আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারও ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজ আমি আমার জীবনের প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতিটুকু প্রকাশ করব। তবে এই মোবাইল কেনার আগে আমার কিছু কথা মনে আছে যা এখনো মনে করলে ভীষণ হাসি পায়। যদিওবা সেসময় নিছকই ছেলেমানুষ ছিলাম তাই আজ গল্প গুলো ভাবতেও ভালো লাগে। তখন ছিল ২০০২ সাল, আমার এক আত্মীয় প্রথম মোবাইল ফোন কিনেছিল। যে কিনা সম্পর্কে আমার দুলাভাই হন, তার মোবাইল ফোনটি ছিল কালো রঙের এন্টিনা যুক্ত। মডেলটি আমার একটুও মনে নেই।
সেই সময়টিতে টাকার মূল্য অনেক ছিল। কেননা তখনকার সময়ে ৬৯৯৯ হাজার টাকায় ২৪ ক্যারেট এক ভরি স্বর্ণ কিনতে পাওয়া যেত। শুনেছি সেই সময়ে তিনি ১০,০০০ টাকা ব্যয় করে এই এন্টিনা যুক্ত হলুদ রঙের ছোট্ট ডিসপ্লে মোবাইল ফোনটি কিনেছিল। যখন তার হাতে এই মোবাইল ফোনটি দেখেছিলাম, তখনই মনের মধ্যে খুবই বাসনা হয়েছিল আমিও যদি তার মতো একটি মোবাইল ফোন কিনতে পেতাম তাহলে নিজেকে রাজা-বাদশা বলে মনে হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই সময়টিতে ছাত্র জীবন হবার কারণে মোবাইল কেনার কোনো অনুমতি ছিল না সেইসঙ্গে ছিল না পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকার ব্যবস্থা।
যার কারণে তার হাতে মোবাইল ফোনটি যতবারে দেখেছি ততবারই মনের ভেতরে ভালো লাগা কাজ করছিলো। কিন্তু যখন তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম, ঠিক তখন তিনি আমার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে বলতো তুমি এসব বুঝবে না। তাই মনের দুঃখে কখনো তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে আর দেখার চেষ্টা করতাম না। তবে মানুষের সামনে গল্প করে বলতাম আমার ওই দুলাভাই মোবাইল ফোন কিনেছে। আর সেই ফোনটি বাসায় থাকলে সব সময় একটি এন্টিনার সাথে যুক্ত করে রাখত, যে এন্টিনা দেখলে মনে হতো টিভির এন্টিনা এবং সর্বদাই সে মোবাইলটি পুলিশদের মতো করে কোমরে বেল্ট দিয়ে বেঁধে রেখে দিত। সেই সময়টাতে তার মোবাইল ফোনের সিমটির দাম ছিল ৫১০০ টাকা। তখন এক মিনিট কথা বললে ৭ টাকা করে কেটে নিত। যদি এক সেকেন্ড হত তবুও পুরো এক মিনিটের টাকাই কেটে নিত এবং ৩০০ টাকার নিচে কোনো রিচার্জ করার সুযোগ ছিলোনা। এত কিছুর মাঝেও মনের মধ্যে লালন পালন করতে লাগলাম কবে আমি নিজেই একটি মোবাইল ফোনের মালিক হব।
অবশেষে সেই দিন এলো যেদিন আমি একটি মোবাইল ফোন কেনার জন্য অনেক কাঠ খড় পুরিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা যোগাড় করেছিলাম। আর সেই টাকা দিয়ে আমি ঢাকা থেকে ঐ দুলাভাইয়ের মাধ্যমে একটি নোকিয়া ২৬০০ কালার মনিটর ফোন সেট কিনেছিলাম, যার মূল্য ছিল ৮৫০০ টাকা। এবং সিম কার্ড টির মূল্য ছিল ২১০০ টাকা । যখনই আমি মোবাইল ফোনটি কিনতে পেরেছিলাম তখনকার সেই অনুভূতি সত্যি প্রকাশ করার মত নয়। আমার মনের ভেতর যেন আনন্দের জোয়ার বইতে লাগলো। তখন যত আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হতো আমার মোবাইল ফোনটি বের করে তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে অনেক গল্পই করতাম। মোবাইল ফোনটি কেনার পর আমার শুধু মনে হতো আমার মোবাইল ফোনে কেউ যদি রিং দিত, তাহলে খুব সুন্দর রিংটোন বাজতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই তখনকার সময়ে খুব বেশি মানুষের কাছে মোবাইল ফোন ছিল না। যার কারণে এখনকার মত সব সময় রিংটোনও বাজতনা। তাই মাঝে মাঝেই মানুষকে জানানোর জন্য মোবাইল ফোনের এলার্ম দিয়ে রিংটোন এমনিতেই বাজিয়ে রাখতাম। ও আর একটি কথা বলে নেই, তখনকার সময়ে কেউ যদি একবার মিসকল দিয়েছে তাহলে তাকে এই মিসকল দেয়ার জন্য জবাবদিহিতা করতে হয়েছে। কেউ যদি বলতো ভুলে মিসকল এসেছে তাহলে তার বারোটা বেজে যেত।
আমার মোবাইল ফোনটি ঢাকাতে কিনে যখন প্রথম কুড়িগ্রামের বাড়িতে এসেছিলাম তখন এক এক করে বাড়ির সবাইকে মোবাইল ফোনটি দেখাচ্ছিলাম। মোবাইল ফোনে একটি এয়ারটেল কোম্পানির রিংটোন ছিল যা শুনতে খুবই শ্রুতি মধুর লাগতো। যাইহোক মোবাইল ফোনটি সবাইকে দেখাতে গিয়ে, হঠাৎ করে আমার মোবাইল ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই সময়ে আমি মোবাইল ফোনটি Off হয়ে গেলে কিভাবে On করে খুলতে হয় তা বুঝে উঠতে পারিনি। হঠাৎ করে যখন মোবাইল ফোনটি অফ হয়ে যায় তখন মনে হয় মাথার উপরে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না মোবাইল ফোনটির কি হয়েছে। তাই খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আমার এক আত্মীয় যে কিনা গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করতো, তার কাছে চলে গেলাম। তখন সে মোবাইল ফোনটি দেখতে দেখতে মোবাইল ফোনটি অন করে ফেলল। আমি ভেবেছিলাম আমার মোবাইল ফোনটি নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু পরক্ষণে যখন মোবাইল ফোনটি পুনরায় চালু হয়েছে দেখে নিজের কাছে খুবই ভালো লেগেছিল।
এবং নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেলুম কেননা তখন মোবাইল ফোনটি অফ অন করা শিখিনি🤪। যার কারনে আমাকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মনে হচ্ছিল মোবাইল ফোনটি অন করতে না পেরে আমার বিদ্যাবুদ্ধি সবকিছুই অকেজো হয়ে গেছে😇। এই লজ্জার কথা কাউকে বলার মত নয়🤫🤫🤫। এই ছিল আমার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি, যা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করলাম।
আশা করি আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ২২, আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতির পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ সুন্দর বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।