Source:- Pixabay
প্রথম পর্বের Link
প্রথম পর্বের পর
তবে ভূতের ভয় এখনও তার মধ্যে আসেনি। শীতে কাঁপতে কাঁপতে আবারও সে অপেক্ষা করতে লাগলো তার বন্ধুর জন্য। ঠিক এরই মাঝে পিছন থেকে কে যেন তার পিঠে হাত দিল। আচমকা ভয় পেয়ে উঠল আরিফ। পেছনে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু হাফিজ এসে দাঁড়িয়েছে। হাফিজ বলল কিরে হাপাচ্ছিস কেন ? ভূতের ভয়ে দাঁড়াতে পারছিস না নাকি? আরিফ যে মার্বেল আনতে ভুলে গিয়েছিল সেই কথা আর বলতে চাইল না। সে হাফিজের প্রশ্নকে অগ্রাহ্য করে জিজ্ঞাসা করলো 'কিরে আসতে এত দেরি করলি কেন?" হাফিজ বলল আর বলিস না আজ মা যেন ঘুমাচ্ছিলই না। ভেবেছিলাম হয়তো আজ আসা হবে না। তবে মার ঠিক ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথে বের হয়ে গিয়েছি, তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।" চল তাহলে আর সময় নষ্ট না করে এগুনো যাক ।গুলতি এনেছিস তো নাকি আবার ভুলে রেখে এসেছিস? জিজ্ঞাসা করল আরিফ। হাফিজ বলল "এইতো ভালো কথা মনে করেছিস তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে গুলতি তো আনা হয়নি।" আরিফের এরকম খাম খেয়ালি স্বভাব থাকলেও হাফিজের কিন্তু মোটেও নেই কারণ সে সর্বদাই তার কথা মত কাজ করে এই কথা চিন্তা করতে করতে কিছুটা সন্দেহ হলো আরিফের। 'তুই আর কিছুক্ষণ কষ্ট করে দাঁড়া। আমি এক দৌড়ে গিয়ে গুলতি নিয়ে আসছি।' 'দাঁড়ানো ছাড়া আর কি উপায় আছে। ভুল তো করেই ফেলেছিস।' আরিফ বলে উঠলো। দৌড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল হাফিজ।
Source:- Pixabay
তবে অবাক করার বিষয় হাফিজের বাড়ি থেকে এখানে আসতে প্রায় দশ থেকে পনেরো মিনিট সময় লেগে যায়,কিন্তু সে মাত্র পাঁচ মিনিটের ভিতরেই ফিরে এসেছে। এবার যেন সন্দেহ আরো বেড়ে গিয়েছে আরিফের। কিছুটা ভয় ও লাগছে এখন। আর হাতের গুলতিটাও দেখতে হাফিজের গুলতির মত নয়। 'এমন ভাবে দেখছিস কি? এটা নতুন বানিয়েছি তোকে আর বলা হয় নি। চল তাড়াতাড়ি। দেরি হয়ে গেছে তো ভালোই।' আরিফ বললো 'তোর কারণেই তো যত দেরি। যাই হোক চল তাহলে।' দুজনেই নদীর পাড় ধরে হাটতে শুরু করলো। তাদের বাড়ির হতে গন্তব্যস্থল বেশ খানিক টা দূরে। প্রায় ত্রিশ চল্লিশ মিনিট হাটতে হবে। অবশেষে তারা পৌঁছে গেল তাদের গন্তব্যে। চাঁদের আলোয় সব বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে কুয়াশার মধ্যেও। দূরেই প্রচুর হাঁস দেখা যাচ্ছে। তাদের যেন আর তর সইছে না। আরিফ এর সই অনেক ভাল। তাই সে কেবল গুলতি টি চাইবে হাফিজের কাছ থেকে, এর আগেই হাফিজ পাখি শিকার শুরু করে ফেলল। 'আমি তো মারা শুরু করেই দিয়েছি। তুই তাহলে হাঁসগুলো নিয়ে আসতে থাক একে একে। হাফিজ একের পর এক হাস নামিয়ে আনছে মাটিতে। আর আরিফ সেগুলো ধরে ধরে নিয়ে আসায় ব্যস্ত। আরিফ বুঝে উঠতে পারছে না, হটাৎ হাফিজের মধ্যে এত পরিবর্তন কেন? তার হাতের সই তো কোনদিনই এত ভাল ছিল না। তবে কি আজ সে কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছে।এইসব চিন্তা করতে থাকলো আরিফ। দেখতে দেখতে প্রায় আট দশটা হাঁস জমা হয়ে গেল।
Source:- Pixabay
হটাৎ একটা হাস গিয়ে পড়লো দূরের একটি ঝোপে। হাফিজ বললো, 'ওই দূরের হাঁসটি আগে নিয়ে আয়। শীতের রাত। বলা যায় না কখন কোন শিয়াল এসে হাঁস টি নিয়ে না যায়। আরিফ দৌড়ে গিয়ে হাঁস টি কেবল হাতে নিয়ে আবার হাফিজের নিকট আসতে শুরু করেছে। তবে এবার আরিফ যা দেখতে পেল তা দেখে তার যেন হাত পা অবস হয়ে আসলো। হাফিজের স্থানে আর হাফিজ নেই। তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে ছায়ার মত লম্বা এক অবয়ব। যার মাথা থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঘন চুলে ঢাকা। লাল টকটকে বড় বড় চোখ। আগুনে ঝলসে যাওয়া চেহারা। আরিফের অনুপস্থিতিতে সে একটি হাঁস অর্ধেক কাঁচা খেয়ে ফেলেছে এবং বাকি অর্ধেক ও মুখে। অবয়ব টি আরিফ কে দেখতে পেয়ে মুখ থেকে হাঁস টি ফেলে দিয়ে তার দিকে চেয়ে বিশ্রী ভাবে হাঁসতে শুরু করলো। আরিফের যেন আর শরীর কাজ করছে না। অনেক কষ্ট করে কিছুটা সাহস জুগিয়ে সোজা দৌড় দিল সে। এক দৌড়ে যে কতটুকু দুরত্ব পার হয়েছে তার হিসেব নেই। অনেকক্ষণ টানা দৌড়ে অবশেষে একটি কৃষি জমি তে হোঁচট খেয়ে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে। যখন আরিফের জ্ঞান ফিরেছে তখন সে নিজেকে তার বাড়িতে মায়ের কোলে আবিষ্কার করলো। সকালে ওই জমির রাখাল তাকে দেখতে পেয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। জ্ঞান ফিরে আরিফ দেখতে পেল এলাকার অনেকেই তাকে দেখতে এসেছে। হাফিজ ও সেখানে উপস্থিত। তৎক্ষণাৎ সবাইকে সব খুলে বললো আরিফ। বিস্ময়ের সাথে হাফিজ উত্তর দিল গতকাল রাতে জর আসায় সে বাড়ি থেকে বের ই হতে পারে নি। এই কথা শুনে সবাই নীরব হয়ে গিয়েছে। আরিফ যে মৃত্যুর কতটা কাছ থেকে ফিরে এসেছে তা সে উপলদ্ধি করতে পারলো।কেননা হাফিজের জায়গায় সেই তেঁতুল তলার ভূত টিই তার সঙ্গে চলে এসেছিল। এর পর থেকে আর কোনদিন আরিফ পাখি শিকারের কথা মুখে আনতে সাহস করে নি।
অনেক সুন্দর হয়েছে।রাতের বেলা গল্পটি পড়ে ভয়ে আমার লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছে।ভুতের গল্প পড়তে আমার ভালোই লাগে আবার একা থাকলে ভয়ও লাগে।বারবার ভয়ংকর দৃশ্য গুলি মনে পড়ে।গল্পটিতে ভুত টি খুবই ভয়ানক ছিল কিন্তু কোন ক্ষতি করে নি।সব মিলিয়ে গল্পটি ভালোই ছিল।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপ্নাকেও ধন্যবাদ আপু গল্প টি পড়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাহ ভাই খুব সুন্দর হইছে। একদম ই এতো রাতে ভুতের গল্প পড়তে চাইনি। তবে গল্প দেখলাম সামনে আর না পড়ে থাকতেই পারলাম না।গল্পটা আমার কাছে খুব ভালো লাগলো। তবে মানতে হবে বেশ ভয়ানক ছিলো কিন্তু। চালাই যান।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপনাকে আপু সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাগ্য ভালো ভাইয়া গল্পটি আমি সকালবেলায় পড়েছি।এই গল্পটা যদি রাতের বেলায় পড়তাম তাহলে তো ভয় আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। আপনি খুবই সুন্দর করে গল্পটি উপস্থাপন করেছেন যা আমাকে মুগ্ধ করেছে। শুভকামনা রইল আপনার জন্য। আপনার পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে ধন্যবাদ আপু গল্প টি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া আপনি তো অসম্ভব ভালো গল্প লিখতে পারেন! যেভাবে হাফিজ এর সেই অবয়ব এর সম্পর্কে বর্ননা করেছেন, আমি সেটি কল্পনা তে দেখতে পেলাম যেনো। আমার ভুতের গল্প অনেক অনেক পছন্দ। আশা করছি সামনে আরও এমন দারুন গল্প লিখবেন। ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit