অপেক্ষাকৃত বড় হবার পর ছোট বেলার কথা মনে পড়লেই আমার চোখের সামনে মুহুর্তের মধ্যে এক রঙিন ছোটবেলা ভেসে ওঠে। কি দুরন্তই না ছিলাম তখন আর কি রকম ভাবনাহীন দিন! সেই সাথে ছিলাম অনেক বোকা; এবং এর রেশ এখনো কিছুটা রয়ে গিয়েছে। সব মিলে ছোটবেলা যেমন হওয়া উচিত, আমার জন্য সেটা অতটা দুরন্ত বা দুর্দান্ত ছিল না মোটেই।
ছোটবেলা থেকেই বন্ধু-বান্ধবে আমার একটু বাছ বিচার ছিল। যে কারো সাথে ২ দিন ঘুরলাম বা তার সাথে কোন ঝগড়া হল না বলেই যে তাকে বন্ধু বানিয়ে নিব সেই রকম ভদ্র ও ভাল বাচ্চা আমি ছিলাম না। বন্ধু বানানো দূরে থাক কারো সাথে কিছু সময়ের জন্য মিশতে গেলেও আমি তাকে আগে একটুখানি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে নিতাম। আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ তিনি আমার মধ্যে এই সুন্দর বিষয়টা দিয়েছেন। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই এই কারণে অনেক বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছি।
আমি চাইতাম আমার বন্ধু-বান্ধব অনেকটা আমার মত হোক। ছোটবেলায় চাইতাম যেন তারা শুধু আমার সাথেই খেলে। বন্ধু বলতে আমার ধ্যান-জ্ঞানে যেমন তারা থাকবে তেমনি তাদের ধ্যান-জ্ঞানেও যেন আমি থাকি। যতই বড় হচ্ছিলাম এই ব্যাপারটা ততই আমার মাঝে গেথে যাচ্ছিল। শেষে ব্যাপারটা এমন দাড়ালো যে তারা আমার বন্ধু; এর মানে শুধু আমার। অন্য কারো সাথে তাদের কোন প্রয়োজন বা কাজ থাকতে পারবে না। সব মিলে একটা খুব জটিল সাইকলজীর দিকে চাচ্ছিল। আর যখন বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা কতটা ভয়াবহ কারণ আমি অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছিলাম, তখন একটু কষ্ট হলেও নিজেকে সংবরন করি। আর আলহামদুলিল্লাহ সফলও হয়েছি।
তবে বন্ধু বাছা বাছি করার স্বভাব কিন্তু যায়নি এখনো। কারণ এই স্বভাবকে আমি সযত্নে সংরক্ষণ করেছি। জীবনে বন্ধু ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সংগ দোষেই লোহা ভাসে; আবার অন্যদিকে সৎ সংগে স্বর্গবাস হয়।
এই জন্য আমার ২২-২৩ বছরের জীবনে বন্ধু হয়েছে হাতেগোনা কয়েকজন। সব মিলে সেই সংখ্যা ১২-১৩ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই ১২-১৩ জন কিন্তু আমার জীবনে সব সময় বন্ধু হিসেবে থাকেনি। এদের ২ জন আমার ফুফাতো বোন, ২ জন প্রাইমারি লেভেলের বন্ধু (যাদের একজনকে হঠাত করে হারিয়ে ফেলি। সে একদিন স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয় যখন বেবি তে পড়তাম।), হাই স্কুল আর কলেজ মিলে আর ২ জন। আর বাদ বাকী গুলো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধু।
আমার ২ ফুফাতো বোনের মধ্যে একজনকে আমি একটু বেশি পছন্দ করতাম। এত পছন্দ করতাম যে একদিন তার বিয়োগে আমার জ্বর চলে এসেছিল। এরও কয়েক বছর পর বুঝে গেলাম এরা আমার জন্য নয় বা আমার মত নয়। তারপর থেকেই দূরত্ব তৈরি করে নিজের জীবনে মনযোগ দিয়েছিলাম।
পুরো স্কুল জীবন শুধু আমার সাথে ম্যাচ হবে এমন কাউকে খুজেছি। প্রথম ৭ বছর কাউকেই পাইনি, কিন্তু পরে একসাথে ২ জনকে পেলাম। তাদের সাথে ৭/৮ বছরের সবচেয়ে ভাল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছি। তারা বা আমরা কেমন ছিলাম বা আমার বন্ধু বিচারের মাপকাঠিগুলো কি সেগুলো বিস্তারিত না বলি। কারণ সবার জীবনবোধ এক নয়, আর আমি কারো সেই বোধে আঘাতও করতে চাইনা। শুধু এটুকু বলতে পারি তাদের খুব সুশীল মনের মানুষ হতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়েও আমার বন্ধুসংখ্যা সীমিত। সব মিলে ৪/৫ জন হবে হয়ত। কিন্তু এরা কেউই আমার কাছের কেউনা। সবার সাথেই মিশি কিন্তু নিজের একান্ত আপন একটা বান্ধবী বোধহয় আমার এই জীবনে আর হবেনা। আর হবেনা বললাম কারণ এরা অনেকেই ডমিনেটিং। আমার কি ভাল লাগলো না লাগলো সেটা চিন্তা না করে আমাকে দিয়ে কোন একটা কিছু করানোর জন্য প্রেসার দেয় অনেকে। এই ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ না। কেউ আমার উপর জোর করবে সেটা আমি এই জীবনে মানতে পারবনা। তাই যেদিন এই রকম কিছু ঘটে সেটার মানে দাঁড়ায়, আমার একটা বন্ধু বিয়োগের সময় এসেছে।
খুব রিসেন্টলি আমার সাথে এই রকম ঘটনা ঘটেছে। তাই মনে হল এগুলো কিছু শেয়ার করি। মনটা একটু হালকা হলে ভাবতে সুবিধা হবে।
বি. দ্রঃ আমার সাইকোলজি খুব জটিল ধরণের এটা আমি জানি। আর খুবই আনপ্রেডিক্টেবল, ইভেন আমার নিজের কাছেও। তবে সব জটিলতাকে একপাশে রেখে জীবন যুদ্ধে নামতে চাই, কারণ সামনে অনেক পথ বাকি।
আপু, আপনার কেন আমার নিজের স্মৃতি মনে পরে মাঝেমধ্যে। তবে আমি খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যেতাম।তবে আপু আপনার একটা ভালো গুন হচ্ছে, আপনি অনেক ভেবে চিন্তে বন্ধু নিবার্চন করেন।যাই হোক ভালো ছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আপু। আর মাঝে মাঝে সময় পেলে নিজের ফেলে আসা ছোটবেলায় হারিয়ে যাবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনি ঠিক বলেছেন ছোটবেলার স্মৃতি গুলো মনে পড়লে চোখের সামনে যেন স্মৃতিগুলো ভেসে উঠেছে। আমি মনে করি ছোট্ট বেলা কখনো ভুলা সম্ভব নাহ। বড় বেলার যে বন্ধু,,, হইতো অনেক বন্ধুবান্ধব হয় কিন্তু ছোটবেলার মতো আর হয় না। আপু আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভকামনা রইল আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার কথার সাথে আমি একমত আপু । ছোটবেলায় যেমন আমরা বন্ধুদের সাথে সব সময় থাকতে পারতাম তেমনি ভাবে বড় হয়ে সেটা আমাদের সম্ভব হয় না । সবাই তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন ধরনের কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে । অনেক সুন্দর একটি বিষয়ে আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। আসলে জীবনে না চাইলেও অনেক কিছু করতে হয়। তাই এক সময়ের গভীর বন্ধুত্ব মাঝে মাঝে ব্যস্ততার ভিড়ে ফিকে হয়ে যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ যদি এসে বলতো তোমার সব কিছুর বিনিময় আমি তোমার ছোট বেলা দিব আমি সত্যি আমার সব দিয়ে দিতাম।আমাদের ছোট বেলাটা এতো দারুন ছিল এখন এর ছেলে মেয়েরা অতোটা রিয়েলাইজ করেনা।কারন এখন ভারচুয়ালি সব।আমাদের রঙিন সময়টা সত্যি অনেক মিস করি😔😔😔
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি ঠিক আপনার উল্টা চরিত্রের। কেউ আমাকে বন্ধুত্বের অফার দিলে আমি ফিরিয়ে দেয় না। তবে আমি আমার অপছন্দ কিছু গুণের অধিকারী বাদে সবাইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি। তবে এটাও ঠিক বন্ধু নির্বাচনে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। ছোটবেলার যেসব বন্ধু ছিল তাদের সাথে সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হবার না। অনেক সুন্দর লিখেছেন।।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ফটো যেখান থেকে ডাউনলোড দিয়েছেন সোর্স সেইখানকার ইউজ করবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ ভাইয়া। পরবর্তী থেকে ইমেজের সোর্স লিংক দিব।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit