আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আপনারা ভাল আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে বেশ ভাল আছি।
বন্ধুরা আমরা সবাই জানি যে মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত। তাই প্রথমে আমি সে সকল মায়ের জন্য দোয়া করি যারা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। সেই সাথে আমি আমার মায়ের জন্যও দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন তাকে বেহেশের সুউচ্চ স্থানে স্থান দান করেন।
আমার মায়ের গ্রামের বাড়ী যশোর জেলার ঝিকরগাছা গ্রামে। মায়ের ছেলে বেলাটাই সেখানে কেটেছে। বিয়ের পর ঢাকায় থাকায় গ্রামের বাড়ী তেমন আর বেশী যাওয়া হয়ে উঠেনি। আমিও কখনও যাইনি। এবার মা মারা যাওয়ায় গেলাম মায়ের বাবা বাড়ী আর আমার নানাবাড়ী জীবনে প্রথম। তাই গ্রামে একমাত্র নিকট আত্নীয় ছাড়া আর কাউকেই চিনি না। তবু এর মাঝেই পরিচয় হয়ে গেল মায়ের তিন বান্ধবীর সাথে। যাদের সাথে আমার মা তাদের ছেলেবেলা কাটিয়েছেন।
প্রতিটি মানুষেরই একটি ছেলেবেলা থাকে। আর আমার মায়েরও তাই ছিল। মা ছিল সংসারের বড় মেয়ে। তবু নানা মাকে খুবই আদর করতো। নানা কখনও তার মেয়েদের কে দিয়ে বাড়ীর কাজ করানো পছন্দ করতো না। তাই তো মায়ের সারাটিক্ষন কাটতো গ্রামের বান্ধবীদের সাথে গল্প আর আড্ডায়। আর তখন কার সময়ে তো গ্রামের পরিবারগুলো ছিল পরিবারের মত। আমি জানিনা এখনও সেরকম আছে কিনা? এখন তো ঝিকরগাছায় তেমন গ্রাম নেই। সেখানে এখন শহরের ছোয়া বয়ে গেছে। যাক বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার মায়ের ছেলেবেলার তিনজন বান্ধবীর সম্পর্কে গল্প বলবো। যাদের আমি খুজে পেয়েছি।
তাহলে শুরু করা যাক মায়ের ছেলেবেলার তিন বান্ধবীদের গল্প।
আমার মায়েরা ছিলেন চার বান্ধবী। তাদের নাম ছিল দুলি, আলোকী, সখিনা ও ভাদুরী। আর আমারে মায়ের নাম ছিল দুলি।শুনেছি এরা নাকি ছেলেবেলা থেকে কেউ কাউকে রেখে ঘুমাতেও চাইতো না। এর জন্য অনেক সময় তারা পালা করে এক একজনের বাড়ীতে থাকতো।
এই যে ছবিতে দেখছেন যাকে তিনি হলেন আলোকী খালা। এবার তার সাথে দেখা করে শুনতে পেলাম তাদের ছেলেবেলার গল্প। আলোকী খালা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়। শুনেছি হিন্দু হলেও নাকি তাদের মাঝে কখনও সাম্প্রদায়িকতার ছিটাফুটাও লাগেনি। তারা এক প্লেটে খাওয়া দাওয়া করত, একই উঠানে খেলাধুলা করত। প্রত্যেকে প্রত্যেকের উৎসবে একে অপরের বাসায় খাওয়া দাওয়া করতো। গ্রামে থাকলেও মায়ের সাথে তাদের যোগাযোগ ছিল। তাইতো আলোকী খালা আমাকে পেয়ে খুব কান্নাকাটি করলো আমার মায়ের জন্য। খালা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো দুলি আমাদের কে ছেড়ে চলে যাবে ভাবীনি। দুলি নাই এখন তোমরা আসবা আমার সাথে যোগাযোগ রাখবা। আর আমাদের কে নিয়ে খালার খুশির সীমা ছিল না। মায়ের মুখে শুনেছি আলোকী খালা নাকি খুব সুন্দর গান ও গাইতে জানতো। তাই খালাকে অনুরোধ করে মাঝে একটি গানও শুনে নিলাম।
এরপর আমরা আরেকদিন বেড়াতে গেলাম ভাদুরী খালার বাড়ীতে। আমরা যখন পৌছালাম তখন খালা দৌড়ে এসে আমাদের কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। ও দুলি দুলি রে তুই আমাগেরে ছেইড়ে গেলি কেনরে। এগুলো হলো যশোর এর ভাষা। আমি হুবুহু খালার ভাষাটাই এখানে বললাম। তারপর খালা তো আমাদের কে ছাড়বেই না। বেশ আয়োজন করলো আমাদের জন্য। খালা গল্প করতে লাগলো কতযে সময় পার করেছি তোমার মা আর আমরা। আমরা ছিলাম দুষ্টুর সেরা। বাড়ী থেকে আচার চুরি করে তা বাগানে নিয়ে সবাই মিলে ভাগ করে খেতাম। তোমার মা ছিল আমাদের অনেক প্রিয়। ও তো আমাদের কে রেখে ভাতও খেতে চাইতো না। আমরা ছেলে বেলায় একজন আর একজনের জামা কাপড় ও পড়েছি। একবার তো তোমার নানা তোমার মাকে থ্রি পিস কিনে দিলে তোমার মা সেই নতুন থ্রি-পিস টা ও আমাকে দিয়ৈ দিল । আমাদের মত এত সুন্দর বন্ধুত্ব এখন আর পাওয়া যায় না।।
এবার যার বিষয়ে বলবো তিনি হলেন সখিনা খালা। তিনি ছেলেবেলা হতেই অনেক রাগী স্বভারের লোক। তাকে গ্রামের সবাই খুব ভয় করতো। মেয়ে মানুষ হলেও তিনি ছেলেবেলা হতে ছিলেন অনেক ডান পিটে স্বভাবের। তাই বান্ধবীরাও তাকে অনেক ভয় করতো। তিনি বড় হয়ে স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। আমরা যখন তাকে দেখতে গেলাম তখন তার চোখ অপারেশন করানো হয়। আমাদের কে দেখে তার কি কান্না। রাগী হলেও তিনি ছিলেন ভিতরে ভিতরে নরম স্বভাবের মানুষ। কারও দুঃখ বা কষ্ট সে সহ্য করতে পারেন না। এখানেও আমাদের জন্য অনেক আয়োজন। খাওয়া দাওয়া করে খালার সাথে বসে গেলাম মায়ের ছেলেবেলার গল্পে। খালা হাসতে হাসতে বলল, আমি তোদের কে একদিন এর একটা গল্প বলি। আমাদের পাড়ার একটা ছেলে তোর মাকে অনেক বিরক্ত করতো। তোর মা এই কথা আমাকে কখনও বলেন নি। আমার রাগ বেশী তো তাই। ভাদুরী আর আলোকী আমাকে একদিন এ কথা বলল। আমি তো বাশবাগানের বাশ দিয়ে সেই বেটারে কি যে পিটালাম। তোর মাও এর জন্য আমার সাথে বেশ কিছুদিন কথা বলে নি। এই ঘটনা নিয়ে পড়ে গ্রামে মুরুবীরা বিচারও ডেকেছে। আসলে তখন বুঝিনি ঐ বেটার কোন দোষ ছিল না । ঐ বেটা তো তোর মারে অনেক পছন্দ করতো, আর বেটাগো অবস্থাও অনেক ভাল ছিল। তখন তোর নানা যদি তার সাথে তোর মাকে বিয়ে দিতো তাহলে দুলিরে আর ঢাকায় যেতে হতো না। আর আমরাও দুলিরে হারাতাম না।
মায়ের বান্ধবীদের মুখে এসব গল্পশুনে বেশ ভালই সময় কাটলো আমাদের। মাঝে মাঝে মায়ের জন্য অনেক অনেক কান্না করেছি। ভেবেছি আজ মা যদি বেচেঁ থাকতো হয়তো অনেক খুশি হতো। আজ আমরা মায়ের বাবা বাড়ীতে যাচ্ছি, মায়ের সকল আত্নীয়দের খোজঁ নিচ্ছি আর মায়ের বান্ধবীদের সাথে নতুন করে সম্পর্ক হয়েছে, তা কি মা উপার হতে দেখছে? মাগো যেখানে থাকো ভাল থেকো, আর ক্ষমা করে দিও আমাদের।
কেমন লাগলো মায়ের তিন বান্ধবীর গল্প। জানাতে ভুলবেন না যেনো।
আজকের পোস্টের ফট্রোগ্রাফির বিবরণ
ছবিতে ব্যবহার করা ডিভাইস | Oppo |
---|---|
মডেল | A16 |
ফটোগ্রাফার | @maksudakawsar |
ক্যাটাগরী | মায়ের ছেলেবেলার তিন বন্ধুর গল্প |
ফটোগ্রাফির অবস্থান | ঝিকরগাছা, যশোর |
আপনারা ভাল ও সুস্থ্য থাকুন।
সর্বপ্রথম আপনার মায়ের জন্য অনেক ভালোবাসা রইল তিনি হয়তো পৃথিবীতে নেই যেখানেই থাকুন না কেন আল্লাহ ওনাকে ভালো রাখুক।আর আপনার মায়ের বান্ধবীদের গল্প পড়ে বেশ ভালো লাগলো। সাম্প্রদায়িকতার ভেদাভেদ ছিল না আপনার মায়ের বান্ধবীদের মধ্যে। আপনার সখিনা খালার ব্যাপার টা ভালো লেগেছে মেরেছিল বাঁশ দিয়ে হাহা।আর আপনিও বেশ পুরোনো আত্মীয় স্বজনদের সাথে সময় পার করছেন। অনেক ভালো লেগেছে গল্পটি পড়ে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনার কাছে আমার পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে। আসলে আমি আমার মায়ার বান্ধবীদের দেখে অনেক আবেগ পূরণ হয়ে গেছিলাম।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
পৃথিবীর সকল মায়েদের জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভকামনা। আপু আপনার মায়ের তিন বান্ধবীর গল পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আগের দিনের বন্ধুত্ব গুলো এরকমই ছিল। আপু আপনি ঠিকই বলেছেন গ্রামের সবাই একই পরিবারের মতো করে থাকে এটা এখনো আমাদের গ্রামে আছে। আন্টির বান্ধবীদের গল্প পড়ে নিজের বান্ধবীর কথা মনে পড়ে গেলো। আন্ট এবং তার তিন বান্ধবীর জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এত ভালো লাগলো আমার পোস্টটি পড়ে আপনার বন্ধুদের মনে পড়ে গেছে শুনে। আরো ভালো লাগলো যে আপনাদের গ্রামের কথা শুনে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে চোখে জল চলে আসলো। আসলে আপনার মা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে হয়তো আজকে অনেক খুশি হতেন। উনার বান্ধবীদেরকে আপনি আপনার পোস্টের মাঝে তুলে ধরেছেন এবং অনেক কিছু লিখেছেন পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে ছোটবেলার বন্ধুত্ব খুবই মধুর হয়। আপনার মায়ের প্রিয় বন্ধুরা আছে অথচ আপনার মা এই পৃথিবীতে নেই ভাবতেই খারাপ লাগছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আমি অনেক দুঃখিত যে আমার পোস্টটি পড়ে আপনার চোখে জল এসে পড়েছে। আর আমার মা যেন দরকার নাই আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্তবাসী করেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit