শৈশবের রঙিন স্মৃতি:'নানার বাড়িতে পুকুরে মাছ ধরা দেখা'

in hive-129948 •  25 days ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।


শৈশবের স্মৃতিগুলো সবসময়ই যেন রঙিন থাকে। বিশেষ করে যখন সেই স্মