আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ২২ | শেয়ার করো তোমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি By-@marufhh

in hive-129948 •  2 years ago  (edited)
আজ বৃহস্পতিবার

১লা সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং || ১৭ই ভাদ্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ || ৩রা সফর ১৪৪৪ হিজরি ।

আসসালামু আলাইকুম

প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ, আশাকরি মহান আল্লাহতালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন । আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি ।

WhatsApp Image 2022-09-01 at 9.28.39 AM.jpeg

"মোবাইল" দিনে দিনে যে পণ্যটি হয়ে উঠেছে একজন মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ । এখন যেন একটা দিন এই মোবাইল ছাড়া চিন্তাও করা যায় না । প্রতিদিনের ব্যবহার্য থেকে শুরু করে শখের পণ্য যে যাভাবেই গ্রহণ করুক না কেন । সবার হাতেই এক বা একাধিক এখন শোভা পাচ্ছে স্বগর্ভে । আজ থেকে ২০ বছর আগেও যা ছিল সাধারনের জন্য কল্পনা অতীত আজকের দিনে তা এখন খেলনা সামগ্রীই প্রায় । আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে চলেছি ।

আমার বাংলা ব্লগ(12).jpg

এক সময় টিভি নাটক কিংবা সিনেমাতে দেখা মিলতো মোবাইল ফোনের । বাইরে কারো হাতে দেখবো এটা আমার চিন্তার ও বাইরে । তবে চিন্তার ভেতরে প্রবেশ করতে বেশী সময় লাগেনি । ২০০২ সালে আমার একজন প্রতিবেশি চাচাতো ভাই মোবাইল কিনে ফেললো । মোটামুটি এলাকায় একটা উৎসব উৎসব ভাব । জানিনা এর আগে কেউ ছিল কিনা আমাদের গ্রামে মোবাইল ফোনের মালিক । কারণ আমার জানাশোনার পরিধি ছিল খুবই কম । তবে চাচাতো ভাই যখন ফোন কিনলো আমি দেখার সুযোগ পেলাম সেই প্রথম বারের মত । সাধারণ ভাবেই তখন মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়ার কথা না । তাই বিশাল বড় একটি বাশের মাথায় এন্টেনা লাগিয়ে ঘরে বসে মোবাইল ব্যাবহারের প্রচেষ্টা ছিল আবশ্যক এবং আয়োজন তেমনি ছিল । সেই বছরেই আমার ছোট ফুপু চাকরীর উদ্দেশ্যে সিলেটে চলে যায় । আর আমাদের বাড়িতে মোবাইল ফোনের ও যেন প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । মাঝে মাঝে আমার আব্বু চাচা বাড়ি যেয়ে আন্টির সাথে কথা বলে আসতো । জানতে পেলে আমরাও চলে যেতাম পিছু পিছু । এন্টেনা ছাড়া কথা বলার প্রয়োজন পড়লে চলে যেতে হত বাড়ির পাশের বিস্তির্ণ মাঠে । এমনি এক দিন বিকেলে প্রথম বারের মত ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম । ২ মিনিট ছোট ফুপুর সাথে কথা বলতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার ।

এরপর পার হয়ে গেছে আরো দুই বছর এরপরে ছোট ফুপু ফোন কিনে বাড়িতে এলো । আমার দেখে সেই কি আনন্দ । প্রথম চেষ্টা সাপ খেলা শিখতে হবে । কিন্তু আফসোস এর বিষয় আন্টি কয়েকবার চেষ্টা করেও গেম পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলো না । দুইদিন পরে অবশ্য ছোট ফুপা এসে আন্টিকে হাল্কা বকাঝকা করে খেলা পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছানো যায় সেইটা ভাল মত শিখিয়ে দিয়ে গেল । আমরাও সেবার ঈদের ছুটির বাকি দিন গুলো সাপখেলে পার করে দিলাম । নোকিয়ার বিখ্যাত সেই ১১০০ মডেলের মোবাইল ফোনে । এরপর ছোট কাকু ফোন কিনলো আব্বু তার ও পরে কিনলো নোকিয়ার ১৬০০ মডেলের একটি ফোন । আমিও সাথে আপডেট হয়ে সাপ খেলা থেকে ফুটবল ক্রিকেটে প্রমোশন নিলাম । তবে আব্বুর ফোনে খেলা ছিল চুপি চুপি দেখলেই খবর আছে । এমনি একদিন চুপিসারে খেলতে গিয়ে কোথা থেকে কিভাবে যেন ফোনে একমাত্র গ্রামীন ফোন সিমটি নষ্ট করে ফেললাম । তবে কেউ যেহেতু আমার ফোন হাতে দেখেনি । তাই চুপচাপ যেভাবে রাখা ছিল সেভাবেই রেখে চলে এলাম ।

