কেটে গেল শিক্ষক দিবস। স্বীকৃতি পাওয়ার একটি দিন।
৫ই সেপ্টেম্বর। শিক্ষক দিবস। সারা ভারতজুড়ে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে পালিত হয় এই দিনটি। শুধুমাত্র শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্য করে আজকের দিনে সকলে মেতে ওঠেন শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে৷ দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত থাকার জন্য আজকের দিনটি বরাবরই বড় স্পেশাল। প্রতিবছর আমরা শিক্ষকরা অপেক্ষা করে থাকি আজকের দিনটার জন্য। প্রতিটি দিন যতটা মানসিক ও তাত্ত্বিক স্তরে যুক্ত হয়ে মিশে যাই ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে, তারই স্বীকৃতি যেন আজকের দিনটি৷
যদিও প্রত্যেকটি দিনই আমার কাছে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিবেদিত। তাদের নিয়েই সময় কাটে দিনের বেশিরভাগ অংশই৷ প্রতিদিন সকাল শুরু হয় তাদের সকলের সঙ্গে বিভিন্ন রকম সময় শেয়ার করার অভিজ্ঞতা দিয়ে। কখনো তারা কোন সমস্যা নিয়ে ছুটে আসে আমার কাছে। আবার কখনো আমারই সমস্যা মিটিয়ে দেয় এক লহমায়। এমনই তাদের আত্মিক যোগাযোগ। আর আজ শিক্ষক দিবসে তারা সকলেই মিশে থাকে প্রতিটি শিক্ষকের সঙ্গে। তার সূত্র ধরেই তাদের কাছ থেকে আজকের ভালোবাসা আমায় আবেগাপ্লুত করে দেয় প্রতিনিয়ত।
শিক্ষক দিবসের প্রসঙ্গে বলে রাখি, আজকের দিনটি আসলে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি এবং বিখ্যাত শিক্ষক ভারতরত্ন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন। ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে। তারপর মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর তিনি গবেষণা করেন 'বেদান্ত দর্শনের বিমূর্ত পূর্বকল্পনা' বিষয়ে। ১৯৩১ সালে তাকে ব্রিটিশ নাইটহুড সম্মানে সম্মানিত করা হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি ভারতের অসামরিক সর্বোচ্চ সম্মান ভারতরত্নতে ভূষিত হন। এই মহান পন্ডিত শ্রী সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন ৫ই সেপ্টেম্বর ভারতবর্ষ জুড়ে প্রতিবছর পালিত হয় শিক্ষক দিবস হিসাবে।
এবার আসি আজ আমার স্কুলে শিক্ষক দিবসে আমার প্রাপ্তির বিষয়ে। আজ একটি সুন্দর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্কুলে পালিত হলো শিক্ষক দিবস। প্রতিটি ছাত্রছাত্রী মেতে উঠেছিল সেই অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে। সবথেকে ভালো লাগবার একটি বিষয় হলো, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এসে তাদের কাগজে আমাদের সই নিয়ে যায়। তাই ওই কচিকাঁচারের খাতায় সই করতে করতে হাতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু তাও তাদের ফেরাতে ইচ্ছা হয় না। আজ এই দিনটিতে শুধু ইচ্ছে করে তাদের প্রশ্রয় দিতে। এরপর অনুষ্ঠানে ছাত্রদের থেকে বহু পেন পেলাম। প্রতিবছরেই এই দিনটিতে আমার পেনের ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। আজও ঠিক তাই হল। এছাড়াও পেলাম একটি সুন্দর টেবিল কামিনী গাছ। এই গাছটি দেখতে যেমন সুন্দর, এর টবটিও ততটাই সুন্দর। এছাড়াও পেন রাখার দানি, বহু চকোলেট এলবং টফি তো আছেই। এছাড়াও আজকের অনুষ্ঠানে একটি আকর্ষণীয় বিষয় ছিল স্কুলের সব শিক্ষকদের ছাত্রদের তরফে ট্যাগলাইন প্রদান। অর্থাৎ তারা নিজেদের পছন্দমত বিভিন্ন নাম দেওয়া ব্যাচ পরিয়ে দিচ্ছিল আমাদের। আমায় যে ব্যাক্তি দিল তার ট্যাগলাইন হলো, হোয়াইট হেড কোডার৷ আসলে কম্পিউটার সায়েন্স এর শিক্ষক বলে তারা আমাকে ক
কোডার বলেই চেনে। কারণ দিনের সিংহভাগ সময়ই তাদের সঙ্গে আমার কথা বলবার একমাত্র উদ্দেশ্য হল প্রোগ্রামিং বা কোডিং।
সবকিছু মিলিয়ে বেশ হইচই করেই কেটে গেল আজকের দিনটি। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পুরো দিনটি থাকবার পর স্কুল থেকে আয়োজন করেছিল দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজের। স্কুলের তরফে কেক কাটার পর মধ্যাহ্নভোজনে ফ্রাইড রাইস এবং চিলি চিকেন মন ও পেট একেবারে ভরিয়ে দিল। খাওয়া দাওয়ার পর স্কুল থেকে বেরিয়ে এলাম সমস্ত উপহার সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে। আর সঙ্গে রয়ে গেল একটি উপভোগ্য দিন। শিক্ষক দিবসের এই স্মৃতি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগছে। শিক্ষক দিবস নিয়ে আপনাদেরও জীবনে বিভিন্ন স্মৃতির কথা থাকলে কমেন্ট বক্সে নিশ্চয়ই জানাবেন।
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
https://x.com/KausikChak1234/status/1831783861250093455?t=FcCK6-Jvu37wubndmHueqQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আপনার সুন্দর অনুভূতি আমাদের মাঝে ব্যক্ত করেছেন। আপনার চমৎকার এই অনুভূতির মধ্য দিয়ে অনেক কিছু জানার সুযোগ মিললো। যেখানে আপনারা শিক্ষক দিবসটা সম্মান ও মর্যাদার সাথে উদযাপন করেছেন। আর তার কিছু আলোচনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন জানানোর জন্য। অনেক অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্ট করে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
হ্যাঁ সুমন ভাই৷ এই দিনটা সব শিক্ষকের কাছে এক অন্যরকম প্রাপ্তি৷ পুরো দিনটাই যেন ছাত্রদের জন্য নিবেদিত। ভালো থাকবেন। আপনার মন্তব্য খুব ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit