একটি হৃদয় ছোঁয়া প্রেমের গল্প -রেখে গেলে কিছু ভালবাসার স্মৃতি

in hive-129948 •  2 years ago 

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন বন্ধুরা ? আশা করি সবাই বেশ ভালই আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালই আছি। যদিও জীবনটা অনেক জটিলতায় পরিপূর্ণ, তবুও এরই মধ্যে আমাদের কে প্রতিনিয়ত করে যেতে হচ্ছে ভাল থাকার এক অভিনব অভিনয়। কারন জীবন তো আর থেমে থাকে না।

আমি মাকসুদা আক্তার। তবে আপনাদের কাছে আমি @maksudakawsar হিসাবেই পরিচিত।বেশ কিছু দিন যাবৎ একটা কথাই ভাবছি, আমরা যারা এই প্লাটফর্মে কাজ করে যাচ্ছি তারা সবাই হয়তো বা অনেক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আর সৃজনশীলতায় পূর্ণ। তবে একটি কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবো না যে, আমার বাংলা ব্লগ আমাদের যা দিয়েছে তা আমাদের সারাজীবনের ব্লগিং কেরিয়ারের জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকবে। এই আমিই তো, আমার ছিল না ব্লগিং নিয়ে তেমন কোন অভিজ্ঞতা। আমার যা শিক্ষা তার সবটুকুই আমি এই প্লাটফর্ম হতেই অর্জন করেছি। তাই আমি কৃতজ্ঞ আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের কাছে।

ভালবাসা এমন একটি বিষয় যাকে নিয়ে কোন বিশ্লেষণ করা যায় না। যায় না তার কোন রং বা আকার বুঝা। তবে পৃথিবীতে এমন অনেক ভালবাসাই আছে যেগুলো বেশী দিন টিকে থাকে না। অথবা অতিরিক্ত ভালবাসা গুলো হারিয়ে যায় হঠাৎ করেই। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে তেমনই একটি ভালবাসার গল্প শেয়ার করবো। আশা করি আমার আজকের গল্পটি আপনাদের বেশ ভালই লাগবে।

একটি হৃদয় ছোঁয়া প্রেমের গল্প (3).png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

একটি হৃদয় ছোঁয়া প্রেমের গল্প- রেখে গেলে কিছু ভালবাসার স্মৃতি

দিশা আর আরিফ একে অপরকে অনেক ভালবাসে । তাই তারা তাদের ভালবাসাকে সত্যিকারের মর্যাদা দেওয়ার জন্য পরিবারিক ভাবেই বিয়ে করে। বিয়ের পর দিশা গৃহিণীই থেকে যায়। এদিকে আরিফ এক ধনী পরিবারের সন্তান। বিয়ের পর দিশার চাপে আরিফ একটি রিয়েল্ এ্সস্টেড ব্যবসা শুরু করে। ভালই যাচ্ছিল দিশা আর আরিফের সংসার জীবন। কোন হতাশাই তাদের কে গ্রাস করতে পারেনি। দিশা আরিফের সংসারে এসে পুরো সংসার টিকে নিজের করে নেয়। আরিফের মা আর বাবার ভালই সেবা দিশা করে। তাই দিশার প্রতি আরিফের পরিবারও বেশ সন্তুষ্ট।

এদিকে দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের বয়স ১ বৎসর পার হয়ে গেল। কিন্তু এখনও তাদের পরিবারে কোন সন্তান আসেনি। এ নিয়ে দুই পরিবারই বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। সবার চাপে পড়ে আরিফ আর দিশা ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার তাদের কারো কোন সমস্যা না পাওয়ায় তাদের কে অপেক্ষা করতে বলে। সন্তান না হলেও দিশা আর আরিফের ভালবাসার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। আরিফ প্রতিদিন বাহির হতে দিশার জন্য কোন না কোন গিফট নিয়েই বাসায় ঢুকে। মাঝে মাঝে তারা দুজনে বাহিরে বের হয় কিছুটা সময় কাটানোর জন্য। একটি সন্তানের জন্য তারা তাদের ভালবাসায় ব্যঘাত ঘটাতে নারাজ।এভাবে আরও এক বছর তাদের সংসার জীবন পার হয়ে যায়।এদিকে আরিফ তার পৈতৃক বাড়িতে দশ তলা এপার্টমেন্টও তৈরি করে।

কিন্তু না পরিবারের লোকজন যেন আর মানতে পারছে না। দুই পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল তাদের কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া পাঠাবে। তাই দিশা আর আরিফ একমাসের জন্য ইন্ডিয়ায় চলে যায়। ইন্ডিয়ায় যেয়ে তারা একজন ভাল ডাক্তার দেখান। ডাক্তার তাদের সকল কথা শুনে দুজনের সব টেস্ট করতে বলেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। সকল টেস্ট করে ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট নিয়ে গেলে ডাক্তার তাদের কে বলেন আরিফ এর দুটো কিডনীই আগে থেকে সম্পন্ন নষ্ট। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি আরিফ কে একটা কিডনী ডোনেট করা যায় তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব। আর সে কিডনীটা পরিবারের কেউ দিলে বেশী ভাল হয়। দিশা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। কি করবে সে? দেশে জানাবে না কি করবে? অবশেষে দিশা দেশে জানায় সে খবর। পরিবারের লোকজন শুনে তো কান্নাকাটি।

এদিকে আরিফের জন্য অনেক ডোনার খোঁজা হলেও কোথাও ডোনার খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দিশা কি করবে? ভালবাসার মানুষটিকে এত সহজে হারিয়ে ফেলবে দিশা? কি যে এক দুঃশ্চিন্তায় দিন যাচ্ছে দিশার সেটা কেবল দিশাই জানে। এদিকে আরিফ সব কিছু জানলেও সে দিশা কে বলে আমাকে যে করে হউক তুমি বাঁচাও। আমি কি করে তোমাকে ছাড়া থাকবো? এসব কথা শুনে দিশা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। তাই সে নিজেই সিদ্ধান্ত নিল যে সে কিডনি ডোনেট করবে। থাকলো না হয় দুজনে একটি করে কিডনি নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে। তাও তো তাদের ভালবাসা বেঁচে থাকবে। তাই দিশা ডাক্তারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে ফেলে এবং দিশাই তার ভালবাসাকে কিডনি দিয়ে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে।

এভাবেই দিন যাচ্ছিল দিশা আর আরিফের। তাদের বিযের প্রায় ৪ বৎসর হতে চলছে। এখন আরিফ আর দিশা দুজনেই বেশ সুস্থ। তাই তারা আবার ইন্ডিয়ায় যায় এবং একটি সন্তানের জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলে। ডাক্তার তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কিছু মেডিসিন দেয়। তারপর থেকে তারা একটি সন্তানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

হঠাৎ একদিন গভীর রাতে দিশা শুনতে পেল কে যেন গুংগাছে। দিশা উঠে বসে এবং দেখে আরিফ খুব অসুস্থ্য। মনে হচ্ছে যেন বুকে খুব পেন হচ্ছে। দিশা তারাতারি বাড়ির সবাই কে ডাকে এবং আরিফ কে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ইমারজেন্সী থেকে বড় ডাক্তার কে ফোন করা হলে বড় ডাক্তার বলে তাকে সিসিইউ তে ভর্তি করতে হবে । তার অবস্থা ভাল না। তাই আরিফ কে সিসিইউ তে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসায় আরিফ কিছুটা সুস্থ্যতা অনুভব করলে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু সকল পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা যায় আরিফের হার্টে পানি চলে এসেছে, লিভারে একটু স্পট দেখা গেছে, সব মিলেয়ে আরিফের অবস্থা অনেক ক্রিটিক্যাল।

এদিকে আরিফ বাসায় যেতে চাচ্ছে। কি করবে দিশা? পরদিন সকালে সিসিইউ থেকে দিশা ও আরিফের পরিবার কে ডেকে পাঠায়। ডাক্তার জানায় আরিফ কোমায় চলে গেছে। তাকে লাইফ সার্পোটে আনতে হবে। বাচাঁ মরার কথা বলা যায় না। অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু আরিফের পরিবার ডাক্তার কে জানিয়ে দেয় তারা আরিফ কে লাইফ সার্পোট দিবে না। যা হবে আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। এদিকে পাঁচ দিন হয়ে গেল আরিফ কোমায়। দিশা সি সি ইউর বাহিরে একটি চেয়ারে দিন রাত বসে থাকে আরিফের ফিরার আসায়। একটু সময়ের জন্যও সে কোথাও যায় না। যদি আরিফ ফিরে আসে, যদি
তাকে খোঁজে। এভাবেই দিন যাচ্ছে দিশার। প্রতিদিন দিশা সকাল বিকাল আরিফের কাছে যায়। কিন্তু আরিফ আর দিশা কে ডাকে না।

অবশেষে দশদিন পর ডাক্তার সাহের আরিফের পরিবার কে ডেকে বলে, সরি আমরা চেষ্টা করে ও তাকে ফেরাতে পারলাম না। এসব কথা শুনে দিশা যেন কোথায় হারিয়ে গেল। আরিফ আজ চলে গেল দিশা কে ছেড়ে। কিন্তু কি দিয়ে গেল দিশা কে। শুধু রেখে গেল কিছু ভালবাসার স্মৃতি।
কেমন লাগলো বন্ধুরা আপনাদের কাছে রেখে গেলে কিছু ভালবাসার স্মৃতি গল্পটি ? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

image.png

ভালোবাসার স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো কখনো বা সুখের হয় কখনো বা খুব বেশি স্মৃতি কাতর হয়। আর আজকে যে গল্পটি আপনি লিখেছেন সেটি সত্যি আমার মনকে নাড়া দিয়ে গেল। আর এমন গল্পটি পড়ে সত্যি খুব খারাপ লাগলো। তাদের ভালোবাসায় কখনো কমতি ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অল্প কিছু দিনের মাথায় তাদের ভালোবাসা মধ্যে বিরাট ফাঁক হয়ে গেল। আরিফ দিশাকে ছেড়ে চলে গেল, কিন্তু তাদের ভালোবাসা থাকবে। সত্যি আপু খুব খারাপ লাগলো গল্পটির অন্তিম পড়ে। তবে গল্পটি দারুন করে লিখেছেন, বেশ আনন্দ উপভোগ করেছি গল্পটি পড়ে।

ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আপু আমারও খারাপ লাগলো যে এটা ভেবে এত সুন্দর একটি গল্প কেউ পড়লো না। তাহলে কি আর লেখতে মনে চায়?