আসুন জেনে নিই জনাইয়ের মনোহরার হাল হকিকত।

in hive-129948 •  2 months ago  (edited)

হুগলি জেলার বিখ্যাত মিষ্টি মনোহরা

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


Onulipi_11_25_11_29_43.jpg

হঠাৎ করে একদিন বাইক নিয়ে আসছিলাম জনাইয়ের উপর দিয়ে। হুগলি জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম জানাই। ইতিহাসও যার সমৃদ্ধ। আজকের গ্রাম নয়। বহু পুরনো কাব্য ইতিহাসেও জনাই গ্রামের উল্লেখ আছে। কিন্তু আজও জনাই যে কারণে বিখ্যাত তা হল মিষ্টি। আর মিষ্টি বলতেই মনোহরা। কী। খেয়েছেন কখনো মনোহরা? না খেলে অবশ্যই একবার খেয়ে দেখবেন। তবে আসুন, জেনে নিই মনোহরার হাল হকিকত।

IMG_20240204_175547_416.jpg

বিভিন্ন আকারের মনোহরা

মিষ্টিটা চেনেন? কখনো গেছেন হুগলি জেলার জনাইতে? দ্রষ্টব্য তেমন কিছু নেই। আশপাশে বেশ কিছু পুরনো বাড়ি। দেয়ালগুলোর জীর্ণ চেহারা। আর তার মাঝে মাঝে মিষ্টির দোকানগুলো আলো করে আছে একটি মিষ্টি। নাম মনোহরা। অর্থাৎ মন হরণ করা মিষ্টি। কে বলে জিভের স্বাদ মনে দাগ কাটে না? নাই হোক বা প্রেমিকা৷ মনের মানুষ। মনের মিষ্টি তো বটে। তাই বা কম কিসে। মুখে দিলেই বাজিমাত। একেবারে মন উজানিয়া ভাব। তাই সার্থক তার নাম। মনোহরা।

IMG_20240204_175555_103.jpg

বিভিন্ন আকারের মনোহরা ও বড় বোঁদে

গল্পটা দুশো বছর আগের। তখন বর্ধিষ্ণু গ্রাম হুগলির জনাই। মিষ্টি প্রস্তুতকারক ময়রাদের ঘর আনাচেকানাচে। সেই সময়েই আবিস্কার মনোহরার। ছানার নরম পাকে চিনির কঠিন আস্তরণ, এই হল মনোহরা তৈরির নিয়ম৷ মুখে দিলে প্রথমে দাঁতে কামড়, তারপর নরম ছানার সন্দেশ। কী? শুনেই ইচ্ছে করছে তো মুখে একখানা পুরতে? স্বাভাবিক। আজকাল কলকাতায় শীতকালে বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে গুড়ের আস্তরণ দিয়ে মনোহরা পাওয়া যায় বটে। কিন্তু সে আর যাই হোক জনাইয়ের সেই অমৃত নয়। একবার এসেই দেখুন না। মিষ্টি খেতে নাহয় একবার হাওড়া বর্ধামান কর্ড লাইন ট্রেনে চাপলেন। আধঘন্টার তো পথ। এলে ঠকবেন না কিন্তু। যে মিষ্টি ইউরোপ আমেরিকায় এক্সপোর্ট হয় ফি বছর, আপনি তার স্বাদ নিতে আধঘন্টা ট্রেন চড়বেন না? এ কেমন কথা?
মনোহরার ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে চমকপ্রদ সব তথ্য পেলাম। মত বিভিন্ন। তারমধ্যেই একটা গল্প বলা যাক। কলকাতা থেকে এক সাহেব বেড়াতে এসেছেন জনাইতে। সাহেবকে সন্তুষ্ট করতে এমন মিষ্টি বানাতে হবে যা অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায় চার পাঁচদিন। তখন ফ্রিজ কোথায়। মিষ্টিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব একমাত্র ওপরে চিনির শক্ত আস্তরণ দিয়েই৷ যেমন চিন্তা তেমন কাজ। ফল আজকের মনোহরা। স্বাদে অতুলনীয়, মনে অনাবিল সন্তুষ্টি।

IMG_20240204_175550_752.jpg

বিভিন্ন আকারের মনোহরা

আবার কেউ শোনালেন অন্য এক গল্প। ভীমচন্দ্র নাগের বাবা পরাণ চন্দ্র নাগ তৈরি করেন মনোহরা। মনোহরার এমন সব গল্পে মশগুল আজকের জনাই। জনাইয়ের বিখ্যাত শুকনো বড় আকারের বোঁদের কথাও না বললেই নয়। মুখে দিলে আর একখানা না নিয়ে পারবেন না কথা দিলাম। এক একখানা বোঁদে এক একটি ছোট আকারের ল্যাংচা। সে এক আশ্চর্য খাবার। যেমন মনোহরা, তেমনই বড় বোঁদে।
কিছুদিন আগেই আমার বাহনটির পিঠে চেপে বাড়ি ফিরছিলাম জনাইয়ের ওপর দিয়ে। পাশেই পেলাম চোখ টেনে নেবার মত এক মিষ্টান্নপ্রস্তুতকারকের দোকান। দেখেই যেন পৌঁছে গেলাম কয়েকশো বছর পিছনে। ভেতরে টিমটিম করে জ্বলছে কয়েকটা আলো। সামনে পুরনো কাঠের শাটার দরজা টানা মিষ্টি রাখার কেস। ভেতরে সারি দিয়ে বিভিন্ন মাপের মনোহরা। নীচে রাখা বড় বোঁদে। দোকানি বৃদ্ধ কাকাবাবু হাতে দিলেন একটা বোঁদে। বললেন একটা খেয়ে দেখো বাবা। আমিও পুরে দিলাম মুখে। তারপর নিজের মুঠোফোনে তুলে নিলাম কয়েকটা ছবি (যা পোস্টের সাথে সংযোজিত)। তারপর বেঁধে নিলাম কিছুটা। অমৃতের স্বাদ তো ধীরে সুস্থে আস্বাদন করতে হয়। তাই না?

হুগলি জেলা মিষ্টির জেলা। ছানা আর তার অদ্ভুত সুন্দর পাকের জন্য খ্যাত। তারই একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল জনাই। জনাই আজও আছে জনাইতেই। মনোহরার স্বাদে তার জুড়ি মেলাই ভার। কী। একবার আসবেন নাকি? অমৃতসেবনের জন্য অসুরকূল অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছিল। আপনি নাহয় একটা ছুটির দিনে হাওড়া স্টেশন থেকে নেহাত ট্রেনেই চড়বেন। জয় হো। বেঁচে থাক জনাই, বেঁচে থাক মনোহরা।

1720541518267-removebg-preview.png


Onulipi_08_07_01_37_53-removebg-preview.png

চিত্রগ্রহণ
ইনফিনিক্স হট ৩০
ক্যামেরা স্পেশিফিকেশন
৫০ মেগাপিক্সেল
স্ট্যাটাস
আনএডিটেড
চিত্রগ্রাহক
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
লোকেশন
হুগলী, পশ্চিমবঙ্গ
কভার ছবি এডিটিং সৌজন্য
অণুলিপি

🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

আজকের টাস্ক -

Screenshot_20241125-233557.jpgScreenshot_20241125-233534.jpgScreenshot_20241125-233431.jpg