গল্প পোস্ট-প্রথম ভালোবাসা কখনও ভুলা যায় না-শেষ পর্ব

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামু আলাইকুম

আমি @maksudakawsar । আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আর বাংলাদেশী ইউজার হিসাবে আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি গান, কবিতা, জেনারেল টাইটিং কিংবা রেসিপি আর ফটোগ্রাফি সব কিছু দিয়েই আপনাদের মনটাকে একটু জয় করে নিতে। আমি জানিনা আমার লেখা আপনাদের কেমন লাগে। তবে আমি কিন্তু মিলনের চেয়ে বিচ্ছেদের রোমান্টিক গল্প লিখতে বেশ পছন্দ করি।

আমি মনে করি প্রেমের বিচ্ছেদেেই সুখ বেশী। কারন এতে ভালোবাসাগুরো বেঁচে থাকে সারা জীবন। মনের এক কোনায় সে জায়গা করে নেয় চিরদিনের জন্য। আমার মনে হয় মিলনের স্বাদ ক্ষনস্থায়ী। কিন্তু বিচেছদের জ্বালা সারা জীবনের। যদি বিচ্ছেদ না থাকতো তাহলে এত কবিতা, এত গান আর এত এত গল্প রচিত হতে হতো। যদি বিচেছদ না থাকতো তাহলে আজ লাইলী মজনু, শিরি ফরহাদ কারো নামই কিন্তু ইতিহাসের পাতায় লেখা হতো না।

গত কয়েকদিন আগে আমি আপনাদের সাথে একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম। আমার গল্পটির নাম ছিল প্রথম প্রেম কখনও ভোলা যায় না। গল্পটির প্রথম পর্ব পড়ে আপনারা অনেকেই কমেন্টে লিখেছেন যাতে সব গল্পের মত করে এই গল্পে আমি বিরহ দিয়ে শেষ না করি। সেই থেকে আমি বেশ ভাবলাম গল্পটি নিয়ে কি করা যায়। কিন্তু ভেবে কোন কুলকিনারা পেলাম না। কি যে হবে নীরা আর রাতুল এর জীবনে। চলুন তো দেখে আসি কি হলো তাদের ভাগ্য। আর ও আর একটি কথা যারা গল্পটির প্রথম পর্ব সময়ের অভাবে পড়তে পারেননি তাদের জন্য আমার গল্পটির প্রথম পর্বের লিংক নিচে দিয়ে দিলাম। আশা করি পড়ে দেখবেন ।

প্রথম ভালোবাসা কখনও ভুলা যায় না.png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

গল্পটির প্রথম পর্বের লিংক

নিপা কেঁদে অস্থির কারন নিপা সেই ছেলেবেলা হতেই মনে মনে রাতুল কে অনেক অনেক পছন্দ করতো। কিন্তু কখনও রাতুল কে বুঝতে দিতো না। কতদিন যে সে রাতুলের জন্য পথের মাঝে একা একা দাড়িঁয়ে ছিলো। শুধুমাত্র রাতুল কে একনজর দেখার জন্য। রাতুলের জন্য নিপা সব সময় নামায পড়ে দোয়া করতো যেন রাতুল তার মনের কথাগুলো বুঝতে পারে। কিন্তু রাতুল কখনও নিপার দিকে তাকিয়েও দেখতো না। বরং অতিরিক্ত কোন কিছু হলে জোরে ধমক দিতো। সেই রাতুল আজ পুরোটা চিঠি জুড়ে নীরা কে ভালোবাসার কথা লিখেছে। নীরা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আর তাই তো নীরা সারা রাত ঘুমোতে পারে নি। পারে নি চোখের পানি কে ধরে রাখতে। আজ নীরার এত বছরের স্বপ্ন পূরন হতে যাচেছ। সে রাতুল কে নিজের করে পেতে যাচ্ছে। সব যেন নীরা কে এক জন্য জগৎ - এ নিয়ে গেল।

পরদিন বেশ সকাল সকাল নীরা জেগে গেল। নীরা আজ বেশ সুন্দর করে সেজেছে। কপালে নীল টিপ দিয়েছে। হাত ভরা রঙবেরং এর চুড়ি পড়েছে। আর খুব সুন্দর নীল রং এর একটি শাড়ী পড়েছে। অবশ্য সকালে উঠেই সে মাকে বলে দিয়েছে আজ কলেজে অনুষ্ঠান তাই তাকে শাড়ী পড়ে যেতে হবে। বেশ সুন্দর সাঝে সেজে নীরা রাস্তায় দাড়িঁয়ে রাতুল এর জন্য অপেক্ষা করছে। আজ যেন অপেক্ষার সময় শেষ হচেছ না। এক এক মিনিট কে নীরার কাছে হাজার মিনিট মনে হচেছ। কিছুক্ষনের মধ্যে রাতুল চলে আসলো। কিন্তু কি দেখছে রাতুল এসব। কাকে দেখছে । এসব কথা ভাবতে ভাবতে প্রায় অনেকক্ষন রিক্সায় বসে থো খেয়ে নীরার দিকে চেয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষন পড়ে নীরা রাতুল কে বললো সড়ে বস আমি উঠবো। রাতুল তো অবাক নীরা তো কখনও রাতুল কে তুমি করে বলে না। রাতুল সরে বসলে নীরা তার পাশে বসে পড়লো। আজ যেন নীরা একটু গা ঘেষেই বসলো। রাতুল এগুলো সব খেয়াল করলো। রাতুল জিজ্ঞেস করলো আজ কি কলেজে কোন প্রোগ্রাম নাকি? নীরা রাতুল কে বলল না। আজ আমি একজনের সাথেদেখা করতে যাবো। রাতুল তো এ কথা শুনে ভিতরে ভিতরে বেশ কষ্ট পাচ্ছে।

এদিকে নীরা রাতুল কে বলল কোন এক চাইনিজে রিক্সা থামাতে। চা্ইনিজের কথা বলল কারন সেখানে তো কেউ নীরা কে দেখবে না। যাই হোক দুজনে মিলে সেখানে গেল। বেশ কিছুক্ষন হলো দুজন চুপচাপ বসে আছে। কেউ কোন কথা বলছেনা। হঠাৎ রাতুল নীরা কে বলল কই তোর না কে আসার কথা, এখনও তো এলো না। নীরা কিছু না বলে চুপ চাপ বসে আছে। হঠাৎ নীরা রাতুল কে জিজ্ঞেস করল আমায় আজ কেমন লাগছে। রাতুল নীরা কে এক কথায় উত্তর দিলো অসাধারন। নীরা রাতুল কে বলল তুমি যে এত সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারো সেটা আমার জানা ছিল না। আর তোমার সে চিঠি আজ আমাকে এত সুন্দর করে সাজতে বাধ্য করেছে। নীরার মুখে এসব কথা শুনে রাতুল বেশ বুঝতে পারলো যে নীরা তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে নি। সেই থেকে শুরু হয় তাদের মধ্যে ভালোবাসার শুরু।

এভাবে দিন যায়। তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। এখন তারা প্রতিদিন একবার হলেও কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারে না। আজ প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর হলো তাদের ভালোবাসা। কেউ যেন কাউকে ছাড়া অচল। তাদের ভালোবাসা যেনো সিনেমাকেও হার মানায়। কিন্তু সুখ তো চিরদিন থাকে না। নীরা আজ পড়াশুনা শেষ করেছে। রাতুলও ভালো চাকুরী করছে। এদিকে নীরার পরিবার হতে নীরার জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়ে গেছে। নীরার বাবার এক বন্ধুর ছেলে আমেরিকার সিটিজেনশীপ। তার সাথেই নীরার বিয়ে ঠিক করা হয়। কিন্তু নীরা বাবা মা কে তার ভালো বাসার কথা বলতে পারে না। এমন কি রাতুলও না। যদি দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।

এদিকে নীরা বিয়ের দিনক্ষনও ঠিক হয়ে যায়। নীরার বাবা রাতুল কে ডেকে নীরার বিয়ের অনেক দায়িত্ব দেয়। এদিকে রাতুল কে নীরা ডেকে পাঠায়। নীরা রাতুল কে ছাড়া বাঁচতে পারবে না, এ কথা রাতুল কে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেয়। কিন্তু রাতুল অপারগ। কোনভাবেই দুই পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হতে দিবে না। তাই রাতুল নীরা কে ফিরিয়ে দেয়। নীরা একবুক কষ্ট বুকে নিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় নিজেকে সুপে দেয়। এদিকে রাতুল নিজের বুকের সব কষ্টগুলো বুকে চেপে রেখে বিয়ের সব আয়োজন করে। সব দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করে। কি আর করবে। নিজেদের জন্য তো আর দুই পরিবারের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। অবশেষে ঘনিয়ে আসলো নীরার বিয়ের দিন। আর মাত্র দুই ঘন্টা পর নীরা অন্য কারো ঘর করবে। হারাবে তার স্বপ্নের ভালোবাসার মানুষটিকে। নীরা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। নীরা ভাবছে তাহলে কি লাভ তার এ জীবন রেখে।< p>

বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই চলে আসচ্ছে। হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে চিৎকার শুনে রাতুল সহ সবাই দৌড়ে গেল ভিতরে। হায় হায় কি হলো নীরা নিজের হাত নিজে ছুড়ি দিয়ে কেটে দিয়েছে। হাতের রগ কাটায় বেশ রক্ত ঝরেছে। নীরা অজ্ঞানের মত পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি নীরা কে হাসপাতালে নেওয়া হলো। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডাক্তার বলল বাচাঁর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এদিকে নীরা এ অবস্থা দেখে রাতুল দিশে হারা । অন্য কারো হলেও তো নীরা বেচেঁ থাকতো। সে নীরা কে দেখতে পেত। কিন্তু এ কি হলো। তার নীরা তো আজ মারা যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে রাতুল পাগল প্রায় হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ রাতুল এর কি যেন হলো সে দৌড়ে নীরার কাছে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করলো। আমি নীরা কে ছাড়া কি করে থাকবো। রাতুল এর এমন কথায় সবাই হতবাক। এমন সময় ডাক্তার এসে খবর দেয় রাতুল কে? তখন সবাই রাতুল এর দিকে অবাক হয়ে তাকায়। রাতুল কে নিয়ে ডাক্তার ভিতরে যায়। কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে সবাইকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।

ডাক্তারের মুখে সমস্ত ঘটনা শুনে সবাই অবাক। তাদের মধ্যে দুই আড়াই বছরের প্রেম । অথচ তারা বুঝতে পারলো না। অবশেষে দুই পরিবারের সিদ্ধান্ত হয় যে নীরা সুস্থ্য হলে তাদের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করবে। ঐদিকে রাতুল ভিতরে যেয়ে দেখে নীরা এখন একটু সুস্থ্য তার জ্ঞান ফিরে এসেছে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় তারা কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারবে না। কারন প্রথম প্রেম কখনও ভোলা যায় না। তাই তারা পরিবারকে সব জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । তারপর নীরা সুস্থ্য হয়ে বাড়ী আসলে খুব ধুম ধাম করে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেই থেকে নীরা আর রাতুল ভালো বাসার সুখের ঘর বানিয়ে আজও সুখে দিন কাটাচ্ছে।
কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটি ? অপেক্ষায় রইলাম আপনাদের অনূভূতি গুলো জানার। তবে আমার আজকের গল্পটি বিরহের করতে চাইলেও আপনাদের অনুরোধে আমি মিলনের মাধ্যমে ইতি টানতে বাধ্য হলাম।
সবাই ভাল এবং সুস্থ্য থাকবেন।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

আপু, আপনার লেখা "ভালবাসা কখনো ভুলা যায় না" গল্পটি পড়তে পড়তে আমার একটি গান মনে পড়ে গেল। আর সেই গানটি হচ্ছে "জীবনে প্রথম প্রেমেরই স্মৃতি কোনদিন ভোলা যায় না"। কথাটি একদম সত্যি কথা। কেননা আমিও জীবনে প্রথম যাকে ভালবেসেছি, আজ তাকে নিয়েই সংসার করে সুখে শান্তিতে দিন পার করছি। আর এই প্রথম ভালোবাসা নিয়ে আমারও বেশ অভিজ্ঞতা রয়েছে। যাইহোক আপু, অবশেষে রাতুল ও নীরার ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পেয়েছে দেখে খুবই ভালো লাগলো। খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন আপু, এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া আমার গল্পটি মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।

আসলে প্রথম ভালোবাসা কখনোই ভোলা সম্ভব না। তাইতো রাতুল আর নীরা অবশেষে একে অপরকে ফিরে পেয়েছে এবং তাদের পরিবার ও তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। নীরার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল, বিয়ের আগ মুহূর্তে সে হাত কেটে ফেলেছিল, যার কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার যখন তাদের দুই ফ্যামিলিকে তাদের সম্পর্কের কথা বলে তখন দুই ফ্যামিলি অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক সবশেষে ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে এটা ভাবতেই আমার কেমন জানি ভালো লাগছে। সবার ভালোবাসা যেন সবাই ফিরে পায় এটাই কামনা করি।

ধন্যবাদ আপু সুন্দর গুছিয়ে একটি মন্তব্য করার জন্য।

প্রথম ভালোবাসা যে ভোলা যায় না তা সত্যি ই।তাইতো রাতুল আর নিরার ভালোবাসা পূর্নতা পেলো।এতোকিছুর পর দুই পরিবার তাদের মেনে নিল।অনেক ধন্যবাদ আপু মিলন ঘটানোর জন্য।

ধন্যবাদ আপু আপনাকেও সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।