উত্তরবঙ্গে মূর্তি টুরিস্ট রিসর্টে দুদিন
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
কিছুদিন আগে বেড়াতে গিয়েছিলাম উত্তরবঙ্গে। শিলিগুড়ি শহরের অদূরেই বয়ে যাচ্ছে মুর্তি নদী। আর সেই মূর্তি নদীর ধারেই আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ একটি সুন্দর রিসোর্ট। যার নাম মূর্তি রিসোর্ট। এই মূর্তি রিসোর্ট যেমন সুন্দর করে সাজানো তেমন বিশাল চত্বর নিয়ে তৈরি হয়েছে। এখানে দুই ধরনের কটেজ করা আছে। আপনারা পছন্দ অনুসারে ইটের কটেজ বা কাঠের কটেজ বেছে নিতে পারেন থাকবার জন্য। দুই থেকে তিন দিন বুকিং করলে আপনার যে কোথা থেকে সময় চলে যাবে তা বুঝেই উঠতে পারবেন না। সব থেকে বড় কথা হলো এখানকার পরিবেশ। মূর্তি নদী বয়ে যাচ্ছে চাপরামারি এবং গরুমারা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। তাই এই দুই জাতীয় উদ্যানের মধ্যিখানে এই নদী এক অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে প্রকৃতির মধ্যে। আর মূর্তি সরকারি রিসোর্টটি যেন সেই প্রকৃতিকে ছুঁয়ে দেখার হাতছানি। অসাধারণ সুন্দর এই রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা যেমন সুন্দর, ঠিক তেমনভাবেই প্রকৃতি যেন ছড়িয়ে রেখেছে সৌন্দর্যের ডালি।
আমরা দুই দিনের জন্য এই রিসোর্ট বুক করেছিলাম। সেখানে থাকবার অভিজ্ঞতা কোনদিন ভোলবার নয়। ভেতরে বিশাল চত্বরে ব্যাডমিন্টন থেকে শুরু করে টেবিল টেনিস, সমস্ত কিছু খেলবার ব্যবস্থা করা আছে। তাছাড়া বিভিন্ন ফুল গাছ এবং সুন্দর উদ্যান যেন প্রতিনিয়ত ডাকছে আপনাকে। জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত হলেও এই রিসোর্ট এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্দান্ত। এই চত্বরের ভেতরে চারপাশে করা আছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী যেমন পাইসন, হরিণ অথবা গন্ডারের নিখুঁত প্রতিকৃতি। কিন্তু কোন বন্যপ্রাণী হঠাৎ করে এই চত্বরে ঢুকে আসতে পারে না। তাই ভেতরে আপনি একেবারেই নিরাপদ। পরিবার পরিজন নিয়ে কয়েকদিনের সুন্দর সময় কাটাতে হলে অবশ্যই বুক করতে পারেন এই কটেজটি। এখানকার ফুলগাছগুলি বেশ সজীব এবং সতেজ। বিভিন্ন রকমের গোলাপ, জবা অথবা গাঁদা ফুলের সৌন্দর্য যেন মোহিত করে রাখে। আর সেগুলি খুব যত্ন করে তৈরিও করা। আমরা ছিলাম ইটের কটেজে। সেই কটেজের ভিতরের ব্যবস্থাপনাও ভীষণ সুন্দর। একেবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরগুলি আপনার পছন্দ হবেই।
আর এই সব কিছুর সঙ্গে আছে সুন্দর খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। সব ধরনের খাবারের এখানে ব্যবস্থাপনা আছে। তবে কটেজ বুক করলে পেয়ে যাবেন কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট। আর সেই ব্রেকফাস্টে বিভিন্ন ধরনের মেনু সাজিয়ে আপনাকে সুপ্রভাত জানাবে রিসোর্টের স্টাফেরা। তাই এই দুটো দিন কোথা থেকে যে কেটে গেল তা যেন বুঝতেই পারলাম না। বনদপ্তর থেকে আগে থেকেই বুক করা ছিল জঙ্গল সাফারি। তাই সেই জীপগুলি একেবারে রিসার্টে এসে আমাদের তুলে নিয়ে গেল জঙ্গল সাফারিতে। কোন দিক থেকে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি এখানে। বিভিন্নভাবে এই রিসোর্টের সাপোর্ট আমাদের সুবিধা করে দিয়েছে বারে বারে। আর জঙ্গল এবং নির্জন এলাকায় অবস্থিত হলেও এদের ব্যবস্থাপনা সব দিক থেকে ভীষণ ভালো। সামনে দিয়েই বয়ে যাচ্ছে মূর্তি নদী। পাহাড়ি খরস্রোতা এই নদীর সৌন্দর্য আপনার মনকে টেনে রাখবে একান্ত নিবিড় ভাবে। তাই এই সুন্দর জায়গাটির আকর্ষণ ছেড়ে যেন ফিরতেই মন চাইবে না নিজের ঘরে।
আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম এই রিসোর্ট এর বিভিন্ন ছবি এবং ফুলগাছগুলি। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে আপনারাও এই রিসোর্ট বুক করে দুটো দিন কাটিয়ে আসতে পারেন নিরিবিরি নিরালায়। সেই দুটো দিন জীবনের শেষ পর্যন্ত স্মৃতির মনিকোঠায় থেকে যাবে এটুকু বলে দিতে পারি। বুকিং এর জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল টুরিস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এর ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তিন থেকে চার মাস আগে বুকিং না করলে কখনোই বুকিং পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ছুটির সময় এখানে বেড়াতে গেলে অবশ্যই আগে থেকে বুকিং করে নিন। কটেজগুলির ভাড়া ৩১০০ টাকা করে। ভাগ্য ভালো থাকলে হয়তো ভোরবেলা মূর্তি নদীতে হাতির পালের জল খাওয়াও দেখতে পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার এই ট্যুরটি সারাজীবনের সম্পদ হয়ে থেকে যাবে।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1876694935409455311?t=OzQrGMqJt6oTVMaizZOe4g&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Daily tasks-
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
উত্তরবঙ্গে অবস্থিত মূর্তি টুরিস্ট রিসোর্টে আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভালোই লাগলো। রিসোর্টি দেখে বুঝতে পারলাম খুবই সাজানো গুছানো। মহিষ হরিণ গুলো দেখে ভালোই লাগলো। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
রিসোর্টটি সত্যিই ভীষণ সুন্দর ছিল ভাই। আর চারিদিকে বিভিন্ন বন্যা জানোয়ারের মূর্তি করা ছিল। আপনার মন্তব্য খুব ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit