কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের আমার সকল বন্ধুরা। আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন, আপনাদের দোয়ায় আমি অনেক ভালো আছি। আজকে একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হলাম। যেটি আমার দৈনন্দিন জীবনের সাথে ঘটেছে।
অবশ্যই আমার শিরোনাম দেখেই বুঝতে পেরেছেন, আমি কোন বিষয়ের উপর কথা বলছি। হ্যাঁ বন্ধুরা ঠিক এমনটাই হয়েছে, হঠাৎ করে আমি যে প্রজেক্টে কাজ করি সেই প্রজেক্টে সিআইডিবি অফিসারদের রেট পড়ে। এক কথায় বলতে গেলে তারা মানুষজনের কাছে সঠিকভাবে কাগজ পাতি আছে কিনা সেটা চেক করার জন্য আমাদের প্রজেক্টে হানা দেয়।
আর এটা হয় একেবারেই হঠাৎ করে, প্রতিদিনের মতো সকাল সকাল কাজে উঠেছি। আপন মনে কাজ করছি, কোন চিন্তা ভাবনাই নেই, কারণ বরাবরই তো এমনটাই করি। কিন্তু এমন একটা ঘটনা ঘটবে কে জানতো। একে তো উপরে টানা রোদ, রোদে একেবারে জীবনটা ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে, তার ওপর যখন এই সংবাদ শুনলাম তখন তো একটু ভয় পাওয়া স্বাভাবিক।
হঠাৎ করেই আমার প্রজেক্টে একসাথে এক ঝাঁক সিআইডি অফিসারদের আশা কেউ যেন সঠিকভাবে মেনে নিতে পারছে না। কারণ আমি যে প্রজেক্টে কাজ করি, মোটামুটি তিন থেকে চারশো বাঙালি আছে। আর অন্যান্য দেশের মানুষ তো আছেই। আর যখন একসাথে চারিদিক থেকে এই প্রোজেক্টে সিআইডিবি অফিসাররা ঘিরে ফেলেছে, তখন সবাই অনেকখানি আতঙ্কের ভেতরে।
তখন আমাদের প্রজেক্টের কর্মরত যারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছে তাদের সাথে কথা বলল, এবং সিআইডি অফিসারের যিনি প্রধান তিনি আমাদের প্রজেক্টের ম্যানেজার কে বলল যত লোক আছে সবাইকে কাজ ছেড়ে নিচে নামতে বল। তাদের কাগজ পাতি চেক করা হবে। এর মধ্যেও সবার মাঝে জানাজানি হয়ে গেছে, যে প্রজেক্ট এ পুলিশ ঢুকেছে। তো যাদের কাছে কোন কাগজ পাতি নেই তারা তো কি করবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না, সবাই দিশেহারা যে যেমনি পারে তেমনি পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে।
এমতাবস্থায় আমার সুপারভাইজার আমার কাছে ফোন দিল, বলল মামুন তুমি আর সাগর নিচে আসো, আর বাকি যারা আছে এদেরকে বল একটু গা ঢাকা দিয়ে থাকতে, প্রজেক্টটা কিন্তু অনেকগুলো পুলিশ এসেছে, আর তোমরা দুইজন তাড়াতাড়ি নিচে আসো। আসলে আমাদের সুপারভাইজার আমাদের দুজনকে ডাকার কারণ হলো আমরা দুজন বৈধ, আর বাকি যারা আছে তারা সবাই অবৈধ। এক কথায় বলতে গেলে তাদের কাছে কোন ধরনের কাগজ পাতি নেই, তাই আমাদের সুপারভাইজার আমাদের দুইজনকেই ডাকলো।
এমন করে যাওয়া কেমন যেন একটা লাগছে, তারপরও অনেক সাহস নিয়ে গিয়েছি। কারন আমার কাছে সব ধরনের কাগজপাতি রয়েছে, তাই আমার ভয় কিসের। অবশেষে যখন আমি নিচে গিয়েছি তখন সিঁড়িতেই একজন অফিসারের সাথে আমার দেখা, তিনি আমাকে বলছে উপরে আর কোন মানুষ আছে। আমি বললাম হ্যাঁ, সবাই নামছে আপনার যাওয়ার দরকার নেই।
এ কথা শুনে অফিসার কে দেখলাম আমার সাথে সাথে আসলো, বলল চলো আমার সাথে আমি দেখিয়ে দিচ্ছি কোথায় সবাই বসেছে। তখন পার্কিংয়ে তারা একটা পুরো অফিস খুলে বসেছে, যে যার মত কাগজ পাতি চেক করছে, আর মোবাইল দিয়ে ছবি উঠাচ্ছে। হাতে কাগজ পাতি ধরিয়ে ছবি উঠিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে পুরো প্রজেক্ট ফাঁকা, যেন মনে হয় এই প্রজেক্টে কেউ কাজ করে না, হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ ছাড়া আমি আর কাউকেই সেখানে দেখতে পাচ্ছি না। গড়ে সরে ১০০ জনের মত লোক অফিসারদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আর বাকিরা সবাই উধাও, মানুষের এমন অবস্থা দেখে সিআইডি অফিসারদের প্রধান আমাদের প্রজেক্ট এর সেফটি অফিসার কে বলছে? তোমার প্রজেক্টের আর লোক কই। অনেকখানি হতবাক হয়ে আমাদের সেফটি অফিসার বলছে এইতো আমার লোক, বলছে না তুমি যখন সকালে মিটিং করো তখন দেখি অনেক লোক। কিন্তু এখন তার এক শতাংশ দেখছি না আর বাকিরা সব কোথায়।
তখন আমাদের সেফটি অফিসার বলল স্যার যা আছে এগুলোই আর বাদবাকি আমার বড় অফিসার আপনার সাথে কথা বলবে। সবগুলো ঠিক হয়ে যাবে, মানে আমাদের কোম্পানির বড় অফিসাররা cid অফিসারদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। একপ্রকার দেখলাম সবাই অনেকখানি ঠান্ডা, যতগুলো লোক এসেছে তাদেরকেই কাগজ পাতি চেক করছে এবং তাদের ছবি উঠাচ্ছে।
এভাবেই টানা তিন ঘন্টা ধরে আমাদেরকে বসিয়ে রেখে আমাদের কাগজ পাতি বারবার দেখে বারবার ছবি ওঠায়। কত ধরনের প্রসেস। এদিকে খাওয়ার টাইম হয়ে গিয়েছে, পেটে খিদে এমন লাগা লেগেছে, আর বসে থাকতে পারছি না। তখন দেখলাম অফিসারদের ভেতরে কয়েকজন বলল তোমরা এখন বাসায় যেতে পারো, তোমরা খাওয়া দাওয়া করে নাও। আমি এ কথা শুনে আসলে অনেক খুশি হলাম, মনে হয় আমার মনের কথা শুনে ফেলছে।
যাক বন্ধুরা এই ঘটনাটি ঘটেছে আমার প্রজেক্টে, তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আসলে আমরা কতটা রিক্স নিয়ে কাজ করি, কতটা ভয় নিয়ে কাজ করি যারা এই দূর প্রবাসে থাকে অবৈধভাবে তারাই জানে। তাদের মনে সব সময় এই ভয়টাই থাকে কখন জানি পুলিশ আসে, কখন জানি তাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। কারণ কত দিনা করে, কত কিছু নষ্ট করে এই প্রবাসের পথে পাড়ি দিয়েছে। তার পরে যদি এমন ঘটনা ঘটে যায়, তাহলে তার বেঁচে থাকার আশা টুকুই শেষ হয়ে যাবে।
আর এটা নতুন না এই ঘটনা সব সময়ই ঘটে আমাদের সাথে। আজকে হয়তো আমাদের সাথে ঘটেছে, কালকে অন্য জায়গায় ঘটবে। তবে আমি দোয়া করব, সবাই যেন সুস্থ থাকে, সবাই যেন ভালো থাকে। বন্ধুরা আপনাদের মাঝে ঘটনাটি শেয়ার করলাম, ভালো লাগলে অবশ্যই আপনাদের মতামত শেয়ার করবেন ধন্যবাদ সকলকে।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit