গল্পকথা-
হাতে চিঠিটা নিয়ে বসে আছি। আমার প্রিয়তমার হাতে লেখা কিন্তু দারুন। চিঠিটা এই পর্যন্ত কয়েকবার পড়লাম তবুও কেন জানি বারবার পড়তে মন চাইছে।
চিঠিটায় অজস্র চুমো দিয়ে শার্টের পকেটে রেখে দিলাম। এই বুকের মধ্যখানে তাকে জায়গা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভাগ্যে তাকে পেলাম না। তাই তার দেওয়া শেষ স্মৃতিটুকু বুকের বা পাশেই রেখে দিলাম। এতে মনকে তো বুঝাতে পারবো সে আমার পাশেই আছে।
সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলাম। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। আজ কেন জানি গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
যে ছেলেটা সবসময় ফাজলামো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো, কেউ কান্না করলে তাকে হাসানোর চেষ্টা করতো সেই ছেলেটা আজ কাঁদছে। ভাগ্য আসলেই খুব অদ্ভুত।
সিগারেটে ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ২২ বছর পিছনে চলে গেলো।
আজ বাড়িতে নতুন মেহমান এসেছে। জয়নাল সাহেব ও লাবন্য ইসলামের ফুটফুটে মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়েছে আজ। বাড়িতে যেন খুশিত বন্যা বইছে।
জয়নাল ও আয়মান দুই ভাই। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর দুইভাই কখনো আলাদা হোন নি। একই বাসায় দুই পরিবার মিলেমিশে থাকে।
আয়মান সাহেবের স্ত্রী নাফিজা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। বড় ছেলে আরহাম ও মেয়ে আয়ানা। আরহামের বয়স ৫ বছর আর আয়ানার বয়স ৩ বছর।
নাফিজাঃ আরহাম বাবা দেখ তোর বোনকে কত সুন্দর লাগছে।
আরহামঃ ও আমার বোন না, আমার বউ হবে।
আরহামের এমন কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। বাচ্চা মানুষ কতকিছুই বলে তাই সেদিকে কেউ পাত্তা দেয়নি।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে কন্যা সন্তানের আগমনকে সুসংবাদ বলে উল্লেখ করেছেন। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানের পালনকারীর জন্য তিনটি পুরস্কার ঘোষণা করেছেন->> জাহান্নাম থেকে মুক্তি।>> জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চয়তা।>> জান্নাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন।
তাই জয়নাল সাহেব খুশি হয়ে মেয়ের নাম জান্নাত রাখলেন।
ধীরে ধীরে আরহাম, আয়ানা ও জান্না
ত বড় হতে লাগলো। তিনজন সবসময় একইসাথে খেলাধুলা করতো। একই বিছানায় গড়াগড়ি করে ঘুমাতো।
যখন আরহামের বয়স ৮ বছর হয়ে যায় তখন তাকে আলাদা রুম দেওয়া হলো। আয়ানা ও জান্নাত এক রুমে থাকবে কিন্তু আরহাম ছেলে মানুষ তাই আলাদা রুমে থাকবে।
কিন্তু আরহাম নারাজ ছিলো। সে আয়ানা ও জান্নাতের সাথে থাকার জন্য অনেক কান্নাকাটি করেছিলো কিন্তু লাভ হয়নি। মা-বাবার আদেশে রুমে চলে যায়।
রুম আলাদা করলেও আরহামের কাছ থেকে জান্নাতকে দূরে সরাতে পারেনি। ৮ ঘন্টা ঘুম ব্যতীত সারাক্ষণ জান্নাতের পিছনে পড়ে থাকতো।
একদিন খেলা করার সময় একটা ছেলে এসে জান্নাতকে খেলার ছলে ধাক্কা দিয়েছিলো। যদিও এটা এক্সিডেন্ট তবুও আরহাম রেগে গিয়ে ওই ছেলেকে অনেক মারধর করেছিলো।
এটা নিয়ে যখন বাসায় বিচার আসে তখন সবাই আরহামকে অনেক বকা দেয় আর আয়মান সাহেব তো থাপ্পড়ই মেরে দেয়।
রাগে কটমট করে আরহাম রুমে চলে যায়। রাগের কারণে রাতেও খায়নি সে। সবাই অনেক ডাকাডাকি করেও খাওয়াতে পারেনি তখন জান্নাত রুমে আসে।
জান্নাতঃ এই শুয়ে আছিস কেন? খাবি না?
