আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি।।

in hive-129948 •  2 years ago 
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আমি আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাই ২০০৬ সালে। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনে সেই প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি শেয়ার করব।

motorola-talkr-walk-n-talk-3781021_1920.jpg

সোর্স

আমি খুব কঞ্জারভেটিভ ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি। কঞ্জারভেটিভ বলতে আমার আব্বা ছোট বেলা থেকেই আমাকে খুব শাসনের মধ্যে রাখাতে ফ্যামিলির বাইরে তেমন কারো সাথে মেলামেশা করা হতনা। এতটাই শাসনে রাখতেন যে আব্বা যখন প্রথম মোবাইল কিনেন আমাকে ধরতেই দেননি এই মনে করে যে আমি যদি আবার ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে যাই বা কাওকে কল দিয়ে দেই (যদিও এখনকার ফোনের মত আসক্তির জন্য তেমন কিছুই ছিল না)। আমি তখন এস এস সি পরিক্ষার্থী। এইচ এস সি ও পার করলাম কিন্তু ফোন আর চালাতে পারলাম না। হা মাঝে মাঝে যে লুকিয়ে মোবাইল ধরিনি তা না। কলেজে উঠার পর কয়েকজন বন্ধুর হাতে মোবাইল দেখে মোবাইল চালানোর ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু আব্বারটাই ধরতে পারলাম না এখনো নিজের মোবাইল ত সপ্নের বেপার।

যাই হোক ৩ বছর কেটে গেল। এইচ এস সি পাস করে কুমিল্লা থেকে ঢাকা এসেছি ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার জন্য। ভর্তি হয়েছি এবং আমি উঠেছি আমার মেজ মামার বাসায়। মামার বাসা থেকে গিয়ে ক্লাশ করতাম। ইউনিভার্সিটিতে দেখি সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। এমন ও হয়েছে দু একজন আমাকে বলেছে ইউনিভার্সিটিতে পড় অথচ মোবাইল নাই? প্রথম প্রথম অত খারাপ লাগত না। বাড়ির জন্য আমার খুব খারাপ লাগত কিন্তু মোবাইল না থাকার কারনে আব্বা আম্মা কারও সাথে কথা বলতে পারতাম না। কয়েকদিন পর পর মামার মোবাইল দিয়ে ২-৩ মিনিট কথা হত (কল রেট অনেক বেশি ছিল)। আমার বাড়ির জন্য খারাপ লাগা, বন্ধুদের অপমান সব মিলিয়ে মনে মনে রাগ বারতে থাকল এই ভেবে যে আমার কেন মোবাইল নেই, মোবাইল থাকলেত এইসব ঝামেলা ফেস করতে হত না। এর মাঝে দু একদিন রাস্তা ভুলে অন্য দিকে চলে গিয়েছি পরে ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে করতে বাসায় এসেছি। মামা এই ঘটনা শুনে বলে তোমার আব্বা কে বল একটা মোবাইল কিনে দিতে। তুমি রাস্তা ভাল করে চিন না, হারিয়ে গেলে পরে আরেক বিপদ হবে। একটা সেমিস্টার পার করে ফেললাম মোবাইল ছাড়া।

ফাইনালি আমি আম্মা কে বললাম যে আমার মোবাইল লাগবে এভাবে আর চলা যাচ্ছে না। আম্মা বললেন তোমার আব্বা ত কখনো রাজি হবে না। আমি বললাম আমি জানি না আমার মোবাইল লাগবেই তা না হলে ক্লাশ করব না (আব্বার নজরদারির বাহিরে চলে আসাতে সাহস বেড়ে গিয়েছিল)। আম্মা বললেন আমি তোমার আব্বার সাথে কথা বলে দেখি। পরের দিন আম্মা আমার সাথে কথা বললেন মামার মোবাইল দিয়ে। বললেন তোমার আব্বা শুনে অনেক রেগে গেছে, বলেছে এখনো মোবাইল কিনার সময় হয়নি। আমি কিছুতেই মানতে নারাজ আর আম্মাকে এক প্রকার কেদেই বললাম আমি রাস্তা ভুলে হারিয়ে গেলে তখন আর খুজতে আসবা না (সত্যিই আমি প্রথম যেদিন রাস্তা ভুলে গিয়েছি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম)। আম্মা ত আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন। আম্মা বললেন আমাকে কিছুদিন সময় দাও দেখি কি করা যায়। আমিও কেদে কেদে ফোন রেখে দিলাম। এইখানে বলে রাখি মামা চাইলেই আমাকে ফোন কিনে দিতে পারত কিন্তু আব্বাকে আসলে মামাও ভয় পেত তাই আব্বা যদি খারাপভাবে নেয় এই ভেবে মামা আমাকে ফোন কিনে দেয়নি।

আম্মা কয়েকদিন পর মামার মোবাইল দিয়ে আমাকে বললেন আমি তোমার আব্বাকে রাজি করাতে পারিনি তোমার আব্বা কিছুতেই তোমাকে মোবাইল দিবে না। আমি তোমার মামাকে বলেছি তোমাকে একটি মোবাইল কিনে দিবে কিন্তু আমার ২ টি শর্ত মানতে হবে। একটি হচ্ছে মোবাইল দিয়ে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তোমার আব্বাকে এখনি মোবাইলের কথা বলা যাবে না। আমি এক লাফ দিয়ে ইয়াহু বলে রাজি হয়ে গেলাম। ঐদিনের পর থেকে প্রতিটি ন্যানোসেকেন্ড আমি হিসেব করছিলাম কখন মোবাইল আসবে। কয়েকদিন হয়ে গেল মামা আর মোবাইল কিনে দিচ্ছে না, এদিকে আম্মার সাথেও কথা হচ্ছে না। মামাকে জিজ্ঞেস করতেও লজ্জা লাগছিল।

একদিন বিকেলে বাসায় শুয়ে আছি এমন সময় মামা এসে আমাকে ডাকলেন। মামার কন্ঠ শুনে দড়জা খুললাম। মামা কিছুক্ষণ কথা বলে একটি ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। ব্যাগ হাতে পেয়ে আমি রীতিমত লাফিয়ে উঠলাম যদিও পরে লজ্জা লেগেছে মামার সামনে লাফিয়েছি চিন্তা করে। মামা চলে যাওয়াতে দরজা বন্ধ করে কিছুক্ষণ দম নিলাম। তারপর ব্যাগ খুলে মোবাইলের বাক্স খুললাম। তারপর সেই কাংখিত মোবাইল হাতে নিলাম। মোবাইলটি ছিল মটোরোলা কোম্পানির এবং মডেল হচ্ছে Motorola ROKR E1। মোবাইল উল্টে পাল্টে কয়েকবার করে দেখলাম। এটি একটি বাটন সেট। এখন মোবাইল কি করতে হবে তাতো জানিনা।মামা যেহেতু জানে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম। মামা বললেন ১২ ঘন্টা চার্জ দিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে। আমি চার্জে দিয়ে মোবাইলের সাথে থাকা কাগজগুলো দেখছিলাম। ঐদিন আর মোবাইল ব্যবহার করতে পারিনি।পরদিন সকালে মোবাইল লকারে তালা দিয়ে ক্লাশে চলে গেলাম। গিয়ে বন্ধুদের মোবাইলের বেপারে বলেছি। তারাও শুনে অনেক খুশি হয়েছে। মোবাইল দেখতে চাইলে বললাম আগামিকাল দেখাব। সেদিন আর ক্লাশে মন বসছে না। ক্লাশ শেষে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে মোবাইল লকার থেকে বের করে প্রথম সুইচ অন করলাম। অন হওয়ার টোন শুনে মন আনন্দে নেচে উঠল। অন করে কিছুই বুজতেছিলাম না। ভয়ে উল্টা পাল্টা চাপি না যদি মোবাইল নষ্ট হয়ে যায়। পরে মামা বিকেলে এসে আমাকে মোবাইলের যে জিনিসগুলো দরকার সেগুলো বুঝিয়ে দিলেন। আমি সব বুঝতেছিলাম না তাই কিছু জিনিস লিখে রাখলাম। ঐদিন আর কোন পড়াশোনা নাই। মোবাইলের ফাংশন বুঝা নিয়ে ব্যস্ত। কখন যে অনেক রাত হয়ে গেল টেরই পাইনি। যাই হোক পরদিন বন্ধুদের মোবাইল দেখাব এই আনন্দে সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম মোবাইল সাথে নিয়ে। বাসে উঠার আগে, বাসে উঠে, বাস থেকে নামার সময় যথেষ্ট সচেতন ছিলাম কোন পকেটমার যেন মোবাইল নিয়ে না যেতে পারে। ক্লাশরুমে বন্ধুদের দেখানোর পর তারা খুশি হল। ক্লাশ শেষে অবশ্য তারা ক্যাফে তে মোবাইল কেনা উপলক্ষে খেয়েও নিল। তারপর মোবাইল দিয়ে বন্ধুরা মিলে ছবি তুলেছি যদিও VGA ক্যামেরা তখন ঐ ছবিই আমার কাছে ডি এস এল আর এর মত মনে হয়েছে। সেই রাতে এই মোবাইল দিয়ে আমি ইন্টারনেট ব্রাউজ করেছি, গান শুনেছি, কথা বলেছি, রিংটোন সেট করেছি, গেম খেলেছি যতদুর মনে পড়ে আমি সে রাতে মোবাইল নেড়ে চেড়ে ঘুমিয়েছি ভোরবেলা। আমার মনে আছে আমি একটা দুইটা করে গান ইন্টারনেট থেকে নামিয়ে শুনতে হত। আবার সেই গান ডিলিট করে পরবর্তী গান নামাতে হত যেহেতু পর্যাপ্ত মেমোরি ছিল না। এই মোবাইল দিয়ে অবশ্য মেয়েদের সামনে শো অফ ও করেছি। যাই হোক এই ছিল আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি।

একটি কথা বলতে ইচ্ছে করছে- এই মোবাইল ব্যবহারের ৩ মাস পর ইউনিভার্সিটি থেকে উইনার বাস দিয়ে বাসায় আসার সময় আমার প্রিয় মোবাইল ফোনটি পকেটমার নিয়ে যায়।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!