শেয়ার কর তোমার বৃষ্টির দিনের মজার কোন অনুভূতি By-@marufhh

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)

আজ সোমবার

২৭শে জুন ২০২২ ইং || ১৩ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২ বঙ্গাব্দ ||২৬শে জিলক্বদ ১৪৪৩ হিজরি ।


প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ, আশাকরি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন । আমি মাঝে মাঝে অভিভুত হয়ে যায় প্রিয় পরিবারের আয়োজনে । কত না বলা কথা, মনের গভীরে লুকানো প্রেম সব প্রচীর ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে কলমে । আজ তেমনি একটা দিন । আবেগ অনুভুতি প্রবল ভাবে আন্দলনে নেমেছে বন্দিশালা থেকে বেরিয়ে আসার নিমিত্তে । আজ তাদের বাঁধা দেবনা , ভুলে বন্ধন দেব উড়িয়ে নীল আকাশে ঢেকে যাক কালো মেঘের ছায়া হয়ে, পুরো পৃথীবিতে।

আমার বংলা ব্লগ.jpg

তীব্র শীতের প্রকোপেতে
কম্বল মুড়িয়েও কেপে অস্থির,
কখনো ককিলের গান
হাজার ফুলের ঘ্রাণ
জাগিয়ে দেয় যে প্রাণ ছিল বধির ।

কখনো সেই কুয়াশা মাখা
দুর্বা ঘাসে পা মিলিয়ে চলা,
কখনো চলে ভ্যাপসা গরম
চাঁদনী রাতে শত গল্প বলা ।

কখনো আবার তীব্র দাহ
জল চাহিবার আশে ।
পরক্ষণেই ব্যাঙের ডাক
জলাশয়ের পাশে ।

বৈচিত্রের মেলা বসে বর্ষা লাগা দিনে
বর বেশে আজ খ্যাঁক শিয়ালটা, শিয়ালীনি কনে

তো বন্ধুরা সব চেয়ে আমার কাছে বৈচিত্রময় লাগে কিন্তু বর্ষাকালটাকেই । সপ্তাহে চারদিন বৃষ্টি যেন শীতের আভাস । পরের তিন দিন যেন গরমে হাসফাস । এভাবেই আমাদের মিশ্র অনুভূতি দিয়ে যায় বর্ষাকালের দিন গুলি । আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি বৃষ্টির দিন নিয়ে আমার অনুভুতি । আশা করছি আপনাদের জন্য এটি উপভোগ্য হবে ।

IMG_২০২২০৬২৬_১৪১৯১৩.jpg


বৃষ্টি নিয়ে আমার সব চেয়ে ছোট বেলার স্মৃতির পাতায় যে ঘটনাটি ঠায় পেয়ে আছে কাঁদা মাখা উঠানে বার বার পিছলে পড়া । অনেকটা স্বাস্থ্যবান ছিলাম একটু বৃষ্টি হলেই আম্মু নিষেধ করতো কোথাও যেন না যাওয়া হয় । ওদিকে আমি আছি সুযোগের অপেক্ষায় একটু চোখের আড়াল হলেও দে দৌড় বাড়ি থেকে রাস্তা যেতে পারলেই যেন মুক্তি । কিন্তু বাধ সাদতো উঠোনের পিচ্ছিল কাঁদা যেই নামা সেই ধড়াম সেদিনের যাত্রার ওখানেই সমাপ্তি । তখন শূধু জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকানো আর সমবয়সীদের সাথে খেলতে না পারার কষ্টানুভুতি । এরপর বড় হচ্ছি একের পর এক বর্ষাকাল আসছে বৃষ্টির দিন গুলো জমা হচ্ছে স্মৃতির পাতায় অনেক স্বরনীয় ঘটনার সাক্ষী হয়ে।


তবে প্রথম স্বাধীন ভাবে বৃষ্টিতে ভিজেছি আত্মীয় বাড়ি থেকে ফেরার পথে । গেছিলাম নিকট আত্মীয়ের মৃত্যর সংবাদে সম্পর্কে নানা হলেও সম বয়সী তাই ছোট ভাইয়া বলে ডাকতাম ওর মৃত্য সংবাদ পেয়ে ।
সে দিনের রৌদ্রজ্জল সকালে সংবাদ এলো এতদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছেলেটি আজ মারা গেছে । সেখানে যাওয়ার নিকটতম পথটি ছিল মেঠো পথ সেদিক দিয়েই যে যার মত শুরু করলাম দল বেধে হাটা । এখনো মনে পড়ে মাটির রাস্তা যাওয়ার সময় রাশি রাশি ধুলা মাড়িয়ে গেছিলাম ।
আর আসার সময় কাঁদায় লুটোপুটি ।

IMG_২০২২০৬২৬_১৪২৩১২.jpg


বৃষ্টির দিনের আনন্দ করেছি ছোট কাকুর বিয়েতে । বাড়ির চারিদিকে সাজ সাজ রব আমার তখনকার চেনা অচেনা অনেক আত্মীয়েরা এসেছে বিয়ের কয়েকদিন আগেই । বড়দের সবার সাথে চেনা জানা না থাকলেও সদ্য পরিচিত বৃষ্টি নামের মেয়েটির কথা এখনো ভুলে যায়নি । তখন প্রেমে পড়ার মত বয়েস হয়েছিলনা অবশ্য বিশেষ ভাবে মনে থাকার কারণ ছিল অন্য । মেয়েটা একটু সহজেই রেগে যেত আর আমরা ভাইবোনেরা আরো বেশী করে রাগিয়ে এক ফোঁটা বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু হলেই চারিদিক ঘিরে গায়তে শুরু করতাম "বৃষ্টি রে বৃষ্টি আয়না জোরে" গানটি । না বুঝতাম অর্থ না ছিল অন্য কোন কারন এই গানে তার নাম আছে এর জন্যই বলা । আর পরক্ষণেই তার সেই রাগ দেখিয়ে চলে যাওয়া।

IMG_২০২২০৬২৬_১৪২৪৫৪.jpg


তবে আমার মনে হয় বৃষ্টির অনুভুতি গুলো নেওয়ার জন্য বড় হওয়ার ও প্রয়োজন ছিল । তখন আমি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আমাদের এক ক্লাস মেটের পিতা মারা গেল হঠাৎ বজ্রপাতে নিজ বাড়িতেই । এরপর থেকে আমার গ্রাম, পাশের গ্রাম, তার পরের গ্রাম, নিজ জেলা, পাশের জেলা, নিজ দেশ পাশের দেশে যত বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা একে একে শুনতে শুরু করলাম বড়দের মুখে । বাজ পড়ে মারা গেলে রাত্রি বেলা তার মাথা কেটে নিয়ে যায় এমন সব আজগুবি গল্প । আজগুবি বা বলিই কেমন করে । সে বছরেই আমার নানাবাড়ির পাশে একজন ব্জ্রপাতে নিহত হওয়ার কারনে তার কবরটি চারিদিক থেকে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে দুইদিন পাহারা করারপর ছাদ পর্যন্ত করে ফেললো যা এখনো টিকে আছে । এবার বলুন ঐ বয়েসে এসব গল্প শোনার পর আর কি মেঘ ডাকলে বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল ? মরবো তো মরবই সাধের মাথাটাও চুরি হয়ে যাবে ? কয়েক বর্ষার আনন্দ আমার এভাবেই বিলিন হয়ে গেছে ভয়ে ।

IMG_20150814_163529.jpg


কয়েক বছর পরের কথা তখনও মনে ভয়টা চেপে ছিল । প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে আর সাথে পাল্লা দিয়ে মেঘের গর্জন । আমি পিঁড়িতে বসে আছি চেয়ার পেতে খানিকটা বাইরের দিক ঘেঁসে বড় আপু বসে আছে । তবে দুজনের অনুভূতির আকাশ পাতাল তফাৎ । ও গায়ছে মনের সুখে গান । আর আমি করছি দোয়া ইউনুস খতম । আর মনে প্রচন্ড মেজাজ খারাপ । মনে মনে বলছি "এখন যদি একটা বাজ পড়ে তুই তো মরবি । সাথে আমিও । কবর হয়ে যাবে, রাত পোহালেই দুজনের কল্লা উধাউ তোর মোটা মাথার বেশি দাম হবে" ।

IMG_২০২২০৬২৬_১৭৩২২৪.jpg

তবে আমার একটা অনুভুতির স্বাদ এখনো বাকি রয়ে গেছে । যখন থেকে একটু একটু করে বড় হয়েছি মনে মনে স্বপ্ন এঁকেছি । কোন এক বৃষ্টি স্নাত দিনে দুজনে এক সাথে ভিজবো । চিবুকের উপরে তার ছড়িয়ে থাকা এলো চুল বেয়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা গুলো আমি মাটিতে পড়তে দেখবো । সে হবে আমার বৃষ্টির দিনে সেরা অনুভূতি ।

unnamed.png



সবার সুস্থতা এবং সকল কষ্টানুভুতি থেকে মুক্তি কামনা করে আজ এখানেই সমাপ্ত করছি ।

আল্লাহ্‌ হাফেজ
ধন্যবাদান্তে @maruffhh
ফটোগ্রাফি ডিভাইসঃ mobile
মোবাইল নেমঃ redmi 6a
ক্যামেরাঃ 8mp

আমার পরিচয়

IMG_20170303_142442.jpg

আমার নাম মারুফ হাসান । আমি বাংলাদেশী আমার প্রাণের আবেশ বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়েও ভালবাসি । ভালবাসি বাংলা ভাষাকে । আমি পড়াশুনা করেছি তড়িৎ প্রোকৌশল বিদ্যায় । তবে বাংলা সাহিত্য পড়তে ভীষণ ভাল লাগে । আমার ভাললাগার মাঝে ভ্রমণ হলো অন্যতম । সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি ঘর ছেড়ে । দু চোখে খুজেফিরি প্রকৃতির সৌন্দর্য । আমি আমার সময় গুলো কাজে লাগায় বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাঝে । নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ভাল লাগে খুব । বিশ্ব জোড়া পাঠ শালা মোর সবার আমি ছাত্র ।

ধন্যবাদ সবাইকে

image.png

image.png

zr7XQBzuvvkjgjjPxunUtP5k84gxgWc4mR8PqdBj5rx8AtXSSugGPwSy7JKyM3rgX4k3arRVPC2wT66DqiAYg2UuYrHpE94NCJsYEnjKP7Erbg.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

সত্যি ছোটবেলায় অনেক বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করেছি। সত্যিই এখন মনে হয় আগের তুলনায় খুব বেশি বাছ পরে। ভাই আপনি খুব সুন্দর করে আপনার বৃষ্টির দিনের অনুভূতিগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনি আপনার ছোটবেলা থেকে শুরু করে সকল বৃষ্টির দিনের অনুভূতিগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।

আমি এখনো চেষ্টা করি বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করার। তবে ব্যাটে বলে মিলে না এর জন্য ভিজতেও পারিনা।

প্রথমে আপনাকে অভিনন্দন জানাই প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণের জন্য। আসলে বৃষ্টির দিনে আমাদের অনেক স্মৃতি থাকে এবং এই প্রতিযোগিতার তা দেখতে পারব। আপনার বৃষ্টি নিয়ে পোস্ট এককথায় দুর্দান্ত হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ আপু। এত যে অনুভুতি মনে ছিল সুপ্ত অবস্থায় তা আমিই ভেবে পাইনি।

মেঘের গর্জন আসলে খুবই ভয়ঙ্কর ছিল । তবু ছোটবেলায় এটা কে তেমন পাত্তা দেওয়া হতো না । কতো খেলেছি ফুটবল মাঠে মেঘের গর্জনকে নিয়ে সাথে । আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া । ভালো লিখেছেন তবে কোডিংয়ের ব্যবহারটা আরেকটু ভালোভাবে করলে আরো সুন্দর হতো পোস্টটি ।

প্রথমে আমারও এটা নিয়ে ভয় ছিল না। তারপর বিভিন্নরকম গল্প শুনে মনে ভয় ঢুকে গেছিলো।

আপনি অনেক সুন্দর ভাবে বৃষ্টির দিনের অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ।আপনার বৃষ্টির দিনের অনুভূতির কথা শুনে আমার অনেক ভালো লাগলো । আমি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আমাদের এক ক্লাস মেটের পিতা মারা গেল হঠাৎ বজ্রপাতে নিজ বাড়িতেই এমন কথা শুনে খারাপ লাগলো ধন্যবাদ এমন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

বৃষ্টি দিনের অনুভুতি গুলো ছিল আমার মিশ্র প্রকৃতির। আসলে সুখ দুঃখ সব সময় মিলেমিশেই থাকে।

বৃষ্টির দিনে আপনি অনেক চমৎকার একটি অনুভূতির গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন বৃষ্টির দিনের অনুভূতির গল্প পড়তে পেরে খুবই ভালো। চলমান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে বরাবরই অভিনন্দন জানাই। শুভকামনা রইল।

আপনার সুন্দর মতামত এর জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। এই অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতে পেরে আমারও ভাল লাগছে।

আপনি তো দেখছি অনেক সুন্দর অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। বিশেষ করে অনেক দুর্দান্ত একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতার লাইনগুলো কিন্তু বেশ ভালো লেগেছে। এরকম সুন্দর একটা অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। প্রতিযোগিতায় আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

প্রথমে গদ্য আকারে লিখছিলাম পরে দেখছি ছন্দে মিলে যাচ্ছে। আরেকটু ঘসামাজা করে পদ্যের রূপ দিয়েছি। 🙂

বৃষ্টির দিন সবার জীবনেই কিছু স্মৃতি রেখে যায়। কারো হয়তো সুখের কারো হয়তো দুঃখের। আপনার বৃষ্টির দিনের স্মৃতির মুহূর্ত গুলো খুব ভাল লেগেছ। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ''কোন এক বৃষ্টি স্নাত দিনে দুজনে এক সাথে ভিজবো । চিবুকের উপরে তার ছড়িয়ে থাকা এলো চুল বেয়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা গুলো আমি মাটিতে পড়তে দেখবো । সে হবে আমার বৃষ্টির দিনে সেরা অনুভূতি ।'' এই কাব্যিক লাইন গুলো ভাল লেগেছে। এভাবেই লিখে যান। আপনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।

বৃষ্টি নিয়ে আমার দু'রকম অনুভুতিই ছিল দেখি মনের মাঝে। লিখতে বসতেই সব বেরিয়ে এলো একে একে। আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য।