আমার প্রথম বিমান যাত্রার অভিজ্ঞতা

in hive-129948 •  3 days ago 

আমার প্রথম বিমানে চড়বার অভিজ্ঞতা


🛫🛫🛫🛫🛫🛫🛫🛫🛫🛫🛫🛫


IMG_20240304_070639_285.jpg

💮সকলকে স্বাগত জানাই💮
আজ আমি আমার প্রথম বিমানযাত্রার স্মৃতি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব। এই কয়েক মাস আগের কথা। কবিতার প্রয়োজনে এবং কিছু আমন্ত্রণে পৌঁছে গেছিলাম ঢাকা বইমেলায়। কলকাতা থেকে যাবার সময় কলকাতা ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসে চড়ে ৯ ঘন্টা সময় ব্যয় করে পৌঁছেছিলাম ঢাকা শহরে। কিন্তু ফেরার পথে কর্মস্থলে কিছু প্রয়োজন ছিল বলে ট্রেনের টিকিট আর কাটতে পারিনি। তাই আগে থেকেই বিমান টিকিট বুক করে রেখেছিলাম অনলাইনে। যাত্রা করব ঢাকা থেকে কলকাতা। বিমান বাংলাদেশ সংস্থার বিমানটির সময় ছিল সকাল ৭:৫০। চিন্তা ছিল একটাই। ঢাকা শহরের কোনো হোটেল থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে ঢাকা এয়ারপোর্টে ঢোকা। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ঘুরে এসে পৌঁছেছিলাম ঢাকায়। সেখানে বিশেষ পরিচিত বন্ধু এবং অগ্রজস্থানীয় বাংলাদেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী শামসুল হুদা ভাইয়ের সহায়তায় উত্তরা অঞ্চলে একটি হোটেলে উঠেছিলাম। উত্তরা অঞ্চলে থাকার প্রধান একটি কারণ ছিল বিমানবন্দরের নৈকট্য। ফিরে আসার আগের দিন রাত এগারোটা অবধি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ছিল সাহিত্যের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ। সেই হিসাবে পরের দিন ভোরে বিমান ধরার চিন্তা তো একটা ছিলই। তার মধ্যে নতুন শহর, নতুন ব্যবস্থা। কিন্তু কোন বিষয়েই টেনশন নেওয়ার মানুষ আমি নই। সুতরাং রাতে ঘুমানোর বদলে কিছুটা ঝিমিয়ে নিয়ে ভোর চারটের সময় দিব্য বেরিয়ে পড়েছিলাম হোটেল থেকে। গন্তব্য হোমটাউন কলকাতা। যেহেতু হোটেলটি ছিল উত্তরায়, সুতরাং এয়ারপোর্ট খুব একটা দূরে নয়। কিন্তু একটি বিষয়ে আমি কিঞ্চিৎ অসুবিধায় পড়েছিলাম। যে অঞ্চলে হোটেলটি তার আশপাশে প্রধান রাস্তায় বেরোবার সকল গলিপথেই সারারাত দরজা দিয়ে যে আটকানো থাকে তা আমার জানা ছিল না। চারদিকে মানুষজনকে হাঁকডাক দিয়ে ডেকেও কাউকে পাওয়া গেল না দরজা খোলার জন্য। তাই ভোর চারটেয় বেরোলেও যেদিকেই গেছি, বেরোতে পারিনি মেন রাস্তায়। শেষমেষ অনেক ঘোরাঘুরির পরে স্থানীয় এক রাতপাহাড়া দেওয়া ভাইয়ের সাহায্যে একটি রিকশা ধরে বললাম বিমানবন্দর যাব। সে আবার আর এক বিপদ। রিক্সাওয়ালা একটি জায়গায় গিয়ে নামিয়ে দিলেন। আমি দেখলাম বিমানবন্দরের ঝাঁ চকচকে আলো নেই, বিমান নেই, তেমন নিরাপত্তা বলয়ও নেই। শুধুমাত্র একটা ভাঙাচোরা দরজা এবং আশপাশে ইতস্তত কিছু লোকজন৷ আমি ভাবলাম এ আবার কেমন বিমানবন্দর রে বাবা!! নতুন জায়গা বলে প্রথমটা বুঝতে পারিনি। ঢুকে গেলাম দরজা দিয়ে। কিন্তু ঢুকেই বিস্ময়। বিমানের বদলে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন। পরে ঠাওর করলাম সেই রিকশাওয়ালা ভাই আমায় বিমানবন্দর বিমানপোতের বদলে নামিয়ে দিয়ে গেছে বিমানবন্দর রেল স্টেশনে। হায় রে ঈশ্বর। পরে খোঁজখবর নিয়ে যা জানলাম, তাতে বিমানবন্দর সেইখান থেকে একটু দূরে। তাই একটি সিএনজি বুক করে অবশেষে এসে পৌছালাম বিমানবন্দরে।

