অর্থই অনর্থের মূল।

in hive-129948 •  last year 

হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@md-razu বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ -২৩ শে অগ্রহায়ণ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ|শুক্রবার | হেমন্ত কাল |

আমি রাজু আহমেদ।আমার ইউজার নাম @md-razu।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।

তাহলে চলুন শুরু করি


breakup-3869065_1280.png


বেলকনিতে দাঁড়িয়ে গ্রিলটা শক্ত হাতে চেপে ধরে আছে তিথী । চোখ দিয়ে অশ্রু গাল বেয়ে ঠোঁটের কোনার ঝরে পড়া রক্তের সাথে মিশে রক্তের ঘনতুটা হালকা করে দিচ্ছে । কিছুক্ষণ আগে তিথীর জামাই রফিক সাহেব তিথীকে দ্বিতীয় বারের মতো মেরে তার ঠোঁট ফাটিয়ে দিয়েছে । অর্থই যে সকল অনর্থের মূল সেটা রফিক সাহেবকে দেখলে স্পষ্টই বোঝা যায় । প্রতি রাতে নেশা করে এসে মাতাল হয়ে তিথিকে পেটানো তার অভ্যাস হয়ে গেছে । এমন কি প্রতি মাসে তিনি দুই তিনবার করে তার পি.এস. চুমকির সাথে অফিসিয়াল ট্যুরে যান । অফিসিয়াল কাজের ভেতর সীমাবদ্ধ নেই সেটা বুঝেও তিথিকে সব মুখ বুজে সহ্য করতে হয় ।


digital-art-398342__340.webp

প্রতিটি দিন তিথীর কাছে বিষের মতো লাগে । শুধুমাত্র ঐশ্বর্যের ভেতরেই যে সব সুখ নেই সেটা সে আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । আজকাল অন্তকে তার খুব মনে পড়ে । ছেলেটা খুবই সাধারণ ছিল , সাধারণ ছিল তার আশা আকাঙ্খা । তিথীকে অন্ত অসম্ভব রকম ভালোবাসত । তিথির সামান্য জ্বর কিংবা মাথা ব্যাথা হলেই পাগলের মতো হয়ে যেত ছেলেটি । সারাক্ষণ সে তিথীর খবর নিতো । তিথীর খুব ইচ্ছা ছিল অন্তকে বিয়ে করার । কিন্তু পড়াশোনা শেষে অন্তর স্বল্প বেতনের চাকুরিতে যে তার পোষাবে না সেটা বুঝতে পেরেই তিথি চুপটি করে সরে পড়েছিল ।


man-2933984__480.webp


তিথির চলে আসার সময় তাকে বলা অন্তর শেষ কথাটা এখনো তিথির বুকে কাঁপুনী ধরিয়ে দেয় । অন্ত বলেছিল , “ তিথী , তুমি চলে যাচ্ছ যাও , তবে ভালোবাসাটাই কি জীবনে সবচেয়ে বড় নয় ? তোমাকে হয়তো আমি ঐশ্বর্যে ভরিয়ে রাখতে পারব না , কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে সারাক্ষণ তোমাকে মাতিয়ে রাখব । দিন শেষে হয়তো তোমাকে এয়ার কন্ডিশনিং গাড়িতে করে কোন চাইনিজ এ নিয়ে যেতে পারব না , কিন্তু রিকসাতে করে কাশবনের পাশের সেই ছোট্ট ফুচকার দোকানটায় নিয়ে খেতে পারব । এক প্লেট ফুচকা তুমি আর আমি মিলে তিথী । " পরম তৃপ্তি নিয়ে ভাগ করে খাব । তবুও আমরা সুখে থাকব তিথীর চোখ দিয়ে অশ্রু ক্রমাগত ঝড়েই চলেছে । আজতিথীর এয়ারকন্ডিশনিং গাড়ি এবং বিলাসবহুল বাড়ি সবই আছে । তবে শুন্যতা শুধু এক টুকরো ভালোবাসার । অন্তর কথাই ঠিক । জীবনে ভালবাসার চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই । আজ তিথীর ইচ্ছা করে কোন উত্তপ্ত দুপুরে রিকশার হুড ফেলে দিয়ে অন্ত্রর সাথে ঘুরতে ।
heartsickness-428103__480.jpg

রৌদ্রের উত্তাপে ঘাম তিথীর কপালে বেয়ে পড়বে আর অস্ত্র সস্তা টিসু পেপার দিয়ে পরম যত্নে সেটা মুছে দেবে । এ সময় রাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে , জনজীবনের ব্যস্ততা কমে প্রকৃতি নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে ।


girl-2934257__480.webp


প্রতিদিন দুরের ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে একটি মানুষ তিথীর দিকে তাকিয়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে সিগারেট ফুঁকে । ল্যাম্পপোস্টের আলোতে তার ঠোটের কোণে ফুটে ওঠা তাচ্ছিল্য ভরা হাসির রেখা তিথীর বুকের আগুনটাকে ক্রমশ উস্কে দেয় । এই হাসিটা তিথীর খুব পরিচিত । তবে পার্থক্য একটাই , এই হাসিতে আর আগের সেই ভালোবাসা নেই । আছে শুধু ঘৃনা আর তাচ্ছিল্য ।


ধন্যবাদ সবাইকে

standard_Discord_Zip.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png

আসলে এটা কিন্তু ঠিক, অর্থই হচ্ছে অনর্থের মূল কারণ। তিথী যদি অন্তর সাথে বিয়ে করতে তাহলে হয়তো সে সুখে থাকতে পারতো এবং তার কাছ থেকে ভালোবাসা পেত। এয়ারকন্ডিশনিং গাড়িতে চড়তে না পারলেও, রিকশায় চড়ে হলেও তারা সুখে থাকতো। আপনি অনেক সুন্দর করে পুরো গল্পটা লিখেছেন। যেটা আমার কাছে সত্যি খুব ভালো লেগেছে। পুরো গল্পটা অনেক সুন্দর করেই লিখেছেন আপনি। আপনার পুরো গল্পের মাধ্যমে একটি বিষয় অনেক সুন্দর ভাবেই ফুটে উঠেছে, যেটা হচ্ছে অর্থই অনর্থের মূল।

অর্থ সম্পদের কাছে প্রকৃত ভালোবাসা হেরে যায়। তিথি অর্থের লগে অন্তুকে ভালো বেসে বিয়ে করতে পারেনি। প্রকৃত ভালবাসলে অবশ্যই তার হাত ধরে চলে যেত। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য।

অর্থ দিয়ে কখনোই সুখে থাকা সম্ভব হয় না। সুখে থাকার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা। তিথী নিজের জীবনে অনেক বড় একটা ভুল করেছে। তার এই ভুল কখনোই সে শোধরাতে পারবে না। অন্তর শেষ কথাগুলোই সত্য ছিল। এগুলো যদি
তিথী মেনে নিয়ে তার জীবনে আসতো এবং তাকে বিয়ে করতে, হয়তো সে জীবনে অনেক বেশি সুখী হতো। হয়তো বিলাসবহুল পাবে জীবন কাটাতে পারতো না, তবে ছোট্ট একটা ঘরে ভালোই সুখ থাকতো। অনেক সুন্দর করেই পুরো পোস্টটা লিখেছেন আপনি। আর এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।

আপনি ঠিকই বলেছেন ভাইয়া অর্থ দিয়ে কোন সময় সুখ কেনা যায় না। হয়তো সে দামি গাড়িতে করে ঘুরতে পারবে কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা কখনোই পাবে না। গঠনমূলক মতাম ত প্রকাশের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

অর্থ দিয়ে যদি সুখ কেনা যেত তাহলে সবার আগে আমিই একবার চেষ্টা করে দেখতাম। তাই আমার মনে হয় তিথিও ভুল করেছিল। তিথি অর্থের মাঝেই ভালোবাসা খুঁজে বেড়িয়েছে। কিন্তু তিথি একটি বারও বুঝতে চায়নি অন্তরের মনের ভালোবাসার কথা। সব মিলিয়ে আপনার আজকের গল্পটি অসাধারন ছিল ভাইয়া।

অর্থ দিয়ে কখনো ভালোবাসা কেনা যায় না। তিথি অর্থের জন্য অন্তরকে ভালোবেসে বিয়ে করতে পারেনি। আসলে তার ভালোবাসা প্রকৃত ভালোবাসা ছিল না। গল্পটি পড়ে সুন্দর মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। অন্তরের জীবন থেকে তিথির সরে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে অন্যায় হয়েছে। তিথি শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে যে অর্থ থাকলেই সুখ থাকে না। কিন্তু তিথি ও অন্তরের সেই আগের সম্পর্কটা আর নেই। আসলে এরকম ভাবে অনেক মানুষ আছে যারা অর্থ সম্পদের জন্য পরম স্বজনকে ত্যাগ করে দেয়। যেটা শতভাগ অন্যায়।

প্রকৃতভাবে ভালবাসলে কখনোই তিথি অন্তরের হাত ছেড়ে যেত না। সে অর্থ সম্পর্কে ভালবেসে অনেক বড় ভুল করেছে। গল্পটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করেছেন যা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।