আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই। মনে হয় ভালই আছেন। কারন আমার বাংলা ব্লগের মত এমন একটা প্লাটফর্মে যারা জড়িয়ে আছে তারা তো এতগুলো মানুষের সান্নিধ্যে ভালই থাকার কথা।
আমিও বেশ ভাল আছি।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরব একজন রিকশা চালক বাবার কষ্ট ।
গতকাল বিকেলের ঘটনা এটা।
আমি অফিস শেষে বাসায় যাচ্ছি। তো বাস হতে নেমেই বাসার উদ্দেশ্যে রিকশা নিবো। দুই তিনটা রিকশা ওয়ালার সাথে কথা শেষ করার পর একজন বৃদ্ধ লোক এর রিকশায় উঠে পড়ি। লোকটি খুব পরিচ্ছন্ন একজন মানুষ। মুখে লাগানো হাসি। তো আমি যাচ্ছি রিকশা করে।
ফটোগ্রাফার-মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা- opp-A16
কিছুদূর যেতেই দেখি বৃদ্ধ লোকটি প্রচন্ড গরমে ঘামাচ্ছে। ঘামে তার গেঞ্জি ভিজে পানি পড়ছে। দেখে খুব মায়াই লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলাম কি কষ্টে জীবন তাদের ।
কিছুদূর যেতে রিকশা জ্যামে পড়ল। আমার আবার কৌতহল টা একটু বেশীই বটে। তাই রিকশা চালক চাচার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলাম। উনাকে জিজ্ঞেস করা শুরু করে দিলাম। উনার পরিবারের বৃত্তান্ত।
ফটোগ্রাফার-মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা- opp-A16
চাচা এত বৃদ্ধ বয়সে এত কষ্ট করে যে রিকশা চালান, আপনার কোন সন্তান নেই। উনি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে উত্তর দিলো, সন্তান থাকলেই বা কি লাভ মা। সন্তান তো কোন কাজে আসে না।
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম , চাচা কথাটা মিথ্যা বলেন নি । আজকাল তো এরকমই প্রায় অনেক সন্তানই। বড় হয়ে বিয়ে করে ফেললে আর বাবা মার দিকে খেয়াল থাকে না। আবার এর ব্যতিক্রমও আছে। সব কিছু মিলিয়েই তো আমরা।
তো যাই হোক আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম চাচা কয় সন্তান আপনার ।
ফটোগ্রাফার-মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা- opp-A16
চাচা শুরু করলেন, মা আমার দুই ছেলে এক মেয়ে । বউ ছেলে মেয়ে সবাই বাড়ীতে থাকে। আমি শুধু ঢাকায় থাকি।
মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ে, ছোট পোলাটা মাদ্রাসায় হাফিজি পড়ে। আর একটা পোলা কিছুই করে না বেকার নষ্ট হয়ে গেছে।
আমি ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে যা কামাই তার থেকে আগে বাড়িতে তাগোরে পাঠাই। তারপর বাকী যা থাকে নিজের জন্য রাখি। নিজে এক বেলা খাই তো আর এক বেলা খাইনা। অনেক কষ্টে জীবন চালাই।
আপনারা তো ভালই আছেন। আমরা তো মা অনেক কষ্টে আছি।
ফটোগ্রাফার-মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা- opp-A16
তারপর ও বউ পোলাপাইনের মন পাইনা।
বড় পোলাডা ফোন কইরা কয়ডা টাকা চাইছিল। আমি দিতে পারি নাই। পোলাডা আমারে কয় টাকা না দিতে পারলে রেললাইনে যাইয়া গলা দাও। টাকা দিতে পারবা না তো জন্ম দিছো কেন।
কন মা পোলাপাইন বড় করছি এখন যদি এই কথা শনতে হয়, তয় কতটা কষ্ট লাগে । হেলাইগা বাড়িত যাইনা। রাগ কইরা। তগো টাকা দরকার টাকা নে। আমি খাই আর না খাই ঢাকায় পইড়া মইড়া যামু।
চাচা কথা বলতে বলতে কখন যে তার চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু করল তা বুঝতে পারলাম না।
এরই মধ্যে আমি আমার গন্তব্য স্থলে চলে আসি।
কি আর করা মানুষের যা স্বভাব আমিও তাই করলাম। চাচা কে তার ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। আর বললাম যাক চাচা মনে কষ্ট নিয়েন না। সব মানুষের মধ্যেই এরকম দুঃখ কষ্ট আছে। আর এর মধ্যই আমাদের চলতে হবে।
ফটোগ্রাফার-মাকসুদা কাউছার
ক্যামেরা- opp-A16
কিন্তিু আমি ভাবতে লাগলাম কি কষ্ট একে তো গরীব বাবা রিকশা চালায় অনেক কষ্টে সংসার চালায়, আবার তার মধ্যে সন্তানের এ রকম আচরন। কি সমাজ আমাদের, আর কি আমাদের মনুষত্ব। আমরা দিন দিন সবাই অমানবিক হয়ে পড়ছি।
আমিও মনে মনে কিছু টা কষ্ট অনুভব করলাম।
বন্ধুরা কেমন লাগলো আমার এরকম বাস্তব লেখা। আসলে মানুষের দুঃখ ভরা কাহিনী গুলো আমাকে ব্যাথিত করে । তাই সেই কষ্টগুলো আপনাদের মাঝে শেয়া না করে বসে থাকতে পারি না।
সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
ধন্যবাদ সকলকে
মাকসুদা কাউছার
ঢাকা, বাংলাদেশ