FunPic_20240704_231347383.jpg

ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

তারপর একে একে নিরাপত্তাজনিত সমস্ত নিয়মকানুন সেরে বসে রইলাম বিমানবন্দরের লাউঞ্জে। বসে বসে গল্প করছিলাম কলকাতার আর এক দাদার সঙ্গে। এরপর আমাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হলো বিমানে উঠবার জন্য। এরপর ফাইনাল সিকিউরিটি চেক। প্রথমবার বিমানে চড়বো বলে একটা রোমাঞ্চ তো ছিলই। কিন্তু ওই যে বললাম, টেনশন কোনদিন আমার মস্তিষ্কের ক্ষুদ্রতম কোষকেও আক্রান্ত করতে পারিনি কস্মিনকালে। তাই বেশ উৎসাহ নিয়েই উঠে পড়লাম বিমান বাংলাদেশ সংস্থার একটি ছোট বিমানে। উঠবার আগে টিপ টিপ বৃষ্টি আমার যাত্রাপথকে বেশ মনোরম পরিবেশে বদলে দিল।

1709516208503.jpg

ঢাকা বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশের সামনে আমি

যদিও আকাশ মেঘলা ছিল, কিন্তু মেঘের ভেতর দিয়ে উড়ে যাওয়ার স্বপ্নকে আমি লাগাম দিতে পারলাম না। তাই স্বভাবতই এক প্রবল উৎসাহ আমার মধ্যে দানা বাঁধলো। বিমান বাংলাদেশের বিমানে ওঠার পর আমার সিট ছিল জানলার ধারে। বসে পড়লাম নিজের জায়গায়। বিমান সেবিকার শুভেচ্ছা বার্তা ও বিমান চালকের বিভিন্ন রকম সাবধান বার্তা দিয়ে শুরু হলো আমার প্রথম বিমান যাত্রা। ছেলেবেলা থেকেই আকাশে বিমান দেখতে ভালোবাসি। কলকাতা বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে যেতে গেলেই থমকে দাঁড়িয়ে যাই ওই ডানাওয়ালা বিশাল পাখিটিকে কাছ থেকে দেখব বলে। কিন্তু আজ আমি নিজে উড়বো। তাই আমার আনন্দ যেভাবে মস্তিষ্কের দখল নিয়েছিল তা অনেকদিন নিজের সঙ্গে বহন করে নিয়ে যাব। এরপর এলো সেই ক্ষণ৷ শুরু হলো আমার বিমান যাত্রা। ধীরে ধীরে মাটি ছেড়ে ছুঁয়ে ফেললাম মেঘ। আকাশ ও মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে স্বর্গরাজ্যের মধ্যে দিয়ে উড়তে শুরু করলাম নিজের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে পরিণত করে। সে এক স্বপ্নের উড়াল। নিচ দিয়ে পেরিয়ে গেল যমুনা নদী, বঙ্গবন্ধু সেতু এবং বিভিন্ন ছোট বড় জনপদ। তারপর সর্বোপরি ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা। আমি প্রবেশ করলাম আমার দেশে। হয়তো আমার মত অনেকে আজ নিচ থেকে চেয়ে দেখছে আমায়। আর আমি প্রথম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে উড়ে যাচ্ছি মেঘেদের রাজ্য দিয়ে। এরপর প্রায় এক ঘন্টা পরে বিমান চালক জানালেন আমরা ছোঁবো কলকাতায় নেতাজি সুভাষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি। এ আমার শহর। আমার ভালোবাসা। ছেলেবেলা থেকেই শহরটার গায়ে আমার ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা। তাই কিছুদিন বাইরে থাকলেই যখন কলকাতাকে ছুঁয়ে দেখি তখন যেন নিজে দাঁড়াই আয়নার সামনে। মায়াময় শহর এই তিলোত্তমা কলকাতা। আর এই শহরে সবকিছু যেন আমার ভীষন চেনা।

FunPic_20240704_231458747.jpg

কলকাতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বিমানবন্দরে নামার পর বেরিয়ে এলাম বাইরে। নিজের ব্যাগ সংগ্রহ করে একটি ট্যাক্সি ধরে চলে গেলাম কর্মস্থলে। সঙ্গে রয়ে গেল জীবনে প্রথম বিমান যাত্রার স্মৃতি। আর অবাক বিস্ময় ভাবতে থাকলাম, মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে এক দেশ থেকে আরেক দেশে উড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।

কলকাতা বিমানবন্দরে

আমার এই অনন্য অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নিজের কথা কাউকে বলতে পারলে যে পরম তৃপ্তি ভর করে তা বলে বোঝাবার নয়। হয়তো বিমানে চড়বো আরও অনেকবার। কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতা সব সময় স্পেশাল। আর সেই অভিজ্ঞতা থেকে যায় আজীবন। সকলে ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে পরের পোস্টে।

আকাশ পথে নেওয়া কিছু ছবি (প্রথমটি ভারত এবং দ্বিতীয়টি বাংলাদেশ)

(সমস্ত ছবি আমার ইনিফিনিক্স হট ৩০ মোবাইলে তোলা)

images__27_-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

ঘটনা পড়ে হাসিও আসলো আবার হতাশও হলাম।
হাঁসি আর হতাশার কারনও একটা। একটু ব্যাখ্যা করি। উত্তরা বিমানবন্দরের কাছে। আপনার ভাগ্য ভালো যে বিমানবন্দর বলায় আপনাকে বিমানবন্দরের পিছনের এলাকা বাউনিয়ায় নামায় নাই। ভোররাতের বদলে সন্ধ্যা রাত হলে এমন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

সাধারণত, আমরা বিমানবন্দরে গেলে বলি, এয়ারপোর্ট যাবো। যখনই কেউ বলে বিমানবন্দর যাবো, রিকশাওয়ালারা ভাবে বিমানবন্দর রেলস্টেশনেই যাবেন। আরও বড় কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে রিকশায় করে আসলেই এয়ারপোর্টে যাবে কেউ মানতে চাইবেনা। এই হল আমাদের অবস্থা!

দ্বিতীয় কারন হলো, বিমানবন্দর রেলস্টেশনের ঠিক উলটো পাশেই এয়ারপোর্ট। অবশ্য লাউঞ্জে যেতে হলে সিএনজি নেয়া ছাড়া উপায় ছিলনা। হেঁটে যাওয়া কষ্টকর হত৷ জানিনা কত ভাড়া নিয়েছে, ১০০ উপরে নিলেই সেটাকে আমি জুলুম বলবো। দূরত্ব আর সময় হিসাবে ১০০টাকাও জুলুম অবশ্য।

আপনি যে ভিনদেশী তা হয়ত তারা টের পেয়েছে জন্য একটু হয়রানি করল। এজন্য মজাও পেলুম, আফসোসও হলো।

হা হা হা। ২০০ টাকা নিয়ে নিয়েছিল ভাই ওইটুকু যেতে। নেহাত প্লেনটার তাড়া ছিল তাই৷ সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা ছিল বটে৷ সাথে বিরাট ব্যাগ ছিল বলে সি এন জি ছাড়া উপায়ও ছিল না৷ এয়ারপোর্টে নেমে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম এই বলে যে - ৬০০০ টাকার প্লেন টিকিট কেটেছি, আর ২০০ টাকা নিয়ে আফসোস করব? হা হা হা হা

সেটাই ভাই৷ দেশটাতে যখন কেউ অসহায় হয়,সবাই সুযোগ নিতে চলে আসে।

অনেক তথ্য বহন করেছেন আপনার আজকের এই পোষ্টের মধ্যে। বেশ অনেক কিছু জানার সুযোগ মিললো আপনার এই প্রথম অভিজ্ঞতা জানতে গিয়ে। যাইহোক মোটামুটি কিন্তু ভালো লাগার ছিল আপনার এই পোস্ট, নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম।

আমার পোস্ট আপনার ভালো লাগায় আমি আপ্লুত। নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম৷ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা লিখতে বড় ভালো লাগে। ভালো থাকবেন।