।।আজ রইল আমার একটি শখ। মুদ্রা সংগ্রহ।।
শুভ বিকেল বন্ধুরা। আজ আমার বাংলা ব্লগের জন্মদিন। প্রথমেই আমার বাংলা ব্লগকে জানাই শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। আর এই ব্লগে মূল্যবান সব লেখালেখি করে যাঁরা সারাদিন মন মাতিয়ে রাখেন, তাঁদেরকেও জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দুই বাংলায় বাংলা ভাষাভাষী বাঙালিকে সংঘবদ্ধ করতে এই ব্লগের যা ভূমিকা তা এককথায় প্রকাশ করবার নয়। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির উত্তরণে এমন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম সত্যিই প্রশংসার দাবীদার৷ ব্লগে একেবারেই নতুন হলেও সবার লেখা পড়তে পড়তে ও নিজে লিখতে লিখতে আপনারা সবাই ভীষণ আপন হয়ে গেছেন। তাই জন্মদিনে সবার দীর্ঘায়ু কামনা করার সাথে সাথে ব্লগের শ্রীবৃদ্ধি প্রার্থনা করি।
আজ ব্লগের পাতায় নিয়ে এলাম আমার একটি শখের খবর ও তার কয়েকটি ছবি। দেশবিদেশের অর্থনৈতিক আদানপ্রদানে সবথেকে অগ্রণী ভূমিকা নেয় মুদ্রা৷ ইতিহাস ঘাঁটলেও দেখা যায় বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন রাজ্যের উন্নতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যে মুদ্রার ব্যবহার বহুল উল্লেখ্য। আর মুদ্রাই হল এক একটি সময়কালের সমৃদ্ধির প্রতিবিম্ব। যেমন ভারতের ইতিহাসেও যুগে যুগে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রার প্রচলন দেখা যায়। বাংলায় পাল ও সেন যুগের মুদ্রা বা সুলতানী যুগের মুদ্রা সেই যুগের সময়কাল ও শাসকের মনোভাবকে স্পষ্ট করে আজও। ঠিক তেমনই প্রচলিত সময়ের ধারাকে বয়ে নিয়ে যায় দেশের মুদ্রা। তাই ইতিহাসে গবেষকদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিচার্য বিষয় যদি থাকে, তা হল দেশের বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা।
আমরাও বেড়ে উঠেছি একটা সময়কালের মধ্যে দিয়ে। কত ওঠানামার মধ্যে দিয়ে পথ হেঁটেছি। চোখের সামনে দেখেছি কত মুদ্রার আসা যাওয়া। এমনও হয়েছে যেখানে একটি মুদ্রার আয়ুষ্কাল মাত্র ছয় মাস দেখেছি। ভারতেই কয়েক বছর আগে এক রাতের মধ্যে সমস্ত প্রচলিত মুদ্রা বাতিল ঘোষণা হয় এবং বাজারে আসে নতুন নোট। এমন ভাবেই যুগে যুগে বদলেছে মুদ্রা। আবার এসেছে নতুন কয়েন। কিন্তু বাতিল মানে কি আসলেই বাতিল? হয়ত অর্থনৈতিক কাজে আর আসে না সেই মুদ্রা। কিন্তু বাতিল হলেও প্রতিটি মুদ্রাই ধরে রেখে দেয় সেই সময়কালের অর্থনৈতিক চিত্রটাকে। গবেষকদের কাছে এসব মহা মূল্যবান সম্পদ।
আমার মুদ্রা সংগ্রহের শখ বহুদিনের৷ কোথাও থেকে পুরনো মুদ্রা পেলে বা বিদেশ গেলে সেখানকার বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে নিজের কাছে রেখে দেওয়া আমার এক নেশা। আর মাঝেমাঝে সেইসব সঞ্চিত ভাণ্ডার নিয়ে বসে স্মৃতি রোমন্থন করা। এ এক দুর্নিবার টান। আজ ইচ্ছে হল আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে নিই নিজের সেই সম্ভারের কিছুটা।
প্রথমেই আসি ইংরেজ আমলের একটি মুদ্রার প্রসঙ্গে। আমার কাছে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতার বছর ১৯৪৭ সালের একটি মুদ্রা। যেখানে ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইংল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ জর্জের প্রতিকৃতি। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মুহূর্তে তিনিই ছিলেন ইংল্যান্ডেশ্বর। সদ্যমৃত মহারাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জের প্রতিকৃতি দেওয়া এই মুদ্রাটি ভারতে বহুল প্রচলিত হয়েছিল সেই সময়৷ এক টাকার কয়েন হিসাবে এটি বর্তমান সময়ের কয়েনের তুলনায় যথেষ্টই ভারী ও বড়। কয়েনটির ওপর পিঠে ইংরেজ সরকারের প্রতিপত্তির প্রচলিত এমব্লেম সিংহ দেখা যাচ্ছে। কয়েনের ওপরে লেখা ওয়ান রুপি।
এক সময় ভারতে প্রচলিত ছিল অ্যালুমিনিয়াম কয়েন। সেইসময় ৫ পয়সা বা ১০ পয়সারও মূল্য অনেক। মনে পড়ে, স্কুলের গেটে তখন আইস ক্রিম পাওয়া যেত ১০ পয়সায়৷ ১০ বা কুড়ি টাকা তো স্বপ্ন। বাবার থেকে চেয়ে ১০, ২০ পয়সা হাফ প্যান্টের পকেটে নিয়ে স্কুল যাবার আনন্দই ছিল আলাদা। ১ টাকার মূল্য তখন অনেক৷ স্কুল জীবনে তা ছিল ভাবনার বাইরে। আর ওই ১০ বা ২০ পয়সা দিয়েই চলতো নিত্য শখ মেটানো ও পেট ভরানো৷ আমার কাছে আজও রয়েছে তেমন কিছু অ্যালুমিনিয়াম ৫ পয়সা, ১০ পয়সা বা ২০ পয়সার সম্ভার৷ পয়সাগুলো সবই ১৯৮০ র দশকের।
এরপর আসি ৫ টাকার একটি কয়েন প্রসঙ্গে৷ কয়েনটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এই কয়েনটি ভারত সরকার প্রকাশ করে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও আয়রন লেডি ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতিতে৷ ১৯৭১ এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে যাঁর সহায়তা ও অবদান সর্বজনবিদিত। টাকাটা আয়তনে প্রচলিত কয়েনগুলির থেকে অনেকটাই বড় এবং ওজনে ভারী। এই কয়েনটি এখন লুপ্তপ্রায়। বর্তমানে ছোট আকারের পাঁচ টাকার কয়েনই ভারতে চলে। তাই এই কয়েনটি কিছু মানুষের কাছে অনেক খুঁজলে হয়ত পাওয়া যাবে।
এবার আসি একটি বৈদেশিক মুদ্রায়। কয়েনটি কুয়েতের একটি প্রাচীন মুদ্রা। পুরাতন হওয়ার দরুন কয়েনটি খুব স্পষ্ট বোঝা যায় না বটে, কিন্তু কাছ থেকে দেখলে বেশ স্পষ্ট বোঝা যায় উপরের লেখাগুলো। যেখানে কুয়েত শব্দটিও লেখা আছে।
আজ থাক এই পর্যন্তই৷ সকলে ভালো থাকুন। আমরা বাংলা ব্লগের সব সদস্যকে আরও একবার ব্লগের জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
কবি শঙ্খ ঘোষের কথায় বলতে হয় -
"আমরাও তবে এইভাবে
এ-মুহূর্তে মরে যাব নাকি?
আমাদের পথ নেই আর
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি"
(সব ছবি আমার ব্যক্তিগত মুদ্রা সংগ্রহ থেকে বাছাই করে ইনফিনিক্স হট ৩০ মোবাইলে সংগৃহীত)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
দাদা তোমার মুদ্রা সংগ্রহের তালিকা এবং বিবরণ দেখে আমি অভিভূত হলাম। তোমার পোস্টগুলো যথেষ্ট তথ্যবহুল। আর সে কারণেই তোমার ব্লগগুলো আমি বারবার পড়ি। আমিও এক সময় মুদ্রা সংগ্রহে রাখতাম।কিন্তু সেগুলো হারিয়ে ফেলেছি। আর তাই মাঝে মাঝে মনে অনেক কষ্ট পাই। আমার বাংলা ব্লগের শুভ জন্মদিনের অনাবিল শুভেচ্ছা তোমাকে।। 🌹🌹
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
মূল্যবান মুদ্রাগুলো হারিয়ে ফেলেছ শুনে আমারই খারাপ লাগছে খুব৷ এইসব শখ যেন নিজের প্রাণের থেকেও প্রিয়৷ হারিয়ে গেলে খুব কষ্ট হয়৷ আমিও এগুলো অনেক খুঁজে বের করলাম সেদিন। তারপরেই পোস্ট করলাম৷ তোমার ভালো লেগেছে শুনে আমার খুব আনন্দ হল৷
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
দাদা শুধু মুদ্রাই নয়,আমি অনেকগুলো চকচকে নতুন নোট ও হারিয়ে ফেলেছি। যেগুলো খুব শখ করে একটি মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রেখেছিলাম।
আমার সেই মাটির ব্যাংকটি হঠাৎ করে ঘর থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। সে অনেক আগের কথা। তখন এত বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম যে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছিল। 💕
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit