আসসালামু আলাইকুম
আজ শনিবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২২ ইং
বাংলা ১৯ই কার্তিক ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় সবাই বেশ ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়াও আল্লাহর রহমতে বেশ ভাল আছি।
ব্লগিং জীবনে আমি বেশ কিছু বিষয় নিয়ে লেখালেখি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জানিনা কতটুকু স্বার্থক হতে পেরেছি। সে বিচারের দায়িত্বটা না হয় আমি আপনাদের কাছে ছেড়ে দিলাম।
বন্ধুরা, গত সপ্তাহে আপনাদের মাঝে নিঃশ্বব্দ ভালবাসার হাহাকার নামক গল্পটির প্রথম পর্ব শেয়ার করে ছিলাম। গল্পটি পড়ার পর আপনাদের অনেকে গল্পটির বিষয়ে অনেক মন্তব্য করেছেন এবং গল্পটির শেষ পরিনতি নিয়ে চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন। তাই আজ আপনাদের সকল কল্পনা ও জল্পনার অবসান ঘটানোর জন্য আপনাদের মাঝে হাজির হলাম নিঃশ্বব্দ ভালবাসার হাহাকার নামক গল্পটির শেষ পরিনতি শেয়ার করতে।
যারা সময় স্বল্পতার কারনে নিঃশব্দ ভালবাসার হাহাকার গল্পটির প্রথম পর্ব পড়তে পারেনি,তাদের জন্য প্রথম পর্ব এর লিংক নিচে দেওয়া হলো।
প্রথম পর্ব - https://steemit.com/hive-129948/@maksudakawsar/9b1hs
নিঃশব্দ ভালবাসার হাহাকার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব
স্বপ্নার মা বুঝতে পারলো স্বপ্না হাসানের প্রেমে পড়ে গেছে। তাই তিনিও অনেক চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি স্বপ্না কে বললেন “দেখি কি করা যায়, তোর বোনকে আমি ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি”। এদিকে হাসানের সাথে প্রতিদিন স্বপ্নার কথা হতে থাকে। তারা কেউ কাউকে আজও দেখেনি। কারন হাসান ও স্বপ্না সিদ্ধান্ত নিয়েছে একেবারে তারা ১৩ই ডিসম্বর দুজন দুজন কে দেখবে। স্বপ্না অনুভব করে হাসানের প্রতি তার একধরনের ভালবাসা কাজ করছে। তাই তাদের দুজনের মধ্যে রোমান্টিকতাও বেড়ে যেতে থাকে। এখন তাদের কথা হয় শুধু রোমান্টিক। যখন কথা হয় তখন তারা হারিয়ে যায় প্রেমের অথৈই সাগরে। সেখানে থাকেনা কোন দেয়াল। এরই মধ্যে হাসান অনেকবার স্বপ্নার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে চাইলেও স্বপ্না তাতে সাড়া দেয়নি।
আজ ১০ ই ডিসেম্বর। আগামী ১২ই ডিসেম্বর হাসান ঢাকায় আসছে । তাই হাসান স্বপ্নাকে এতটুকুই জানিয়ে দিয়ে বিদায় নেয়। বাকী কথা সাক্ষাতে হবে। রাতে খাবার টেবিলে মা, বড় আপা আর দুলাভাই সহ খাবার খাচ্ছে। সবাই চুপ করে আছে। স্বপ্না বলল- “মা ১২ তারিখ হাসান আসছে, আমরা ১৩ তারিখ দেখা করবো”। একথা শুনে স্বপ্নার বড় বোন রেগে বলে “না কোন দেখা হবে না”। একথা শুনে স্বপ্না বিষণ রেগে যায়। দুই বোনের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে স্বপ্নার মা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। বাসায় ডাক্তার আনা হয় এবং কিছু চেকাপ ও করা হয়। পরিবেশ বেশ থমথমে। ডাক্তার সাহেব সব কিছু দেখে বলে যায়, একটা সামান্য মাইলস্টক করেছে। তাকে এখন কোন চাপ দেওয়া যাবে না। পরের দিন স্বপ্না অফিস থেকে ছুটি নেয়। সারাদিন মায়ের পাশে থাকে। এক সময়ে স্বপ্নার মা স্বপ্না কে বলে, “আমি জীবনে তোকে কোন কিছুতে বারন করিনি। আজ আমি তোকে একটা অনুরোধ করবো। তোকে রাখতে হবে। আমি আমার দুই মেয়ের কাউকেই হারাতে পারবো না। আর আমি চাই তুই হাসানের সাথে দেখা করবি না। আমি তোকে এর চেয়ে ভাল ছেলের সাথে বিয়ে দিবো”।
মায়ের অসুস্থ্য অবস্থায় এসব কথা শুনে স্বপ্না অনেক ভেঙ্গে পড়লো। সারারাত সে আর ঘুমুতে পারেনি। পরদিন হাসান রাত ১০.০০ টায় ঢাকায় পৌছে স্বপ্না কে ফোন দেয়। কিন্তু স্বপ্না আর ফোন রিসিভ করে না। সেই রাত হতে হাসান কিছুক্ষন পর পর ফোন করতে থাকলেও স্বপ্না আর সেই ফোন রিসিভ করে না। পরদিন ১৩ই ডিসেম্বর যেদিন হাসানের সাথে স্বপ্নার দেখা করার কথা সেদিনও স্বপ্না হাসানের ফোন রিসিভ করে না। একসময়ে স্বপ্না তার অফিস কলিগ রিয়াজ সাহেব কে ফোন করে বলে যে, স্বপ্নার পরিবারের কেউ চায় না যে এখানে সে বিয়ে করুক, তাই সে হাসান কে বিয়ে করতে পারবে না। রিয়াজ সাহেব অনেক রিকোয়েস্ট করলে স্বপ্না তাকে বলে পৃথিবীতে আমার মা আমার কাছে সবচেয়ে বড়।
স্বপ্না এখন তার ঘরে থাকতেই বেশী পছন্দ করে। সারাদিন বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদে। এদিকে ১৩ই ডিসেম্বর সারাদিন স্বপ্নার মোবাইলে হাসানের ফোন আসলেও স্বপ্না সে ফোন রিসিভ করেনি। ১৩ তারিখ রাত পার হয়ে ১৪ তারিখ পড়লো। হঠাৎ স্বপ্না দেখলো হাসান তাকে মেসেজ সেন্ড করেছে।“কি দোষ আমার, আমি কিসে তোমার অযোগ্য? দয়া করে আমাকে একটাবার বলো। তুমি যদি না বলতা তাহলে আজ আমি দেশে আসতাম না”। এই মেসেজটি পড়ে স্বপ্নার চোখে পানি চলে আসে। তাই স্বপ্না তার উত্তরে বলে “না আপনার কোন দোষ নেই । আমি আপনার অযোগ্য”। এভাবে নানা কথা চলে তাদের মেসেজে। হাসান ফোন করতে চাইলে স্বপ্না তাকে বারন করে দেয়। এক সময়ে স্বপ্নার মোবাইলে চার্জ চলে যায়। স্বপ্না মোবাইল চার্জে রেখে কিছুটা চোখ বন্ধ করে । আর যখন চোখ মেলে তখন দেখে সকাল। স্বপ্না মোবাইল খুলে দেখে হাসান এর কয়েকটা মিসকল। আর অনেকগুলো মেসেজ। হাসানের শেষ মেসেজে ছিল “আমি মাকে দেখতে গেলাম, তোমার মতের পরিবর্তন হলে আমাকে ডেকো আমি আসবো”।
এরপর এভাবে দু তিনদিন পার হয়ে যায়। হাসান এর মধ্যে কয়েকবার স্বপ্নাকে ফোন করলেও স্বপ্না সে ফোন রিসিভ করেনি।কিছুদিন নিজের সাথে যুদ্ধ করে স্বপ্না বুঝতে পারে যে হাসান কে ছাড়া তার চলবে না। প্রাথমিক ভাবে সবাই অমত হলেও পড়ে সবাই মেনে নিবে। এসব ভেবে স্বপ্না নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে পড়ে সিদ্ধান্ত নেয় সে হাসানের সাথে দেখা করবে। তাই সে হাসান কে ফোন করে এবং দুজনে মিলে দেখা করার একটি ডেট ফাইনাল করে। স্বপ্না এখন মনে একটু তৃপ্তি পাচ্ছে যে তার ভালবাসা হয়ত স্বার্থক হতে যাচ্ছে।
কিন্তু না ভাগ্য বলে তো একটি কথা আছে। যেদিন তাদের দেখা করার কথা সেদিন অনেক চেষ্টা করেও হাসানের সাথে স্বপ্না কোন যোগাযোগ করতে পারেনি।হাসানের মোবাইল, মেসেঞ্জার সব বন্ধ। স্বপ্না আবার ভেঙ্গে পড়ে কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই সে রিয়াজ সাহেব কে ফোন করে। রিয়াজ সাহেব বলে “স্বপ্না আমি তো কিছু জানিনা দেখি আমি একটু যোগাযোগ করি”। কিছুক্ষনপর রিয়াজ সাহেব স্বপ্না কে জানান যে হাসানের ভাইয়েরা তার অন্য যায়গায় বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে এবং হাসানের কাছ থেকে মোবাইলও নিয়ে নিয়েছে। আর হাসান কে তার ভাইয়েরা এও বলছে যদি তাদের কথা হাসান অমান্য করে তাহলে তারা পরিবারের সবাই একত্রে বিষ খাবে।
এসব কথা শুনে স্বপ্নার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। দিনের পর দিন স্বপ্না মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে। বাসায় ফিরে রাত করে, খাওয়া দাওয়া করে না। এরই মধ্যে হঠাৎ হাসান একদিন স্বপ্না কে ফোন করে। স্বপ্না তখন হাসান কে বলে আপনি চলে আসেন, আমি আপনাকে ছাড়া বাচঁতে পাড়বো না”। কিন্তু হাসান এক বাক্যে স্বপ্না কে ফিরিয়ে দেয়।- হাসান বলে “আমি তোমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি। তুমি তা গ্রহণ করোনি। আজ পরিবার আর সমাজের কাছে আমার হাতপা বাধাঁ। ভুলে যাও আমাকে, মনে করো আমার ভালবাসা তোমার কপালে নাই আর তোমার ভালবাসা আমার কপালে নেই”।
এরপর থেকে স্বপ্না তার বুকের কষ্টে দিন দিন প্রায় মানসিক রোগী হয়ে যায়। শোনা যায় মানসিক কষ্টে হাসানও নাকি হার্টএ্যাটাক করেছে। তবে প্রকৃতি বসে থাকে না। সে তার গতিতে চলে। আজ স্বপ্নার অন্য কোথাও সংসার হয়েছে। কিন্তু স্বপ্না কি পাড়লো আজও হাসান কে ভুলতে। যে ভালবাসা প্রজ্জলিত করার আগে নিভে যায় তাকে কখনও ভোলা যায়? প্রশ্ন রইলো আপনাদের কাছে।
বন্ধুরা আমি জানিনা আজকের এই শেষ পর্ব পড়ে আপনারা কে কে আমাকে বকা দিবেন। তবে কারোও বাস্তব জীবনের ঘটনা কে আজ আমি গল্পে রুপ দিতে পেরে নিজেকে অনেক হালকা লাগছে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনারা সবসময় প্রাণবন্ত, ভাল ও সুস্থ্য থাকুন।

Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সত্যি আপু যেই ভালোবাসা প্রজ্জলিত করার আগেই নিভে যায় সেই ভালোবাসা কখনো ভোলা যায় না। প্রিয় মানুষটিকেউ ভোলা যায় না। হয়তো হাসান ও স্বপ্নার মত অনেক মানুষ তাদের প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে ফেলে। আপু আপনার লেখা গল্প পড়ে বকা দিব কেন? আপনার লেখা গল্প পড়ে তো ভালই লাগলো। আসলে এই ধরনের গল্পগুলো হয়তো অনেকের জীবনের সাথে মিলে যায়। তাইতো জীবন থেকে এই গল্পগুলোর তৈরি হয়। কারো বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই সুন্দর গল্প লিখে শেয়ার করেছেন এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। চেষ্টা করেছি গল্প সুন্দর ভাবে তুলে ধরো জানিনা কতটুকু পেরেছি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
খুবই দুঃখজনক। স্বপ্নার ও দোষ নেই,হাসানেরও ও দোষ নেই।যদি স্বপ্নার মা একটু স্যাক্রিফাইস করতেন তাইলে এত গুলো জীবন এভাবে নষ্ট হত না।এভাবেই পরিবার মানবে না জন্য প্রতিনিয়ত কতশত স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়,কত মানুষ জিবীত থেকেও মৃত হয়ে যায়। অসাধারণ হয়েছে আপু গল্পটি। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ উৎসাহ দেওয়ার জন্য। আজকের এই উৎস আমার জন্য উদ্দীপনা হয়ে রয়ে যাবে
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
যদিও আমি নিঃশ্বব্দ ভালবাসার হাহাকার এর প্রথম পর্বটি পরিনি। তবে দ্বিতীয় পর্ব পরে ভালোই লাগলো। এমন গল্প তো অনেকের সাথে মিলে গেছে। আসলে ভালোবাসা যেনো অদ্ভুত। ধন্যবাদ আপনাকে আপু চমৎকার একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া আশা করব এই গল্পটি প্রথম পূর্ব পড়বেন। আর পোলা তোর নিরাস হবেন না। এতটুকু বলতে পারি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
না সেটা কখনোই ভোলা যায়না। ভালোবাসা একবার হৃদয়ে গেঁথে গেলে তা আর ছুঁড়ে ফেলে দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে উভয় দিককার পরিবার ভীষণ বাড়াবাড়ি করেছে দুটি হৃদয় নিয়ে। বিশেষ করে স্বপ্নার বোন এবং হাসানের ভাইয়েরা। ওরাই এই অতৃপ্ত ভালোবাসার জন্য দায়ী।
ভালো ছিল গল্পটি, সমাজে এরকম ঘটনা দেখা যায়।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিলো। এই ভুল অনেকেই করে যে সমাজের চাপে পড়ে ভালোবাসার বলিদান দেয়। কিন্তু এতে অনেকগুলো জীবন নষ্ট হয়। সমাজের কাজই হল আনন্দ নেওয়া অন্যের দুঃখে। তাই এই ধান্দাবাজ সমাজকে ভুলে ভালোবাসা কে গ্রহণ করা উচিত ছিলো। তবে প্রথম পর্ব পড়ে ভেবেছিলাম যে মিলন হবে। ভালোবাসায় বিচ্ছেদ মোটেই ভালো লাগে না। বুকটা ভরে উঠলো।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
তাহলে আমার কেমন লাগছে দিদি ভাবেন তো
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপনি অনেক সুন্দর করে নিঃশ্বব্দ ভালবাসার হাহাকার গল্পটি লিখেছেন। গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। হাসান এবং স্বপ্নের মত এই সমাজে অনেকেই আছে। ভালোবাসার জন্য মানুষ কি যে করে ফেলে। অনেক সুন্দর করে গল্পটি আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। আর ধন্যবাদ রইল আপনার প্রতি আমাকে এত সুন্দর ভাবে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit