প্রাণ প্রিয় বন্ধুগণ, আশাকরি মহান আল্লাহতালার অশেষ রহমতে সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন । আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি ।
"মোবাইল" দিনে দিনে যে পণ্যটি হয়ে উঠেছে একজন মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ । এখন যেন একটা দিন এই মোবাইল ছাড়া চিন্তাও করা যায় না । প্রতিদিনের ব্যবহার্য থেকে শুরু করে শখের পণ্য যে যাভাবেই গ্রহণ করুক না কেন । সবার হাতেই এক বা একাধিক এখন শোভা পাচ্ছে স্বগর্ভে । আজ থেকে ২০ বছর আগেও যা ছিল সাধারনের জন্য কল্পনা অতীত আজকের দিনে তা এখন খেলনা সামগ্রীই প্রায় । আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে চলেছি ।
এক সময় টিভি নাটক কিংবা সিনেমাতে দেখা মিলতো মোবাইল ফোনের । বাইরে কারো হাতে দেখবো এটা আমার চিন্তার ও বাইরে । তবে চিন্তার ভেতরে প্রবেশ করতে বেশী সময় লাগেনি । ২০০২ সালে আমার একজন প্রতিবেশি চাচাতো ভাই মোবাইল কিনে ফেললো । মোটামুটি এলাকায় একটা উৎসব উৎসব ভাব । জানিনা এর আগে কেউ ছিল কিনা আমাদের গ্রামে মোবাইল ফোনের মালিক । কারণ আমার জানাশোনার পরিধি ছিল খুবই কম । তবে চাচাতো ভাই যখন ফোন কিনলো আমি দেখার সুযোগ পেলাম সেই প্রথম বারের মত । সাধারণ ভাবেই তখন মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়ার কথা না । তাই বিশাল বড় একটি বাশের মাথায় এন্টেনা লাগিয়ে ঘরে বসে মোবাইল ব্যাবহারের প্রচেষ্টা ছিল আবশ্যক এবং আয়োজন তেমনি ছিল । সেই বছরেই আমার ছোট ফুপু চাকরীর উদ্দেশ্যে সিলেটে চলে যায় । আর আমাদের বাড়িতে মোবাইল ফোনের ও যেন প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । মাঝে মাঝে আমার আব্বু চাচা বাড়ি যেয়ে আন্টির সাথে কথা বলে আসতো । জানতে পেলে আমরাও চলে যেতাম পিছু পিছু । এন্টেনা ছাড়া কথা বলার প্রয়োজন পড়লে চলে যেতে হত বাড়ির পাশের বিস্তির্ণ মাঠে । এমনি এক দিন বিকেলে প্রথম বারের মত ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম । ২ মিনিট ছোট ফুপুর সাথে কথা বলতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার ।
এরপর পার হয়ে গেছে আরো দুই বছর এরপরে ছোট ফুপু ফোন কিনে বাড়িতে এলো । আমার দেখে সেই কি আনন্দ । প্রথম চেষ্টা সাপ খেলা শিখতে হবে । কিন্তু আফসোস এর বিষয় আন্টি কয়েকবার চেষ্টা করেও গেম পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলো না । দুইদিন পরে অবশ্য ছোট ফুপা এসে আন্টিকে হাল্কা বকাঝকা করে খেলা পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছানো যায় সেইটা ভাল মত শিখিয়ে দিয়ে গেল । আমরাও সেবার ঈদের ছুটির বাকি দিন গুলো সাপখেলে পার করে দিলাম । নোকিয়ার বিখ্যাত সেই ১১০০ মডেলের মোবাইল ফোনে । এরপর ছোট কাকু ফোন কিনলো আব্বু তার ও পরে কিনলো নোকিয়ার ১৬০০ মডেলের একটি ফোন । আমিও সাথে আপডেট হয়ে সাপ খেলা থেকে ফুটবল ক্রিকেটে প্রমোশন নিলাম । তবে আব্বুর ফোনে খেলা ছিল চুপি চুপি দেখলেই খবর আছে । এমনি একদিন চুপিসারে খেলতে গিয়ে কোথা থেকে কিভাবে যেন ফোনে একমাত্র গ্রামীন ফোন সিমটি নষ্ট করে ফেললাম । তবে কেউ যেহেতু আমার ফোন হাতে দেখেনি । তাই চুপচাপ যেভাবে রাখা ছিল সেভাবেই রেখে চলে এলাম ।
২০০৬ এর মাঝমাঝিতে আমাদের গ্রামে যে ফোনটা প্রচুর পরিমাণে মানুষের হাতে ছড়িয়ে পড়লো তা হলো স্প্রিন্ট এর ব্রাউন কালারের অডিও ভিডিও হ্যান্ডসেটটি । আমার সাথে সাথে আব্বু কিছুটা আফসুস করলো আর কয়েকদিন অপেক্ষা করলে কয়েক হাজার টাকা বাজেট বাড়িয়ে সাধারণ ফোনের পরিবর্তে মাল্টিমিডিয়া এসেম্বল সহ একটি টেকসই ফোন পাওয়া যেত । ততদিনেও আমার নিজের একটা ফোন থাকবে এমন ভাবনা মনে জায়গা পায়নি । তবে ২০১০ নে এসে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি আসার মত না চাইতেই অনেক বড় একটি উপহার পাওয়ার ঘোষণা পেলাম । ছোট মামা সিঙ্গাপুর থেকে বাড়ি আসছে এবন আমার জন্য একটি ফোন ও কিনেছে । আমি এখন অপেক্ষার প্রহর গুণি ।
দিনে দিনে যায় মামা বাড়ি আসার সময় ঘনিয়ে আসে । মামা এলো ফোন ও নিয়ে আসলো তবে একদিন পার হয়ে গেলেও আমার ফোন হাতে এসে পৌছালো না । মামা দুই মাস বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে চলে গেল তার পরেও ফোন আমার হাতে এলো না । ভাবলাম আব্বু মামাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়ে আসতে গেছে । আসার সময় হয়তো নিয়ে আসবে । আমার সেই চিন্তাও বাস্তবতার সাথে মিলল না ।
অবশেষে রাগে ক্ষোভে চোখে অন্ধকার দেখতে পেলেও হাসি মুখ নিয়ে নানাবাড়ি ত্যাগ করলাম । তবে সারাদিন আর বাড়ি ফিরলাম না । এদিক ওদিক ঘুরে সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরলাম । এরপরে ত ফোনের কথা ভুলেই গেলাম । মনে মনে এই ভেবে শান্তনা পেলাম ভাগ্যিস বন্ধু মহলে আমার ফোন প্রাপ্তির অগ্রিম সংবাদ আগে থেকে ছড়িয়ে পড়েনি । নতুবা লজ্জার এক শেষ অবস্থা হত ।
কিছুদিন পরে এস এস সি পরিক্ষা শুরু হলো পরিক্ষা শেষ হতেই পুর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আমি সিলেটের উদ্দশ্যে রওনা হয়ে গেলাম । উদ্দেশ্য পরিক্ষার পরের ছুটিটা ওখানেই কাটিয়ে আসবো সাথে ফুপুর কম্পিউটার থেকে কিছুটা শিখে নেওয়া কম্পিউটার সম্পর্কিত প্রাথমিক বিষোয় গুলো । কয়েকদিন বেশ ভালই যাচ্ছিলো সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে । কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না । কারণ আব্বু বাড়ি থেকে জানালো মামা আমার জন্য ফোন পাঠিয়েছে । আর সেই ফোন দিয়েই আব্বু আমার সাথে কথা বলছে । আমাকে আর কে পায় আমি অপেক্ষায় রইলাম ফুপু কখন অফিস থেকে বাসায় আসবে । পারলে আমি এখনি রওনা হয়ে যায় । তবে সেই দিনটা কোন রকম পার করে চলে এলাম । মাঝের একটা দিনের জার্নি যেন আমার একেটা বছরের সমান মনে হচ্ছিলো ।
বাড়িতে এসেই ফোন হাতে নিয়ে সে কি আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় । প্রথম নিজের মোবাইল পেলাম । সেইটিও বন্ধু মহল এবং নিকটতমদের মাঝে দামী ত বটেই আবার নামী কোম্পানীর আর সেই সময়ের বেস্ট ক্যামেরা ত আছেই । সারাদিন যেন ছবি তুলে বেড়াতে মন চাই । এই মোবাইলটি আমি ২০১৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবহার করেছি । রিবন কেটে যাওয়া এবং বাজারে এন্ড্রয়েট ভার্সনের ফোনের ছড়াছড়িতে আমার প্রথম মোবাইলের সাথে আমার সম্পর্কের অটুট বন্ধনে কিছুটা ছেদ পড়ে গেছে । তবে ৫ বছরের কত শত স্মৃতি জমা রয়েগেছে তার পুরোটা মেমোরি জুড়ে । আমার প্রথম জি মেইল একাউন্ট। প্রথম ফেসবুক, প্রথম টুইটার সবের শুরু এই ফোনেই । আমার প্রথম মোবাইল সনি এরিকসন ডাব্লিউ ৭০৫ । যা এখনো যত্ন করে আলমারীতে তুলে রেখে দিয়েছি ।
Mobile name | Sony Ericsson |
---|---|
তৎকালীন মূল্য | ৩০০ ইউএসডি |
মডেল নেম | w705 |
ক্যামেরাঃ | 3.2mp |
ফ্রন্ট ক্যামেরাঃ | ভিজিএ |
ধরণ | স্লাইড |
রঙ | খয়েরি এবং কালো |
ফোন মেমোরি | ৫১২ মেগাবাইট |
এক্সটারনাল মেমোরি | ৪গিগা বাইট |
প্রিয় বন্ধুরা "আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ২২ | শেয়ার করো তোমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি" উপলক্ষে আমার প্রথম মোবাইল ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম । আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে । তবে ফোন হাতে পাওয়ার পরের অনুভুতি গুলো আসলেই খুব সুখকর ছিল । আমার জীবনের এক সময়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল । তাই রেখেদিয়েছি । এরপরে অনেক গুলো ফোন ইউজ করেছি । সামনের দিন গুলোতে হয়তো নামী দামী অনেক ফোন ব্যবহার করবো । কিন্তু প্রথমটির স্থান সব সময় সবার উপরেই রয়ে যাবে । ধন্যবাদ সবাইকে ।
ধন্যবাদান্তে | @maruffhh |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইসঃ | mobile |
মোবাইল নেমঃ | redmi 6a |
ক্যামেরাঃ | 8mp |