আজকে আমি একদিন পরে লিখতে বসেছি। আসলে আমার ফাইনাল এক্সাম চলে। এজন্য গতকাল সময় দিতে পারিনি। একটু আগেই আসলাম এক্সাম শেষ করে। কিছু জরুরী কাজ আর ছোট খাট একটা শপিং শেষ করে এখন লিখতে বসেছি। আমি আসলে খুব ক্লান্তও, তাই কোন আর্ট বা DIY করতে পারিনি। এজন্য ভাবলাম আমার রিসেন্ট কিছু সুন্দর মুহূর্ত ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
গত পরশুদিন সকালবেলা উঠে আমার বাংলা ব্লগে একটা পোস্ট করলাম।এরপর দুপুরে খেয়ে একটু বই নিয়ে বসলাম, কিন্তু বই পড়া আর হচ্ছিল না। একটা চ্যাপ্টারে আটকে ছিলাম, এজন্য আগাতেও পারছিলাম না। অনেক বিরক্ত লাগছিল। পরে মিরচি বাংলাতে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ কাহিনীর দুর্গ রহস্য শুনতে শুরু করলাম। এরপর অলসতা ভর করল আমার উপর, তাই ভাবলাম গল্পটা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। তখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে। এই টাইমে ঘুম পাওয়া ইদানিং আমার একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। শুতেই যাচ্ছিলাম তখন আমার রুমমেট আপু ফোন দিল। সে আমার রুমমেট হলেও আসলে রুমে থাকে না। লকডাউন এর আগে দুই-চারদিন যাও বা থাকতো, লকডাউন এর পরে কাছেই একটা বাসা নিয়ে, সংসার নিয়ে ওখানেই থাকে। যেটা বলছিলাম, ওই টাইমে তার কল পাওয়াটা একটা আনএক্সপেক্টেড ব্যাপার ছিল আমার জন্য। এরপরে যেটা শুনলাম তার কাছে সেটা হল সে অনেকদিন পরে ক্যাম্পাসে এসেছে তাও আবার ভাইয়া সহ। তারা লন্ডন ব্রিজে বসে আছে এবং এর ফলাফলস্বরূপ ঘুম বাদ দিয়ে আমাকেও সেখানে যেতে হল।
ভাইয়ার সাথে এর আগে কখনো দেখা হয়নি। এজন্য আমিও ভাবছিলাম এবার দেখাটা হয়ে যাক। বের হলাম প্রায় ২০ মিনিট পর। যেতে আরও লেট হয়েছে কারণ আমাদের ক্যাম্পাসে এখন রিক্সা চলে না। যেখানেই যাই হেঁটে হেঁটে যেতে হয়, নইলে শাটল বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যাই হোক, অপেক্ষার ধৈর্য ছিল না, তাই হাঁটা দিলাম।
আমি প্রায়ই লন্ডন ব্রিজের কাছাকাছি চলে গিয়েছি তখন আপু ফোন দিয়ে ওখানেই দাড়াতে বলল। এরপরে সে আসলো এবং এসেই আমাকে একটা চকলেট গিফট করলো। ভাইয়ার সামনে তখন-তখনই তো চকলেট খেতে পারি না, শুধু আপু থাকলেও না হয় একটা কথা ছিল। তাই আমি ভদ্র বালিকার মত চকলেটটা পকেটে রেখে দিলাম।
তারপরে আমরা প্রান্তিকে গেলাম, সেখানে খেলাম। আপু জানে হলের খাবার ভাল না, তাই সে নিজ দায়িত্বে আমার জন্য রাতের খাবারও
পার্সেল করিয়ে দিল। এরপর আমরা শপিং করলাম প্রান্তিকেই। ভাইয়ার স্বভাবটা অনেকটা আমার মত, কোন একটা জিনিস যদি কিউট দেখে তাইলে সেটা কিনতেই হবে। এজন্যই সব টাকা-পয়সা আপু তার কাছে রেখে দিয়েছিল। যাই হোক, তারা অনেক জিনিস কিনল, আমাকেও একটা সুন্দর চাবির রিং দিয়েছে, আমি পছন্দ করে নিয়েছি এটা। দুলও দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পড়া হয়না বলে নিলাম না।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমরা কফি খেতে বসলাম। ভাইয়াকে এর আগে যেমন দেখেছিলাম, কফি খেতে খেতে তার অন্য একটা রূপও দেখে ফেললাম। খুব সিরিয়াস একজন মানুষ এবং খুবই বাস্তববাদী। তিনি বর্তমানে একটা টেক্সটাইল কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে আছেন, তার এত ভাল একটা পজিশন থাকার পরেও তিনি চিন্তা করছেন কিভাবে আরো স্কিলফুল হতে পারেন। আমাকে অনেক সাজেশন দিলেন কিভাবে কি করতে হবে, ভবিষ্যত পরিকল্পনাটা করে যেন সেই হিসেবে আগাই ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে আমরা যারা অনার্স করছি তাদের যদি প্র্যাকটিক্যাল নলেজ না থাকে, তাহলে কর্ম ক্ষেত্রে সে খুব ভালো করতে পারে না। ভাইয়া আমাকে এই কথাটাই বুঝিয়েছেন, আর আমিও চেষ্টা করছি তার কথাগুলো মেনে চলার।
এছাড়াও আরো অনেক কথা হয়েছিল সেদিন। ভাইয়াকে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখাতে হবে, আপুকে ম্যাথ করাতে হবে, পরীক্ষার পর তাদের বাসায় যেন অবশ্য অবশ্যই যাই ইত্যাদি ইত্যাদি। আপু তো ভালই আর ভাইয়াও এত বাস্তববাদী দেখে খুব ভাল লাগল। তাদের সাথে সময় কাটাতে পেরে খুব ভাল লাগছিল কিন্তু রাতের দিকে একটু মাথা ব্যথা করছিল। যাই হোক, কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। আমি ঐ দিন ভাইয়ার কাছ থেকে যে উপদেশ গুলো পেয়েছি ওগুলো মানুষের জীবনে খুব দরকার। এখনও বলতে গেলে অনেকটাই ছোট। এখনো অনার্স শেষ করতে পারিনি। আমাদের ভবিষ্যতে আসলে কি অপেক্ষা করছে সেটা আন্দাজ করা আমাদের জন্য অনেকটাই কঠিন এবং বলতে গেলে আমরা করিও না। আমাদের যেভাবে চালায়, আমরা সেভাবেই চলি। কিন্তু আমাদের যেটা কাজে লাগবে সেটা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে যাই।
এই কথাগুলো সেদিন কানে বাজছিল। কিন্তু পরীক্ষা ছিল, তাই শুধু ভেবেইছি। অনেক কঠিন একটা সাব্জেক্ট ছিল। সব উত্তরগুলো ভূগোল দিয়েছি এমনকি ম্যাথের মধ্যেও! কিন্তু কি অদ্ভুত! এত ভূগোল করেছি কিন্তু তাতে আমার কোন আফসোস হচ্ছে না। কারণ পরীক্ষাটা তো শেষ হয়েছে!
আজ অনেক কথা বলে ফেললাম। তাই এখানেই শেষ করি। সবাই ভালো থাকবেন।
ডিভাইসঃ রিয়েল মি ৮ ৫জি
ধন্যবাদ
twitter
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit