ঝড়ের কবলে একদিন

in hive-129948 •  2 years ago 
" আজ রবিবার - ৩১শে বৈশাখ - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৪,মে - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

road-220058_1280.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকে আমি ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া একটি স্মরণীয় ঘটনা, আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে যাচ্ছি। আর এই স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল কালবৈশাখী ঝড় কে কেন্দ্র করে। আর এই কালবৈশাখী ঝড় নিয়ে স্মরণীয় ঘটনাটি মনে পড়ে গেল, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মোখার চিত্র দেখে। কেননা আমরা সকলেই জানি ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা তার তান্ডব নৃত্য শুরু করে দিয়েছে। আর এই তান্ডব নৃত্য উপকূলীয় অঞ্চলে ঠিক কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা হয়তো আমরা এখনো উপলব্ধি করতে পারছি না। শুধু মহান রাব্বুল আলআমিনের কাছে দুহাত তুলে প্রার্থনা করছি, এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলা করার মতো শক্তি আমাদেরকে দিক।

২০১১ সালের ১৮ই এপ্রিল আমার বড় বোনের ছেলে @mahir4221 এর জন্মদিন ছিল। তাই আমার ভাগ্নেকে জন্মদিনের উইশ করার জন্য এবং তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য, আমি ও আমার অর্ধাঙ্গিনী এবং আমার ছয় মাসের ফুটফুটে কন্যা সহ ১৮ই এপ্রিল সকাল ১০:০০ টার দিকে রংপুরে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, আমার প্রিয় মোটর বাইকটি নিয়ে। আর আমরা যখন কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম, তখন আকাশ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল সেই সাথে আকাশে প্রখর রোদও ছিল।

তো আমরা সেই দিন যখন আমার ভাগ্নেকে ফুলের তোড়া সহ তাদের বাসায় গিয়ে জন্মদিনের উইশ করেছিলাম, তখন আমার ভাগ্নে ভীষণ খুশি হয়েছিল। আর এই হাসি খুশি মাখা মুখ দেখার জন্যই আমরা তাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়েছিলাম। এরপর আমার বড় বোন আমাদেরকে দেখে, জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন রকমের খাবার রান্না করে খাইয়েছিলেন। আমরাও সেদিন সবগুলো খাবার খুব মজা করে খেয়েছিলাম। আর খাওয়া দাওয়ার পর একটু বিশ্রাম না নিলে তো শরীর মহাশয়তো ঠিকমত চলাচল করতে চায় না।

যাইহোক আমরা বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের চা নাস্তা খেয়ে ঠিক যখন সাড়ে চারটা বাজে তখন আমরা রংপুর থেকে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। যখন আমরা রওনা হয়েছিলাম, তখনো রংপুরের আকাশে কোন প্রকার মেঘ ছিল না ছিলো না কোন বৃষ্টি। তাই আমরা মনের আনন্দেই বেরিয়ে পড়েছিলাম। আর আমরা যখন রংপুর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে তিস্তা ব্রিজের কাছে এসে পৌঁছেছি তখন হঠাৎ করেই তিস্তা ব্রিজের ওপারে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসতে দেখেছিলাম। কিন্তু তখন পর্যন্ত আমরা এই কালো মেঘকে কোন প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে, তিস্তা ব্রিজ পার হতে শুরু করেছিলাম।

আমরা যতই ব্রিজ পার হচ্ছি ততই যেন আমাদের সামনে কালো মেঘ তেড়ে আসছিল। একপর্যায়ে যখন আমরা ব্রিজ পার হয়ে গেলাম, তখন প্রচন্ড ঝড়ো হওয়া বইতে শুরু করলো। আমরা ভেবেছিলাম এটা হয়তো সাময়িক কোনো ঝড়ো হওয়া, হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আমরা না বুঝে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে শুরু করলাম। তিস্তা ব্রিজ থেকে আমাদের কুড়িগ্রাম ফিরে আসতে আরো প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরত্বে ছিলাম। আর এই তিস্তা ব্রিজ থেকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার রাস্তা ছিল একদম ফাঁকা, আর এই ফাঁকা রাস্তার দুপাশে ছিল শুধু আবাদি জমি।

যার কারনে কালবৈশাখী ঝড়ের হাওয়া আমাদের যেন উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার মত উপক্রম হয়েছিল। আমার মোটরসাইকেলটি যতই সামনের দিকে এগোচ্ছিল ততই যেন দমকা হওয়া আমাদের ঠেলে ফেলে দিচ্ছিল। আমি ও আমার অর্ধাঙ্গিনী দুজনে মিলে পা দিয়ে মোটরসাইকেল আটকিয়ে রাখতে পারছিলাম না। দমকা হাওয়ায় রাস্তার ধুলোগুলো যেন সবকিছু ছেয়ে দিয়েছিল। এমতঅবস্থায় আমার অর্ধাঙ্গিনী তো হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিল। কেননা তার কোলে আমার ছয় মাসের ছোট্ট মেয়েটি ছিল। একদিকে যেমন ঝড়ো হাওয়া আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, অন্যদিকে মাথার উপরে গাছগুলো যেন ভেঙে ভেঙে আমাদের উপর পড়ছিল।

key-west-86025_1920.jpg

source

তিস্তা ব্রিজ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার রাস্তার ধারে কোন প্রকারের জনবসতি না থাকার কারণে, আমরা কোথাও দাঁড়ানোর সাহস করতে পারছিলাম না। এরই মাঝে হঠাৎ করে একটি পিক আপ আমাদের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছিল। আর আমার অর্ধাঙ্গিনী হাত উঠিয়ে পিকআপ এর ড্রাইভারকে গাড়ি থামিয়ে, আমাদের তার সাথে নিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু পিকাপ ওয়ালা কোনভাবেই কথা শুনছিল না। সে তার গতিতেই আমাদের ওভারটেক করে চলে গিয়েছিল।

আর তার যাওয়া দেখে আমার অর্ধাঙ্গিনী আবারো ভেঙ্গে পড়েছিল। সে জোরে জোরে কান্না করেছিল আর বলেছিল, আমরা তো বড় আমরা না হয় এই ঝড়ো হওয়া সহ্য করতে পারছি, কিন্তু আমার অবুঝ শিশু সে তো কিছুতেই এই ঝড়ো হাওয়া সহ্য করতে পারছে না। তার ওপরে আবার কখন যেন মাথার ওপরে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। এ যে কত দুর্বিষহ সময় ছিল তা হয়তো আজ বলে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে সেদিনের সেই কালবৈশাখী ঝড়ো হওয়ায়, আমাদের জীবন বিপন্ন হতে পারত।

তবে আমাদের ভাগ্য খুবই ভালো ছিল, এতটা ঝড়ো হাওয়া থাকা সত্ত্বেও সেদিন তেমন বৃষ্টির প্রকোপ ছিল না। যার কারনে আমার ছোট্ট মেয়েটি সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে হয়নি। তবে ধুলো ও দমকা হওয়ার কারণে তার কিছুটা শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। আর এভাবেই আমরা কালবৈশাখী ঝড়ের মোকাবেলা করে, অবশেষে আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম।



আশা করি আমার ঝড়ের কবলে পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_23-03-04_04-00-09-256.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

ভাগ্নেকে জন্মদিনের উইশ করতে গিয়ে এক বিশাল ঝড়ের মুখে পড়েছিলেন গোটা পরিবার নিয়ে। সেদিন এতই ঝড় ছিল যে আপনারা যে কোন বিপদে পড়তে পারতেন। ভাগ্যিস আল্লাহপাক সহাইছিল। তা না হলে যে সেদিন কি হত। বিপদে পড়লে কেউ আর সাহায্য করতে আসে না। আমার কিন্তু পুরো পোস্ট পড়ে বেশ ভয়াভয় লাগছিল।

মহান আল্লাহ তায়ালা সহায় ছিল বলেই সেদিন হয়তো আমরা বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

কালবৈশাখী ঝড় হঠাৎ করে আকাশে মেঘ জমে ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। তাই দূরে কোথাও গেলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় যেহেতু ছোট্ট একটি বাচ্চা নিয়ে আপনারা গেছেন। অনেক মঙ্গল করেছেন আপনাদের জন্য আল্লাহ। ধমকা হাওয়া হয়েছে ঠিক আছে কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বাচ্চাটা বৃষ্টির ভেজা থেকে বেঁচে গেল না হয় অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হতো। অনেক ভালো লাগলো আপনার ঝড়ের কবলে পড়ার গল্পটি পড়ে।

আপু, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমার ছোট্ট শিশুটি বড্ড বাচা বেঁচে গেছে। সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও আমার গায়ে শিহরণ দিয়ে ওঠে। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ভাইয়া ২০১১ সালে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের সাথে মোকাবেলা করার স্মরণীয় ঘটনা পড়ে শিহরিত হয়ে উঠলাম। আসলে এই ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতির সামনে যারা পরে তারাই শুধুমাত্র অনুভব করতে পারে এই দৃশ্যগুলো। তবে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ছোট ফুটফুটে মেয়েটির শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। বড় কোন বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনজন'ই এজন্য আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। তবে পিকআপ ড্রাইভার একটু মানবিক হওয়া উচিত ছিল।এর চেয়েও ভয়াবহ ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছিলাম আমরা নীলগিরিতে প্রায় 3500 ফুট উপরে। ♥♥

আপু একদম ঠিক বলেছেন, যারা এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে শুধু তারাই অনুভব করতে পারে এই দৃশ্যগুলো। আর তাইতো আপনার নীলগিরিতে ৩৫০০ ফুট উপরে ঝড়ের কবলে পড়ার কথা শুনে আমারও ভীষণ খারাপ লাগছে। যাই হোক,সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করুন এই প্রত্যাশা সবসময়।

আমিন

এত বড় ঝড়ের মুখে পড়েছিলেন আপনারা ভাগ্যিস আল্লাহপাক নিজে আপনাদের রক্ষা করেছিলেন।
ছোট বাচ্চা নিয়ে বের হলে দেখেশুনে বের হতে হয় কারণ ঝড়-বৃষ্টিতে ছোট বাচ্চাদের যে কোন বিপদ হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। অনেক ভালো লাগলো আপনার ঝড়ের কবলে গল্পটি পড়ে।

হ্যাঁ আপু, বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছি সেদিন, মহান রাব্বুল আল আমিন আমাদের সেদিন যেভাবে রক্ষা করেছেন, তার জন্য আজ অবধি হাজার হাজার শুকরিয়া জানাই।