আরহামঃ খেতে ইচ্ছে করছে না।
জান্নাতঃ জানিস তোর জন্যে আমিও খাইনি।
আরহামঃ কি বলছিস? তুই কি পাগল?
জান্নাতঃ হুম তুই কেন ওই ছেলেটাকে মারলি?
আরহামঃ তোকে ধাক্কা দিলো কেন? ওকে তো আমি জানে মেরে ফেলবো।
জান্নাতঃ মারামারি করতে নেই। ভালো ছেলেরা এগুলো করেনা।
আরহামঃ আমি ভালো না।
জান্নাতঃ আচ্ছা আগে খেয়ে নে।
আরহামঃ হুম তুইও খেয়ে নে। আয় খাইয়ে দেই তোকে।
জান্নাতঃ আমার পেট ভরা। এইমাত্র আস্ত একটা লেগ পিস খেয়ে এলাম।
জান্নাত কথাটা বলে নিজেই ফেঁসে গেছে। আরহামও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জান্নাত ধরা পড়ে যাওয়ায় জোরপূর্বক হাসি দেয়। আরহাম ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,
আরহামঃ মিথ্যা বললি কেন?
জান্নাতঃ তোকে খাওয়ানোর জন্য।
আরহামঃ খাবো না আমি। যা তুই এখান থেকে।
জান্নাতঃ কষ্ট পাবো সোনা।
আরহামঃ ইমোশনাল কথাবার্তা বলে সকল কাজ আদায় করে নিচ্ছিস। (খেতে খেতে)
জান্নাতঃ আমি এরকমই। আচ্ছা শুন একটা কথা বলবো রাখবি?
আরহামঃ বল।
জান্নাতঃ আর কখনো মারামারি করিস না।
আরহামঃ কেন?
জান্নাতঃ আমার ওসব ভালো লাগেনা।
আরহামঃ আমি মারামারি করবো না কিন্তু তোকে কেউ কিছু বললে আমি কিন্তু ছাড়বো না।
জান্নাতঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
জান্নাত আর আরহাম অনেকক্ষণ বসে গল্প করলো তারপর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
দিন যত ঘনিয়ে যাচ্ছিলো ততো আরহামের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। প্রথমে সেটা সবাই মজার ছলে নিলেও পরে সবাই বুঝতে পারে। কিন্তু আরহাম অতিরিক্ত দুষ্টুমি করায় তাকে নিয়ে কেউ সিরিয়াস হতো না।
দেখতে দেখতে কয়েক বছর কেটে যায়।
আরহাম এখন ভার্সিটিতে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ে, আয়ানা এবার ইন্টার ফাইনাল ইয়ারে পড়ে আর জান্নাত এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে।
দিনদিন আরহামের পাগলামি বেড়েই যাচ্ছে। জান্নাতকে সবসময় বউ বউ বলেই ডাকে। বাসার সবাই উপস্থিত থাকলেও একই আচরণ করে।
একদিন ভার্সিটি থেকে এসে নিচে বসে পড়ে। জান্নাতের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে তাই সে বাসায়ই পড়াশোনা করে।
আরহামঃ বউ কই গেলি?
নাফিজাঃ অসভ্য ছেলে। মা, চাচিকে দেখছিস তবুও এভাবে ডাকছিস কেন? তোর কি লজ্জা নাই?
আরহামঃ বউকে বউ বললে দোষের কি আছে?
লাবণ্যঃ আহ!! ভাবী কেন ছেলেটাকে কথা শুনাচ্ছেন? আরহাম দুষ্টুমি করে জানেনই তো।
জান্নাতঃ হুম এই দুষ্টুমির জন্য একদিন আমার বিয়ে ভাঙ্গবে।
লাবণ্য আর নাফিজা হেসে চলে যায়।
আরহামঃ কি বললি? আমি থাকতে অন্য কেউ তোকে বিয়ে করবে কেন?
জান্নাতঃ তোকে বিয়ে করতে তো আমার বয়েই গেছে। দেশে তো আর কোনো ছেলে পাচ্ছিনা তাই তোকেই বিয়ে করতে হবে।
আরহামঃ পাকামো করতে হবেনা। যা আমার জন্যে তোর স্পেশাল লেবুর শরবত নিয়ে আয়।
জান্নাতঃ জ্বী জাহাপনা।
আরহাম জান্নাতের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসে। জান্নাত একরাশ গালি দিয়ে শরবত বানিয়ে আরহামের কাছে দিয়ে আসে।
আরহামঃ ওয়াক!!!! এটা কি?
জান্নাতঃ কি মানে? (বোকা হয়ে)
আরহামঃ এতো তিতা!!!! ছি!!!!
জান্নাতঃ আমি চিনি দিয়েছি তো।
আরহামঃ শরবত বানানোর সময় বোধহয় আমাকে গালি দিচ্ছিলি তাই শরবত নিম পাতার মতো তিতা।
জান্নাতঃ একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। আমি চিনি বেশিই দিয়েছি।
আরহামঃ সত্যি বলছি এটা নিম পাতার রসের মতো। পারলে খেয়ে দেখ।
জান্নাতঃ কই মিষ্টিই তো। (খেয়ে বললো)
আরহামঃ সত্যি? দে তো একটু।
জান্নাতঃ হুম।
আরহামঃ আসলেই তো। বুঝলাম না প্রথমে তিতা লাগলেও তোর ঠোঁটের স্পষ্ট পেয়ে মিষ্টি হয়ে গেছে। এক কাজ কর তুই চিনি না মিশিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিস তাহলে চিনিও বাঁচবে আর আমারও তৃষ্ণা মিটবে।
জান্নাতঃ তুই দিনদিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস।
জান্নাত গ্লাসটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। আরহাম মুচকি হেসে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর আনমনেই হেসে রুমে চলে যায়।
জান্নাতের পরীক্ষা চলে এসেছে। দিনরাত পড়াশোনা করছে আর আরহামকেও সহ্য করছে।
প্রতিদিন সকালে জান্নাত এসে আরহামকে ডেকে তুলতে হবে। খাওয়ার সময় জান্নাত পাশে থাকতে হবে। গোসল করতে গেলে ইচ্ছে করেই টাওয়াল ফেলে চলে যাবে তারপর জান্নাতকে ডাকবে। রোজ বিকেলে জান্নাতের সাথে খুনশুটিতে মেতে উঠবে।
এই নিয়ম শুনে জান্নাতের চোখ কপালে উঠে যায়। আরহামকে পরিবারের সবাই অনেক বকাঝকা করলেও সে কিছুতেই সেসব কথায় কান দেয়না।
জান্নাত আরহামের সাথে মাঝেমধ্যে ঝগড়া করলেও পরে তার কথা মেনে নেয়।
জান্নাতের পরীক্ষা চলছে তাই এই আরহাম নামক যন্ত্রণা থেকে কিছুদিন শান্তি পাবে।
পরীক্ষা চলাকালীন আরহাম জান্নাতকে ডিস্টার্ব করেনি। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই পুনরায় সবকিছু শুরু হয়ে গেলো।
সবাই আরহামকে নিয়ে সিরিয়াস না হলেও আয়ানা সব সত্যিটা জানে। তাই সে আরহামের দুষ্টুমিগুলো অনেক উপভোগ করে।
তিনজন মিলে ফ্রেন্ড সার্কেল তৈরি হলে এর মধ্যে একজন থাকবে যে সবসময় অপমান করে, একজন যে সবসময় অপমানিত হয় আবার আরেকজন যে দেখে দেখে মজা নেয়।
ওদের রিলেশনটাও এমন। আরহাম সবসময় অপমান করে, জান্নাত অপমানিত হয় আর আয়ানা সেসব দেখে মজা নেয়।
চলবে......
#একেমনভালোবাসা
#সূচনা_পর্ব
[পাঠকরা মন খারাপ করবেন না। আমি তিনটা গল্পই দিবো। তবে এই গল্পটায় সাড়া পেয়েছি তাই এটাই আগে দিচ্ছি। কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ। আপনারা রেসপন্স করলেই তো আমি উৎসাহ পাবো।]
এই গল্পটি একটা ফেসবুক গ্রুপের অথর এর লেখা। ওই গ্রুপে এই গল্পটি খুব সুনাম কুড়িয়েছে। আর আপনি জাস্ট কপি করে এখানে পোস্ট করে দিলেন।
Source: https://www.facebook.com/tahiyaislam418
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit