মৃত্যুর কাছে ভালবাসার পরাজয় পঞ্চম পর্ব

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম

@maksudakawsar
খিলগাঁও, ঢাকা বাংলাদেশ

3 ভাদ্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
18 সেপ্টেম্বর, রবিবার

কেমন আছেন বন্ধুরা সবাই? আশা করি সকলে সুস্থ্য ভাবে জীবন যাপন করছেন। আমিও অনেক ভালো আছি।

মৃত্যুর কাছে ভালবাসার পরাজয় গল্পটির মোট চারটি পর্ব শেয়ার করা হয়েছে। জানিনা আমার স্ব-রচিত গল্পটি আপনাদের কেমন লাগছে।

আজ গল্পটির পঞ্চম পর্ব শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

people-2589047_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

মৃত্যুর কাছে ভালবাসার পরাজয় গল্পের পর্ব সমূহের লিংক-

পর্ব -1

পর্ব-2

পর্ব-3

পর্ব-4

তো বন্ধুরা চলুন শুরু করা যাক-

মৃত্যুর কাছে ভালবাসার পরাজয় পঞ্চম পর্ব

রিয়ার খালা বলল তাহলে এতদিন যা শুনলাম সেগুলো কিছিল? আমি তো শুনেছি আপনাদের দুজনের মাঝখানে অনেক গভীর সম্পর্ক। আপনি তো নাকি রিয়া কে বিয়ে করার কথাও বলেছেন। এমন কি রিয়ার ফুপুর বাসায়ও গিয়েছেন রিয়ার সাথে দেখা করতে। তাহলে এতকিছু কেন করেছিলেন? আর আপনি হয়তো জানেন না রিয়ার সাথে আমার সম্পর্কটা অনেক গভীর। যে কথা সে পৃথিবীর কাউকে বলতে পারেনা সে কথাগুলো সে আমাকে বলতে পারে। আপনাদের মাঝের এমন কোন কথা নেই যা রিয়া আমাকে বলেনি। আর এখন দেখছি আপনি রীতিমতো সম্পন্ন বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

people-4498458_1280.png

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

আপনারা পারেনও বটে। কি করে যে পারেন? একে তো ছোট্র একটি মেয়েকে প্রেমের জ্বালে ফাসিঁয়ে রঙ্গীন স্বপ্নে বিভর করেছেন। তার উপর মেয়েটির মা নেই, সৎ মায়ের সংসারে অযত্ন আর অবহেলায় দিন কাটে। এর উপর আবার আপনাদের মত ধোকা বাজের কাছে প্রতারিত হওয়া। একবার ভেবে দেখেছেন কি হবে মেয়েটির জীবনে। কিভাবে এত কষ্ট মেনে নিবে? কি অবরাধ ছিল তার?

এবার সুজন বলল, দেখেন খালামণি আপনি বিষয়টি বুঝতে ভুল করেছেন। আমি আসলে রিয়াকে কখনো ভালোবাসিনি। আর বিয়ে করার প্রলোভনও দেখায়নি। আমি রিয়ার বিষয়ে তার ফুপুর মুখে অনেক গল্প শুনেছি। তাই ওর উপর আমার একটা মায়া পড়ে যায়। এছাড়া আমার একটি কাজিন ছিল যার সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। আমার ঐ কাজিন এর সাথে রিয়ার হুবাহু মিলে যায়। সব মিলিয়ে রিয়ার প্রতি আমার একটা সফট কর্ণার সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেটা ভালবাসা নয়। হ্যাঁ আবেগের বসবর্তি হয়ে আমিও কিছু ভুল করেছি। কিন্তু যখন আমি বুঝতে পারলাম এটা আমার মারাত্বক ভুল , আমার পরিবারও কখনো রিয়াকে মেনে নিবে না। আর এর জন্য রিয়া কে অনেক কষ্ট পেতে হতে পারে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম রিয়া কে সব খুলে বলবো। আর এজন্যই আমি সেদিন ওর ফুপুর বাসায় যাই। কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেল। প্লিজ আপনি একটু রিয়া কে বুঝাবেন ও যেন পাগলামী না করে, এসব কিছু ভুলে যেয়ে ঠিক মত পড়াশুনা করে।

people-3163556_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

রিয়ার খালামনি অপলক দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইলো। কি আর বলবে, কিছুই বলার ছিল না তাঁর। সে ছেলেটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে গেল। বাড়িতে ফিরে সমস্ত ঘটনা রিয়ার বোনকে খুলে বলল। সমস্ত ঘটনা শুনে রিয়ার বোন বলল আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্য করেন এবং এও বলল রিয়াকে সমস্ত বিষয় বুঝিয়ে বলতে, তার সাথে ছেলেটাকে ভুলে যেতে।

রিয়ার খালা ভাবছে কিভাবে রিয়াকে সমস্ত বিষয়টি বুঝিয়ে বলবে । রিয়া কি সব কথা শুনে ছেলেটাকে ভুলে যেতে পারবে? নাকি এত ছোট বয়সে নিজে নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে? এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে রিয়ার খালা ভাবলো এবার রিয়াকে সবকিছু খুলে বলতেই হবে। রিয়ার খালা রিয়ার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। কিন্তু রিয়া খালার মুখে এসব কথা শুনে কোনক্রমে বিশ্বাস করল না। বরং খালার উপর অনেক রাগ করলো। সে ভাবল তার খালা তার সাথে সব মিথ্যা কথা বলছে। তাই সে খালাকে রাগ করে রুম থেকে বের করে দিল। পরদিন রিয়ার খালা আবারও আসলো এবং সুজন ছেলেটির সাথে রিয়ার ফোনে কথা বলিয়ে দিল। ছেলেটি রিয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর রিয়া রাগে মোবাইল ফোন টা ভেঙ্গে ফেললো। সব কথা শুনে নিজেকে নিজে নিজেকে স্থির রাখতে পারল না রিয়া। অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকল। তারপর সমস্ত কিছু সামলে নিয়ে খালামণিকে বলল আমি তো আগে থেকে এসব জানতাম। যাক আমিও এসব লাফাঙ্গা ছেলেদের পাত্তা দেই না। আসলে এগুলো সব রিয়ার মুখের কথা। ভিতরে ভিতরে সব ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনা ঘটার পর হতে রিয়া বাড়ীর সবার সাথে কম কথা বলে, এক বেলা খায় তো আরেক বেলা খায় না, বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরে থাকতে পছন্দ করে। একাকীত্ব লাইভ জেনো এখন তার জীবনের একমাত্র সঙ্গী হয়ে গেছে।

woman-7452430_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

হঠাৎ একদিন রিয়া বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়লো। তার শারীরিক অবস্থা খবই খারাপ। সবাই মিলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। দুই একদিন পরে ডাক্তার সাহেব রিয়ার সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর রিয়ার গার্ডেন ও আত্নীয় স্বজন কে ডেকে পাঠালেন। ডাক্তার সাহেব কিছুক্ষন সকল রিপোর্ট দেখে, বলল- এ বয়সে মেয়েটি এত কঠিন অসুখ কি করে বাজালো। আমি আসলে অনেক দুংখিত। আমার কিছুই করার নেই। এখন চিকিৎসায় যদি মেয়েটি ভাল হয়। তিনি পরিবারের সকল কে জানিয়ে দিলেন রিয়ার ক্যান্সার হয়েছে এবং সেটা সেকেন্ড স্টেজে আছে। ডাক্তার সাহেব আরও বললেন একটি অপারেশন করতে হবে, তারপর ক্যামো ও রেডিওথেরাপি দিলে রিয়া ভালো হয়ে যাবে। এ কথা শোনার পর রিয়ার বোন কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেল। তবে এসব কিছু রিয়াকে জানতে দেওয়া হয়নি।

এদিকে ডাক্তারের উপদেশ মোতাবেক রিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো, তার অপারেশন হলো। আর এভাবে বেশ কিছুদিন রিয়ার হাসপাতালে কেটে গেল। শাররীক যন্ত্রণায় রিয়া সুজন কে আজ মনে করার সময় পায় না। ধীরে ধীরে রিয়া কিছুটা সুস্থ্য হয়ে উঠে। এবার শুরু হয় ক্যামো থেরাপি। আজ আর রিয়া আগের মত সুন্দরী নও। ঔষুধের রিয়াকষনে পড়ে গেছে মাথার চুল। সেই সুন্দর চেহারা আজ চেনা যায় না। এরই মধ্যে একদিন সেই ছেলেটি অর্থাৎ সুজন হাসপাতাল আসে রিয়ার সাথে দেখা করতে।

pexels-andrea-piacquadio-3769151.jpg

কপিরািইট ফ্রি ছবি সোর্স

(চলবে)

গল্পটির আজ পঞ্চম পর্ব তুলে ধরলাম। কেমন লাগলো আমার আজকের পর্ব জানাতে ভুলবেন না যেন। খুব তাড়াতাড়ি আসছি এই গল্পের পরবর্তী পর্ব নিয়ে ততদিন অপেক্ষায় থাকুন।

আপনারা ভাল ও সুস্থ্য থাকুন।

4bEjbgCbFMvA8T33kKpp3RsBvZue1Hns5Cwuz57pgmmNsNm69BvSk1AJmpxNTS4pL3vHiENLbAz3uRYvkzCHo62J16v8SBo7zpHgViW2yotwk1h5RE41hP2qzb7ELuJ3M646bDwEPdWALxxSwivrhMnjnGhcCBFuAKUHSjQuMNQZSJx9eV.gif

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovTUshBEnxRTgb9n2LUqHX7h1H2p2D18YQFUDgxbpg8bp7AxwH9vK7k1SRqaoEJbCQrboh4ga6xfDvigcW6zfkH8S.png

আমি মাকসুদা কাউছার। পেশায় একজন গৃহিনী ও চাকুরীজিবী। এরই মাঝে আমি আবার লেখালেখি করতেও পছন্দ করি। তাই আমার নিজের মনের আবেগ ও কথাগুলোকে সাবলীল ভাষায় প্রকাশ করার জন্য আমার প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালবাসি।বাংলা আমার মায়ের ভাষা।

pBMyo3B2Sao2EbuHAFTX1CNWMbam25xJGPs4sKmLS6XL7jPcLJ4PhfmbsQbXEmSBkiJH1y8vcCZLEDiVjH9fUC37Hpjmz6Czw4oJd4hidqWpdsEDnaUW3Rt3p3eTZGQkoiwZDyH4hdDt99wPqRBy3pVZE1qtEmMBB3MC4V4MJCpzUCii.png

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অসাধারণ হচ্ছে আপনার লেখা।রিয়ার জন্য অনেক খারাপ লাগছে আর সুজনের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।সব জেনে বুঝেও এভাবে একটা মেয়েকে ঠকানো তার মোটেও উচিৎ হয়নি।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

আসলে ভাই মেয়েটার জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। একুশে এত কষ্ট কিভাবে নিবি বেশি?

গল্পটি সত্যি অনেক ভালো ছিল, তবে প্রথম দুই পর্ব মিস করেছিলাম সেটিও সময় করে পড়ে নেব। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।

ভাইয়া গল্পটি প্রথম থেকে পড়লে আশাকরি আপনার অনেক ভালো লাগবে।

ঠিক আছে আপু খুব শীঘ্রই সেগুলো পড়ে নেব ভালো থাকবেন

রিয়ার ভালোবাসার গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো ।যদিও আমি সবগুলো পর্ব পড়তে পারিনি চেষ্টা করব পূর্বের পর্বগুলো পড়ার। তাহলে সম্পূর্ণটা ক্লিয়ার ভাবে বুঝতে পারব‌। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস কাউকে মন থেকে ভালবাসলে কখনোই তাকে ছেড়ে যেতে মন চায় না।

কিভাবে সত্যি বলেছেন ভালোবাসার কোনো রূপ হয় না. গল্পটি প্রথম থেকে বলে আপনার বেশ ভালো লাগবে.

সুজন ছেলেটার কথা শুনে আমার একদম মাথা গরম হয়ে গেল। কিভাবে ছেলেরা এরকম করে অসহায় মেয়েদের সাথে। তারপরে রিয়ার এরকম একটা অশুখের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। ক্যান্সারের কারণে সৌন্দর্য চলে গেল। কিন্তু আবার কেন আসলো হাসপাতালে? এটা জানার বেশ আগ্রহে রইলাম।

আপু এটা সমাজের বাস্তব চিত্র এখানে অনেক ছেলে আছে এরকম আমার অনেক ছেলেরা অনেক ভালো তা নিয়ে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।

ধন্যবাদ আপু, আজকের গল্পটাই আমি পড়েছি ,আগের পার্টগুলো পরা হয়নি, পড়ে নিব, গল্পের এই অংশটুকু পড়ে হচ্ছে এটি বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে দারুন একটি সৃষ্টি। সাম্নের পর্বগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।

ভাইয়া আসলে গল্পটি একটি আবেগী মেয়ের জীবন কাহিনী। আজকে গল্পটি শেষ করলাম।

আসলে পঞ্চম পর্বটি পড়ে মনটা একটু খারাপ হলো।চতুর্থ পর্বটি পড়ে ভেবেছিলাম হয়তোবা সুজন পরিবারের চাপে এমন করছে। কিন্তু পঞ্চম পর্বটি পড়ে সেই ধারণা মিথ্যে হলো। আসলে সুজনের মতো ছেলেদের জন্য অনেক মেয়েকে নিঃস্ব হতে হয়েছে।আর রিয়ার মতো সহজ সরল মেয়েরা পৃথিবী থেকে অকালে ঝরে পরছে। দেখাযাক পরবর্তী পর্বে রিয়ার ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে।