দিনাজপুর কান্তজির মন্দির ভ্রমণ

in hive-129948 •  2 years ago 
আজ বুধবার • ২০ শে আশ্বিন • ১৪২৯ বঙ্গাব্দ • ০৫ অক্টোবর - ২০২২


মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।



Picsart_22-10-04_15-01-52-284.jpg

• Edited By PicsArt App



মাঝখানে কাকে বন্ধুরা সহ ট্রেন ভ্রমণ করে গিয়েছিলাম দিনাজপুরে। দিনাজপুরে আমার বন্ধুর বোর্ড অফিসে কিছু কাজ ছিল। সে কাজগুলো সেরে আমরা মোটামুটি ভালই ঘুরাঘুরি করেছিলাম। দু পর্বের দুটি পোস্ট করেছিলাম। আপনারা অনেকেই আমার সেই পোস্ট গুলো দেখেছিলেন এবং অনেক গঠনমূলক মতামত দিয়েছিলেন। যাইহোক আমি আজ আমার সেই দিনাজপুর ভ্রমনে গিয়ে কান্তজির মন্দির ঘুরতে যাওয়ার অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। নিচে আমি আমার এর আগের পর্বের পোস্টগুলো লিংক দিয়ে দিচ্ছি আপনারা চাইলে আমার আগের পোস্টগুলো থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

কুড়িগ্রাম থেকে দিনাজপুর ট্রেন ভ্রমণ - পর্ব ১
কুড়িগ্রাম থেকে দিনাজপুর ট্রেন ভ্রমণ - পর্ব ২


কান্তজির মন্দিরের নাম তো অনেকেই জানেন এটা উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত। আমাদের রংপুর শহর থেকে দিনাজপুর যেতে খুব একটা সময় লাগে না আমি অবশ্য এবার কুড়িগ্রাম থেকে ট্রেনে দিনাজপুর গিয়েছিলাম বন্ধুরা সহ বেশ উপভোগ করেছিলাম সেই ট্রেন ভ্রমণটি। ট্রেন দিয়ে দিনাজপুর পৌঁছাতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল বটে কিন্তু বন্ধুরা সাথে থাকায় বেশ মজা করেছিলাম।

আসলে বাসে গেলেতো বাস সরাসরি দিনাজপুর এই নামিয়ে দেয় কিন্তু ট্রেন দিয়ে গেলে প্রথমে আপনাদের নামিয়ে দেবে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে তারপর সেখান থেকে ভ্যান গাড়ি ধরে আপনাদের যেতে হবে পার্বতীপুর বাস স্ট্যান্ডে। তারপর সেখান থেকে বাসে চেপে আপনাদের দীর্ঘ এক ঘন্টার রাস্তা পেরিয়ে যেতে হবে দিনাজপুর শহরে। আমরাও পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে ঠিক এভাবেই দিনাজপুর অব্দি গিয়েছিলাম।

তারপর দিনাজপুর পৌছানোর পর আমরা আর অন্য কোথাও দেরি না করে বন্ধুর কাজ ছাড়তে চলে গিয়েছিলাম বোর্ড অফিসে কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার আমার বন্ধুর কাগজের গরমিল থাকায় আমরা তার কাজটি ঠিক মতো সারতে পারিনি। প্রথমের দিকে খারাপ লাগছিল কারণ যে কাজে আমরা দিনাজপুর গিয়েছিলাম সে কাজটি সম্পন্ন করতে পারলাম না যাইহোক কি আর করার দিনাজপুর যেহেতু চলে এসেছি সেহেতু দিনাজপুর আসাটাকে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না দিনাজপুরের কিছু কিছু জায়গা আমরা ঘুরেই বাড়ি ফিরব বলে ঠিক করলাম।

তারপর আমরা দিনাজপুর বোর্ড অফিস থেকে বেরিয়ে দুপুরের খাবার সেরে সেখানে আর একটুও দেরি করলাম না অটো গাড়িতে উঠে সোজা চলে গেলাম কান্তজির মন্দিরের দিকে। মন্দির ঘুরে আমরা আবার যাব আমার বন্ধুর এক মামার এলাকায় ঘুরতে আমরা এসেছি শুনে মামা সেই সকাল থেকেই আমাদের ফোন দিচ্ছে কখন তার কাছে যাব বলে।

যাইহোক চলুন বেশি দেরি না করে কান্তজির মন্দির থেকে ঘুরে আসা যাক।

IMG_20221005_123037.jpg

এটা হল কান্তজির মন্দিরের বাহিরের দিকের দেয়াল। বাহিরের দিক থেকেই বুঝা যায় এই মন্দিরটি কত পুরনো যদিও এই দেয়াল গুলো পরে করা হয়েছে। ভেতরের মন্দিরটি দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন যে এর বয়স কত বেশি হতে পারে।

IMG_20221005_123101.jpg

তারপর আমরা বাহিরে আর বেশি দেরি না করে প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে প্রবেশ করতেই মন্দিরের ভেতরের যে একটা শান্ত ভালো লাগার মত পরিবেশ রয়েছে সেটা ঠিক ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছিলাম। মনের মধ্যে কেমন যেন একটা শান্তি ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

IMG_20221005_123123.jpg
IMG_20221005_123149.jpg

এগুলো হলো কান্তজির মন্দিরের কার্যালয় কক্ষ। পরের ছবিগুলো তো আপনারা মন্দিরের কার্যালয়ের দরজা ও দেখতে পারবেন। এই কথাগুলো সামনেই মূল মন্দির অবস্থিত, মূল মন্দিরকে মাঝে রেখে মন্দিরের চারদিকে এরকম কার্যালয় কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।

IMG_20221005_123339.jpg
IMG_20221005_123208.jpg

এটাই হল সেই মূল মন্দির, যার নির্মাণ ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামনাথ রায় সম্পন্ন করেন। মন্দিরটির শিলালিপিগুলো থেকে আরো জানা যায় যে এই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন মহারাজা প্রাণনাথ রায়। মন্দিরের দেয়ালের শিলালিপি গুলো সত্যি দেখার মত ছিল।

IMG_20221005_123509.jpg
IMG_20221005_131429.jpg

এই দুটো হচ্ছে মন্দিরের উত্তর এবং পশ্চিম দিকের দেয়াল। এই দেয়াল গুলোতে ভিত্তিবেদী শিলালিপিতে অনেক কিছুই লেখা ছিল। আমি ভিত্তিবেদী শিলালিপি না বুঝলেও আমার কাছে সেই কারুকার্য গুলো দারুন লেগেছিল। আর মন্দিরের এই উত্তর দিকের দেয়ালে ভিত্তি বিধি শিলালিপিতে এই মন্দিরের নির্মাণ ইতিহাস লেখা ছিল। তাছাড়াও এই মন্দিরের অন্যান্য দিকের দেয়ালগুলোতেও শিলালিপি দ্বারা অনেক ঘটনাই তুলে ধরা হয়েছিল যেমন একদিকে ছিল মহাভারতের গল্প আরেকদিকে ছিল মহাবলী হনুমানের গল্প। এগুলো আমি জানতে পেরেছিলাম সেখানের পুরোহিত মশাই এর কাছে।

IMG_20221005_131626.jpg

অনেক আগে থেকেই বিষ্ণুপ্রিয়া হিসেবে তুলসী গাছকে পুজো করা হয়। কান্তজির মন্দিরের পেছনদিকেও একটি তুলসী গাছ ছিল। তুলসী গাছের নিচটা সুন্দর করে বাঁধাই করা ছিল বলে দেখতেও ভারী সুন্দর লাগছিল।

IMG_20221005_131722.jpg

এত সুন্দর একটি শান্তির জায়গায় ঘুরতে গেলাম আর নিজের ছবি না তুললে কি চলে? আসলে সারা দিন ভ্রমণ করার ফলে চেহারার অবস্থা একদম বাজে হয়ে গিয়েছিল তাই খুব বেশি ছবি তোলা হয়নি। ছবিগুলো বাজে হলেও একটি ছবি আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করলাম।

IMG_20221005_132041.jpg

এটা হলো মহাদেব শিব ঠাকুরের মন্দির। এই মন্দিরটিও মূল মন্দিরের পেছনদিকে অবস্থিত।

IMG_20221005_132355.jpg

ঘুরতে ঘুরতে সামনে একটি স্মৃতিফলও পড়ে গেল সেখানে কিছু মানুষের নাম দেখতে পারলাম, এই স্মৃতিফলক উন্মোচনকারীর নাম আমি ঠিকঠাক ভাবে বুঝতে পারলাম কিন্তু পাশে কিছু মানুষের নাম লেখা ছিল তারা কে আমি ঠিকঠাক ভাবে বুঝতে পারিনি আর জিজ্ঞাসা করার মত আশেপাশে কেউ ছিলনা।

IMG_20221005_132447.jpg

আপনারা প্রথমে যেই শিব ঠাকুরের মন্দির দেখতে পারেন সেই মন্দিরের সামনেই একটি গাছ ছিল সেখানে অনেকগুলো হাতে বাঁধা লাল সুতো বেঁধে দেয়া ছিল আমার বন্ধুরা সেই গাছ থেকে লাল সুতো নিয়ে সেখানে এক কাকুর কাছে শতগুলো হাতে বেধে নেই।

IMG_20221005_123001.jpg

তারপর মন্দির দর্শন শেষ করে আমরা মন্দির থেকে বেরিয়ে মন্দিরের বাহিরে এই বট গাছের নিচে গিয়ে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই। সেদিন প্রচুর গরম ছিল তাই সামনের এক দোকান থেকে আমরা তিন বন্ধু কোল্ড ড্রিংকস কিনে এনে খাই, তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষ করে আমরা সেখান থেকে উঠে ভ্যান গাড়ি নিয়ে সেই মামার কাছে যাব বলে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ি।

তাহলে আজ এ পর্যন্তই আশা করি আমার কান্তজির মন্দির ভ্রমণের পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের মতামত অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন, সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার এই পোস্টে আসার জন্য সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভকামনা রইল সকলের জন্য।

image.png


PicsArt_03-22-02.27.17.png

আমি মাহির । আমার বাসা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে । আমি একজন ব্লগার, ফটোগ্রাফার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নতুন কোন বিষয়ে লিখতে এবং সবাই কে অজানা বিষয়ে জানাতে আমার ভিষণ ভালো লাগে। ছবি তুলতে, জাঙ্ক ফুড খেতে এবং ঘুরতেও আমি ভিষণ পছন্দ করি । আর আমার সব থেকে বড় শখ ছবি তোলা।

FacebookTwitterYouTube

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgnMqDPMwPqFHimR5p.png

standard_Discord_Zip.gif

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

কান্তজির মন্দির আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম বেশ কিছু বছর আগে। সত্যিই বলতে একদমই আগের মতো দেখা যাচ্ছে এটা। আমি তোমার প্রতিটি ছবি এবং বর্ননা বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আবার যেন ঘুরতে গিয়েছি সেখানে।
খুব ভালো ভ্রমন কাহিনী ছিল আর ছবিগুলো অসাধারণ ছিল।

ধন্যবাদ প্রিয় বড় ভাই ❤️
আপনি আমার পুরো ভ্রমণ কাহিনি ভালো ভাবে পড়েছেন জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আর কান্তজীর মন্দির আসেলেই একই রকম রয়েছে, আগেও আমি এর ছবি দেখেছিলাম ঘুরে এসে বেশ ভালো লেগেছে।
ভালোবাসা নেবেন ভাইয়া 🥰

আমি গিয়েছিলাম দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, এর একটু সামনে ভ্যান দিয়ে একটা মসজিদে ও গিয়েছিলাম।পাপর আর কি কি যেন খেয়েছিলাম।আপনার ছবিগুলো দেখে মনে পরে গেলো। ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

আমি মসজিদটিতে যাই নি, মন্দির ঘুরেই এক মামার কাছে গিয়েছিলাম।
ধন্যবাদ আপু আপনার মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য।

মন্দিরে খুব সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন।দিনাজপুর কান্তজির মন্দির ভ্রমণ করেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো। মন্দিরে ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। মন্দির ভ্রমণের এত চমৎকার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার গঠনমূলক মতামত দেয়ার জন্য। শুভ কামনা রইলো।