বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তান: আমার ১০ দিনের এক বিস্ময়কর যাত্রা

in hive-129948 •  12 days ago 


আমার নাম মাহদী, আর আমার সঙ্গী টিপু, যে আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাদের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল এক শীতল সকালে, যখন আমরা বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানের দিকে পা বাড়ালাম। নতুন সংস্কৃতি, নতুন মানুষ আর ইতিহাসের ছোঁয়া পেতে আমরা দুজনেই উৎসুক ছিলাম। এই গল্পটি শুধুমাত্র ভ্রমণের নয়, এটি আমাদের এক নতুন অভিজ্ঞতার গল্প।

প্রথম দিন: ঢাকা থেকে কাবুল:

আমাদের যাত্রা শুরু হয় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল পৌঁছাতে আমাদের ফ্লাইট ছিল সংযোগকারী, তবে লম্বা যাত্রা আমাদের উত্তেজনা কমাতে পারেনি। কাবুল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর, আমরা তাজা পোহা আর গরম চায়ের স্বাদ নিয়ে দিন শুরু করি। এখানকার মানুষজন অতিথিপরায়ণ; তাদের হাসিমুখ আর আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ হই।

দ্বিতীয় দিন: কাবুলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য:

কাবুল শহরের ভেতর দিয়ে আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল বাবর গার্ডেন। এই ঐতিহাসিক স্থানটি মুঘল সম্রাট বাবরের সমাধির জন্য বিখ্যাত। চারদিকে সবুজ বাগান আর শান্ত পরিবেশ আমাদের মন কাড়ল। এরপর আমরা গেলাম জাতীয় জাদুঘর, যেখানে আফগানিস্তানের হাজার বছরের ইতিহাস ফুটে উঠেছে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার সময় আমরা আফগানিস্তানের বিখ্যাত কাবুলি পোলাও চেখেছি। চাল, গাজর, বাদাম আর মাংস দিয়ে তৈরি এই খাবার আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে।

তৃতীয় দিন: পানশির উপত্যকা ও এর গল্প:

তৃতীয় দিনে আমরা কাবুল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত পানশির উপত্যকায় যাই। এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পাহাড়ি নদী আমাদের অভিভূত করে। এখানে আমরা স্থানীয় কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ করি, যারা তাদের জীবনযাত্রার কথা শেয়ার করেন।

চতুর্থ ও পঞ্চম দিন: বামিয়ানের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান:

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল বামিয়ান প্রদেশ। এটি বিখ্যাত বৌদ্ধ মূর্তির জন্য, যা একসময় বিশ্বের উচ্চতম স্থায়ী মূর্তির মধ্যে ছিল। যদিও মূর্তিগুলো আজ ধ্বংস হয়ে গেছে, তবু এখানকার গুহাগুলোর শিল্পকর্ম দেখে আমাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ পড়ে। স্থানীয় একটি পরিবার আমাদের আমন্ত্রণ জানায় তাদের সাথে রাতের খাবার খেতে। আমরা সেখানে আশাক নামের একধরনের ডাম্পলিং আর স্থানীয় রুটি খেয়েছি। তাদের সরলতা আর আতিথেয়তা আমাদের মন ভরিয়ে দেয়।

ষষ্ঠ দিন: মাজার-ই-শরীফ:

বামিয়ান থেকে আমরা যাই মাজার-ই-শরীফ। এটি বিখ্যাত ব্লু মসজিদ বা হাজরাত আলির মাজারের জন্য। নীল রঙের টাইলস দিয়ে তৈরি মসজিদটি সত্যিই চোখ ধাঁধানো। এখানে আমরা এক স্থানীয় ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিই, যা ছিল এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

সপ্তম ও অষ্টম দিন: কান্দাহারের ঐতিহ্য:

আমাদের যাত্রার শেষ দিকের অংশ ছিল কান্দাহার। এটি আফগান সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। এখানে আমরা স্থানীয় বাজার ঘুরে কারাকুল পশমের টুপি আর কিছু স্থানীয় হস্তশিল্প কিনি। কান্দাহারে আমরা আফগানিস্তানের বিখ্যাত গ্রিন টি পান করি। সন্ধ্যায় আমরা কিছু যুবকদের সঙ্গে আড্ডা দেই, যারা আমাদের তাদের গান ও নাচের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

নবম দিন: হার্টের স্মৃতি:

হার্ট শহরে আমাদের ভ্রমণ ছিল কল্পনার মতো। হার্টের প্রাচীন দুর্গ দেখে আমরা ইতিহাসে হারিয়ে যাই। এখানকার রাস্তাগুলো মনে হয় যেন শত বছর আগের দিনের গল্প বলে।

দশম দিন: বিদায়ের আক্ষেপ:

আমাদের ভ্রমণের শেষ দিন কাবুলে কাটাই। শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমরা আফগান কাবাব আর শুকনা ফল খেয়ে বিদায় নিই। এই ১০ দিনের যাত্রা আমাদের জন্য শুধু ভ্রমণ ছিল না, এটি ছিল জীবনের এক নতুন অধ্যায়। আফগানিস্তানের মানুষ, খাবার, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

এটাই আমার গল্পের শুরু। সামনে আরও অনেক দেশ ঘুরব, আরও গল্প শেয়ার করব। আশা করি, আপনাদের সঙ্গে এই যাত্রাগুলোর কথা ভাগাভাগি করতে পারব।

Posted using SteemMobile

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আপনি কমিউনিটি রুলস ভঙ্গ করেছেন। আপনি নিজের ফটো অথবা কঁপিরাইট ফ্রী ফটো ছাড়া আপনার পোষ্টের মধ্যে ব্যবহার করতে পারবেন না।

কমিউনিটির নিয়মাবলী :
https://steemit.com/hive-129948/@rme/last-updated-rules-of-amar-bangla-blog-community-16-aug-22

যে কোন বিষয়ে জানার প্রয়োজন হলে আমাদের সাথে Discord এ যোগাযোগ করুন।

Discord server link: https://discord.gg/ettSreN493

Source : internet