কলকাতার বুকেই এক টুকরো অ্যাংলো কলকাতা। ইতিহাসের গল্প।

in hive-129948 •  3 months ago 

কলকাতায় বো ব্যারাকের গল্প

🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱🌱


☘️আসুন ইতিহাসের গল্প বলি☘️


Onulipi_08_23_01_18_55.jpg

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

কলকাতার ইতিহাস খুঁজতে গেলে হাতড়াতে হয় অনেক সূত্র, ঘুরতে হয় অনেক পাড়ায়। তবু যেন তল পাওয়া যায় না এই সাড়ে ৩০০ বছরের শহরটার। শহরটা নবীন, কিন্তু ঘটনাবলীর দিক থেকে অনেক প্রাচীন শহরের উপরে। ইতিহাস হাতড়ে দেখবার নেশায় বাহনে চেপে ঘুরে বেড়াই শহরটির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। টালা থেকে টালিগঞ্জ ঘুরে তুলে আনতে চেষ্টা করি এই তিলোত্তমার মূল শিকড়ের কথা। সেদিন কোন একটি কাজে গিয়েছিলাম উত্তর কলকাতার আনাচে-কানাচে। ঠিক করলাম ঘুরে আসব এমন একটি জায়গায়, যেখানে শুধুমাত্র অ্যাংলো ইন্ডিয়ান প্রজাতির মানুষেরা আজও বহালতবিয়তে বাস করে নিজেদের পরিবার পরিজন সঙ্গে নিয়ে। সেই অঞ্চল কলকাতায় অবস্থিত হয়েও যেন এক টুকরো ইঙ্গ সাহেবপাড়া। জায়গাটির নাম বো ব্যারাক। চাঁদনী চক মেট্রো স্টেশন থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট হাঁটা পথ। কলকাতা বাসীরা প্রায় প্রত্যেকেই এই জায়গার নাম শুনেছেন। কিন্তু একটি জায়গায় কিছু লাল লাল প্রাচীন বাড়ি এবং সেখানে একাধিক ইঙ্গ ভারতীয় পরিবারের বাস। এখানে বৈচিত্র্যময় এই অবস্থানের কারণটাই বাকি?

IMG_20240717_161658_499.jpg

ফিরে যেতে হবে প্রায় ১০০ বছর পিছনে। তখন শুরু হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। সারা পৃথিবী মেতে উঠেছে সেই মহাযুদ্ধে। বিদেশ থেকে সৈনিকরা আসতে শুরু করেছে ঔপনিবেশিক ভারতের মাটিতে। আর তখনই এই বো ব্যারাক হয়ে উঠেছিল সৈনিকদের প্রধান মেসবাড়ি৷ দলে দলে বিলেতি সৈনিক এসে উঠতেন এই ব্যারাকের ঘরগুলিতে। ইংরেজ সরকার সৈনিকদের বাসস্থানের দরুন তৈরি করে এই বাড়িগুলি। কিন্তু সে তো গেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কথা। আজকের দিনেও সেই একই অবস্থায় বাড়িগুলিকে সাক্ষী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বো ব্যারাক। বউবাজার এবং হেয়ার স্ট্রিট থানার মাঝখানে এই জায়গাটি একেবারে ভিন্নধর্মী এক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আজ ইংরেজ ও ভারতীয় পরিবারগুলি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিচয় নিয়ে বসবাস করে তাদের পরিবার ও সন্তান-সন্ততিরা। কলকাতা সকলের শহর। একসময় ইংরেজ সরকারের এই শহরে শুধুমাত্র কিছু করে খাওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসত মানুষ। আজও সেই রীতি অব্যাহত। তাই মাত্র এই কয়েক বছরের নবীন এ শহর ছুঁয়ে যায় দিল্লি বা এলাহাবাদের মত অতি প্রাচীন শহরগুলিকেও। আসলে কলকাতা একটি আবেগের নাম। সকল জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকেই এই শহরকে আপন করে নিয়েছে। বো ব্যারাক তার একটি আদর্শ উদাহরণ।

IMG_20240717_161638_407.jpg

বাড়ি গুলির গায়ে আজও যেন লেগে আছে বিশ্বযুদ্ধের ছাপ। আজ বড়দিনের সময় জাঁকজমকপূর্ণভাবে এখানে পালিত হয় উৎসব। সেজে ওঠে সম্পূর্ণ বো ব্যারাক। আলোয় আলোয় ঝলমল করে ওঠে এই পাড়া। বিভিন্ন ধরনের ক্রিসমাস কেক এবং সান্তাক্লজের পদধ্বনিতে গমগম করে অঞ্চলটি। আর তার মাঝখানেই মেতে ওঠে উৎসব প্রিয় বাঙালিও৷ বো ব্যারাকে তখন যেন মহোৎসবের চেহারা। সকল অ্যাংলো পরিবার মিলেমিশে যায় বাঙালিদের হৃদয়ে ও অন্তরে।

IMG_20240717_161544_106.jpg

আমি যখন পৌঁছেছিলাম তখন এইসব পরিবারের ছোট ছোট কচিকাঁচারা ব্যস্ত ছিল রাস্তায় ক্রিকেট খেলতে। তাদের আনন্দে মেতে উঠেছিলাম আমিও। অদ্ভুত সে আনন্দের মুহূর্ত। জায়গাটি যেন কবেই নিজেদের অন্তরে মিশিয়ে নিয়েছে তারা। আজ তাদের কাছে দেশ বলতে এটিই। ঝরঝরে বাংলায় তারা কথা বলে সকলের সঙ্গে। তাই অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এই পরিবারগুলি আজ আদ্যোপান্ত বাঙালি হয়ে উঠেছে।

আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম কলকাতার সেই বিলেতি পাড়ার গল্প এবং কিছু ছবি। যদি আপনাদের ভালো লাগে নিশ্চয়ই কমেন্ট করে জানাবেন।

IMG_20240717_161658_499.jpg


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
বৌবাজার, কলকাতা
ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি


(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

44902cc6212c4d5b.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.