শৈশবে ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনার বানানোর কিছু স্মৃতি

in hive-129948 •  yesterday 

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি শৈশবে শহীদ মিনার বানানোর স্মৃতির একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি। গতকাল ২১শে ফেব্রুয়ারী ছিল। ক্যালেন্ডারের পাতায় যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' নামে চিহ্নিত। আর আমাদের ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন সেই সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার আজকের এ পোস্ট শুরু করছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। আজ আমার শহীদ মিনার বানানোর স্মৃতি পোস্টি তাহলে চলুন দেখে আসি কেমন হয়েছে ।

international-mother-language-day-7733680_1280.jpg

Source

আসলে শৈশবকাল আমাদের সবার জীবনে একটি স্মৃতিমধুর। আমি মনে করি শৈশবের স্মৃতি আমাদের সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের প্রতিটিদিন প্রতিটি মুহূর্ত ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের দিনগুলোর মাঝে। শৈশবে আমাদের ছিল না কোন ভাবনা, ছিলনা কোন দুঃশ্চিন্তা বা কোন দায়িত্ববোধ। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল একদম সাদাসিদে ও আনন্দ পূর্ণ। এখনো সেই দিনগুলোর প্রতিটা সময় ও মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সেদিনের সেই দিন গুলোই অনেক সুন্দর ছিল। এখন ভাবী কেন বড় হতে গেলাম। চাইলেও ফিরে যেতে পারবো না সেই শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলোতে। তাইতো আজও চলে গিয়েছিলাম শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতিতে। আর সেই মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম। গতকাল গিয়েছিল আমাদের মাতৃভাষা একুশে ফেব্রুয়ারি। আর এই দিনটি সেই ছোটবেলা যেভাবে পালন করেছি উৎসব করেছি সে দিন গুলো ছিল এক অন্যরকম স্মৃতি। কিন্তু এখন এই দিনটিতে কোন আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি না। গতকালকে আমি পায়রার জন্য একটি খাঁচা কিনতে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম আমাদের বাড়ির নিচে মাটি দিয়ে বানানো শহীদ মিনার। দেখে খুব ভালো লাগলো। আর তখন চোখের মাঝে ভেসে উঠলো, ফেলে আসা সেই শৈশবের মাটি দিয়ে শহীদ মিনার বানানোর স্মৃতিগুলোর কথা।

IMG_20250221_112352.jpg

আসলে আমাদের জীবন থেকে অনেকগুলো বছর হারিয়ে গেছে । কিন্তু ফেলে আসা স্মৃতির পাতা গুলো উল্টালেই শৈশবের দিনগুলো আমাদের হৃদয়ে যেন এক রঙিন ছবির মতো ভেসে ওঠে। ঠিক সেইভাবে আমার জীবনে শৈশবে ফেলে আসা অনেক স্মৃতি গুলোর মত একুশে ফেব্রুয়ারীর শহীদ মিনার বানানো একটি মধুর স্মৃতি। আমরা ছোটবেলা সরকারি কোয়াটারে ছিলাম। আর সেখানে একসাথে অনেকগুলো কোয়াটার ছিল। কিন্তু প্রতিটা কোয়াটার ছিল আলাদা আলাদা। তবে আলাদা হলেও সবার সাথে একটি ভাল সম্পর্ক ছিল। সবার সাথে ভালো চেনা জানা ও একটি পরিবারের মত আমরা সবাই কাটিয়েছি। তখন আমরা এই কোয়াটার গুলোকে কলোনী বলতাম। প্রতিটা কলোনীতে অনেকগুলো পরিবার বাস করত। আমাদের কলোনীতে ও আমরা সবাই মিলে অনেক পরিবার ছিলাম। আর তার মধ্যে আমার বয়সী যারা ছিল তাদের মধ্যে আমি ছিলাম একটু বেশিই দুরন্তপনার। তখন পরিবারের দায়িত্ব পালন না করতে পারলেও ছোটবেলায় বন্ধু-বান্ধবের সাথে ভালো দায়িত্ব পালন করতাম। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারী আসলে আমরা অনেক প্ল্যান শুরু করে দিতাম। কিভাবে শহীদ মিনার বানানো যায়। কিন্তু আমরা যেহেতু ছোট ছিলাম শহীদ মিনার এতটা সুন্দর করে বানাতে পারতাম না। তাই সারাদিন মাটি নিয়ে ছোট ছোট শহীদ মিনার বানাতাম। এতটা সুন্দর না হলেও আমাদের তৈরি করা শহীদ মিনার আমাদের কাছে দারুন লাগতো। কিন্তু যখন রাত হয়ে আসতো তখন এলাকার বড় ভাইরা বিভিন্ন আয়োজন ও প্রোগ্রাম করত এই একুশে ফেব্রুয়ারী ও শহীদ মিনার কে ঘিরে।

আমরা সবাই কলোনীর সবগুলো ঘর থেকে চাল ডাল তুলে দিতাম। আর বড় ভাইয়ারা খিচুড়ি রান্না করত একুশে ফেব্রুয়ারী আগের দিন রাতে। আর শহীদ মিনার বানানোর জন্য আমাদের বলতো বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি জোগাড় করে আনতে। আর আমরা মাটি জোগাড় করে নিয়ে আসতাম। তখন ভাইয়ারা মাটি দিয়ে সুন্দর করে শহীদ মিনার বানানোর জন্য প্রস্তুতি নিত। আর আমাদের বলত যে আমরা যেন শহীদ মিনারের জন্য ফুল নিয়ে আসি। তখন আমরা খুশি হয়ে কলোনীতে যে সকল ফুল গাছ লাগানো থাকতো সেখান থেকে ফুল চুরি করতে যেতাম। কেউ পাহারা দিতাম আর কেউ ফুল চুরি করতে যেতাম। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারী তাই সবাই তাদের ফুলের বাগান গুলোকে কঠোর পাহাড়া দিয়ে রাখত। কারণ প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারীর পরের দিন দেখবে ফুলের বাগান একদম খালি। গাছ আছে কিন্তু ফুল নেই। তাই আমরা ফুল চুরি করতে যাওয়ার আগেই দেখতাম কেউ না কেউ তাদের ফুলের বাগানের পাশে ঘোরাঘুরি করছে। তারাও জানত যে একুশে ফেব্রুয়ারীর দিন সবাই শহীদ মিনার বানাবে আর তাদের বাগান থেকেও ফুল চুরি হবে। কিন্তু পাহাড়া দিয়ে কি আর বাগান রক্ষা করা যায়। আমরা কোন না কোনভাবে সেই যত কটা বাগান ছিল কলোনিতে সবগুলো বাগান থেকে ফুল চুরি করে নিয়ে আসতাম। শুধু আমরা নয় দেখা যেত যত কয়টা কলোনী ছিল সব কলোনীতে একই কাজ হতো। সবগুলো কলোনীতে একটি করে শহীদ মিনার বানানো হত। আর সব কয়টি কলোনির ছোটরা ফুল চুরি করে নিয়ে আসতো।

IMG_20250221_112347.jpg

যাই হোক এরপরে ফুল চুরি করে আনার পর দেখতাম আমাদের খিচুড়ি রান্না করা হয়ে গেছে। তখন ভাইয়ারা আমাদের খিচুড়ি দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিত। আর বলতো সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবি শহীদ মিনার রেডি হয়ে গেছে। এখন বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। সত্যি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মনে পড়তো আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদ মিনার বানিয়েছে। দৌড়ে ঘর থেকে নিচে নেমে যেতাম। আর গিয়ে দেখতাম অনেক সুন্দর করে মাটি দিয়ে শহীদ মিনার বানানো হয়েছে। আর তার মাঝে সুন্দর করে ফুল দেয়া আছে। তারপর সবাই মিলে প্রতিটি কলোনির দেখতে যেতাম যে কোন কলোনির শহীদ মিনার বেশি সুন্দর হয়েছে। তবে প্রতিবছর দেখা যেত আমাদের কলোনি সব সময় সুন্দর শহীদ মিনার বানাত। আর সবাই আমাদের কোরোনি শহীদ মিনার খুব পছন্দ করত। এরপরে এভাবে কয়েক বছর মাটি দিয়ে শহীদ মিনার বানানোর পর এক সময় বড় ভাইয়ারা ডিসিশন নিল আমাদের কলোনিতে একটি বড় পাকা করে শহীদ মিনার বানাবে। তাহলে প্রতিবছর আমি সুন্দরভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে পারব আর কলোনির একটা সৌন্দর্য বাড়বে সেই কাজই হল আমাদের কলোনিতে বেশ বড় একটি শহীদ মিন্না তৈরি হলো শহীদ মিনারটি এখনো অক্ষত রয়েছে প্রতিবছর এই ২১শে ফেব্রুয়ারি দিন শহীদ মিনারটি ধুয়ে পরিষ্কার করে ফুল স্থাপন করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

আসলে শৈশব মানেই ফেলে আসা সুন্দর স্বপ্ন ও সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাটানো সময়। তাই শৈশবের ফেলে আসা স্মৃতি ও স্বপ্ন গুলো আজও দোলা দিয়ে যায় মনপ্রাণে।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা একুশে ফেব্রুয়ারীর শহীদ মিনার বানানোর সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লক নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

শৈশবের শহীদ মিনার বানানোর স্মৃতিগুলো একেবারে চোখের সামনে ভেসে উঠল। সেই ছোট ছোট হাত দিয়ে মাটি কেটে মিনার বানানো, ফুল চুরি করে শহীদ মিনারে দেওয়া, এসব অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আপনি যেভাবে স্মৃতিগুলো তুলে ধরেছেন, তা সত্যিই হৃদয়ছোঁয়া।আপনার এই সুন্দর স্মৃতিচারণ আমাকে আমার শৈশবের ২১শে ফেব্রুয়ারির দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিল।

ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

কি সুন্দর লাগলো পড়ে। শহীদ মিনার বানানোর আপনার যে অপূর্ব সুন্দর স্মৃতি তা মন ছুয়ে গেল। ছোটবেলায় আমাদের এরকম কতই না স্মৃতি থাকে। বাংলা ভাষার এই একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে নিয়ে আমাদের এপার বাংলায় এরকম কোন স্মৃতি ছিল না যা আমরাও উৎসব হিসেবে পালন করতে পারি। আপনাদের এই উৎসব ঘন মুহূর্তের কথা যত জানি ততই ভালো লাগে। হতে পারি দুই দেশ কিন্তু আমরা দিনশেষে সবাই বাঙালি। এটাই আনন্দের বিষয়।

সুন্দর এবং সাবলীল মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আমারও মনে আছে সে সব দিনের কথা। কতই না মজা করতাম ২১শে ফেব্রুয়ারী আসলে। আর শহীদ মিনার বানানোর কথা নাই বা বললাম। বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে আপনি আপনার মনের কথা গুলো কে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন আপু। এমন সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ সুন্দর করে মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।