানীয়তে ঠোঁট ভিজিয়ে ইচ্ছে হলে একটু পাও ভিজিয়ে আসতে পারেন সমুদ্রের জলে। কিন্তু অবশ্যই তার জন্য জোয়ার থাকা চাই। ইন্টারনেটে পূরবী বীচ রিসর্ট লিখলেই যোগাযোগের নম্বর ও লোকেশন পেয়ে যাবেন।

কী কী খেলাম

FunPic_20240616_163734527.jpg

জিভে জল

পুরবী বীচ রিসর্টের খাওয়াদাওয়াও ভীষণ ভালো৷ সাধ্যের মধ্যে দামে অসাধারণ মানের খাবার আপনার টেবিলে সাজিয়ে দেবে এঁরা। সবরকম পদই পাওয়া যায়৷ একটু দামের বিষয়ে আসি। মাছ ভাতের থালি ১৬০ টাকা, ভেজ থালি ১২০ টাকা। খাবারের মান অত্যন্ত ভালো এবং পরিমাণ অনেকটাই। সন্ধেতে বীচের ধারে আলো ঝলমলে পরিবেশে বসে অর্ডার দিতেই পারেন চিকেন পকোড়া বা ফিস পকোড়া৷ সাথে চা কফি তো আছেই। সবে মিলে একেবারে জমজমাটি বেড়ানোর প্ল্যান।

শেষের কটি কথা

FunPic_20240616_163935202.jpg

সৈকতে জীবিত তারামাছ ও শঙ্খ

পুরী দীঘা বকখালীর মত চাঁদিপুরের সী বীচে অজস্র মানুষের ভিড় নেই। নেই হাজারো দোকানপাট আর হোটেল রেস্টুরেন্টের রমরমা। কিন্তু যা আছে তা আপনি চট করে কোথাও পাবেন না। এখানে শান্তির দুটো দিন কোনদিন দীঘা বা পুরীর কোলাহল আপনাকে উপহার দিতে পারবে না। তাই খুব সহজে চট করে প্ল্যান বানিয়ে দুটো দিনের জন্য ঘুরে যেতেই পারেন এই চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকত থেকে৷ আমি এখনো ঘুরছি৷ তাই ভাবলাম কিছুটা শেয়ার করি আপনাদের সাথে। এরপর আবার আসবো নতুন তথ্য ও ছবি নিতে। বিশদভাবে বলবো আর কী কী দেখলাম। আপাতত ঘুরি নতুন জায়গাটায়৷ কী বলুন? আবার দেখা হচ্ছে শীঘ্রই।


সব কটি ছবি ইনফিনিক্স হট ৩০ মোবাইল ক্যামেরায় গৃহীত। ক্যামেরা ৫০ মেগাপিক্সেল৷

images__27_-removebg-preview.png

--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ওয়াও রিসোর্ট এর খাবার গুলো বেশ চমৎকার এবং জায়গাটাও বেশ সুন্দর । এমন জায়গায় ভ্রমণ করার সৌভাগ্য আজ পর্যন্ত হয়নি তবে আপনার ভ্রমণ পোস্টটা পড়ে অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারলাম তাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাই এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

খুব চমৎকার জায়গা সত্যি। এমন ফাঁকা নির্জন সৈকত এখন খুব কম। যেন মনে হয় বসে বসে ঢেউ গুনি আর জীবনটাকে অনুভব করি। এ এমন এক অনুভূতি যা একাকিত্বকেও ঢাকা দিয়ে যায়৷ আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো খুব ভাই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

খুব সুন্দর লিখেছ। কথায় বলে উড়িয়ারা রান্না দারুণ করে। আমি যতবারই গিয়েছি সেই বিষয়টা অনুভব করেছি। অপূর্ব ওদের খাবারদাবার৷ আর বিচের ছবি দেখে বোঝাই যাচ্ছে নির্মল বিচ৷ বললে না পুরী দীঘার মতো ভিড় নেই। ভিড় নেই বলেই এতো সামুদ্রিক প্রাণী দেখা যাচ্ছে। যেদিন ভিড় বাড়বে ওরা আর আসবে না৷

সত্যিই উড়িয়াদের রান্না মুখে লেগে থাকার মত। এখন বুঝি কেন ছেলেবেলা থেকেই দেখতাম বাড়িতে অনুষ্ঠান হলেই কেন উড়িয়ে রাঁধনি আসতো। উড়িয়াদের রান্না মুখে লেগে থাকার মত। আর তার সাথে সমুদ্রের ঢেউ তো ছিলই। জায়গাটা খুবই ভালো।