আস্সালামু আলাইকুম /আদাব 🤝
আমার প্রাণ প্রিয় বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা সবাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো এবং সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো ও সুস্থ আছি ।আমি @mahfuzur888, বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে আপনাদের সাথে আছি ।
আমার বাংলা ব্লগের প্রাণ প্রিয় বন্ধুরা, প্রতিদিনের মতো আজকে নতুন আরো একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের সবার মাঝে। আজকের এই পোস্টটি সাজিয়েছিলাম আমার জীবনের একটি গল্প নিয়ে। যা ঘটেছিল স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে। আর যেটার প্রথম পর্ব আগেই আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছিলাম এখন শেয়ার করছি শেষ পর্ব।
আসলে তখন বয়সটাই ছিল একটু লাফালাফি করার মতো। তারপরেও ছিল স্কুল শিক্ষকের হাতে ধরা খাওয়ার ভয়। তাইতো চলন্ত ফ্যানকে মাথা দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছিলাম। যাইহোক যখন ফ্যানের পাখা মাথায় এসে আঘাত করে তখন অতটা বুঝতে পারিনি। শুধু এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে মাথায় কিছু এসে লেগেছে। আমার মনের ভিতর টিচারের জন্য এতটা ভয় কাজ করছিল যে আমার মাথায় কিছু একটা হয়েছে কিনা সেটা দেখার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। যখন আমি দোতলা সিড়ি বেয়ে নিচে নামছি। তখন মনে হচ্ছিল আমার শরীরে হালকা ঠান্ডা কিছু লেগেছে।সাথে সাথে আমার গলায় হাত দিয়ে দেখি গলাটা ভিজে গিয়েছে। এবং ভিজা হাতটি সামনে আনতেই দেখতে পাই হাতে রক্ত দিয়ে মাখা। ততো সময় আমার শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার শার্ট পুরোটাই রক্তে ভিজে গিয়েছে। সাথে সাথে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বললাম আমার মাথাটা কি হয়েছে। তখন সে আমার মাথার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে তার শার্টের নিচে পড়ে থাকা স্যান্ড্রো গেঞ্জি খুলে আমার মাথাটা সজরে বেঁধে দিল ।
আমি তখন রক্ত দেখার পরেও শক্ত ছিলাম যেন আমার কিছুই হয়নি। কারন আমার মা একটু এক রক্ষা টাইপ ছিলেন। কোন প্রকার অন্যায় এবং অনিয়ম তিনি মেনে নিতেন না। তাই টিচারের পাশাপাশি আমার মাকে আমি অনেক ভয় পেতাম যে কোনভাবে যেন আমার মা জানতে না পারে আমি স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোন ভাবেই যখন রক্ত আটকানো যাচ্ছিল না তখন বাধ্য হয়েই আমরা একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করি। এদিকে রক্ত পড়তে পড়তে আমার পুরো শার্ট এবং গেঞ্জি পুরোটাই ভিজে গিয়েছে। আনুমানিক আট থেকে দশ মিনিট পর রিকশা যখন এসে আমার বাড়ির বাহিরে এসে থামল। তখন আমার কলিগ আমার মাকে ডাক দেওয়ার সাথে সাথে আমার মা বাহিরে এসে দেখলেন আমার শার্ট পুরোটাই রক্তে ভেজা । এবং আমার কলিগ তার গেঞ্জি দিয়ে আমার মাথাটা আটকে ধরে রেখেছে। যে মাকে আমি এত ভয় পাইতাম সেই মা আমার রক্তে ভেজা শার্ট দেখে কিছু না বলে অনেক জোরে কান্না শুরু করলেন ।
আমার মা কাঁদতে কাঁদতে আমার মাথার গেঞ্জিটা সরিয়ে দেখলেন অনেক রক্ত ঝরছে এবং কোন ভাবেই আটকানো সম্ভব না। তাইতো সেই রিক্সা করেই আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো আমার পার্শ্ববর্তী বাজারে এক ডাক্তারের দোকানে। যদিও আমার বাবা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারি করতেন পাশেই কিন্তুু তখন মোবাইলের যুগ না থাকায় পায়ে হেঁটে গিয়ে আমার ছোট চাচ্চু আমার বাবাকে ডেকে নিয়ে আসলেন। যেহেতু তখন এত অত্যাধুনিক হাসপাতাল ছিল না আমার গ্রামের বাড়িতে তাই ধরতে গেলে একপ্রকার হাতুড়ে ডাক্তারের কাছেই আমার মাথার চিকিৎসা করতে হয়েছিল। যথারীতি আমাকে একটি বেঞ্চে শুয়ে দেওয়া হলো এবং কোন প্রকার ব্যাথা নাশক ইঞ্জেকশন ছাড়াই মাথা সেলাই করতে লাগলো। ছোটবেলায় আমি এতটাই শক্ত ছিলাম যে এত কিছু হয়ে গেল আমার মাথার উপরে এবং ব্যথা নাশোক ইনজেকশন ছাড়াই সেলাই চালিয়েছিল তারপরেও আমার মুখ দিয়ে একটা আহ উ শব্দ এবং চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি ঝরে নি।
কিন্তু আমার চোখ দিয়ে তখনি পানি ঝরলো আমার মাথার সেলাই করা দেখে যখন আমার বাবার চোখের পানি আমার পিঠে এসে লাগলো। আমার বাবাকে আমি কখনো কাঁদতে দেখিনি। আর সন্তানের এত কষ্ট দেখে যখন বাবার চোখের পানি ঝরে সন্তানের পিঠে পড়ে তখন সেই সন্তান যত কঠিনই হোক না কেন সেও কাঁদতে বাধ্য হবে। আর তার ঐ ধারাবাহিকতায় হয়তো আমি শক্ত থাকা সত্ত্বেও কেঁদেছিলাম তখন। যাই হোক দীর্ঘ বেশ কিছু সময় পরে পাচঁটি সেলাইয়ের মাধ্যমে শেষমেষ রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেল। এবং আমার মাথা ব্যান্ডেজ করে আমাকে বিদায় দেওয়া হল। আমি যথারীতি আমার বাড়িতে চলে আসলাম। এবং দেখতে পেলাম আমি ফর্সা হয়ে গিয়েছি। কারণ এতটাই রক্ত পড়েছিল যে শ্যামলা মানুষ ফর্সা হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে দেখার জন্য আমার মামা বাড়ি থেকে লোকজন এসেছিল এবং ফুপাবাড়ী থেকে লোকজন এসেছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হল ওনারা আমাকে দেখতে এসে দেখে আমি ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলা করছি। আর এই বিষয়টা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছিল। যাই হোক এক সপ্তাহ রেস্ট করার পর আমি আবার স্কুলে গেলাম । এবং রীতিমতো ক্লাস শুরু করলাম।
তো বন্ধুরা আমি এখান থেকে একটা জিনিসই উপলব্ধি করতে পেরেছি যে পিতা মাতার অনুমতি ছাড়া কোথাও গেলে তা সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক নাও হতে পারে। যার বাস্তব উদাহরণ আমি নিজেই। আর তখন থেকেই আমি আমার পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া কোথাও যায়নি। যার ফলশ্রুতিতে হয়তো বা এত দূরে আসতে পেরেছি। বন্ধুরা আজকে তাহলে " স্কুল থেকে পালিয়ে হঠাৎ এক্সিডেন্ট "এর গল্পটি এখানেই শেষ করছি । পরবর্তীতে আবারো যে কোন একটি গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো। সে পর্যন্ত্য আপনারা সবাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন আল্লাহ হাফেজ 💗🙏💗।
ফোনের বিবরণ
ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
---|---|
ধরণ | গল্প । |
মডেল | এম ৬২ |
ক্যাপচার | @mahfuzur888 |
অবস্থান | রাজশাহী- বাংলাদেশ |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোঃমাহফুজুর রহমান।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের একজন সুনাগরিক। সর্বদাই নিজেকে দেশের মঙ্গল কামনায় ব্যস্ত রাখি। আমার জন্মভূমিকে আমি মায়ের মতো ভালোবাসি।আমি ভ্রমণ করতে খুবি ভালোবাসি।তাছাড়া ফটোগ্রাফি করতে আমার ভালো লাগে,আর রান্না করা আমার নেশা, এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই আমি আমার সৃজনশীলতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চাই। এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়,ধন্যবাদ সবাইকে।🌹💖🌹।
https://x.com/mahfuzur888/status/1879921014672609540?t=nUYAWxAinVzFNMaMche7NQ&s=19
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যি ভাইয়া বিপদ কার কখন কিভাবে আসে বুঝা মুশকিল। আপনার পোস্ট ভালো অনেক ভালো লাগলো। বেশি ভালো লেগেছে রুটি দেখতে গিয়ে সবাই দেখে রুগি খেলছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমি আপনার এই গল্পের প্রথম পর্ব পড়েছিলাম। আজকে আবার লাস্টের অংশ করতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। এরই মধ্য দিয়ে আপনার জীবনের অতীত ঘটনা জানতে পারলাম। অনেক ভালো লাগলো ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যি শৈশবের সময় গুলো খুবই দূরন্ত হয়। আপনি স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে ভয়ংকর দূর্ঘটনার সমূখীন হয়েছিলেন। বাবা,মা যতই কঠিন হোক না কেন সন্তানের বিপদে সন্তানের কষ্টে খুবই কাতর হয়।আপনার মা কঠিন তবে আপনার রক্ত দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি কান্না করেছে।আপনাকে হাতুরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে আসলে গ্রামগঞ্জে এখনো যে কোন দূর্ঘটনার বা অসুস্থতায় হাতুড়ে ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে।বেশ হাস্যকর যে রুগি দেখতে এসেছে কিন্তুু রুগি খেলছে।ধন্যবাদ পোস্ট টি ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
কে কখন কেমন বিপদের সম্মুখীন হবে কেউ বলতে পারেনা। আপনি ছোটবেলায় স্কুল থেকে পালাতে গিয়ে এমন এক্সিডেন্ট এর সম্মুখীন হয়েছিলেন সত্যি দুঃখজনক। তবে আমি মনে করি এখান থেকে আপনি সহ আরো অনেকেই শিক্ষা লাভ করতে পেরেছে। ঘটনাটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit