একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প- অবন্তিরা বেচেঁ থাকে ভালবাসায়

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই ? আশা করি সবাই বেশ ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি বেশ ভাল আছি। আমি @maksudakawsar প্রতিদিনের মত করে আজ আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে। জীবনে চলার পথে কত শত যে ঘটে যায়। সেগুলো নিজের মনের মাঝে ঘাপটি মেরে না রেখে সবার সাথে শেয়ার করাতেই যেন কেমন একটা আনন্দ। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে তেমন একটি গল্প নিয়েই চলে আসলাম। আশা করবো আমার আজকের গল্প কিছুটা হলেও আপনাদের মনে জায়গা করে নিবে।

বেশ কিছুদিন হলো নতুন জায়গায় পোস্টিং হয়েছে। যেহেতু মেডিকেল কলেজ তাই এখানে সব মেডিকেল ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা করে। তো আমি প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্য করছিলাম যে অফিস রুমে প্রায় একজন ছাত্র আসা যাওয়া করে । কিন্তু ছাত্রটির কথা বলার ভঙ্গি কেমন যেন অস্বাভাবিক। আমার একটু সন্দেহ হলো। তাই আগ্রহ নিয়ে আমার আর একজন কলিগ কে ছেলেটির এ রকম কথা বলার বিষয়ে জানতে চাইলাম। আর তার কাছ হতেই জানতে পারলাম ছেলেটির এ ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করার করুন গল্প। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে একজন মেধাবী ছাত্রের জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু যন্ত্রণার গল্প শোনাবো। আশা করি গল্পটির শেষ অবদি আপনারা পড়বেন।

ইফতারিতে কিছু ভিন্ন স্বাদের খাবার (1).png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

রাতুল মেডিকেলে পঞ্চম বর্ষের একজন মেধাবী ছাত্র। কিন্তু মেধাবী হওয়ার পরও রাতুল কিন্তু টানা মেডিকেল কলেজের সবগুলো প্রুফ পাশ করতে পারেনি। তাকে পঞ্চম বর্ষে আসতে প্রায় ২/৩ বছর পার করতে হয়েছে। ভাবছেন কারন কি? হুম সেই গল্পটি আজ বলবো। তো রাতুল যখন মেডিকেল কলেজে বর্ষে পড়াশুনা শুরু করে তখন থেকেই অবন্তি নামক একটি মেয়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। বলা যায় প্রেম ভালবাসা। দুজন দুজন কে বেশ পছন্দ করতো। তারা যেন ছিল মেডিকেল কলেজের সিলভার জুবলি। সেই প্রথম বর্ষ হতে ভালই যাচ্ছিল তাদের সময়। একসাথে পড়াশুনা, আড্ডা, গল্প আরও কত কি? মেডিকেল কলেজের টিচার থেকে সবাই জানতো তাদের মাঝে গড়ে উঠা সেই সম্পর্কের কথা।

এমন কি রাতুল আর অবন্তির এই সম্পর্কের কথা তাদের দুই পরিবারও জানতো। দুই পরিবারেরই ইচ্ছা ছিল যে ফাইনাল পরীক্ষার পর তাদের বিয়ে দিয়ে দিবে। আর এজন্যই দুই পরিবারের মাঝে গড়ে উঠে এক অন্য রকমের সম্পর্ক। যে কোন অনুষ্ঠানে যেন দুই পরিবারের মাঝে বয়ে যেত আনন্দের বারতা। কোন পরিবার যেন কোন পরিবার কে ছাড়া চলতে পারতো না। এ ভাবেই যাচ্ছিল তাদের দুই পরিবারের সময়। এদিকে রাতুল আর অবন্তির ভালবাসা যেন দিনের পর দিন আরও বেড়ে যেতে লাগলো। দুজন একসাথে স্টাডি করা। একের বিপদে অন্য জন এগিয়ে আসা। ক্লাসের পর দুজন একত্রে কিছু সময় কাটানো যেন ছিল তাদের প্রতিদিনের রুটিন।

তাদের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, একজন আর একজন কে একদিন না দেখলে প্রায় উম্মাদের মত হয়ে যেত। কিন্তু সুখ কি আর কারও কপালে বেশী দিন সয়। বেশ কয়েকদিন হলো অবন্তি কলেজে আসে। রাতুল তার পরিবার হতে অবন্তির বাসায় যোগাযোগ করা হলে জানা গেল অবন্তি বেশ অসুস্থ্য। তাই দুই পরিবার মিলে অবন্তিকে ডাক্তার দেখালো। ডাক্তার অবন্তির সব মেডিকেল টেষ্ট করে কিছু ঔষুধ দিয়ে দেয়। যেহেতু অবন্তির টেস্টের রিপোর্ট আসতে দেরী হবে। তাই তাকে বাসায় কিছু দিন রেস্ট নিতে বলে। অবন্তি ঔষুধ খাওয়া ‍শুরু করে দেয়। এদিকে রাতুল আর তার পরিবারও অবন্তির সব খোজ খবর রাখা থেকে শুরু করে সকল বিষয়ে কেয়ারিংও কম করে না।

রাতুলের ভয় আর দুঃশ্চিন্তা দেখে অবন্তি রাতুল কে সান্তনা দেয় যে, কিছু হবে না। ঔষুধের কোর্স শেষ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না অবন্তির শরীর দিনের পর দিন আরও খারাপ হতে লাগলো। অবন্তির বাবা মায়ের মুখের দিকে যেন চাওয়া যায় না। মেডিকেল কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে সহপাঠিরাও যেন চিন্তুায় পড়ে গেল। কি হলো এত সুন্দর ফুট ফুটে মেয়েটার। সব সহপাঠিরা অবন্তিকে দেখতে আসে। রাতুলও আজ কাল কলেজে যাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে।কি করবে সে অবন্তিকে ছাড়া তো রাতুল এর কিছুই ভাল লাগে না।

অবশেষে অবন্তির সব পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছলে মেডিকেল কলেজ জুড়ে নেমে আসে এক অন্ধকার রাত। অবন্তির ব্লাড ক্যান্সার। তাও আবার শেষ স্টেজ। আর বেশী সময় নেই অবন্তির হাতে। মেডিকেল কলেজের সব ডাক্তার মিলে অবন্তির জন্য দুই তিন বার মেডিকেল বোড ডাকে। আবার দেশের সব বড় বড় ডাক্তার কেও বোডে রাখা হয়। কিন্তু কারো হাতে যেন কিছুই করার নেই। মেডিকেল কলেজ জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। সবাই যেন কি হারাচ্ছে।

এদিকে রাতুল কে যেন সামলানো যাচেছ না। পাগলের মত হয়ে গেছে রাতুল। অবন্তিকে কিছুই জানতে দেওয়া হয়নি। রাতুল শুধু এখন সরাক্ষন অবন্তির পাশেই থাকে। এক সেকেন্ডের জন্য রাতুল অবন্তিকে ছেড়ে কোথাও যায় না। খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেছে রাতুলের। অবশেষে দুই পরিবার আর মেডিকেল কলেজের সব চিকিৎসকরা মিলে অবন্তিকে লন্ডন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। খুব তাড়াতাড়ি অবন্তি আর রাতুলের সব কাগজ পত্র ঠিক করা হয়ে গেল। রাতুলও একটু স্বস্তি পেল। ভাবলো সব ঠিক হয়ে যাবে।অবন্তি বহুবার জানতে চেয়েছে তার কি হয়েছে। প্রথমে কেউ না জানালেও পরে জানাতে বাধ্য হলো। আর অবন্তি সব জানার পরে যেন তার সব ভালবাসা দিয়ে রাতুল কে ধরে রাখতে চাইল।

ফ্লাইট ঠিক হয়ে গেল। পরদিন সকাল ভোর পাচঁ টায় তাদের ফ্লাইট। যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই মঙ্গল। কিন্তু ভাগ্য বলে কথা। রাত পোহানোর আগেই অবন্তিকে নিতে হলো পৃথিবী থেকে বিদায়। তাও আবার রাতুলের বুকে মাথা রেখে। শোকে স্তব্দ হয়ে গেল মেডিকেল কলেজ। দুই পরিবারের কেউ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। মেনে নিতে পারেনি সবার মত রাতুলও। রাতুল কে থাকতে হলো মেন্টাল হাসপাতালে প্রায় দুই বছর। আজ পরিবার আর ডাক্তার দের চিকিৎসায় রাতুল সুস্থ্য। রাতুল কে বাঁচতে হবে। বাচঁতে হবে অবন্তির জন্য পৃথিবীর বুকে কিছু করার জন্য। কিন্তু চাইলেও কি সব ভুলা যায়। তাই তো রাতুল আজ কিছুটা হলেও অস্বভাবিক।

বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য একদিন আবার আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে আপনাদের মাঝে। সে অবদি ভাল থাকবেন। আর আপনাদের কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

এরকম একটা গল্প পড়ে সত্যিই আমার চোখের জল চলে এসেছে। খুবই কষ্ট লাগছে সেই অবন্তীর জন্য। তাদের ভালোবাসাটা অসম্পূর্ণই থেকে গেল। আসলে প্রিয় মানুষটাকে কাছে পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলল রাতুল। তাদের বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ভাগ্যকে সবার জীবনে সুখ নিয়ে আসে। অবন্তীর এভাবে অকালে মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি রাতুল সে সাথে তাদের দুই পরিবারও। খুব সুন্দর ভাবে পুরো গল্পটি লিখেছেন আপনি।

জি আপু আর আমি প্রতিদিন চোখের সামনে সে অসহায় রাতুল কে দেখি। আমার কেমন লাগে?

আপু আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে অনেক খারাপ লাগলো। আসলে রাতুল আর অবন্তির সম্পর্ক দেখে প্রথমে অনেক ভালো লাগলো। এবং দুই ফ্যামিলির ভালো সম্পর্ক সত্যিই অসাধারণ। হঠাৎ করে রাতুল আর অবন্তির জীবনের নেমে আসলে অন্ধকার। রাতুল তার ভালোবাসার জন্য দুই বছর মেন্টাল হাসপাতালে ছিলেন। আসলে কিছু কিছু সম্পর্কের কারণে মানুষ এরকম হয়ে যায়। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

ধন্যবাদ আপু গল্পটি পড়ে মন্তব করার জন্য।

আপু আপনার পোষ্টটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো আমার কাছে। রাতুল এবং অবন্তির প্রেমের গল্প পড়ে অনেক ভালোই লাগলো প্রথমে। কলেজ এবং তাদের পরিবার সবাই জানে তাদের সম্পর্কের কথা। এবং দুই পরিবার খুব ভালো সম্পর্ক শুনে খুব ভালই লাগলো। হঠাৎ করে অবন্তির অসুস্থতায় সবকিছু এলোমেলো করে দিল। তবে রাতুল অবন্তিকে বেশি ভালোবাসতো এই কারণে সে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। এবং অবন্তীর মৃত্যু টা রাতুল মেনে নিতে পারে নাই। এই কারণে রাতুল অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন মেন্টাল হাসপাতালে ছিলেন। হয়তো একটু সুস্থ হয়েছেন তারপরও তার আচার-আচরণ চলাফেরা অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেল। অনেক সুন্দর করে পোস্টে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু।

ছেলেটিকে দেখলে বেশ কষ্ট হয়। ধন্যবাদ সুুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

কত মানুষের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এমন অজানা অনেক গল্প কাহিনী। যে সমস্ত হৃদয়বিদারক গল্প কাহিনী গুলো মানুষের জীবনে মন ভাঙার ঝড় তুলেছে। ঘটনা আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন তবুও কথাগুলো খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন তাই পোস্ট অনেক সুন্দর ভাবে সাজাতে সক্ষম হয়েছেন। আশা করি পরবর্তীতে আরো অন্যান্য গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরবেন।

ধন্যবাদ সুন্দর এবং উৎসাহ মূলক একটি মন্তব্য করার জন্য।