২০০৬ এর মাঝমাঝিতে আমাদের গ্রামে যে ফোনটা প্রচুর পরিমাণে মানুষের হাতে ছড়িয়ে পড়লো তা হলো স্প্রিন্ট এর ব্রাউন কালারের অডিও ভিডিও হ্যান্ডসেটটি । আমার সাথে সাথে আব্বু কিছুটা আফসুস করলো আর কয়েকদিন অপেক্ষা করলে কয়েক হাজার টাকা বাজেট বাড়িয়ে সাধারণ ফোনের পরিবর্তে মাল্টিমিডিয়া এসেম্বল সহ একটি টেকসই ফোন পাওয়া যেত । ততদিনেও আমার নিজের একটা ফোন থাকবে এমন ভাবনা মনে জায়গা পায়নি । তবে ২০১০ নে এসে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি আসার মত না চাইতেই অনেক বড় একটি উপহার পাওয়ার ঘোষণা পেলাম । ছোট মামা সিঙ্গাপুর থেকে বাড়ি আসছে এবন আমার জন্য একটি ফোন ও কিনেছে । আমি এখন অপেক্ষার প্রহর গুণি ।


দিনে দিনে যায় মামা বাড়ি আসার সময় ঘনিয়ে আসে । মামা এলো ফোন ও নিয়ে আসলো তবে একদিন পার হয়ে গেলেও আমার ফোন হাতে এসে পৌছালো না । মামা দুই মাস বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে চলে গেল তার পরেও ফোন আমার হাতে এলো না । ভাবলাম আব্বু মামাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়ে আসতে গেছে । আসার সময় হয়তো নিয়ে আসবে । আমার সেই চিন্তাও বাস্তবতার সাথে মিলল না ।


অবশেষে রাগে ক্ষোভে চোখে অন্ধকার দেখতে পেলেও হাসি মুখ নিয়ে নানাবাড়ি ত্যাগ করলাম । তবে সারাদিন আর বাড়ি ফিরলাম না । এদিক ওদিক ঘুরে সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরলাম । এরপরে ত ফোনের কথা ভুলেই গেলাম । মনে মনে এই ভেবে শান্তনা পেলাম ভাগ্যিস বন্ধু মহলে আমার ফোন প্রাপ্তির অগ্রিম সংবাদ আগে থেকে ছড়িয়ে পড়েনি । নতুবা লজ্জার এক শেষ অবস্থা হত ।


কিছুদিন পরে এস এস সি পরিক্ষা শুরু হলো পরিক্ষা শেষ হতেই পুর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আমি সিলেটের উদ্দশ্যে রওনা হয়ে গেলাম । উদ্দেশ্য পরিক্ষার পরের ছুটিটা ওখানেই কাটিয়ে আসবো সাথে ফুপুর কম্পিউটার থেকে কিছুটা শিখে নেওয়া কম্পিউটার সম্পর্কিত প্রাথমিক বিষোয় গুলো । কয়েকদিন বেশ ভালই যাচ্ছিলো সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে । কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না । কারণ আব্বু বাড়ি থেকে জানালো মামা আমার জন্য ফোন পাঠিয়েছে । আর সেই ফোন দিয়েই আব্বু আমার সাথে কথা বলছে । আমাকে আর কে পায় আমি অপেক্ষায় রইলাম ফুপু কখন অফিস থেকে বাসায় আসবে । পারলে আমি এখনি রওনা হয়ে যায় । তবে সেই দিনটা কোন রকম পার করে চলে এলাম । মাঝের একটা দিনের জার্নি যেন আমার একেটা বছরের সমান মনে হচ্ছিলো ।


বাড়িতে এসেই ফোন হাতে নিয়ে সে কি আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় । প্রথম নিজের মোবাইল পেলাম । সেইটিও বন্ধু মহল এবং নিকটতমদের মাঝে দামী ত বটেই আবার নামী কোম্পানীর আর সেই সময়ের বেস্ট ক্যামেরা ত আছেই । সারাদিন যেন ছবি তুলে বেড়াতে মন চাই । এই মোবাইলটি আমি ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবহার করেছি । রিবন কেটে যাওয়া এবং বাজারে এন্ড্রয়েট ভার্সনের ফোনের ছড়াছড়িতে আমার প্রথম মোবাইলের সাথে আমার সম্পর্কের অটুট বন্ধনে কিছুটা ছেদ পড়ে গেছে । তবে ৫ বছরের কত শত স্মৃতি জমা রয়েগেছে তার পুরোটা মেমোরি জুড়ে । আমার প্রথম জি মেইল একাউন্ট। প্রথম ফেসবুক, প্রথম টুইটার সবের শুরু এই ফোনেই । আমার প্রথম মোবাইল সনি এরিকসন ডাব্লিউ ৭০৫ । যা এখনো যত্ন করে আলমারীতে তুলে রেখে দিয়েছি ।

IMG_২০২২০৮৩১_২২৪৮৪৩.jpgIMG_২০২২০৮৩১_২২৪৮৫৩.jpg
Mobile name Sony Ericsson
তৎকালীন মূল্য ৩০০ ইউএসডি
মডেল নেম w705
ক্যামেরাঃ 3.2mp
ফ্রন্ট ক্যামেরাঃ ভিজিএ
ধরণ স্লাইড
রঙ খয়েরি এবং কালো
ফোন মেমোরি ৫১২ মেগাবাইট
এক্সটারনাল মেমোরি ৪গিগা বাইট
IMG_২০২২০৮৩১_২২৪৯০৬.jpgIMG_২০২২০৮৩১_২২৪৯২৪.jpg

প্রিয় বন্ধুরা "আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ২২ | শেয়ার করো তোমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি" উপলক্ষে আমার প্রথম মোবাইল ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে । তবে ফোন হাতে পাওয়ার পরের অনুভুতি গুলো আসলেই খুব সুখকর ছিল । আমার জীবনের এক সময়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল । তাই রেখেদিয়েছি । এরপরে অনেক গুলো ফোন ইউজ করেছি । সামনের দিন গুলোতে হয়তো নামী দামী অনেক ফোন ব্যবহার করবো । কিন্তু প্রথমটির স্থান সব সময় সবার উপরেই রয়ে যাবে । ধন্যবাদ সবাইকে ।

আল্লাহ্‌ হাফেজ
ধন্যবাদান্তে @maruffhh
ফটোগ্রাফি ডিভাইসঃ mobile
মোবাইল নেমঃ redmi 6a
ক্যামেরাঃ 8mp

আমার পরিচয়

IMG_20170303_142442.jpg

আমার নাম মারুফ হাসান । আমি বাংলাদেশী আমার প্রাণের আবেশ বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়েও ভালবাসি । ভালবাসি বাংলা ভাষাকে । আমি পড়াশুনা করেছি তড়িৎ প্রোকৌশল বিদ্যায় । তবে বাংলা সাহিত্য পড়তে ভীষণ ভাল লাগে । আমার ভাললাগার মাঝে ভ্রমণ হলো অন্যতম । সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি ঘর ছেড়ে । দু চোখে খুজেফিরি প্রকৃতির সৌন্দর্য । আমি আমার সময় গুলো কাজে লাগায় বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাঝে । নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ভাল লাগে খুব । বিশ্ব জোড়া পাঠ শালা মোর সবার আমি ছাত্র ।

ধন্যবাদ সবাইকে

zr7XQBzuvvkjgjjPxunUtP5k84gxgWc4mR8PqdBj5rx8AtXSSugGPwSy7JKyM3rgX4k3arRVPC2wT66DqiAYg2UuYrHpE94NCJsYEnjKP7Erbg.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!