আজ ২১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছি। আমার অফিস ছুটি হয়েছে ২০ তারিখ। ঢাকায় কিছু কাজ বাকি থাকায় এবং রাস্তায় জ্যাম এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঈদের আগের দিন মানে ২১ তারিখ বিকেলে রওনা দিব। জ্যাম না থাকলে ঢাকা থেকে আমার বাড়ি পৌঁছাতে ১.৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যাই হোক রীতিমত ৩ টা বেজে ১৫ মিনিটে গাড়ি ছেড়েছে। গুগল ম্যাপ এ দেখলাম রাস্তা একদম ফাঁকা এবং আম্মাকে বলেই দিয়েছি বাড়ি এসে ইফতার খাব একসাথে। আমার গাড়ি যেই সায়েদাবাদ ক্রস করেছে শুরু হল জ্যাম। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়ত ক্রসিং এবং বাসস্ট্যান্ড এই জন্য জ্যাম যেহেতু গুগল ম্যাপে দেখেছি রাস্তা ফাঁকা। প্রায় ২০ মিনিট পার হয়ে গেল দেখি গাড়ি এক সুতাও নড়েনি। ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করায় সেও বলতে পারে না। ধৈর্য ধরে বসে রইলাম হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্যাম ছুটে যাবে । এভাবে প্রায় এক ঘন্টা কেটে গেল কিন্তু গাড়ি হয়ত নড়েছে এক গজ কি দুই গজ। এদিকে আমার মেয়ে অধৈর্য হয়ে গিয়েছে। কোন রকমে তাকে মোবাইল এ কার্টুন, জ্যুস এগুলো দিয়ে থামিয়েছি যেটা আমি সচরাচর করিনা । আশেপাশের বাসে বসে থাকা যাত্রীদের দেখে আরো খারাপ লাগছিল বিশেষ করে বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে। সবাই ঘেমে একদম অবস্থা খারাপ। কষ্ট বেশি হয়েছে সবাই রোজা রাখার কারণে।
আমার একটু তন্দ্রা চলে এসেছিল । উঠে দেখি বাচ্চা এবং ওয়াইফ দুজনেই ঘুমিয়ে আছে । হঠাৎ মনে হল জ্যামে না ছিলাম। রিস্ট ওয়াচে তাকিয়ে দেখি ৫:৩০ বাজে। ঘুমের ঘোরে থাকায় প্রথমে বুঝতে পারিনি কতদূর এসেছি। বাহিরে তাকিয়ে দেখি জনপদের মোড় এসেছি। আপনারা যারা সায়েদাবাদ ও জনপদের মোড় চিনেন তারা প্রথমেই বুঝতে পেরেছেন কতদূর এসেছি। একদম বেশিও যদি ধরি ১ কিলোমিটার হবে। ভাগ্যিস ততক্ষণে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়েছে। ঝড় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এসির বাতাসও গরম মনে হচ্ছিল । আমার মেয়ে খুব স্বস্তিতে ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু আমার খুব রাগ হল এই ভেবে কি অবস্থা আমাদের দেশের রাস্তা ঘাটের। যেখানে পুরো রাস্তা ফাঁকা দেখাচ্ছে ম্যাপে সেখানে এখানে ১ কিলোমিটার যেতে ২ ঘণ্টা লেগে যাবে কেন?
ঘড়িতে যখন ৬ টা বাজে তখন যাত্রাবাড়ী মোড়ে এসেছি। ততক্ষণে কিছুই মাথায় ঢুকছিল না কিসের এই জ্যাম? আমাদের গাড়ির ড্রাইভার দেখিয়ে বলল স্যার দেখেন কি কারণে জ্যাম। আমি তাকিয়ে যা দেখেছি তাতে খুব বেশি যে অবাক হয়েছি সেটা না কারণ যা দেখেছি সেটা হর হামেশাই হচ্ছে রাস্তায়। দেখি একজন নবাব তার গ্রিন কালারের লেজার লাইট দিয়ে একটি খাবার ভিতর থেকে লাইট দিচ্ছে বিভিন্ন গাড়ির ড্রাইভারদের সচেতন করার জন্য। আমি চিন্তা করলাম অন্য দিন এখানে কমপক্ষে ৬-৭ জন নবাব থাকেন আজ একজন দেখছি বাকিরা কোথায়? ড্রাইভার তখনই আমাকে দেখাল আর বলল স্যার তারা ত অনেক ব্যস্ত। দেখি ২ জন গাড়ি থামিয়ে সাইড করছে এত ভিড়ের মধ্যেও, আর ২ জন নবাব ড্রাইভারদের সাইড এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মানে কোর্ট বসিয়ে দিয়েছে। ভাব এমন যেন কোর্টের কাজ এখানেই ক্লোজ করে দিবে। আমি ড্রাইভার কে বললাম রাস্তায় ই যদি সব ঠিক হয়ে যায় তাহলে কোর্ট কাচারীর কিসের দরকার। একবার মনে হল গিয়ে তাদের সাথে একটু কথা বলে আসি , নিজের মনের দুই ঘণ্টা একই জায়গায় বসে থাকার অনুভূতি গুলো শেয়ার করে আসি। হয়ত যেতাম যদি নিজের গায়ে জোর থাকত কিন্তু আমি খুব দূর্বল তাই আর সেদিকে যাইনি। জ্যাম লাগার আরো একটি বেপার হচ্ছে দক্ষিণ বঙ্গের গাড়ি আর চট্টগ্রাম রুটের গাড়ি যাত্রাবাড়ীর একই চৌরাস্তা দিয়ে ক্রস করে।
বিশ্বাস করুন যেই যাত্রাবাড়ী পার হলাম রাস্তা একদম ফাঁকা। আমাদের গাড়ি সেই স্পিডে টানছিল যেন ভাল কোথাও বসে ইফতার করা যায়। আমরা যখন কাঁচপুর ব্রিজ পার হচ্ছিলাম তখন আজান দিয়েছে এবং ইফতারির সময় হয়েছে। কাঁচপুর পার হয়েই একটি টং দোকানে থামল গাড়ি। যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পার হতে আমাদের প্রায় ৮ মিনিট সময় লেগেছে যেখানে ১ কিলোমিটার পার হতে সময় লেগেছে ২ ঘণ্টা। ইফতার কিনে গাড়িতে বসে খেয়ে নিলাম কিন্তু খারাপ লাগছিল আমার সাথে ইফতার করতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর আম্মা ফোন দিয়ে বলল তোমাদের সাথে ইফতার করার জন্য বসে ছিলাম কোথায় আছ তোমরা? আম্মাকে বললাম আমরা জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম তাই রাস্তায় ইফতারি করে নিয়েছি।
কাঁচপুর থেকে আমার বাড়ি পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট । বাড়ি এসে খুব টায়ার্ড লাগছিল কিন্তু স্বস্তি পাওয়া গিয়েছে যে আমি এখন নিজের গ্রামের বাড়ি আছি।
আমার পোস্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সিস্টেমের অব্যবস্থাপনার জন্য মানুষকে যে পরিমাণ ভোগান্তির মধ্যে পরতে হয় সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করা। ধন্যবাদ সবাইকে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
১ কিলোমিটার যেতে ২ ঘণ্টা লেগে যায় এটা ভীষণ দুঃখজনক। আমাদের দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা এবং যাত্রীদের ভোগান্তি দেখলে সত্যি খারাপ লাগে। কারো মাঝে কোনো সচেতনতা নেই বলেই এই সমস্যা গুলো বেশি হচ্ছে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে ভাইয়া জ্যামযট এটা আবার নতুন কি।আমাদের ঢাকার শহর অনেক ভালো শুধু জ্যামযট না থাকলে। আর আপনার আম্মার সাথে ইফতার করতে পারেননি, এদিকে খারাপ লাগা স্বাভাবিক। যাইহোক না পৌঁছানো পর্যন্ত আর কিছু বলা যায় না। আসলে সবাই সচেতন থাকলে এ ধরনের সমস্যা আর হতো না, ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আমার কাছে ট্র্যাফিক জ্যাম আটকে থাকা সবচেয়ে বিরক্তিকর লাগে। কিন্তু শত ভোগান্তির পরেও বাসায় তো ঈদ করতে যেতেই হবে। প্রিয় প্রিয় মানুষগুলোর সাথে ঈদ করতে যাওয়ার জন্য এই কষ্টটা আমরা সবাই সেক্রিফাইস করি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
ছোট বাচ্চাদেরকে নিয়ে কোথায় গেলে জ্যামে পড়লে অনেক যন্ত্রণার বেশি ডিস্টার্ব করে বাচ্চারা অনেক বিরক্তিকর সময় চলে যায়। অবশেষে বৃষ্টি হওয়ার পরে একটু স্বস্তি পেল মেয়েটা খুব ভালো লাগলো। শেষমেশ অনেক কষ্টের বিনিময়ে বাড়ি পৌঁছালেন ঈদ উদযাপন করলেন বেশ ভালো লেগেছে মুহূর্তটি।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জ্যাম এর কারণে কোথাও যাওয়াই যায়না। আর রোজার সময় হলে তো অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে যায়। আমার তো এই রোজার সময় কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না বিশেষ করে গাড়িতে করে। হঠাৎ করে জ্যাম কোথায় লেগে যায় ওটাও বলা যায় না। আর বাচ্চারা যদি এরকম জ্যামের ভেতরে গাড়িতে বসে থাকে তাহলে একেবারে ঘামিয়ে অবস্থা শেষ হওয়ারই কথা। আপনার পাশে বসে থাকা বাচ্চাগুলোকে দেখে আপনার কাছে ভীষণ খারাপ লাগছিল দেখে বুঝতে পারছি। যাইহোক সম্পূর্ণটা খুবই সুন্দরভাবে লিখেছেন ভালো লাগলো এমনিতে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
জ্যামের কারণে এভাবে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আপনি প্রথমে ম্যাপ এর মধ্যে দেখেছিলেন তাই কোন জ্যাম নেই। তাই আপনি আপনার আম্মুকে ফোন করে বলে দিয়েছিলেন ইফতারটা আপনি বাড়িতে এসে একসাথে করবেন পরিবারের সকলের সাথে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস এরপরে জ্যাম লেগে গিয়েছিল একেবারে জ্যাম ভাঙ্গার নামই ছিল না। তাইতো ইফতারের অনেক সময় পরে আপনি বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছিলেন। খুব সুন্দর ভাবে লিখেছেন আজকের পোস্টটা।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
আসলে রাস্তায় বের হয়ে অব্যবস্থাপনা দেখলে মাঝে মধ্যে মাথায় রক্ত উঠে যায়। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে সবসময় ঝামেলা লেগেই থাকে। ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে গেলে একটু স্বস্তি লাগে। রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম কম থাকলে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে তেমন সময় লাগে না। আসলে এই অব্যবস্থাপনার কবে যে অবসান ঘটবে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit