মৃত্যুর কাছে ভালবাসার পরাজয় ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম

@maksudakawsar
খিলগাঁও, ঢাকা বাংলাদেশ

4 ভাদ্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
19 সেপ্টেম্বর, সোমবার

কেমন আছেন বন্ধুরা সবাই? আশা করি সকলে সুস্থ্য আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি।

মৃত্যুর কাছে ভালবাসার পরাজয় গল্পটির পাঁচ পর্ব শেয়ার করার পর আজ আবার আসলাম নতুন পর্ব নিয়ে। বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া আমার গল্পটি যদি আপনাদের মনে সামান্যতম আঁচড় কাটতে পারে আর চোখের পানি যদি সামান্যতম ফেলতে পারে তাহলে আমি ধন্য।

আজ গল্পটির ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব শেয়ার করব। আশা করি আমার স্বরচিত গল্প টি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে।

couple-1375125_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

মৃত্যুর কাছে ভালবাসার পরাজয় গল্পের পর্ব সমূহের লিংক-

পর্ব -1

পর্ব-2

পর্ব-3

পর্ব-4

পর্ব-5

সুজন এসেছে তাতে কি হয়েছে? রিয়ার কি সেই ইচ্ছে আছে? আর তাছাড়া রিয়া আর সুজন এর মুখ দেখতে চায় না। তাই সুজনের আর রিয়ার সাথে দেখা করা হলো না। চলে গেলেন সুজন। আর এদিক দিয়ে রিয়াও মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে সুজন এর সাথে কাটানো সেই সব দিনগুলোর কথা মনে করে।

হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়ে গেলে রিয়া বাসায় চলে আসলো। যত দিন যাচ্ছে ধীরে ধীরে রিয়া অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ শুধু শুয়ে থাকে। খাওয়া দাওয়া রুচি নেই। এখন আর বাড়ির কেউ রিয়াকে অবহেলা করে না, সৎ মা বাবা ফুপু সহ পাড়ার সবাই মিলে তাকে অনেক ভালোবাসে। এখন আর অন্যের কথা ভেবে রিয়া কোন কষ্ট পায় না। বাড়ির সবাই রিয়া কে খুশি রাখতে ব্যাকুল থাকে।

hospice-1821429_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

এভাবে কিছুদিন কেটে গেলে। হঠাৎ করে রিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ল । ডাক্তারের পরামর্শে রিয়াকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। এবার চিকিৎসার জন্য রিয়াকে হাসপাতালে বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। কারন রিয়ার শরীরে ক্যান্সারের জীবানু রয়ে গেছে। হাসপাতালে রিয়ার চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যে সুজন আবার আসলো রিয়ার সাথে দেখা করতে। কিন্তু না রিয়া এবার ও তাকে ফিরিয়ে দিল।

হাসপাতালে রিয়ার সাথে তার খালামনি থাকতো। সুজন চলে যাওয়ার পর রিয়া তার খালামনি কে বলল- দেখ খালামনি আমি আমার শরীরের কন্ডিশন বুঝি। আমার মনে হয় আমার বড় কোন অসুখ হয়েছে। আর আমি বেশি দিন বাঁচবো না। তাই এখন আর নতুন কোন সম্পর্কে জড়াতে চাইনা। কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা। আমি সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। এসব কথা বলতে বলতে রিয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

tears-4551435_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

পরদিন ভোরে রিয়া অনেক অসুস্থ হয়ে পরলো। সমস্ত শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে, ঘন ঘন বমি হচ্ছে। ডাক্তার আসলো। পরিস্থিতি দেখে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিল। অন্যদিকে রিয়াকে ইনটেনসিভ কেয়ারে নেওয়া হলো।

বিকেলে ডাক্তার সাহেব রিয়ার পরিবারের সকলকে চেম্বারে ডেকে পাঠালেন। ডাক্তার সাহেব বললেন আমরা অনেক দুঃখিত। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি । এখন সবকিছু আমাদের হাতের বাইরে চলে গেছে। মেয়েটি আর হয়তো বাহাত্তুর ঘন্টা সময় পাবে। আমরা তাকে আপাতত অক্সিজেন দিয়ে রেখেছি। কিছুক্ষণ পর কিছুটা ভালো হলে অক্সিজেন খুলে দেবো। আপনারা বরং মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে যান। যতটুকু সময় আছে কাছে রেখে সেবা যত্ন করুন। তাতে যদি মেয়েটা একটু শান্তি পায়।

hospital-840135_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

ডাক্তার সাহেবের সমস্ত কথা শুনে পরিবারের লোকজন হাউমাউ করে কাঁদছে। এ যেন এক করুণ দৃশ্য। এ দৃশ্য মেনে নেওয়া যায় না। অবশেষে পরিবারের সবাই সিদ্ধান্ত নিল রিয়ার শেষ সময় টা বাসায় নিয়ে যাবে। রীতিমত রিয়াকে বাসায় নিয়ে আসলো। বাড়ির সবাই মন খারাপ। রান্নাবাড়া কিছুই হচ্ছে না। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী প্রত্যেকে রিয়া কে দেখতে আসছে।

পরদিন মাগরিবের পর রিয়ার সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। বাড়ির সবাই তখন জিয়ার পাশে এসে বসলো। রিয়া সবাইকে বলল। আমাকে তোমরা মাফ করে দিও। তোমরা সবাই মিলেমিশে থেকো। এই বলতে বলতে কখন যে চোখ বুজে ফেললো তা কেউ টের পেল না। কান্নাকাটি আর আবেগঘন এক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিদায় হয়ে গেল রিয়া। চলে গেল সকল মায়া-মমতা কাটিয়ে। রয়ে গেল পৃথিবীতে রিয়ার অসমাপ্ত ভালোবাসা।

man-5640540_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

সবাই ব্যস্ত রিয়ার দাফন কাফন নিয়ে। এরমধ্যে সুজনও আসলো রিয়ার জানাজায় শরিক হতে। সুজন নিস্তব্ধ হয়ে রইল এবং রিয়ার দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে গেল না। রিয়ার দাফন সম্পন্ন করে অবশেষে ধীরে ধীরে নিঃশব্দতায় সুজন বাড়ি ফিরে গেল।

বন্ধুরা এভাবেই ধীরে ধীরে নিভে গেল রিয়ার জীবন প্রদীপ। কিন্তু সুজন, সুজন কি পেরেছে আজও রিয়াকে ভুলতে? তার কি একবারও মনে পড়ে না রিয়ার কথা? কিছু কিছু ভালোবাসা হয়তো এভাবে নিবে যায় অতৃপ্তি নিয়ে।

আপনারা ভাল ও সুস্থ্য থাকুন।

4bEjbgCbFMvA8T33kKpp3RsBvZue1Hns5Cwuz57pgmmNsNm69BvSk1AJmpxNTS4pL3vHiENLbAz3uRYvkzCHo62J16v8SBo7zpHgViW2yotwk1h5RE41hP2qzb7ELuJ3M646bDwEPdWALxxSwivrhMnjnGhcCBFuAKUHSjQuMNQZSJx9eV.gif

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovTUshBEnxRTgb9n2LUqHX7h1H2p2D18YQFUDgxbpg8bp7AxwH9vK7k1SRqaoEJbCQrboh4ga6xfDvigcW6zfkH8S.png

আমি মাকসুদা কাউছার। পেশায় একজন গৃহিনী ও চাকুরীজিবী। এরই মাঝে আমি আবার লেখালেখি করতেও পছন্দ করি। তাই আমার নিজের মনের আবেগ ও কথাগুলোকে সাবলীল ভাষায় প্রকাশ করার জন্য আমার প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালবাসি।বাংলা আমার মায়ের ভাষা।

pBMyo3B2Sao2EbuHAFTX1CNWMbam25xJGPs4sKmLS6XL7jPcLJ4PhfmbsQbXEmSBkiJH1y8vcCZLEDiVjH9fUC37Hpjmz6Czw4oJd4hidqWpdsEDnaUW3Rt3p3eTZGQkoiwZDyH4hdDt99wPqRBy3pVZE1qtEmMBB3MC4V4MJCpzUCii.png

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
সর্বশেষ রিয়ার পরিনতিটা পড়ে মনে খুবই পেলাম।তারপরও এটা জেনে একটু ভালো লেগেছিল যে,অবশেষে তার পরিবারের সকলেই রিয়াকে খুব ভালোবেসেছিল।যারদরুন রিয়া কিছুটা হলেও তার সেই ঘটনা ভূলে গিয়েছিল।কিন্তু রিয়ার কাছে তখন খুব একটা সময় ছিল না। মাত্র ৭২ ঘন্টা।সময়ও শেষ হয়ে গেল।কিন্তু রিয়া এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পূর্বেই সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছিল।অবশ্য এরমধ্যে সুজন দুই বার হসপিটালে রিয়ার সাথে দেখা করতে এসেছিল।কিন্তু রিয়া দেখা করেনি।আর করবেই বা কেন?এমন স্বার্থপর হীনমন্যতা লোককে রিয়া কেন! যে কেউই এরপর ভালোভাবে দেখবে না।অবশ্য সুজন কেনই বা এসেছিল তার প্রশ্নটা থেকেই গেল।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু, রিয়ার জীবনের করুন পরিনতি প্রথম থেকে থেকে শেষ পযন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

আপু আপনার গল্পের শেষ দৃশ্যটা ছিল অনেক বিয়োগান্তক। অনেক খারাপ লাগলো রিয়ার জন্য। ধন্যবাদ আপু আপনাকে।