এক ব্যাগ লাল ভালোবাসা। || by @kazi-raihan

in hive-129948 •  7 months ago 

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ১৪ই ফাল্গুন | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | বসন্তকাল|


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



20240227_131453_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



পোস্টের টাইটেল দেখে অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছেন আসলে আজকে কি বিষয় নিয়ে কথা বলব। আসলে অনেকবার রক্ত দেয়া হয়েছে কিন্তু রক্ত দেওয়া নিয়ে কমিউনিটিতে কোন পোস্ট শেয়ার করা হয়নি তাই ভাবলাম একটা পোস্ট শেয়ার করা দরকার। চিন্তা করে দেখলাম আমি যদি রক্ত দেওয়ার পোস্ট কমিউনিটিতে শেয়ার করি আর সেই পোস্ট দেখে একজন যদি রক্ত দেয়ার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে সেটা আমার বড় সার্থকতা। কালকে ডিস্কোর্ডে তিথি রানী দিদির সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন তিনিও বলছিলেন ভাল কাজগুলো শেয়ার করতে হয় তাহলে সেটা অন্যরা দেখে ভালো কাজগুলো করার প্রতি আগ্রহ পায় তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম রক্ত দেওয়া নিয়ে পোস্ট শেয়ার করবোই।

কালকে দুপুর বেলায় হঠাৎ করেই আমার এক বন্ধু ফোন করে বলল তার চাচী অনেক অসুস্থ এক ব্যাগ রক্তের দরকার। ফোন করে আমাকে বলল তোর বি পজেটিভ রক্ত তোর থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিতে হবে দ্রুত রেডি হ। আমি বাজারেই ছিলাম সে আমাকে বলল আমি তোদের দোকানের সামনে আসতেছি তুই দুই মিনিট অপেক্ষা কর। দুই মিনিট হওয়ার আগেই সে আমার সামনে এসে উপস্থিত। হুটহাট করেই তার বাইকে চড়ে রক্ত দেওয়ার জন্য রওনা হলাম। শেষ বেলার দিকে কয়েকদিন ধরে বেশ ভালোই ঠান্ডা পড়ছে তাই ভাবলাম সিঙ্গেল সোয়েটার টা নিয়েই যাই। তার জন্য তাকে আবার বাড়িতে যেতে বললাম। বাড়ি থেকে সোয়েটার নিয়ে সোজা আমি হাসপাতালের দিকে যেতে বললাম। যেহেতু খোকসা হাসপাতাল আমাদের এলাকা থেকে খুব বেশি দূরে নয় আনুমানিক আট কিলোমিটার দূরে হবে। খুব দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম আর সেখানে নেমেই জিজ্ঞেস করলাম আমি যে রোগীকে রক্ত দিব আসলে তার কি সমস্যা?? জানতে পারলাম সিজারের রোগী তারপরে আর বিস্তারিত কিছু জিজ্ঞেস করিনি।



20240226_174254.jpg

20240226_173649.jpg

20240226_173658.jpg

20240226_174515.jpg

20240226_174552.jpg

20240226_174646.jpg

20240226_174737.jpg



সোজা হাসপাতালে পৌঁছে ভেতরে গিয়ে আমার রক্ত পরীক্ষা করার জন্য রক্ত দিলাম মূলত তারা প্রথমে জিজ্ঞাসা করেছিল আপনি কোন হাত থেকে রক্ত দিবেন যেহেতু কম বেশি কাজ করা হয় তাই বাম হাত থেকে রক্ত দেওয়াই সুবিধা। কেননা রক্ত দেওয়ার এক দুই দিন পর্যন্ত হাতে অনেক সময় একটু ব্যথা হয়। যেহেতু আমি বাম হাত থেকে রক্ত দেওয়ার কথা বললাম তাই তিনি আমার ডান হাত থেকে কিছুটা রক্ত নিলেন আর রক্ত পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়ে দিলেন আর আমাকে বললেন আপনি এখানে বসে অপেক্ষা করুন সেই সাথে পানি আর গ্লুকোজ খেতে থাকুন। আমি সেখানে বসে বসে পানি আর গ্লুকোজ খাচ্ছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম কখন রিপোর্ট আসবে আর আমি রক্ত দিব।



ল্যাব থেকে রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি রক্ত দেওয়ার জন্য ভেতরে গেলাম। সেখানকার স্টাফ রক্ত নিচ্ছিল আর রক্ত যেন দ্রুত বের হয় তার জন্য হাতের মধ্যে একটি তুলার বল দিয়ে দেয়া হলো আর বলছিলেন সেটা যেন ঘন ঘন পাম্প করি। মূলত যত ঘন ঘন পাম্প করা যায় রক্ত তত দ্রুত বের হবে। তবে কেন যেন এবার রক্ত খুব আস্তে আস্তে বের হচ্ছিল। এর আগেরবার যখন রক্ত দিয়েছিলাম তখন তুলনামূলক একটু দ্রুতই হয়েছিল। আমি যখন রক্ত দিচ্ছিলাম তখন আমার বন্ধু কয়েকটি ছবি তুলেছিল। যাই হোক পুরোপুরি এক ব্যাগ রক্ত হতে তিন থেকে চার মিনিট সময় লাগলো আর ব্যাগ পুরোপুরি হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুচ খুলে সেখানে তুলা দিয়ে দেওয়া হলো। আমি সর্বোচ্চ দুই মিনিট বেডের উপরে রেস্ট নিলাম তারপরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম আর দেখলাম ব্যাগের উপরে রোগীর নাম এবং যে রক্ত দিয়েছে তার নাম উল্লেখ করে রাখা হয়েছে। সেটা দেখেই আমি একটা ছবিও তুলেছিলাম বটে।



20240226_175202.jpg

20240226_175257.jpg

20240226_175304.jpg

20240226_175952.jpg

20240226_181736.jpg



রক্ত দেওয়ার শেষে রিসিপশন রুমে গিয়ে আবার কিছু সময় বসলাম তখন আবারো গ্লুকোজের পানি দেওয়া হল সেটা বসে বসে খাচ্ছিলাম। যেহেতু একজন মহিলাকে সিজার করা হয়েছে তাই রোগীকে আর দেখতে যাই নি। কিছু সময় পর আমার বন্ধু বের হয়ে আসলো তখন আমি বললাম এখানকার একজন স্টাফ ডাকতে একটা ইনজুরি টেপ যেন আমার হাতে লাগিয়ে দেয়। কারণ তখন বাইরে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল হালকা ঠান্ডা থাকার কারণে সোয়েটার পড়ার প্রয়োজন ছিল তাই সেখানে ইনজুরি টেপ লাগিয়ে নিলাম। বাইরে এসে দেখলাম সন্ধ্যা ভাব হয়ে গিয়েছে, রক্ত দেয়ার পরে আমরা সবাই একটি ডিমের দোকানে গেলাম আর সেখানে গিয়ে সেদ্ধ ডিম খেলাম।



রক্ত দেওয়ার পরে আমার বন্ধু ফলের দোকানে নিয়ে অনেকগুলো ফল কিনে দিতে চাইল কিন্তু আমি যাকে রক্ত দিয়েছি তারা আর্থিকভাবে খুবই দরিদ্র তাই কিছুতেই নিতেই রাজি হলাম না। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা জোর করে আমাকে ফল কিনে দিবেই তখন বাধ্য হয়ে অল্প সামান্য কিছু টাকার ফল নিয়ে তাদেরকে রিকোয়েস্ট করলাম যেন আর কোন ফল না কিনে। তারাও আমার কথা রাখার জন্য রাজি হয়ে গেল মূলত তাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় এজন্যই আমিও চাইছিলাম তাদের বাড়তি যেন কোন খরচ না হয়। আপনারা যারাই আমার পোস্ট পড়েছেন তাদেরকে বলছি প্রতি তিন থেকে চার মাস পরপর সুযোগ পেলেই রক্ত দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমাদের শরীরের রক্ত কণিকা গুলো তিন মাস পর পর মারা যায় আর নতুন রক্ত কণিকা গঠিত হয়। তাই চেষ্টা করবেন যতদূর সম্ভব রক্ত দিয়ে মানবিক কাজে নিজেকে সংযুক্ত রাখতে।



⬇️📥⬇️📥
ডিভাইসSamsung galaxy A52
ফটোগ্রাফার@kazi-raihan
লোকেশন
সময়ফেব্রুয়ারি,২০২৪



🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


20231103_120723-01.jpeg

আমি কাজী রায়হান।আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

লাল ভালোবাসা দিয়েছেন ভাই। দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে রক্ত দিয়ে মানুষের সেবা করার মত বড় সেবা আর কিছু হতে পারে না। আপনার বন্ধুর চাচী অসুস্থ হওয়াতে আপনি রক্ত দিতে রাজি হয়ে গেলেন। এটি অনেক বড় একটি কাজ করেছেন। আমাদের সমাজে প্রত্যেকটা মানুষের যদি এরকম সচেতন হয় তাহলে রক্তের অভাবে আর কোনো রোগীর কষ্ট পাবে না।

Posted using SteemPro Mobile

তিথি দিদি বেশ ভালোই বলেছেন ৷ আসলে ভালো কাজ গুলো আমাদের সবার সাথে ভাগ করে নেওয়া উচিত ৷ এতে অন্যরা উৎসাহিত হতে পারে আপনার এই ভালো কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ৷ যাই হোক , মানুষ মানুষের জন্য ৷ আপনি আপনার বন্ধু চাচীকে রক্ত দিয়েছেন জেনে খুবই ভালো লাগলো ৷ এটা খুবই ভালো কাজ , আশা করি এভাবেই পাশে থাকবেন মানুষের ৷ আপনার জন্য অনেক অনেকে শুভকামনা রইল ৷

Posted using SteemPro Mobile

ভাই কি বলবো আপনি যে কত মূল্যবান ভালোবাসা দিযেছেন সত্যি ৷ এক ব্যাগ রক্ত একটা মানুষের জীবন বেঁচে থাকার আলো হয়ে দারায় ৷ যার জন্য সেইসব মানুষ কে অনেক সম্মান করি ৷ যার মধ্যে আপনি একজন ৷ একজন মায়ের প্রসবকালীন যন্ত্রণায় একটা মায়ের জীবন রক্ষা করেছেন ৷

সত্যি বলতে ভাই দিনশেষে একটা কথা সবার জানা উচিত ৷ মানুষ মানুষের জন্য ৷

আসলে রক্ত দেওয়া অনেক বেশি ভালো একটা কাজ। আর অনেকে ই রক্ত দিয়ে থাকে অন্যজনকে। আপনি অনেক বড় একটা মহৎ কাজ করেছেন। আপনার বন্ধুর চাচীকে রক্ত দিয়ে ভালোই করেছেন। আমাদের জন্য যদি কোন মানুষ প্রাণে বেঁচে যায় এবং কোন মানুষের ভালো কিছু হয় তাহলে নিজের কাছেও অনেক বেশি ভালো লাগে। আশা করছি এখন আমার বন্ধুর চাচি অনেক বেশি ভালো আছে। আসলেই কেউ যদি ভালো কিছু করে, তাহলে তার ভালোটা দেখলে অনেকেই সেই কাজ করার প্রতি আগ্রহী হবে। তেমনি আপনার এটা দেখেও অনেকে আগ্রহী হবে। অনেক বেশি ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার আজকের এই পোস্ট।

আমি তো বেশিরভাগ সময় মানুষকে রক্ত দিয়ে থাকি। অনেক আগের থেকেই আমি রক্ত দিয়ে আসতেছি। এই কাজটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। কাউকে নিজের মাধ্যমে সুস্থ করতে পারলে তো আরো বেশি ভালো লাগে নিজের কাছে। আর রক্ত দেওয়া হচ্ছে অনেক বড় একটা মহৎ কাজ। আপনি আপনার বন্ধুর চাচীকে রক্ত দিয়ে ভালোই করেছেন। আমরা যদি মানুষের পাশে থাকি, তাহলে সৃষ্টিকর্তা আমাদের পাশে থাকবে সারা জীবন। আর এরকম সময়ে এরকম ভাবে কারো পাশে দাঁড়ালে অনেক ভালো লাগে।