পহেলা বৈশাখের একাল ও সে কাল।

in hive-129948 •  10 months ago 
০১বৈশাখ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৪এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
০৪শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী
রবিবার।
গ্রীষ্মকাল ।


আসসালামু আলাইকুম,আমি মোঃআলী, আমার ইউজার নাম @litonali।আমি বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার আজকের পোস্ট শুরু করছি


noboborso-6161098_1280.webp

Source


পহেলা বৈশাখ আমাদের বাংলা সংস্কৃতিরও ঐতিহ্য এবং প্রতিটা বাঙালির হৃদয়ের একটা অংশ বলতে পারেন। এ কথাটা বললেও ভুল হবে না যে বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ। পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে, নতুন বছরের আগমনে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় পহেলা বৈশাখ। আর পহেলা বৈশাখ মানেই যেন হালখাতা, মিষ্টি বিতরণ বিভিন্ন রঙের মাখামাখি। পহেলা বৈশাখ আমরা বাঙালিরা সবাই মনে প্রানে লালন করি। আজকে দেখলাম পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে সবাই অনেক ভালো ভালো পোস্ট করেছে। তবে আমার পোস্টটা আজ একটু ভিন্ন। আজ আমার পোষ্টে আলোচনা করব পহেলা বৈশাখের এ কাল এবং সে কাল নিয়ে। সেকাল বলতে ৯০ দশক বা তারপরের কিছু কথা শেয়ার করব।


পহেলা বৈশাখের সে কাল। আমি দেখেছি আমাদের গ্রামে নদীর পাড়ে বটগাছের নিচে যে বড় হাট বসতো সেখানে অনেক ধুমধাম আয়োজন করা হতো পহেলা বৈশাখের দিনে। দোকানে দোকানে রেডিও ক্যাসেটের মাধ্যমে শোনানো হতো পহেলা বৈশাখের গান। সেই সাথে পুরাতন বছর কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরের আগমনে ব্যবসায়িক গণ করতেন হালখাতা। আর চারিদিকে সরিয়ে যেত মিষ্টি আর মিষ্টি। বিশেষ করে এই হালখাতায় বেশি মিষ্টি হিসেবে খাওয়া হত জিলাপি। সবাই সবার সাথে কত সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করত মুলাকাত করত। এই দিনে সবাই সবার খোঁজ খবর নিত। মনে হতো যেন এক মহা উৎসবের দিন। গ্রাম এবং শহরের পহেলা বৈশাখের তুলনা যদি করতে যাই, তাহলে অবশ্যই বলবো গ্রামে পহেলা বৈশাখ যেভাবে পালন করা হয় এটাই সবথেকে বেশি ভালো।শুরু হয়ে যেত সাজসজ্জা পূর্ণ এক বিশাল আয়োজন নদীর পাড়ে। দুপুরের মানুষ এক জায়গায় মিলিত হয়ে এই মেলার আয়োজন করতো। মূলত পহেলা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে যে আয়োজনটা করা হতো এই উৎসবটা আমাদের গ্রামের এক মহা উৎসব এ পরিণত হতো।


বিকেল থেকে নিয়ে শুরু করে রাত অব্দি চলত এই মেলা। এই মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকতো পহেলা বৈশাখের স্বাদের নিজেকে সাজানো। এবং বিভিন্ন ধরনের খেলা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মালখেলা গাদন খেলা লাঠি খেলা এবং মুরুব্বিদের জন্য থাকতো হাড়িভাঙ্গা। বেশ কয়েকটা গ্রামের মানুষ যখন একত্রিত হতো তখন গ্রাম গ্রাম প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতো। বিজয় ধোন্নিতে দেখা যেত একপাশ কেঁপে উঠছে। সবাই আনন্দে মাতোয়ারা। আর বিজয়ীদের জন্য থাকতো সব পুরস্কার। আমার যতটুকু মনে আছে আমি দেখতাম এখানে প্রধান পুরস্কার হিসেবে থাকতো একটি বড় খাসি ছাগল। এখন অবশ্য এই সংস্কৃতি গুলো প্রায়ই হারিয়ে গিয়েছে। গ্রামে পহেলা বৈশাখ উদযাপন দেখলে মোটামুটি পহেলা বৈশাখের একটা ভাব মনে আসে। বোঝা যায় যে আজ পহেলা বৈশাখ। মাথাই নতুন গামছা আর পরনে নতুন লুঙ্গি আর গায়ে এবং মাখানো জামা। এভাবেই দেখতাম পহেলা বৈশাখের দিন কৃষককে মাঠে যেতে। গ্রামের কৃষকরা নানাভাবে জারি শাড়ি আর ভাটিয়ালি গানে মেতে উঠত এ দিন। আর ঘরে ঘরে হতো পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছের আয়োজন। সেই সাথে কাঁচা মরিচার পেঁয়াজ। এক কথায় এখনো গ্রামে যে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয় মূলত এটাই পহেলা বৈশাখের মূল আয়োজন থেকে যায়।


ছোটবেলায় আমরা বন্ধুরা এবং গ্রামের ছোট বড় সবাই মিলে অপেক্ষায় থাকতাম কোন দিন পহেলা বৈশাখ। আগে থেকে টাকা গুছিয়ে রাখতাম। সবাই মিলে এক রকমের গেঞ্জি এবং গামছা কিনতাম। সকাল থেকে সেজে উঠতাম আমরা পহেলা বৈশাখের সাজে। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় ঘুরতাম আর অনুষ্ঠান গুলো দেখতাম। আর সাথে ইচ্ছামতো বাঙালি খাবারগুলো সেদিন খাওয়া হতো বিশেষ করে জিলেপী।এক্সটা আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর পহেলা বৈশাখের আগের সেই আনন্দটা নেই। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝখান থেকে।এখন গ্রামেও নেই সেই বড় আয়োজন। নেই সেই গ্রাম্য বিভিন্ন খেলার আয়োজন।


এবার কিছু কথা বলব পহেলা বৈশাখের এ কাল নিয়ে।এখন শহরে যেভাবে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয় এটা আসলে অনেকটাই বিকৃত। আয়োজনটা অনেক আধুনিক হয়ে গিয়েছে। যার কারণে মনে হয় আসলে এটা কোন ডিজে পার্টি বা অন্যরকম কোন মেলা। আজ বেশ কয়েক জায়গায় পহেলা বৈশাখের আয়োজন দেখতে গিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা জায়গায় আমার কাছে একই রকম মনে হয়েছে। হ্যাঁ সবাই নতুন পোশাক পড়েছে পহেলা বৈশাখের কিন্তু আয়োজনটা অন্যরকম। আয়োজন করা হয়েছে ডিজে পার্টির। মাইকে বাজানো হচ্ছে ডিজে গান। বাংলার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যে যেটা বলে সেটার কোন ছোঁয়া নেই। সবাই সবার মত মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। আসছে ঘুরছে ফিরছে দু একটা ছবি তুলে আবার চলে যাচ্ছে। আগের মত নেই সেই মিষ্টির ছড়াছড়ি। নেই সেই আন্তরিকতা কথা বলা আর কোলাকুলি।বেশ কয়েক জায়গায় গেলাম এরা মূলত পহেলা বৈশাখ মানে ডিজে পার্টি কেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে সেটাই বুঝচ্ছে তারা। বাঙালিরা বাংলা দিয়ে পহেলা বৈশাখ কে সাজাবে এটাই আসলে স্বাভাবিক একটা বিষয়। বাঙালি খাবার খাবে বাঙালি পোশাক পড়বে বাঙালি আয়োজন হবে। অথচ ডিজে গানের সাথে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দেশি খাবার এবং বিরিয়ানির মেলা। তাহলে কেমন হলো একালের পহেলা বৈশাখটা। সবাই পালন করছে কিন্তু পহেলা বৈশাখটা পহেলা বৈশাখের মতো হচ্ছে না। হচ্ছে মনগড়া আধুনিক ডিজে পার্টির মত। যাইহোক এ কাল নিয়ে আর কি বলব আপনারা সবাই তো নিজ চোখে দেখছেন। যাইহোক সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু কথা তুলে ধরলাম পহেলা বৈশাখ নিয়ে। আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।


ডিভাইসঃ Redmi Note 5



standard_Discord_Zip.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করেন ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Witness Banner 2.png


সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ধন্যবাদ

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

ঠিক বলেছেন ভাইয়া পহেলা বৈশাখ মানে আনন্দ উৎসব এবং রং মাখামাখি ।এই দিনটায় পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে আগমন জানায়। আপনাদের ওদিকে পহেলা বৈশাখে বেশি মিষ্টি হিসেবে খাওয়া হত জিলাপি। আমাদের এদিকে পহেলা বৈশাখে পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ খাওয়া হ।য় ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি না পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

বর্তমান সময়ে আমরা সবকিছুই বিকৃত করে ফেলেছি। আমরা এখন ঠিকভাবে আর নিজেদের সংস্কৃতি টাকে মনে রাখে না যার কারণেই তো এমনটা হতে শুরু করেছে। যে জিনিসটা যেভাবে পালন করা উচিত আমরা তার বিপরীতভাবে পালন করে থাকি বর্তমান সময়ে।

আসলে এমনই হচ্ছে আমরা আমাদের কালচারকে ভুলে যাচ্ছি বিদেশী কালচার গুলো আঁকড়ে ধরছি।
এখন যে রকম আছে হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এতোটুকুও পাবেনা।

ঠিকই বলেছেন ভাই পহেলা বৈশাখের আগের যে সৌন্দর্যটা ছিল সেটা এখন আর লক্ষ্য করা যায় না। বট গাছের নিচে হাট বসতো গ্রামের বিভিন্ন সৌন্দর্য সেই হাটে তুলে ধরা হতো তবে এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় সে সবকিছু যেন বিলীন হয়ে গিয়েছে।

ধন্যবাদ আপনাকে পোষ্টটি পড়ে অনেক সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে। অতীতের পহেলা বৈশাখ যেভাবে পালন করত বর্তমান সময়ে তার পুরাটাই ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। সামাজিক এবং সাংস্কৃতির মধ্য দিয়ে এই পহেলা বৈশাখ অতীতকালে পালন করা হতো। কিন্তু এখন তার পরিবর্তন ঘটেছে। পহেলা বৈশাখে যে ঐতিহ্য তার কোন ছোঁয়া বর্তমান নেই। শুধু নামে মাত্র পহেলা বৈশাখ পালন করা।

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছু পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের যে ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সমিতি এটা যদি বিকৃত হয়ে যায় তাহলে আর কেমন হয়ে গেল।
তবে আমাদের উচিত আমাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা।

পহেলা বৈশাখের দিন আমরা ছোটখাটো পিকনিকের ব্যবস্থা করতাম। তবে এখন যেমন রমরমা সৃষ্টি হয়েছে এগুলা সেই সময় ছিল না। ছিলনা মোবাইল ফোন। তবে যাই হোক আপনার স্মৃতিচারণের পাশাপাশি কিন্তু আমারও স্মৃতি স্মরণে আসলো। আশা করি দিনটা শুভ কেটেছে।

মোবাইল ফোন ছিল না এজন্যই হয়তো পহেলা বৈশাখটা এত সুন্দর ছিল সবাই মিলে একসাথে হয়ে অনেক আনন্দঘন মুহূর্তটা পার করা যেত।

ঠিক বলেছেন ভাইয়া এখন আর সবার মধ্যে সেই আন্তরিকতা দেখা যায় না। আগের দিনগুলো আসলেই অনেক সুন্দর ছিল। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। ভালো লাগলো আপনার লেখাগুলো পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।

আধুনিকতার ছোয়ায় পহেলা বৈশাখ টা ইংলিশ গানের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে।
যেখানেই প্যান্ডেল দেখলাম গান-বাজনা হচ্ছে সেখানে দেখে শুধু ডিজে।
ওই যে ভুলে গেছে বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য।

লেখাগুলোতে সঠিক মার্কডাউন ব্যবহার করা হয় নাই, বোল্ড না করে জাস্টিফাই করলে বেশী ভালো হতো। ধন্যবাদ