আজ গর্জে ওঠার দিন। আসুন পথে হোক দেখা
।।দলমত নির্বিশেষে সুবিচারই লক্ষ্য।।
আজ, ১৪ই অগস্ট, সারা ভারতবর্ষ জুড়ে রাত্রে যে অরাজনৈতিক আন্দোলন হতে চলেছে, তা এককথায় নজিরবিহীন।আজ কোনো ঝাণ্ডা নেই, দল নেই, মতাদর্শ নেই। আর জি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘটনায় প্রকৃত দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী রেখে আজ ১৪ই অগস্ট, রাত ১২ টায় সারা ভারত জুড়ে গর্জে উঠতে চলেছে সংবেদনশীল জনতা। নারী সমাজের নেতৃত্বেই এই মুভমেন্ট। এমন গণ আন্দোলন গড়ে তুলে সামাজিক ভাবে গর্জে ওঠার ঘটনা তো আজ নতুন নয়৷ বারবার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা এভাবেই গর্জে উঠে প্রতিবাদ জানিয়েছে পথে। বাঙালি সংবেদনশীল জাতি৷ আর কোথাও কোনো অনৈতিক ও অস্বাভাবিক কাজ দেখলে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই বাঙালিই৷ বাঙালি যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিজে হাতে বোম বেঁধেছে, ঠিক তেমনই আবার নেতৃত্বের দায় মাথায় নিয়ে ভারত থেকে ছুটে গেছে সুদূর জার্মানিতেও। বিশ্বের একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী নেতা অ্যাডলফ হিটলারের সামনে তার চোখের দিকে চোখ রেখে যে মানুষটা দাঁড়িয়েছিল সংকল্পে, সেও যে বাঙালি৷ তাই বাঙালির বহু কীর্তি। নাহলে একজন তরুণ বাঙালি ফাঁসির মঞ্চে উঠে বলতে পারে না যে, বোমা বাঁধার কৌশলটা কাউকে শিখিয়ে যেতে চাই।
আজও আমরা যে প্রতিরোধের মুখে পড়ি, তা ফিরিয়ে দিই দ্বিগুণ শক্তিতে। আজও এমন এক ঐতিহাসিক দিন। একটা রাত গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার দিন। সামনের পথ যদি কণ্টকাকীর্ণ হয়, তবে তা মসৃণ বানিয়ে হেঁটে যাবার দায়িত্ব আমাদেরই। আজ যে অন্যায় আমাদের সমাজে আমাদের আড়ালে হয়ে গেল, তা মৌন ভাবে হজম করে নেওয়ার অর্থ সমর্থন। তাই দুস্কৃতির দুস্কর্মকে ধিক্কার জানিয়ে সঠিক শাস্তির দাবীতে আজ পথে নামার দিন। একটা বাক্যবন্ধ নিয়ে কিছুদিন আগে আরও একটি আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। 'রাস্তা কারও একার নয়'। সত্যিই তো। রাস্তার মালিকানা জনতার। আর সেই জনতার সম্পত্তিতে শান্তিপূর্ণ হেঁটে যাবার অধিকার সব্বার। বাঙালি হারতে শেখেনি। তাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পদক্ষেপ ফেলে এগিয়ে যেতেও জানে সে।
নিজের দু চোখে একরাশ ডাক্তারী স্বপ্ন বুনে যে মিষ্টি কুঁড়ির মত মেয়েটা আজ অকালে হারিয়ে গেল সমাজ থেকে, পৃথবী থেকে, সেই মেয়েটার রক্তাক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আজ পথে নামা। যে মানুষটা আজ আর নেই, আজ পথে সবার পুরোভাগে নেতৃত্ব দেবে সেই৷ তার স্টেথোস্কোপ ধরা হাতদুটো আঙুল তুলে দেখাবে গন্তব্যের সঠিক দিশা। আর তার নির্দেশ মাথায় নিয়ে আজ পথ কাঁপাক লক্ষ লক্ষ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এ এক সুস্থ সমাজ গড়ার লড়াই৷
অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে
এই উক্তিকে শিরোধার্য করে আজ পথে নামবে বাঙালি মেয়েরা৷ সাথে সমগ্র সুস্থ সমাজ। মাতঙ্গিনী হাজরা থেকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদর, রাণী রাসমণি থেকে রাণী শিরোমণি, সকলের হাতেই যখন অস্ত্র উঠেছে, কেঁপেছে অত্যাচারী সমাজ৷ কেঁপেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত৷ আমরা জানি না আমরা কতটা সফল হব। কিন্তু অন্যায় হতে দেওয়া যাবে না। আমরা বাঁচাতে পারিনি মৌমিতাকে। আমাদের মেয়েকে৷ আজ তার একবুক কান্না আমাদের বুকে ভরে নিয়ে সবাই দাঁড়াব সেই ক্লীব অসুস্থ পৌরুষের বিরুদ্ধে।
আপনারাও সবাই এই গণপ্রতিবাদে যোগদান করবেন আশা রইল। এই পথ আমাদের। আর জি কর হাসপাতাল আমাদের। দুনিয়ার তামাম রাজপথ আমাদের৷ সেই পথ আমরা নোংরা করতে দেব না। এ আমাদের সংকল্প৷
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
বেনিফিশিয়ারি ছুটে গেছে এই পোষ্টে, ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তাই নাকি? লক্ষ্য করিনি তো তবে। মনে হয় খেয়ালই করিনি ভাই
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
স্যোসাল মিডিয়ার কল্যাণে ব্যাপার টা জানি। সত্যি এমন লজ্জাজনক আর কিছু নেই। এখানে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি আমি। এটা বাড়িতে বসে থাকার সময় না। দোষীদের সাজা না হওয়া পযর্ন্ত এমন আন্দোলন চলতে থাক। মানুষের বিবেক দেখলে সত্যি বেশ অবাক লাগে। বিষয়টি খুবই হৃদয়বিদারক।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit