১৯ভাদ্র , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
০৫সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
১৯সফর ১৪৪৫ হিজরী
মঙ্গলবার।
শরৎকাল।
আসসালামু আলাইকুম,আমি মোঃআলী, আমার ইউজার নাম @litonali।আমি বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার আজকের পোস্ট শুরু করছি
ডাচ্ বাংলা বুথের মেশিন থেকে টাকা বের হবার শব্দ কানে আসলো।আর আমার হাটবিট অনেক বেশি পান্স হচ্ছে। এক হাজার টাকার ৮ খানা নোট। মোটের উপর আট হাজার টাকা। বড় ভাই আরিফ হাসি মুখে বল্লো নে ধর জীবনের প্রথম অনলাইন ইনকাম, বিসমিল্লাহ বলে হাতে নে।পাশ থেকে সুমন বলছে ভাই চলেন রেস্টুরেন্টে আগে বিরিয়ানি খেতে হবে।এই যে কথাগুলো এবং সেই মুহূর্তটা আজও আমি ভুলিনি।*
২০১৪ সাল সদ্য এসএসসি পাশ করেছি।২০১৫ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রথম বর্ষের ছাত্র।ম্যাচ লাইফে পাশের রুমে পেয়েছিলাম একজন বড় ভাই যিনি অনলাইনে কাজ করতেন। রুমমেট হিসেবে পেয়েছিলাম আমার জুনিয়র একটা ছেলেকে। চিকন চাকান দেহের গরন ফর্সা। খুবই চিন্তাশীল এবং ধৈর্য্যশীল একজন ব্যক্তি। আমাদের তিনজনার মধ্যে ছিল খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ভালোবেসে এই ছোট্ট ছেলেটাকে নাম দিয়েছিলাম বিজ্ঞানী।আমি এবং আরিফ ভাই আজও তাকে বিজ্ঞানী বলেই ডাকি। অবশ্য বিজ্ঞানী নাম দেওয়ার পিছনে অনেক যুক্তি ও রয়েছে। বড় ভাই ফাইবার প্লাটফর্মে ডিজিটাল মার্কেটিং এ কাজ করতেন।আমার এবং বিজ্ঞানির দুজনারি দুটো কম্পিউটার ছিলো। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ শিখে আমি এবং আমার রুমমেট বিজ্ঞানী দুজন কাজ শুরু করলাম। প্রথম দিনেই অনেক বড় একটি চমক।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি ২০ ডলারের অর্ডার তবে তিন দিনের মধ্যে কাজ করে ডেলিভারি করতে হবে। আমরা তো মহা খুশি দুদিনের মধ্যে কাজ করে ডেলিভারি দিয়ে দিলাম। এরকমভাবে আরো বেশ কিছু অর্ডার পেলাম এবং সাত দিনের মধ্যে একাউন্টে ডলার চলে আসলো। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে ১০৫ ডলার আর্ন করলাম ফাইবার থেকে।
তিন জনা মিলে আমরা শুধু আমাদের একাউন্টের নোটিফিকেশন এবং ড্যাশবোর্ড চেক করতাম। এই বুঝি একাউন্টে অর্ডার আসলো এবং পূর্ববর্তী অডারের ডলার যোগ হলো।এরকম করতে করতে চলে আসলো সেই পূর্ণ মুহূর্ত। বড় ভাইয়ের কার্ডে ডলার ট্রান্সফার করা হলো। একদিন পরে কার্ডে ডলার চলে আসলো। বিকেল বেলায় তিনজন চলে গেলাম বুথে টাকা তুলতে।সেই সময় অবশ্যই এক ডলার সমান ৭৮ টাকা পেতাম।
এই যে মুহূর্তটা নিজের মধ্যে অন্যরকম একটি ভালো লাগা কাজ করছিল। নিজে নিজে খুব প্রাউড ফিল করছিলাম। এবং বড় ভাইকে হাজারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। এবং মনে মনে অনেক খুশি ছিলাম।টিউশনি করানোর পাশাপাশি আরো কিছু টাকা উপার্জনের একটি মাধ্যম পেলাম। ভাবছিলাম বাবার কাছ থেকে একটু হলেও হালকা করে নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিতে পারলাম। এটাই ছিলো আমার সবথেকে বড় খুশির কারণ।তবে টাকা উঠানোর আগে মনে মনে পরিকল্পনা করেছিলাম অন্য কিছু। অনলাইন থেকে টাকা তোলার পরে নিজের জন্য কিছু মার্কেট করব। কিন্তু দায়িত্ব আর অভাবের কথা ভেবে ভুলে গিয়েছিলাম নিজের মার্কেট করার কথা।
এটা অবশ্য আমার জীবনের প্রথম টাকা উপার্জন ছিলোনা। এটা ছিলো অনলাইন থেকে প্রথম টাকা উপার্জন। অভাবের তাড়নায়, ভালোভাবে বেচে থাকার জন্য ৮ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমি টিউশনের মাধ্যমে উর্পাজনের পথে নেমেছিলাম। 💔আই হেইট মাই ন্যাস্টি লাইফ।মাঝে মাঝে মনে হতো আমি যেন বেঁচে আছি শুধুমাত্র আমার জীবনের সাথে যুদ্ধ করার জন্য।
টাকাটা হাতে নিতে মনের মধ্যে কেমন যেন একটি অনুভূতি দোলা দিয়ে গেলো।কেননা দুপুরবেলা বাড়ি থেকে ফোন করে মা বলেছে বাবার ওষুধ শেষ এবং ছোট ভাইয়ের পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে হবে।খুব অল্প বয়সে অনেক বড় একটি দায়িত্ব কাধের উপর। অনলাইন থেকে এই টাকা উপার্জন করতে পেরে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস।চোখ দুটো পানিতে ছল ছল করছে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা।প্রথমবারের মতো এতগুলো টাকা হাতে পেয়ে মনে মনে ভাবছিলাম এই বুঝি সংসারের দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালন করতে পারবো।সেই সময়টা আমার কি পরিমান ভালোলাগা কাজ করছিলো,সেটা হয়তো এখন মুখের ভাষায় লিখে প্রকাশ করতে পারবো না।
এরপর মনের মধ্যে থাকা কষ্টগুলো এবং প্রথম অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন করে টাকা হাতে পাওয়ার অনুভূতি মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে চলে গেলাম কুষ্টিয়া বক চত্বরে রেস্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য।বিরিয়ানি খেলাম, ঠান্ডা খেলাম, তিনজনে আবার হাসিমুখে ম্যাচে ফেরত আসলাম।৮ হাজার টাকা থেকে ৫০০ টাকা মসজিদ নির্মাণের কাজে। এবং কিছু টাকা নিজের হাত খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা বাবার ওষুধ এবং ভাইয়ের ফরম ফিলাপের জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম।টাকাটা পাঠানোর পরে মনে হচ্ছিল সত্যি আমি আমার পরিবারের জন্য কিছু একটা করলাম। একটু হলেও দায়িত্ব বহন করে নিলাম।
এরপর পদ্মা,মেঘনা,যমুনার বহুজল স্রোত ধারায় গড়িয়েছে,সময়ের ঘড়ি হাজার বার অতিক্রম করেছে তার নির্ধারিত কক্ষ, তবু এখনো অনলাইন থেকে প্রথম টাকা উপার্জনের অনুভুতিগুলো মন থেকে পুরনো হয়ে যায়নি। এখনো নির্দিষ্ট একটি সময় পড়ে অনলাইন থেকে টাকা তোলার সময় আবারো মনে পড়ে যায় সেই ফেলে আসা দিনের কথা।মনের মাঝে সুখের পরশ দিয়ে যায় অধরা স্বপ্নগুলো।
প্রথম অনলাইন থেকে উপার্জন করা টাকা সঠিক সময়ে পেয়েছিলাম।এই টাকাটা আমি এবং আমার পরিবারের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিলো। অবশ্য টাকাটা একদম পারফেক্ট প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়েছিলো।এজন্যই সেই অনুভূতি এবং সেই টাকাটার কথা আজও বারবার মনে এসে দোলা দিয়ে যায়, হারানো সেই কথা এবং স্মৃতিগুলো।আজ অনলাইন এবং চাকরির মাধ্যমে প্রতিমাসে টাকা উপার্জন করি। কিন্তু প্রথম অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন করার অনুভূতি এই টাকার মধ্যে আর আসে না।অবশ্য এখনো ওইদিনের টাকার মতই এখনকার টাকা ও পরিবারের কোন না কোন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।ডাচ বাংলা বুথের টাকা বের হওয়ার শব্দ। টাকা হাতে দিয়ে আরিফ ভাইয়ের কথা। আর পাশ থেকে ক্ষুদে বিজ্ঞানির বিরিয়ানি খাওয়ার সেই কথাগুলো আজও বারবার কানে ভেসে আসে। মনে হয় এই বুঝি সেদিনের কথা। অনুভূতিগুলো আজও জীবন্ত।
সেই ২০১৫ সাল থেকে নিয়ে আজও ২০২৩ সাল। এরই মধ্য দিয়ে পার হয়েছে এক বছর। আরিফ ভাই সুমন এবং আমি সবাই নিজের পরিবার এবং ক্যারিয়ার গুছাতে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে দেখা হয় কথা হয়, ভেসে ওঠে সেই স্মৃতিগুলো।আরিফ ভাই এবং খুদে বিজ্ঞানীকে দেখলে এখনো মনের মধ্যে ভেসে ওঠে সেই দিনের কথা।সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে অনেক দূর এগিয়েছে। তবুও সেই স্মৃতি এখনো জীবন্ত রয়ে গেলো।চোখ বুঝলে মনে হয় এই বুঝি সেদিনের কথা।যাহোক জীবন্ত এই স্মৃতি এবং অনুভূতি রয়ে যাবে আজীবন মনের মধ্যে।আজকের জন্য এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে ইনশাআল্লাহ পরবর্তীতে নতুন কোন পোস্টে।
ডিভাইসঃ Redmi Note 5
VOTE @bangla.witness as witness OR
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
টুইটার লিংক
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার পোষ্ট টি পড়ে যা বুঝলাম, অনেক ছোট থেকেই আপনাকে আপনার পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি থেকে টিউশন করান, ফার্স্ট ইয়ারে এতগুলো টাকা ইনকাম এর থেকে বোঝা গেলো আপনি খুবই পরিশ্রমী এবং দ্বায়িত্ববান একজন মানুষ। পোষ্টটি পড়ে আমিও একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গেছিলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো লিটন ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনার অনলাইনের প্রথম ইনকামের কথাগুলো পড়ছিলাম আর সত্যিই মনের মধ্যে কেমন একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। যাইহোক ভাই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের এরকম জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চলতে হয়, আর আপনি ঠিক সেই যুদ্ধটাই করেছেন। আপনার ইনকামের টাকা দিয়ে কিছু খাবার এবং হাত খরচের টাকা রেখে বাকি টাকা বাবার হাতে তুলে দিয়েছেন এর থেকে বড় আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে বলুন। যাইহোক আপনার অনুভূতিগুলো পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো ভাই।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বেশ সংগ্রামের জীবন ছিল আপনার। ছেলেবেলা থেকেই কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। পড়তে পড়তে কখন যে আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েছি সেটাই তো বুঝলাম না। তবে দায়িত্বশীল মানুষ গুলো এমনই হয়। নিজের জন্য সামান্য রেখে বাকী টা বাবা মায়ের কাছেই দেয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এই প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার জন্য। অনলাইনে প্রথম টাকা ইনকাম করা অনুভূতিটা পড়লাম ভাই বেশ ভালো লেগেছে। কোন কোন সময় কিছু মানুষ থাকে তারা অনেকটা ট্যালেন্ট হয়ে থাকে। যেমন আপনাদের বিজ্ঞানী। আর এসব মানুষগুলো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। আপনি প্রথমে ২০ ডলারের যে কাজ পেয়েছেন সেটা জানি বেশ ভালো লাগলো। আসলে নিজেকে কিছু করতে পারলে পরিবারের জন্য একটু হালকা হয়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বিজ্ঞানী নাম দিয়েছিলেন বিষয়টা বেশ মজার লেগেছে। প্রথম ২০-২৫ দিনে ১০৮ ডলার ইনকাম করা বিশাল ব্যাপার। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছিল মসজিদ নির্মাণে আপনি টাকা দান করেছিলেন। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আপনার গল্পটি তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অনলাইন থেকে আপনার প্রথম আট হাজার টাকা ইনকামের গল্পটা শুনে বেশ ভালো লাগলো ভাই। এছাড়াও অন্যান্যভাবে ইনকামের অনেক বড় গল্পই আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। ইনকামের গল্পগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাই। আপনার ইনকাম করার পিছনের গল্পটা সত্যিই ইমোশনাল। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের আসলেই অনেক স্বপ্ন থাকে প্রতি মাসে কিছু টাকা উপার্জনের পর এটা করব, ওটা কিনব এগুলো নিয়ে। কিন্তু কোন না কোন ভাবে সেই টাকাগুলো পারিবারিক কাজে লেগে যায় ,নিজের ইচ্ছে গুলো আর সব সময় পূরণ করা হয়ে ওঠে না। সেই রকম একটি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো আরিফ ভাই আর সুমন ভাইয়ের সাথে গিয়ে আট হাজার টাকা আপনি তুলেছিলেন , আর তারপর আপনারা বিরিয়ানি আর ঠান্ডা খেয়েছিলেন।সত্যি এটা খুবই আনন্দের একটি মুহূর্ত ছিল। তারপর বাড়িতে কিছুটা টাকা পাঠাতে পেরে নিজের কাঁধে পরিবারের কিছুটা দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন দেখে ভালো লাগলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit