ডাক্তার নিয়ে ভোগান্তি অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস।। পর্ব ০১।। 10% beneficiary to @shy-foxsteemCreated with Sketch.

in hive-129948 •  2 years ago 
আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আমাদের দেশে হসপিটাল এবং ডাক্তার এই দুই নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। আমি অনেকবারই এই দুই জিনিস নিয়ে বেশ ঝামেলায় পরেছিলাম। উদাহরণস্বরূপ যদি বলি বেশ কিছুদিন আগে আমার আম্মাকে নিয়ে এক হসপিটালে এম আর আই করাতে গিয়ে রাত ১০ঃ০০ টার সিরিয়ালের এম আর আই করিয়েছি রাত ২ঃ৩০ এ। এবার চিন্তা করেন আমার আম্মার কি অবস্থা হয়েছিল, আমার কথা ত বাদই দিলাম। যাই হোক আমি আজ আম্মার সেই এম আর আই এর কোন বেপার নিয়ে বলছি না। আজ আমি রিসেন্টলি ঘটে যাওয়া এক ডাক্তার এবং হসপিটালের বিড়ম্বনার পর অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছিলাম তা নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।


20221009_124207.jpg


আমার মেয়েকে একজন ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকাপের জন্য নিতে হয়। সেই ডাক্তার ধানমণ্ডির একটি বড় হসপিটালে চেম্বার করেন। সেখানে আগে যতবার দেখিয়েছি তেমন বেগ পোহাতে হয়নি। সর্বশেষ সেই ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম প্রায় ৭ মাস আগে। উনি আবার ৬ মাস পর যেতে বলেছিলেন। গত একমাস ধরে সেই হসপিটালের হটলাইনে ফোন দিয়ে উনাকে পাওয়াই যায়না। আসলে ডাক্তারের দোষ বলব না। সেই হসপিটালের নতুন নিয়ম হয়েছে আর তা হচ্ছে সেখানে হটলাইনে সিরিয়াল দিতে হবে (আগে এসিস্ট্যান্ট এর কাছে ফোন দিয়ে সিরিয়াল দিতে হত) এবং হটলাইনে একসাথে ৪০ জন অপারেটর কল রিসিভ করে। আর ফোন দিতে হবে ঠিক বেলা ১১ঃ৪৫ মিনিটে, এক মিনিট আগে পরে দিলে হবে না। গত চার সপ্তাহ ধরে ফোন দিলেই আমাকে বলে স্যার আজকের মত সিরিয়াল নেয়া শেষ। আমি গত সপ্তাহে সিরিয়াল না পেয়ে রীতিমত ফেডাপ হয়ে তাদের কে ইচ্ছমত কতক্ষণ কথা শুনিয়ে দিয়েছি। তারপর চিন্তায় পরে গেলাম সেই ডাক্তারকে তাহলে দেখাব কিভাবে। তখন মনে হল উনার একজন এসিস্ট্যান্ট ছিল তার সাথে কথা বলে দেখি।


20221009_124004.jpg

20221009_123946.jpg

20221009_123920.jpg



মোবাইলের কন্টাক্ট স্ক্রল করে একজনের নাম্বার পেলাম। তার নাম শরীফ। উনাকে ফোন দিতেই উনি ফোন ধরলেন। প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম উনি সেই ডাক্তারের কন্টাক্টে আছেন কিনা। পরে বললেন সেই ডাক্তারের সাথেই কাজ করছেন তবে অন্য হসপিটালে। তখন আমি জানলাম সেই ডাক্তার দুটি হসপিটালে চেম্বার করেন। তারপর সব কথা ডিটেইলস এ উনাকে বলার পর উনি বললেন এখানেও ত ম্যামের অনেক সিরিয়াল থাকে, তবে আমি চেষ্টা করে দেখি কিছু করা যায় কিনা। রাতে শরীফ ভাই (ডাক্তারের এসিস্ট্যান্ট) বললেন হটলাইনে ফোন দিয়ে সিরিয়াল নিয়ে দেখেন পান কিনা। হটলাইন বলাতেই আমার মাথা আবার ঘুরে গেল। উনাকে বললাম আবার হটলাইন? উনি বললেন আগে ফরমালি চেষ্টা করে দেখেন তারপর না হলে আমি দেখি কিছু করা যায় কিনা। ভরসা পেয়ে সেখানে ফোন দেয়ার পর বলা হল সিরিয়াল নেই। বললাম নেক্সট যেকোন একদিন সিরিয়াল দেন। তখন বললেন নেক্সট প্রায় এক মাস সিরিয়াল পাওয়া যাবে না। আপনারা বলেন মানুষ কি তাহলে ডাক্তার দেখাবে না। এখানে বলে রাখি যেহেতু রুটিন ডাক্তার সেক্ষেত্রে চাইলেই আমি ডাক্তার চেঞ্জ করতে পারব না। সাথে সাথে শরীফ ভাইকে ফোন দিয়ে সব বললাম। উনি তখন বললেন ঠিক আছে আপনাকে আমি আগামীকাল জানাচ্ছি।


20221009_105320.jpg


পরদিন শরীফ ভাই নিজ দায়িত্বে আমাকে ফোন দিয়ে বললেন যেহেতু আপনার মেয়ে ম্যামের (ডাক্তার) পুরনো পেশেন্ট এবং আপনি ফলো আপে আসছেন তাহলে আপনি আগামীকাল আসেন আমি রিকোয়েস্ট করে সিরিয়াল নিয়ে দিতে পারি কিনা দেখি। উনি আমাকে পরদিন সকাল ৭ঃ৩ ০ মিনিটে হসপিটালে থাকতে বললেন। যে হসপিটালে যাব সেটা আবার আমার বাসা থেকে মোটামুটি দূরে, সেই শ্যামলী তে। তার মানে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। কোনকিছু চিন্তা না করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিলাম, কারন ডাক্তার হয়ে গিয়েছে সোনার হরিণ। পরদিন সকালে খুব ভোরে উঠে গেলাম। উঠে সবাই রেডি হয়ে একটা উবার ডেকে চলে গেলাম হসপিটালে। তখন বাজে প্রায় সকাল ৭ঃ১০ মিনিট।


20221009_124036.jpg

20221009_111417.jpg

20221009_110947.jpg


অনেক বড় হসপিটাল এবং আমি সন্তুষ্ট। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে বড় হসপিটাল হলেই যে সব ভাল হবে সেরকম ত না। আমিও তাদের সাথে একমত। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোর যা অবস্থা তাতে প্রায় সব জায়গাতেই সমস্যা। এখন আসি বড় হাসপাতালের সন্তুষ্টির বেপারে। আমার মোটামুটি বড় ছোট সব হাসপাতালেই বিচরণ আছে। আমার জরিপে দেখা গিয়েছে বড় হাসপাতালের টেস্টের মেশিনারিজ গুলো কম্পারেটিভলি অনেক ভাল হয় এবং অনেক একুরেট রেজাল্ট দেয়, মেনেজমেন্ট অনেক ভাল হয়, টেস্টিং রিএজেন্ট গুলোর সোর্স ভাল হয়, কেবিন ফেসিলিটি ভাল হয় (এগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত)। শরীফ ভাইকে ফোন দিতেই উনি রিসেপশনের এখানে এসে আমাদের রিসিভ করলেন। আমাকে বললেন একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড করে উপরে গিয়ে (ডাক্তারের চেম্বার দোতলায়) কার্ড জমা দিতে। যাই হোক ঢুকতেই প্রথমে সিকিউরিটির লোকজন টেম্পারেচার মেপে, হ্যান্ড সেনিটাইযার দিয়ে দিয়েছে। তারপর কিউরিসিটির জন্য ফ্লোর ডিরেক্টরিটা এক ঝলক দেখলাম। কিছু তথ্য নিয়ে নিলাম সেখান থেকে। তারপর সোজা চলে গেলাম রেজিস্ট্রেশন এর ওখানে।


20221014_211907.jpg

20221014_211849.jpg


একটি পেপারে কিছু ফরমালিটিজ ফিলআপ করে ১০০ টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে নিলাম তারপর আমাকে একটি রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দিয়ে দিল। কার্ড নিয়ে সোজা চলে গেলাম দোতলায় যেখানে ডাক্তার বসেন। সেখানে গিয়ে কার্ড জমা দিতেই কি যেন এন্ট্রি দিয়ে আমার কাছে ফাইল চেয়ে নিল। ফাইল রেখে আমাকে বসতে বলা হল। তখনো আমার টেনশন হচ্ছে কোন ঝামেলা না হয় যেহেতু ফরমালি আসিনি।


ডিভাইসস্যামসাং
মডেলএ ৫০ এস
ক্রেডিট@miratek
লোকেশন(https://what3words.com/nags.resurgent.shelter)


যেহেতু অনেক লম্বা লেখা তাই আমি দুটি পর্বে লিখেছি। আশা করি আপনারা ধৈর্য সহকারে পরের পর্বও পড়বেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!