গল্প পোস্ট-তোমার আমার দেখা হবে ওপারে || written by@maksudakar ||

in hive-129948 •  last year 

আসসালামু আলাইকুম

তোমার আমার দেখা হবে ওপারে

শুভ বিকেল প্রাণের প্রিয় ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার। সকলের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন কামনা করে শুরু করতে যাচ্ছি আমার আজকের ব্লগটি। নাটক সিনেমায় আমরা তো হরহামেশায় কত রকমের কাহিনী দেখি। তখন আমরা আমাদের মনের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার জন্য কত রকমের কথা যে ছুড়ে দেই সে কি আর বলতে! কিন্তু আমরা যদি একবার ভেবে দেখি এমন হাজারও গল্প আমাদের জীবনকে ঘিরে আছে। আমরা যদি আমাদের চার পাশে চোখ দেই তাহলে দেখতে পাবো প্রতিদিন কত শত নতুন নতুন গল্পের উদ্ভব হচেছ। যে গুলো হয়তো অপ্রকাশিত থেকে যায়। রয়ে যায় স্মৃতি হয়ে মনের মনিকোঠায়।

আমার মনে হয় পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে বলতে পারবে তার জীবনে প্রেম একবার হলেও হানা দেয়নি। অবশ্যই প্রতিটি মানুষের জীবনে একবার হলেও প্রেম আসে। হয় তো কেউ প্রেমের আবেদন বুঝতে পারে আর কেউ বা পারে না। আর প্রেমের জন্য দেওয়ানা হয়ে তো মানুষ করে ফেলতে পারে বিশ্বজয়। অনায়াসে দিতে পারে নিজের জীবন। আজ আমি আপনাদের সাথে তেমনি একটি প্রেমের গল্প শেয়ার করতে চাচ্ছি। আশা করি আমার আজকের গল্পটিও আপনাদের বেশ ভালো লাগবে। ছুয়েঁ দিবে আপনাদের মন কে কিছু সময়ের জন্য।

man-2933984_1280.jpg

source

স্বপ্না ভার্সিটির ৩য় বর্ষের ছাত্রী। বাবা, মা , বড় বোন এবং ছোট ভাইকে নিয়ে স্বপ্নার পরিবার। বাবা একটি গভঃ কলেজের শিক্ষক ছিলেন। বেশ কয়েক মাস হলো তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। তাই বর্তমান বাজারে এতগুলো মানুষের সংসার চালাতে স্বপ্নার বাবাকে প্রায় হিমশিম খেতে হয়। এদিকে বাবা কে সাহায্য করার জন্য স্বপ্না এবং তার বড় বোন কয়েকটি প্রাইভেট টিউশনি করেন। ছোট ভাই এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। তার জন্য আলাদা কোন টিচার লাগে না। যেহেতু পরিবারের সবাই মোটামুটি শিক্ষিত,তাই ছোট ভাইয়ের পড়ালেখা দেখানোর দায়িত্বটা পরিবারের সবাই মিলেই পালন করেন।

সৈকত স্বপ্নার বড় ফুপুর ছেলে।ভার্সিটির পাট চুকিয়ে, বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পনীতে চাকরি করেন। ছেলেবেলায় বাবা মাকে হারিয়ে সৈকত স্বপ্নার বাবার কাছেই মানুষ। এদিকে সৈকত এবং স্বপ্না সেই ছেলেবেলা হতেই একে অপরকে ভালোবাসে। তারা কেউ যেন কাউ কে ছাড়া তাদের নিজেদের জীবন কল্পনা করতে পারে না। তাদের চোখে মুখে বয়ে চলে ভালোবাসার কল্পতরু। প্রতি সপ্তাহে সময় করে তারা একবার হলেও দেখা করে। দুজন দুজনার আবেগ জড়ানো ভালোবাসায় কাটিয়ে দেয় সারাটিক্ষন। হারিয়ে যায় ভালোবাসার নীল আকাশে। এভাবেই যাচিছল তাদের জীবন। স্বপ্নার বড় বোনের একটি ভালো বিয়ে হয়ে গেলেই তারা তাদের কথা পরিবার কে জানাবে এবং পরিবারের সম্মতি নিয়েই নতুন জীবন শুরু করবে।

এদিকে স্বপ্নার বড় বোনের বিয়ের বয়স প্রায় পার হয়ে যাচেছ। তেমন কোন বিয়ের প্রস্তাবও আসে না।এই নিয়ে স্বপ্নার বাবা মা বেশ চিন্তিত। কি করবে মেয়ে কে নিয়ে? একে বলে, তাকে বলে। এই করতে করতে এক সময়ে স্বপ্নার বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। ছেলে একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন। ছেলের দাবী বিয়েতে তাকে ৩ লক্ষ টাকা ক্যাশ দিতে হবে। মেয়ে কে বিদায় দিতে স্বপ্নার বাবা রাজি হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের জমি বিক্রি করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিবে। তাই স্বপ্নার বাবা গ্রামের জমিও বিক্রি করে টাকা নিয়ে আসে। এদিকে বিয়ের দিনও ঘনিয়ে আসে। স্বপ্না এবং সৈকত মিলে বিয়ের সব কেনাকাটা শেষ করে। বাড়িতে আত্নীয়-স্বজন চলে আসে। চারদিকে বিয়ের আয়োজনে উৎসব মুখোর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এদিকে স্বপ্না আর সৈকত বেশ আনন্দিত, কারন বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেলেই তো তারা তাদের বিয়ের কথা পরিবার কে বলতে পারবে।

কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস কি আর খন্ডানো যায়? বিয়ের দিন বরযাত্রীর গাড়িসহ রোড এক্সিডেন্ট করে মৃত্যুবরণ করেন বরসহ আরও চারজন। এদিকে স্বপ্নার বাবা, মা এই ঘটনা শুনে ফিটের উপর ফিট হতে থাকে। এমনিতেই তো তাদের কালো মেয়ের বিয়ে হয় না। আর এখন কে করবে তাদের এই মেয়ে কে বিয়ে। আজ যদি বিয়ের আসর থেকে তার মেয়ে উঠে যায়, তাহলে তো আর কখনও সেই মেয়ের বিয়ে হবে না। বাড়ি ভরা আত্নীয়-স্বজন। সবাই বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে। তারপর স্বপ্নার বড় চাচা সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, যেহেতু সৈকতের জন্য স্বপ্নার বাবা জীবনে অনেক কিছু করেছে তাই সৈকত কেই বিয়ে করতে হবে স্বপ্নার বড় বোন কে। হতে পারে গায়ের রং কালো। কিন্তু শিক্ষা দীক্ষায় কোন দিক দিয়ে কম নয় স্বপ্নার বোন।

তাই স্বপ্নার বড় চাচা সহ সকল সকল আত্মীয়-স্বজন সৈকতের সাথে কথা বলে। কিন্তু সৈকত কিছুতেই রাজি নয়। এদিকে বাড়ি ভরা সকল আত্মীয়-স্বজন সৈকত কে বিভিন্ন কথা শোনাতে লাগে। অন্য দিকে স্বপ্নার বাবা মা ও ফিটের উপর ফিট হতে থাকে। এমন একটি পরিস্থিতিতে স্বপ্নাও বুঝতে পারছে না কি করবে? অবশেষে বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা নিজের ভালোবাসা কে বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বপ্না। তাই স্বপ্না সৈকতের সাথে কথা বলে। স্বপ্না সৈকত কে বুঝিয়ে বলে। সব ভালোবাসায় যে মিলন হতে হবে তেমন নয়। আমি তো তোমার পাশেই থাকবো। না হয় হলো না এই দুনিয়ায় আমাদের মিলন, পরজনমে আমি তোমার সাথেই থাকবো। আজ এই বিয়েটা করলে তুমি তোমার সারা জীবনের ঋণ পরিশোধ করার একটি সুযোগও পাবে। অবশেষে স্বপ্না আর সৈকতের সিদ্ধান্তেই সৈকত স্বপ্নার বড় বোন কে বিয়ে করে। সৈকত নিজের ভালোবাসাকে বুকে চাপা দিয়ে সব কিছু মেনে নেয়।

এদিকে স্বপ্না সৈকতের বিয়ের পরপরই একটি চাকরি নিয়ে ঢাকার বাহিরে পোস্টিং নিয়ে দূরে চলে যায়। সাথে করে নিয়ে যায় নিজের না বলা ভালোবাসা। যেটা পৃথিবীর কেউ জানবে না কোন দিনও। এভাবেই কেটে যাচিছল তাদের দিন গুলো। এক সময়ে সপ্নার বড় বোনের কোলজুড়ে আসে ফুটফটে একটি কন্যা সন্তান। বিশাল এক আনন্দ বয়ে যেতে থাকে স্বপ্নার পরিবারে। কিন্তু সেই আনন্দে সামিল হতে পারে না সৈকত। কারন সৈকত আজকাল অনেক ব্যস্ত থাকে। কখন যে বাড়িতে আসে কখন যে যায় সেটা টের পাওয়া মুশকিল। যদিও স্বপ্নার সাথে এর মধ্যে কয়েকবার দেখা হয়েছে সৈকতের। কিন্তু তেমন কোন কথা হয়নি। সৈকত কথা বলার চেষ্টা করলেও স্বপ্না বার বার এড়িয়ে গেছে সৈকত কে।

কিন্তু হঠাৎ একদিন সৈকতের অফিস থেকে ফোন আসে। সৈকত হাসপাতলে ভর্তি। বাসার সবাই ছুটে যায় হাসপাতালে। খবর পেয়ে স্বপ্নাও চলে আসে সৈকত কে দেখতে হাসপাতালে। হাসপাতালে সব আত্নীয়-স্বজনেরও এসেছে। কারন ইতোমধ্যে ডাক্তার সাহেব স্বপ্নার বাবাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে সৈকতের অবস্থা ভালো না। যে কোন সময়ে একটি দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কারন সৈকত তার নিজের প্রতি অনেক অবিচার করেছে এই কয়েক বছর। আর এ কারনেই অনেক আগেই সৈকতের খাদ্যনালী নষ্ট হয়ে গেছে। সাথে সাথে দেহের কোন অঙ্গ এখন কোন কাজ করছে না। এ অবস্থা থেকে ফিরে আসা একটি মিরাকেল মাত্র। সৈকতের এ অবস্থায় স্বপ্না তো পাগল প্রায়। কিন্তু এ সময়ে তাকে পাগল হলে চলবে না। শক্ত হতে হবে। সবাই একে একে সৈকতের সাথে দেখা করে । আর সবার মত স্বপ্নাও যায়। স্বপ্না সৈকত কে জিজ্ঞেস করে কেন সে এমন করলো। সৈকত বলে যাতে খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে ঐ দুনিয়ায় পাই। তারপর সৈকত স্বপ্নার হাতে তার একমাত্র সন্তানের ভার তুলে দেয়। আর এক সময়ে সৈকত ঢুলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।

বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। স্বপ্নার আর ঘর বাধাঁ হলো না। কারন সৈকতের মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যে একে একে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় স্বপ্নার মা, বাবা আর বড় বোন। একমাত্র ছোট ভাই আজ আমেরিকায় সিটিজেনশীপ। তাই স্বপ্নার জীবন এখন শুধু সৈকতের মেয়ে কে নিয়ে। সৈকতের মেয়ে কিন্তু আজও জানেনা কে তার বাবা আর কে তার মা। সে শুধুই জানে স্বপ্নাই তার মা। স্বপ্নাই তার ভালোবাসা। আজ সৈকতের মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। স্বপ্না আজও রাতের আধাঁরে কেঁদে যায় সৈকতের কথা ভেবে। আর সৈকতের মেয়ের মধ্যেই স্বপ্না সৈকত কে খোঁজে ফিরে।

আজ এখানেই শেষ করছি। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগা আর মন্দ লাগা মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। সকলেই ভালো থাকবেন।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️

image.png

Add a heading (1).png

image.png

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো আপু। আসলে এমন এক পরিস্থিতি হলো স্বপ্নার বড় বোনকে সে সময় পাত্রস্থ করা খুব বেশী দরকার ছিল।তাইতো স্বপ্না সৈকতকে বিয়ে করে নিতে বলল।আর এতে তার ঋণের বোঝা ও কিছুটা কমবে ভাবলো।শেষে খুব খারাপই লাগলো।আজ স্বপ্না সৈকতের স্মৃতি তার মেয়েকে নিয়ে বেঁচে আছে।সুন্দর এই গল্পটি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।

ধন্যবাদ আপু সুন্দর এবং সাবলীল একটি মন্তব্য করার জন্য।

আপনি অনেক সুন্দর একটা গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন যা পড়ে আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে। এই জনমে তাদের আর মিলন হলো না। আর ধীরে ধীরে সবশেষে সবার মৃত্যু হয়েছে, যার কারণে স্বপ্না এবং সৈকতের মেয়ে এখন একা। স্বপ্না আর বিয়ে করেনি সৈকতের মেয়ের জন্য। এখান ওই মেয়েটা সপ্নার সবকিছু এবং সে অনেক বড় হয়েছে এটা জেনে ভালো লাগলো।

ধন্যবাদ গঠনমূলক একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

গল্পটি পড়ে বেশ মর্মাহত হলাম আপু। আসলে প্রকৃত ভালোবাসার মিলন খুব কম হয়। তবে মিলন না হলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষকে ভুলা যায় না। তাইতো স্বপ্না এখনও সৈকতকে ভুলতে পারেনি। সৈকতের মেয়েকে নিয়ে সারাটা জীবন পার করে দিল স্বপ্না। পরের জনমে যেন সৈকতের সাথে স্বপ্নার মিলন হয় সেই কামনা করছি। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।