গল্প করে, নদীর পানি দেখে, এটা সেটা খেয়ে কখন যে ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট পার হয়ে গেল টেরই পেলাম না। চাদপুর লঞ্চ ঘাট আসার কয়েক মিনিট আগে এনাউন্স করল কিছুক্ষণের মধ্যে চাদপুর ঘাটে লঞ্চ পৌঁছাবে। ঘাটে লঞ্চ পৌঁছাতেই মানুষের ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেল। যেহেতু আমরা দুজনই ছেলে সেহেতু আমাদের তেমন তারাহুরো ছিল না। সবাই যখন নেমে গেল তখন আমরা নেমে নিচে নামলাম। নামার সময় টিকেট কয়েক করিয়ে বের হলাম। বের হতেই দেখি কিছু মাঝি ছোট নৌকায় ইলিশ মাছ সাজিয়ে রেখেছে আর দাম হাকিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করছে।
আমরা ধীরে ধীরে লাইনে দাঁড়িয়ে রাস্তায় চলে এলাম। নেমে অনেক অটো রিকশার ভিড় দেখে অনেকটা পথ হেঁটে সামনে এগিয়ে গেলাম। সেখান থেকে চিন্তা করলাম প্রথমে ইলিশ ঘাটে যাব যেখানে অনেক মাছ পাইকারী দামে বিক্রি হয়। আসলে ঘুরার পাশাপশি ইলিশ কেনাও উদ্দেশ্য ছিল। মাছ বাজার গিয়ে ঢুকে পড়লাম মাছের আড়ৎ এ। এত ইলিশ মাছ দেখে মন ভরে গেল। অনেক আগ্রহ নিয়ে দাম জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু দাম শুনে মন একদম খারাপ হয়ে গেল। ৯০০-৯৯৯ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ এর দাম পিস ১২০০ টাকা এবং ১ কেজির উপর ইলিশ এক দাম ১৬০০ টাকা। পুরো বাজার ঘুরে দেখি মাছের একই অবস্থা। বড় বড় চিংড়ি মাছ দেখে খুব কিনতে ইচ্ছে করল কিন্তু চিংড়িও ইলিশ থেকে কম যায় না মানে অনেক দাম।
বাজার থেকে বের হয়ে কিছুদূর অবস্থিত পার্কের দিকে গেলাম। সেখানে গরম সিঙ্গারার দোকান দেখে বসে পড়লাম। গরম সিঙ্গাড়া মুখে দিতেই খুব ভালো লাগলো। আসলেই সিঙ্গাড়া অনেক মজার ছিল। এর একটি কারণ হচ্ছে বোম্বাই মরিচ। অনেক ঝাল লাগছিল তাই আখের দোকান দেখেই আখের রস খেয়ে নিলাম। আখের রস একদম সবুজ ছিল। বড় ভাইকে বললাম চলেন হরিণা ঘাটে যাই সেখানে সব জ্যান্ত ইলিশ পাওয়া যায় এবং তুলনামূলক কম দাম। একটি সি এন জি নিয়ে সোজা চলে গেলাম বিখ্যাত হরিণা ঘাটে। সেখানে গিয়ে দেখি অল্প কিছু মানুষের ভীড় এবং কয়েকজন আড়ৎদার আছেন। কাছে যেতে দেখি ঢাকা থেকে আগত এক ভদ্রলোক সাদা পাঞ্জাবি গায়ে মাছের দরদাম করছে। উনার দাম দর ফলো করতে গিয়ে দেখি উনি যে মাছ নদী থেকে আসছে সেটাই দাম করে আলাদা রেখে দিচ্ছে। আমি দাম জিজ্ঞেস করতেই মাছ বাজারের সেই একই দাম আমার কাছে চাচ্ছে।
এখানেও এসে হতাশ হয়ে পড়লাম। পাশ থেকে একজন লোক বললেন ঢাকা থেকে লোকজন এসে ইলিশের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তখন প্রায় দুপুর ১ টা বাজে। ক্ষুধায় পেটের মধ্যে ইদুর দৌড়াচ্ছিল। এক রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আস্ত ইলিশ দিয়ে ভাত দিতে বললাম। পরে আমাদের সামনেই মাছ ভেজে তেল সহ দিল। সাথে ইলিশের ভর্তা নিয়ে মজা করে ভাত খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষে আবার হতাশ মনে চাদপুর ঘাটে ফিরে এলাম । যেহেতু চাদপুর এসেছি মাছ কিছু হলেও নিতে হবে। বাজারে আবার ঢুকে সিরিয়াস মুডে দাম জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম। পুরো বাজার ঘুরে মনের মত দামের ভালো মাছ পেলাম না। তারপর এর মধ্যেই মোটামুটি ভালো লাগা কিছু মাছ দাম করে ফাইনাল করলাম। এখন এই মাছ নিব কিভাবে বরফ ছাড়া আর বরফ পেলেও মাছ সংরক্ষণ করব কিভাবে। । ৬ টা মাছ ১০০০ টাকা দিয়ে কিনে বাহিরে চলে এলাম। বাহিরে এসে ৩০০ টাকা দিয়ে কক শিট কিনে তার মধ্যে বরফ দিয়ে ভালো করে সিল করে নিলাম।
এবার যাওয়ার পালা। যাওয়ার আগে একবার ইলিশ মাছের ডিম কিনার শখ জেগেছে। দাম জিজ্ঞেস করায় বলল কেজি ৩৫০০ টাকা। দাম আমার কাছে বেশি মনে হওয়ায় না কিনে সোজা চাদপুর লঞ্চ ঘাটে চলে গেলাম। সেখানে কিছু লোককে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কক শিটের জন্য ১০০ টাকা চাদা দিয়ে লঞ্চে উঠলাম। আবার তিন ঘণ্টা ৩০ মিনিট ভ্রমণ শেষে সদরঘাট লঞ্চ ঘাটে এসে পৌছালাম। আসার সময় অবশ্য রাতের নদীর দৃশ্য দেখে খুব মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ঘাটে এসে যখন কুলিরা আবার কক শিটের চাদা চাচ্ছিল তখন মেজাজ হারিয়ে ওদের সাথে চিৎকার করে কথা বলে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
আশা করি আমার পোস্ট আপনাদের ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
নৌপথে ভ্রমণের শেষ পর্ব টা আজকে আপনি আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আর এই দেখে অনেক ভালো লাগলো। যেখানে খাওয়া দাওয়ার মুহূর্ত দেওয়ার মুহূর্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আর বাংলাদেশের বাজারের কথা কি বলবেন ভাই কখন কোন জিনিসের দাম হঠাৎ বেড়ে যায় কেউ জানে না। পুনরায় রেস্টুরেন্টের দিকে ফিরে এসে ইলিশ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যাইহোক ভালো লাগলো সমস্ত বিষয়গুলো জানতে পেরে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ভাইয়া অনেক দিন পর আপনার পোস্ট দেখলাম।আগের পর্ব যদিও পড়া হয়নি।তবে আজ নৌপথ ভ্রমনের শেষ পর্ব পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছে। আসলে ইলিশ মাছ দেখে মনটা ভরে গেলেও দামে একদম পছন্দ হয়না।ইলিশ মাছের ডিমের ও অনেক দাম।কোনটা নিবেন, যা ধরবেন তাই ই দাম।আপনি ৬ টা মাছ ১০০০ টাকা দিয়ে নিলেন। আসলে নদীর তাজা মাছ খেতে দারুন মজার।আপনার অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit