কলকাতার গর্ব ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো করিডর - প্রথম চড়ার অভিজ্ঞতা

in hive-129948 •  4 months ago 

কলকাতার গর্ব - ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো পরিসেবা


🚇🚇🚇🚇🚇🚇🚇🚇🚇


Brown Beige Simple Photo Collage Scrapbook_20240722_234942_0000.jpg

আজ যে বিষয়টা নিয়ে আলোকপাত করব তা আপনাদের ভালো লাগবে বলেই আশা রইল। আজ একটা কাজে যেতে হয়েছিল কলকাতার বই হাব কলেজ স্ট্রিটে। তারজন্য হাওড়া স্টেশন থেকে একটা বাস ধরে নিলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া যেত সেখানে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সুযোগ হয়ে ওঠেনি হাওড়া থেকে ধর্মতলা রুটের নতুন গ্রীন লাইন মেট্রো চড়ার। এই মেট্রো শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতের গর্ব। কারণ এই মেট্রো এমন এক রেল রুট যা ভারতের বুকে তৈরি করেছে এক নজির। এটি তৈরি হয়েছে ভাগীরথী গঙ্গার তলদেশ ফুঁড়ে। অর্থাৎ এই মেট্রো গঙ্গার তলা দিয়ে সুড়ঙ্গপথে যুক্ত করেছে হাওড়া ও কলকাতা শহরকে। আজ সুযোগ করে চড়ে বসলাম সেই মেট্রোয়। হাওড়া স্টেশনের লাগোয়া গড়ে উঠেছে হাওড়া মেট্রো স্টেশন। আজ এই মেট্রোয় প্রথমবার চড়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এতকাল গঙ্গার উপর দিয়ে হাওড়া ব্রিজে উঠে কলকাতা গেছি বহুবার। অথবা হুগলী নদী জলপথে স্টিমারে চড়াও গঙ্গা পার করেছি অসংখ্য বার। কিন্তু গঙ্গার তলদেশ দিয়ে এপার ওপার.... কদাচিৎ না। এই প্রথম।

IMG_20240722_123311_117.jpg

হাওড়া মেট্রো স্টেশন

আজ তাই এই অভিজ্ঞতা ও আনন্দ ভাগ করতে এলাম আপনাদের সামনে। হাওড়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে প্রথমেই হেঁটে পৌঁছে গেলাম মেট্রো স্টেশনের অভিমুখে। ওপর থেকে দেখে নিরীহ দুটি সামান্য দরজা মনে হলেও, ভেতরে ঢুকলে বুঝবেন, সে যেন এক বিশাল কর্মকাণ্ড। মাটির তলায় যেন এক আস্ত নগরী। ঝাঁ চকচকে চারপাশ, আর তার মধ্যে ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাওয়ার পথ। আপনি সুবিধামতো বেছে নিতে পারেন সাধারণ সিঁড়ি বা চলন্ত সিঁড়ি অথবা লিফট বা এলিভেটরের অপশন। নামতে নামতে জানতে পারলাম এই স্টেশনটি মাটি থেকে ৩০ মিটার ভেতরে। একবার ভেবে দেখুন তো। মাটির ৩০ মিটার বা প্রায় ৯০ ফুট গভীরে প্রতিদিন ছুটে চলেছে মেট্রো রেল৷ প্রায় ১০ তলা বাড়ির সমান গভীর। মানব সভ্যতার এমন সব অগ্রগতি চমকে দেয় মাঝেমাঝে। টেকনোলজির উন্নতি কোন জায়গায় গেলে মানুষ ট্রেন চালাতে পারে ভাগীরথীর তলদেশেরও নিচে সুড়ঙ্গপথ তৈরি করে। যাই হোক, হাওড়া মেট্রো আমাকে বেশ মুগ্ধতা এনে দিল৷ আশপাশের দেওয়াল চিত্র, অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা বেশ চমকে দেওয়ার মত। আজ সেই মেট্রোয় চড়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম৷

IMG_20240722_123944_803.jpgIMG_20240722_123420_791.jpg

স্টেশনের ভেতরের সাজসজ্জা

আপনারা জানেন ভারতের মধ্যে কলকাতা শহর চিরকালই সবকিছু সূচনার পাইওনিয়ার। দেশের মধ্যে ব্রিটিশদের সৌজন্যে প্রথম ট্রাম লাইন পাতা হয় এই শহরে৷ আবার ১৯৮৪ সালে প্রথম মেট্রোরেল চালু হয় এই শহরেই। এমনকি দেশে প্রথম ক্যান্টিলিভার ব্রিজও তৈরি হয় এই কলকাতাতেই৷ যাকে আমরা হাওড়া ব্রিজ বলে চিনি৷ আর দেশে প্রথম কোনো নদীর তলদেশ ফুঁড়ে মেট্রো পরিসেবাও শুরু হল এই তিলোত্তমা কলকাতাতেই। এমনই আমাদের কলকাতা শহর।

IMG_20240722_124927_473.jpgIMG_20240722_125106_088.jpg

প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রোর ভেতর

আজ হাওড়া থেকে এসপ্ল্যানেড গামী মেট্রোয় চড়ে গেলাম সম্পূর্ণ পথটাই। অর্থাৎ হাওড়া স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত। এই যাত্রাপথে মোট চারটি স্টেশন। হাওড়া ময়দান, হাওড়া, মহাকরণ এবং এসপ্ল্যানেড। পরবর্তীকালে এটি সল্টলেক পর্যন্ত সম্প্রসারণ হয়ে যাবে। যদিও বর্তমানে এই রুটেরই আরেকটি অংশে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা বহাল আছে। এই মাঝের অংশটি শুধু জুড়ে গেলে কলকাতার ও হাওড়ার মানুষের নিত্যযাত্রায় এক নতুন জোয়ার আসবে তা বলাই বাহুল্য।
আজ এই যাত্রাপথে কিছু জিনিস লক্ষ্য করলাম। কলকাতায় এটিই প্রথম মেট্রো পরিসেবা যেখানে প্ল্যাটফর্মেও বসানো আছে অটোমেটেড ডোর। ট্রেন আসার সাথে সাথে ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজা একসাথে খোলে। বিভিন্ন অত্যাধুনিক ব্যবস্থা সম্পন্ন এই পরিসেবা আজ সারা দেশে কলকাতা থেকে এক আধুনিকতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
হাওড়া মেট্রোর একটি অত্যাধুনিক দিক হলো এর যাত্রী সুরক্ষা। যাত্রী সুরক্ষার দিকেই রেল কোম্পানি সবথেকে বেশি নজর দিয়েছে। এই চ্যানেলকে গ্রীন লাইন চ্যানেল ও চিরাচরিত পুরনো লাইনকে ব্লু লাইন বলে নামকরণ করা হয়েছে। গ্রীন লাইন মেট্রো যেন নতুন রূপে সজ্জিত। এসপ্ল্যানেড স্টেশন এই দুই মেট্রোর লাইনের জংশন। এখানে এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে পরিবর্তন করে যেকোনো জায়গায় পৌঁছে যাওয়া যায় খুব সহজে। আজ যেমন আমি হাওড়া থেকে গ্রীন লাইন মেট্রোয় চড়ে এসপ্ল্যানেড স্টেশনে আবার ব্লু লাইন মেট্রো ধরে পৌঁছে গেলাম মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশনে। কারন আমার গন্তব্য ছিল কলেজস্ট্রিট। আর মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশন থেকে সহজেই হেঁটে পৌঁছে গেলাম নিজের গন্তব্যে।

IMG_20240722_124729_378.jpg

প্ল্যাটফর্মে তখন মেট্রো রেল

প্রথম বার গ্রীন লাইন মেট্রো চড়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে। ঘরের কাছাকাছিই এই মেট্রো কিছুদিন আগে থেকেই চালু হয়ে গেলেও ঠিকমতো সুযোগ হয়ে ওঠেনি নিজে চড়ে অভিজ্ঞতা করার। কিন্তু আজ সেই সুযোগ এসে গেল। আর আমিও চড়ে নিলাম হাওড়া কলকাতা সংযোগকারী এই প্রধান অত্যাধুনিক যানবাহনে।

IMG_20240722_131101_164.jpg

এসপ্ল্যানেড স্টেশনে


(কভার ছবিটি ক্যানভা অ্যাপে এডিটিংয়ে নির্মীত এবং সকল ছবি ইনফিনিক্স হট ৩০ মোবাইলে সংগৃহীত)


(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)


Banner_New.png


new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।


Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Your post has been rewarded by the Seven Team.

Support partner witnesses

@seven.wit
@cotina
@xpilar.witness

We are the hope!