আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
শুভ সকাল ভালোবাসার আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবার। সকলের সুস্বাস্থ্য এবং সুন্দর জীবন কামনা করে আবার আজ চলে আসলাম নতুন আরও একটি ব্লগ নিয়ে। জীবনটাই একটি নাট্যমঞ্চ। এখানে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে পারলে বাঁচা সহজ। আর যদি কেউ সংগ্রাম করে টিকে থাকতে না পারে, তাহলে তো তার জীবন দূর্বিসহ। কিন্তু বেঁচে থাকতে হলে তো সংগ্রাম করতেই হবে। পৃথিবীতে কিন্তু নারীরাই বেশী সংগ্রামী। আর তাদের এই সংগ্রামের কথা রয়ে যায় নিরব নিস্তব্দ। নারীরা কখনও নিজেকে পৃথিবীতে জাহির করে না। তারা নিরবে নিস্তব্দে সংগ্রাম করে যায় বেঁচে থাকার জন্য।
গল্প পড়তে বা শুনতে কিন্তু বেশ ভালো লাগে। সেটা হউক রোমান্টিক বা সামাজিক অথবা ডিটেকটিভ।গল্পের মধ্যে ঢুকলে কিন্তু আর পৃথিবীর কোন দিকে মন বসে না। গল্পটা শেষ করা চাই চাই। কত যে সময় পার করেছি এই গল্প পড়ার জন্য। আর আজ আমিও গল্প লেখি। যাই হোক বন্ধুরা আজও আবার চলে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি গল্প নিয়ে। আশা করি আমার আজকের গল্পটিও আপনাদের ভালো লাগবে।
নীলিমা একজন সংগ্রামী নারী। সেই ছেলেবেলা হতেই তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে এক সংগ্রামী জীবনের। আর হবেই না কেন। বাবা তেমন কোন চাকরি করেন না। সামান্য বেতন ভুক্ত একজন কর্মচারী। কিন্তু এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে তার বাবার পক্ষে সংসারের খরচ বহন করে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনা করানোটাই যেন একটি বিলাসিতা। তবুও নীলিমার বাবা খুব কষ্ট করে তার দুটো ছেলেকে পড়াশোনা করান। কিন্তু পরিবারের অভাবের কথা চিন্তা করে নীলিমাকে আর ভালো কোন স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি নীলিমার বাবা। তাই নীলিমাকে ভর্তি করা হয় এলাকায় একটি গরীব স্কুলে। যেখানে বিদেশী সাহায্য সহযোগিতায় পড়ানো হয় গরীব ছেলেমেয়েদের।কিন্তু নীলিমা ছিল এক মেধাবী ছাত্রী। তাই প্রতিটি ক্লাসে নীলিমা প্রথম স্থান অধিকার লাভ করেন।
এভাবেই নীলিমাদের সংসার চলে যাচিছলো। সংসারে নীলিমা তার মা বাবা, বড় দুটো ভাই ছাড়াও ছোট দুটো বোন আছে। এক সময়ে নীলিমার বড় ভাই দুটো বড় হয়ে চাকুরি করে এবং নীলিমার মেজো ভাই পরিবারের অমতে বিয়ে করে স্ত্রী কে নিয়ে আলাদা সংসার শুরু করে। কিন্তু নীলিমার বড় ভাই চাকুরি করে বাবার সংসারের হাল ধরেন। ততদিনে নীলিমা এস. এস. সি পাশ করে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু ভালো কলেজের খরচ যোগাতে নীলিমাকে করতে হয় দুই তিনটি টিউশনি। কলেজ থেকে ফিরেই নীলিমা চলে যায় টিউশনি করতে। এভাবেই চলে যাচিছল সময়। দেখতে দেখতে নীলিমা গ্রাজুয়েশন শেষ করে। এদিকে হঠাৎ করে নীলিমার বাবা মারা যান। এতে করে নীলিমার বড় ভাই বেশ ভেঙ্গে পড়ে। কারন নীলিমা মা আর তার বোন দুটো কে দেখার মত নীলিমা আর তার বড় ভাই ছাড়া পৃথিবীতে এখন কেউ নেই। নীলিমার ভাইও কিন্তু তেমন কোন ভালো চাকুরি করেন না। তাই তিনি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন।
হঠাৎ এক সময়ে নীলিমার বড় ভাইও স্ট্রোক করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। এখন নীলিমাদের সংসার কে চালাবে? নীলিমার জীবনে নেমে আসে সংগ্রাম। সে তার টিউশনির পরিমান আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করেন একটি ভালো চাকুরির জন্য। বেশ কষ্টে কাটে নীলিমাদের সংসার। বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না। আর আত্নীয় স্বজনও কেউ এগিয়ে আসে না নীলিমাদের কে সাহায্য করার জন্য। খুবই দূর্বিসহ জীবন তাদের। এদিকে নীলিমার জীবনে এক সময়ে প্রেমের হাতছানি আসতে শুরু করে। বেশ কিছু পরিচিত ছেলে, এমন কি নীলিমার ক্লাসমেটদের অনেকেই নীলিমাকে বিয়ে করার জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু না নীলিমা কারো ডাকে সারা দেননি। কারন নীলিমার ধারনা তার বিয়ে হয়ে গেলে তার পরিবার কে দেখার মত কেউ থাকবে না। কারন কোন ছেলের উপরই নীলিমা ভরসা করতে পারেন না। তাই সে অনেক ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়।
এদিকে নীলিমার হঠাৎ একটি চাকুরি হয়ে যায়। জীবন যুদ্ধে আজ নীলিমা পরাজয়ী। সে তার চাকুরির পাশাপাশি সংসার চালাতে কিছু টিউশনিও করে। এভাবেই কেটে যাচেছ নীলিমার জীবন। এদিকে নীলিমার বিয়ের বয়সও শেষ হয়ে যাচেছ। কিন্তু তার বিয়ের দিকে কোন খেয়াল নেই। তার শুধু সংসারের দিকেই খেয়াল। এক সময়ে নীলিমার ছোট বোন দুটো গ্রাজুয়েশন শেষ করে। নীলিমার ছোট বোন দুটো ভালো চাকুরিও পায়। তাতে সংসারের টানা পোড়ন কিছুটা হলেও কমে। আর এভাবেই নীলিমাদের সংসার জীবন চলতে থাকে।
একসময়ে নীলিমার জীবনে আসে প্রেম। না প্রেম বললে ভুল হবে। বিয়ের প্রস্তাব। নীলিমা প্রথম দিকে রাজি না থাকলেও ছেলেটির সাথে কথা বলার পর কিছুটা ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু নীলিমার মা ছাড়া পরিবারের কেউ সেই বিয়েতে রাজি হয় না। তাই নীলিমা এবারও বিয়ের চিন্তা ভাবনা দূর করে দেয় মন থেকে। কারন তার পরিবারই যে সব তার কাছে। সে পরিবারের জন্য সব করতে পারে। তবে নীলিমা বুঝতে পারে যে ছেলেটির প্রতি তার এক রকমের ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু নীলিমা তার এ ভালোবাসা কে বিসর্জন করে একমাত্র পরিবারের জন্য।
এদিকে নীলিমার বোনদেরও এক সময়ে বিয়ে হয়ে যায়। এখন পরিবারে নীলিমা আর তার মা ছাড়া আর কেউ নেই। নীলিমার বিয়ে নিয়ে আশেপাশের মানুষের যেন কৌতুহলের কমতি নেই। এক বিরাট যন্ত্রণা ভোগ করার পর নীলিমা সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে এবার বিয়ে করবে। তাই বেশ কষ্টে এক অফিস কলিগের মাধ্যমে একটি প্রোপজাল পায়। এবার কিন্তু নীলিমা আর ভুল করেননি। কিছুটা দেখে শুনে এবং ছেলেটির সাথে কথা বলে নীলিমা এক সময়ে ছেলেটির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু হায়! নীলিমার বিয়ের পর শুরু হয় আর এক দূর্বিসহ জীবন। যে জীবনের কথা সে পৃথিবীর কাউকে বলতে পারে না। পারে না স্বামী কে ছেড়েও দিতে। কারন সমাজ আর নিজের জীবন। সব মিলিয়ে নীলিমা এক দূর্বিসহ জীবনযাপন করতে হয়। কিন্তু সমস্ত পৃথিবী জানে নীলিমা আজ সংসার জীবনে সুখী একজন মানুষ।
আরে সুখ আসবে কি করে। একটি সংসারের মূল সুখই তো সন্তান। কিন্তু নীলিমার স্বামীর যে সে ক্ষমতাটুকুও নেই। অনেক চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয় নি। কি করবে নীলিমা স্বামী কে ছেড়ে দিবে? সমাজ তাকে কি বলবে? যাক এক জীবনে না হয় কিছুই পেল না নীলিমা। সব দুঃখ কষ্ট সহ্য করে জীবন সংগ্রামে এক পরাজিত সৈনিক হয়ে আজও কাটিয়ে দিচেছ নীলিমা তার জীবন। মাতৃত্বের স্বাদ নাই বা পেল নীলিমা। তবুও তো জীবনের শেষ সময়টুকু ছায়া হয়ে পাশে থাকার জন্য কাউকে পেল।
আজ এখানেই শেষ করছি। কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগা আর মন্দ লাগা মন্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারবো। সকলেই ভালো থাকবেন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নীলিমা তার জীবনের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছে ছোটবেলা থেকে। সে অনেক কষ্ট করেছে তার ফ্যামিলির জন্য। পরবর্তীতে সে ভালোভাবে চাকরি করে বোনদেরকে বিয়েও দিয়েছিল। তার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু সে মাতৃত্বের স্বাদ পেল না। যাইহোক শেষ পর্যন্ত পাশে থাকার জন্য কেউ একজনকে সে পেয়েছে তাহলে। অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে সম্পূর্ণ গল্পটা পড়তে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া এত সুন্দর একটি উৎসাহ মূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নীলিমার গল্পটা পড়ে যেমন ভালো লেগেছে তেমনি খারাপ বলে গেছে। নীলিমা সেই ছোট্ট থেকে সংগ্রাম করে আসছিল এবং কি সবকিছু নিজের হাতে সামলে ছিল। বিয়ের বয়স হওয়ার পরেও সে বিয়ে করেনি পরিবারের কথা চিন্তা করে। সবশেষে বিয়ে করেছিল কিন্তু সন্তানের জন্য সে সুখটাও পেল না। এখন সে পরাজিত সৈনিক হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছে তাহলে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
এত সুন্দর একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
অসাধারণ একটি গল্প লিখেছেন আপু। গল্প পড়তে আমার কাছে খুব ভালো লাগে। তেমনি আপনার আজকের লেখা গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। নীলিমা ছোটবেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করেছে তার পরিবারের জন্য। সত্যি নীলিমা জীবন সংগ্রামে পরাজিত এক নারী।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
সুন্দর এবং উৎসাহ মূলক মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে অসাধারণ একটি গল্প লিখে শেয়ার করেছেন। ছোটবেলা থেকেই নীলিমা তার জীবন সংগ্রামের সাথে বড় হয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষ কঠোরভাবে পরিশ্রম করলে সফলতা একদিন পৌঁছায় তার দৃষ্টান্ত ধরনের এই গল্পটি। পরবর্তীতে সে চাকরি পেয়েছে জেনে বেশ ভালো লেগেছে। প্রত্যেকটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে সে একদিন মাতৃত্ব স্বাদ গ্রহণ করবে। কিন্তু সে মাতৃত্ব স্বাদ পেয়েছিল না জানে বেশ খারাপ লাগলো। এই সময় প্রতিটা মেয়েদের মনে যে কি কষ্ট হয় শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারে। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জি ভাইয়া খারাপই লাগার কথা।নীলিমার জীবনটাই যেন কেমন হয়ে গেল।ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
বাহ্! অসাধারণ লিখেছেন আপু। তবে নীলিমার জন্য খুব খারাপ লাগলো। জীবনে এতো সংগ্রাম করার পর বোনদেরকে ঠিকই বিয়ে দিয়েছেন। সম্পূর্ণ সংসারটা নিজে চালিয়েছেন বড় ভাই স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার পর। সংগ্রাম করে জয়ী হলেও অবশেষে বিয়ের পর সবচেয়ে বড় কষ্টটা পেল। কারণ প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন থাকে মা ডাক শোনার। যাইহোক এতো চমৎকার একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমিও বলি যে প্রতিটি নারীই চায় মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে। কিন্তু কি হলো নীলিমার । ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit