পৈত্রিক সম্পত্তি ও বিশ্বাসঘাতকতার গল্প দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

আসসালামু আলাইকুম

আজ মঙ্গলবার, ২৭ ই , সেপ্টেম্বর,২০২২

কেমন আছেন সবাই ? আশাকরি টিনটিন বাবুর জম্মদিনের উৎসব পালন করে সবাই বেশ আনন্দে আছেন। আমিও বেশ ভাল আছি।

বন্ধুরা ইতোমধ্যে আমি আপনাদের সাথে আমার নানাবাড়ী যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় ঘটে যাওয়া একটি পারিবারিক গল্প তুলে ধরেছি। যেখানে আপনারা দেখেছেন যে কিভাবে সন্তান পিতার মৃত্যুর পর তার সহায় সম্পত্তি আত্নসাৎ করে। আজ আমি আপনাদের মাঝে গল্পটির দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব নিয়ে হাজির হলাম। আমি মনে করি গল্পটির প্রথম পর্ব পড়ে যাদের মনে নানা রকমের প্রশ্ন হানা দিয়েছে আজকের পর্বে তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

cabin-244647_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

তাহলে শুরু করা যাক -

পৈত্রিক সম্পত্তি ও বিশ্বাসঘাতকতার গল্প দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব

এদিকে বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর ছোট ছেলে জামাল তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ী অর্থাৎ রহমান সাহেবের বাড়ীতে ফিরে আসেন। জামাল তার সম্পত্তি বিক্রি করার যে টাকা নিয়ে শ্বশুড় বাড়ী গিয়েছিল সে সব টাকা সেখানে নষ্ট করে ফেলেছে। তাই আজ জামাল নিস্বঃ। আর এ অবস্থায় জামাল বাড়ীতে এসে স্ত্রী সহ তার মায়ের পায়ে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। জামাল মাকে বলে ”মা আমরা অনেক ভুল করেছি। আমাদের মাফ করে দাও। আমরা আজ নিস্বঃ। তুমি দয়া করে আমাদের কে একটু মাথা গোজার ব্যবস্থা করে দাও মা”। জামাল ও তার স্ত্রী মনে মনে চিন্তা করে যদি মায়ের জায়গাটুকু তাদের কে দিয়ে দেয়। কথায় আছে না ”কু সন্তান যদিও হয় কু মাতা কদাচিৎ নয়”। আর জামালের বেলায়ও তার ব্যাতিক্রম হলো না। সন্তান যত অন্যায় করুক আজ সন্তানের এই বিপদের সময় মা তো আর চুপ করে থাকতে পারে না।

potion-1860939_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

রহমানে সাহেবের স্ত্রী ছেলে কে বলে দেখ বাবা আমার তো নিজের যতটুকু সম্পত্তি ছিল তা আমি তোর ছোট বোন কে দিয়ে দিয়েছি। আজ আমিও নিস্বঃ। কিন্তু তুই কোন চিন্তা করিস না। আমরা বিকালে তোর মেঝ বোনের বাড়ীতে যামু। আর ওরে আমি সব বুঝাইয়া কুমু যে যাতে মেঝো তোরে একশতক জমি হলেও দেয় কোন রকম দুইটা ঘর তুইল্লা থাকার জন্য। তারপর জামাল তার মা আর স্ত্রী বিকেলে মেঝো বোনের বাড়ী গেল। সেখানে যেয়ে জামালের মা মেয়ে আর মেয়ের জামাই কে সব কিছু বুঝিয়ে বলে তার ছোট ছেলে কে থাকার জন্য এক শতক জমি লিখে দিতে বলেন। এখানে বলে রাখি জামাল এর মেঝো বোনের অবস্থা বেশ ভাল। আর তাই সব কথা শুনে মেঝো মেয়ের জামাই তার স্ত্রী কে বলে, দাও একশতক জমি দিয়ে দাও। তোমারইতো ছোট ভাই। কিন্তু জামালের বোন পরিস্কার নিষেধ করে দেন যে সে তার জমি জামাল কে দিবেন না। কারন জামাল তার মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু জামাল ছিল নাছোর সে প্রতিদিন তার বোনের বাড়ী যেয়ে বোনের জামাইর কাছে কান্না কাটি করে । অবশেষে এক সময় জামাল এর বোন নিরুপায় হয়ে রাজি হন একশতক জমি জামাল কে লিখে দিতে।

cabin-1540826_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

জামাল তার মেঝো বোন কে নিয়ে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে যান। অবশ্য জামাল এর বোন ছিল অশিক্ষিত তাই সে জামাল এর চালাকি ধরতে পারেনি। সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে যেয়ে জামাল তখনকার দিনের মোহরীর সাথে যোগসাজসে তার বোনের অংশের পুরো জমি তার নামে করে নেয়। কিন্তু তার অশিক্ষিত বোন একটুও বুঝতে পারে নি এবং কোন রকম দ্বিধা দন্দ না করে জমির দলিলে টিপ সই দিয়ে দেন। এরপর জামাল তার স্ত্রী সন্তান সহ নিরবে তার বোনের জায়গায় বসবাস করতে লাগলো । অথচ যে মায়ের জন্য আজ সে এ জমি পেল সেই মাকে সে একেবারে ভুলে গেল। মাকে তো কোন খাবার দিতেনই না বরং মাকে ঘরেও জায়গা দিতেন না। আর এভাবে না খেয়ে অভাব আর অসুস্থ্যতার কারনে রহমান সাহেবের স্ত্রী একদিন এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন।

এভাবে দিন কাটতে। লাগলো হঠাৎ একদিন জামাল এর স্ত্রী তাকে বলে দেখ যে সামান্য জায়গা তাতে তোমার সন্তানদের ভবিষৎ তো হবে না। দেখো না তোমার ছোট বোনের জায়গা টা নেওয়া যায় কিনা? ওরা তো আর এখানে থাকবে না । তোমার বোন তো শ্বশুরবাড়ী চলে যাবে। আর জামাল তার স্ত্রীর কথা মত তার ছোট বোন আর বোনের জামাই কে টাকার লোভ দেখানো শুরু করে যাতে তারা তাদের অংশটুকু জামাল্ এর কাছে বিক্রি করে দেয়। আর এই সম্পত্তিটুকু পাওয়ার জন্য জামাল আর তার স্ত্রী জামালের ছোট বোনের সাথে ভাল ব্যবহার শুরু করে দেন। তাছাড়া জামালের ছোট বোনের জামাই অত্যন্ত লোভী প্রকৃতির লোক ছিলেন। একদিন জামাল তার বোন জামাই কে বলেন যে আপনার তো নিজের বাড়ী আর জায়গা জমি আছে। আপনি অযথা এখানে পড়ে আছেন কেন। বরং আপনি জায়গা টা বেশী দামে বিক্রি করে নিজের বাড়ীতে চলে যান। এভাবে জামাল তার বোন জামাইকে দুইতিন দিন বলে। একদিন জামালের বোন জামাই ভাবে সত্যিই তো আমিতো এ জমিটুকু বেচেঁ দিয়ে টাকা পয়ঁসা নিয়ে আমার নিজ গ্রামে ফিরে যেতে পারি। এতে করে আমার হাতে কিছু টাকা ও আসবে। এসব কথা জামালের বোনের জামাই তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলো। এক পর্যায়ে তারা স্বামী স্ত্রী মেলে সিদ্ধান্ত নিল যে জমিটা সত্যিই বিক্রি করে দিবে। তাই তারা জামাল কে ডেকে পাঠালো আর তার সাথে পরামর্শ করলো কিভাবে জমিটা বিক্রি করা যায়। এবার জামাল তার বোন জামাই কে বলল জমিটা তোমরা বাহিরে বিক্রি করলে যে টাকা পাবা আমি তাই দিবো। জমি যদি বিক্রি করো তাহলে আমার কাছে করো। বুঝতো আমার তো সন্তান বেশী। মেঝো বুবু তো আমাকে শুধু থাকার জন্য একশতাংশ জমি দিছে। আর এছাড়াও আমার শ্বশুর বলছে কিছু টাকা দিবে। আর আমাদের ও কিছু টাকা জমানো আছে।

adult-3064693_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

একথা শুনে জামালের বোন আর বোনের জামাই বলে যে ঠিক আছে তুমি যদি ঠিক দাম দাও তাহলে তোমাকেই জমি দিয়ে দিবো। তারপর জামাল এর ছোট বোন ও বোনের জামাই সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে যেয়ে জামালকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়। কিন্তু জামাল তার বোন ও বোনের জামাই কে পরামর্শ দেয় যাতে তারা জমি বিক্রির সমস্ত টাকা নষ্ট না করেন। কিছু টাকা হাতে রেখে বাকী টাকা ব্যাংকে রেখে দেয়। তাই জামাল জমি বিক্রির কিছু টাকা তার বোনের জামাইর হাতে দিয়ে বাকী টাকা বোন ও বোনের জামাই কে নিয়ে ব্যাংকে যায় এবং সেখানে জামাল এর বোনের নামে বাকী টাকা গুলো জমা রাখা হয়। এরপর জামালের ছোট বোন জামাই সহ শ্বশুর বাড়ীতে চলে যান।

কয়েক মাস পর জামালের বোন আর তার জামাই ব্যাংকে আসে সে টাকা তুলার জন্য। কিন্তু তারা জানতে পারে যে ব্যাংক একাউন্টে যে টাকা ছিল তা বেশ আগে যার নামে টাকা তিনি ব্যাংক থেকে তুলে নেয়ে গেছে। একথা শুনে জামাল এর বোন ও বোনের জামাইর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তারপর অনেক খোজঁ খবর করে জানা যায় জামাল তার নিজ স্ত্রীকে বোন সাজিয়ে এবং বউ এর টিপসই দিয়ে এবং ব্যাংকের কোন কর্মকর্তার সহায়তায় ব্যাংক থেকে সমস্ত অর্থ তুলে নেয়। ছোট বোনের এসব কথা শুনে এবার জামাল এর মেঝো বোনের একটু সন্দেহ হলো। এজন্য জামাল এর মেঝো বোন তার স্বামী সহ সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে খোঁজ নিতে গেল । সেখানে যেয়ে জামাল এর মেঝো বোন জানতে পারে তার অংশের জায়গা পুরোটা জামাল এর নামে রেজিষ্ট্রি করা। আর দলিলে লেখা তিনি জামাল এর কাছে জমি বিক্রি করে দিয়েছে। কি নির্মম কাহিনী! পরবর্তীতে জামাল বড় বোনের অংশের সম্পত্তি নিজ নামে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করলেও তা আর হয়ে উঠে নাই। কারন তার বড় বোন তো ঢাকায় বসবাস করত।

শুনা যায় শেষ বয়সে জামাল খুব কষ্ট করেছে। বউ সন্তানরা তাকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। আর তার মৃত্যু হয়েছে ঘরের বারান্দায়। আজ জামালের বউ এবং সন্তানরা বেঁচে আছে। জামালের স্ত্রী মানুষের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আর জামালের সন্তানরা কেউবা নেশাখোর, কেউবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে।

india-2939559_1920.jpg

কপিরাইট ফ্রি ছবি সোর্স

বন্ধুরা দেখেন জামালতো আজ বেচেঁ নেই । বেচেঁ আছে জামাল এর কর্ম । আর আছে এলাকার মানুষের মুখে মুখে জামালের কাহিনী। আছে বেচেঁ থাকা জামালের বোনদের দীর্ঘশ্বাস আর অভিশাপ।

কেমন লাগলো বন্ধুরা আমার এবারের গল্পটি? জানাতে ভুলবেন না যেন।

ভাল থাকবেন সবাই , সুস্থ থাকবেন সবাই।

4bEjbgCbFMvA8T33kKpp3RsBvZue1Hns5Cwuz57pgmmNsNm69BvSk1AJmpxNTS4pL3vHiENLbAz3uRYvkzCHo62J16v8SBo7zpHgViW2yotwk1h5RE41hP2qzb7ELuJ3M646bDwEPdWALxxSwivrhMnjnGhcCBFuAKUHSjQuMNQZSJx9eV.gif

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovTUshBEnxRTgb9n2LUqHX7h1H2p2D18YQFUDgxbpg8bp7AxwH9vK7k1SRqaoEJbCQrboh4ga6xfDvigcW6zfkH8S.png

আমি মাকসুদা কাউছার। আমি একজন বাঙ্গালী। ভালবাসি বাংলায় কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে। বাংলা আমার মায়ের ভাষা। আমি পেশায় একজন চাকুরীজীবি। তবে চাকুরীর পাশাপাশি আমি বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ও ইউটিউব চ্যানেলে কনটেন্ট লিখে থাকি। আমি ভালবাসি আমার মাকে, ভালবাসি আমার বাংলাব্লগ কে।

pBMyo3B2Sao2EbuHAFTX1CNWMbam25xJGPs4sKmLS6XL7jPcLJ4PhfmbsQbXEmSBkiJH1y8vcCZLEDiVjH9fUC37Hpjmz6Czw4oJd4hidqWpdsEDnaUW3Rt3p3eTZGQkoiwZDyH4hdDt99wPqRBy3pVZE1qtEmMBB3MC4V4MJCpzUCii.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
আসলে নিজের কর্মের ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে।দুনিয়া থেকে মৃত্যুর সময় কিছুই সাথে যাবে না।যাবে শুধুই তার কর্ম।জামাল শেষ বয়সে তার সেই পরিনতিটা দেখেছে এবং তার স্ত্রী আজও দেখছে। জামালের মতো প্রতারক শ্রেনীর লোকেদের মানুষ আজীবন ঘৃণা করছে এবং করবে।

আপু আপনার গল্পটা পুরোপুরি পড়ে আমার কাছে একেবারে নাটক সিনেমার কাহিনী মনে হয়েছে বাস্তবেও এরকম ঘটনা ঘটে থাকে। জামালের মত লোক আসলে সবার পরিবারে রয়েছে নিজের সম্পত্তি নষ্ট করে অন্যের সম্পত্তির প্রতি লোভ করে বেঁচে থাকে ।আর এমন অনেক মা আছে যারা সন্তানের দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে পারে না বিশেষ করে ছেলের সন্তানের। ছেলে সন্তানের জন্য মেয়েদের কাছে হাত পাতে শেষ পর্যন্ত। মারতোও ছেলের ঘরে কোন জায়গা হলো না ।আর অন্যায় কাজ করে কখনো সুখে থাকা যায় না আল্লাহ তার ব্যবস্থা ঠিকই করেন। জামাল ও তার বউ সন্তানেরা পরবর্তীতে তো কষ্ট করেই গেল। আর আপনি গল্পটা খুব সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন ভালো লেগেছে আমার কাছে অনেক।