শৈশবে শীতকালে ডিসেম্বর মাসে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর সেই সময় আর আসে না।

in hive-129948 •  13 days ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।

শৈশবের স্মৃতিগুলো যেন জীবনের এক অমূল্য ধন। যত দিন যায়, ততই সেই সময়গুলো স্বপ্নের মতো মনে হয়। বিশেষ করে শীতকালের ডিসেম্বর মাস, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পরের দিনগুলো—এই সময়গুলো যেন মনের কোণে স্থায়ী জায়গা করে নেয়।

1000042375.jpg

সোর্স

ডিসেম্বর মাস ছিল একদিকে উত্তেজনা, অন্যদিকে শান্তির বার্তা নিয়ে আসা এক মাস। বার্ষিক পরীক্ষা তখন এক বিশাল ব্যাপার। বছরের পুরোটা সময় যেন এই পরীক্ষার দিকে তাকিয়ে কাটত। পরীক্ষার আগের প্রস্তুতি, রাত জেগে পড়াশোনা, বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা—সব মিলে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হতো। কিন্তু পরীক্ষার শেষ দিনটি যেন মুক্তির ঘোষণা। সেদিনটা একেবারেই অন্যরকম।

পরীক্ষার শেষ ঘণ্টা বাজতেই যেন চারপাশে আনন্দের ঢেউ বয়ে যেত। আমরা বন্ধুরা একসঙ্গে পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে দৌড়ে চলে যেতাম স্কুলের মাঠে। মাঠটা যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। শীতের মিষ্টি রোদ আর ঠাণ্ডা হাওয়ার মাঝে আমরা খেলতে শুরু করতাম। ফুটবল, দড়ি লাফ, আর কখনো কখনো ক্রিকেট। ছোট ছোট দল করে খেলতে খেলতে সময় কেটে যেত। সেই মুহূর্তগুলো আজও যেন জীবনের সেরা সময়গুলোর একটি।

ডিসেম্বরের শীতের সকালে গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু আর কুয়াশায় ঢাকা মাঠ—এসব যেন শৈশবের সঙ্গে মিশে থাকা এক আবেগ। সকালে ঘুম থেকে উঠে মা গরম গরম পিঠা বানাতেন। সেই খেজুরের রসের পিঠা আর দুধে ভেজানো চিতই পিঠার স্বাদ আজও ভোলা যায় না। বাড়ির উঠানে বসে আমরা সবাই মিলে পিঠা খেতাম। একসঙ্গে খাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ, তা এখনকার জীবনে যেন অনেকটাই হারিয়ে গেছে।

বার্ষিক পরীক্ষার পর ডিসেম্বরের দিনগুলো মানেই ছিল স্কুল বন্ধ। সেই সময়টুকু পুরোপুরি আমাদের। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, গ্রামের মেঠোপথে ঘোরা, আর রাতে দাদার কাছে গল্প শোনা ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। দাদার গল্পে থাকত রাজা-রানী, ভূত-প্রেত আর নানা রকম কাহিনি। গল্প শুনতে শুনতেই কখন ঘুমিয়ে পড়তাম, তা টের পেতাম না।

ডিসেম্বর মানেই ছিল কাঁথা মুড়ি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কমিক্স পড়া। সেসময় টিনটিন, চাচা চৌধুরী, কিংবা হুমায়ূন আহমেদের কিশোর উপন্যাস পড়তে যে মজা লাগত, তা আর কিছুতেই পাওয়া যায় না। সেই সঙ্গে শীতকালের সন্ধ্যায় হ্যারিকেনের আলোয় বসে পড়াশোনা করার অভিজ্ঞতাও ছিল ভিন্নরকম। বিদ্যুৎ ছিল না বলে সন্ধ্যার পর বাড়ির উঠানে সবাই মিলে গল্প করতাম। সেই আড্ডার মজা ছিল অদ্বিতীয়।

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ মানেই ছিল পিকনিক বা বনভোজনের পরিকল্পনা। পুরো স্কুলের বন্ধুরা মিলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, পাতা কুড়ানো আর বনের ভেতর ছুটোছুটি—এসব মুহূর্ত আজও মনের ভেতর উজ্জ্বল। পিকনিক মানেই ছিল নিজের পছন্দের খাবার নিয়ে যাওয়া, বনফায়ার আর গান। শীতের রাতে তারার নিচে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গাওয়া গানগুলো আজও কানে বাজে।

তখনকার শীতের হাওয়ার মাঝে এক ধরনের সতেজতা ছিল, যা এখনকার ব্যস্ত জীবনে অনুভব করা কঠিন। শীতের রাতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আকাশের তারা দেখা, হাত-পা গরম করার জন্য আগুন পোহানো, আর সকালের শিশিরে ভেজা পায়ে দৌড়ানো—এসব স্মৃতি যেন হৃদয়ে একধরনের প্রশান্তি এনে দেয়।

আজকের ব্যস্ত জীবনে সেই শৈশবের ডিসেম্বর আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু স্মৃতিগুলো যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়, কতটা সহজ আর নির্ভেজাল ছিল সেই দিনগুলো। তখন জীবনের ছোট ছোট বিষয়গুলোতেই আনন্দ খুঁজে পেতাম।

শৈশবের সেই ডিসেম্বর মানে ছিল প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন। পুকুরপাড়ে বসে শীতের দুপুরে সাইকেল চালানো কিংবা বাশঝাড়ের নিচে লুকোচুরি খেলা ছিল আমাদের দিনের কাজ। সন্ধ্যায় চাচাদের সঙ্গে বসে চা খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা।

আজ যখন ডিসেম্বর আসে, তখন মনে হয়, সেই দিনগুলো আর কখনো ফিরে আসবে না। শৈশবের সেই মুহূর্তগুলো হয়তো কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না, কিন্তু সেগুলো আজও জীবনের এক অমূল্য সম্পদ হয়ে রয়ে গেছে। শৈশবের শীতকালের সেই সময়গুলো আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে আছে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

1000042381.jpg

আসলেই ভাইয়া ডিসেম্বর মাস আসবে যাবে কিন্তু সেই ডিসেম্বর মাস আর কখনোই আসবেনা। সেই স্মৃতিগুলো লক্ষ টাকার দিয়েও কেনা সম্ভব না। এরকমভাবে বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়া আর কখনো হবে না। ধন্যবাদ পুরনো স্মৃতিগুলোকে আবার মনে করে দেওয়ার জন্য।

দারুন সুন্দর একটি স্মৃতিচারণার পোস্ট করেছেন। স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরের মুহূর্তগুলো সত্যিই যেন ভুলবার নয়। ভীষণ ভালোলাগার সেই মুহূর্তগুলো জীবনে আর ফিরে আসবে না। চাচা চৌধুরী, টিনটিন এসব আমাদের শৈশবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আজকের শিশুরা শুধু ডিজিটালি সময় কাটায়। কিন্তু সেই সুন্দর সময় গুলো আর কখনো ফিরে আসবে না। আপনার পোস্টে নিজেরও স্মৃতিচারণা হয়ে গেল।

ভাই শুধু খেলাধুলা নয়, সেই সময়টা যেন পুরোটাই আনন্দে ভরপুর ছিল তাছাড়া পরীক্ষায় শেষে আর কোন লেখাপড়ার টেনশন থাকত না। সবাই যার যার মত উন্মুক্ত হয়ে যেত হ্যাঁ শীতকালের কুয়াশা ভেজা মাঠে ফুটবল খেলা ক্রিকেট খেলা সবকিছুই যেন পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে যেত। তবে আমার কাছে কিন্তু যেদিন পরীক্ষা শেষ হতো সেদিনকার মুহূর্তটা এখনো সেই আবেগ বহন করে।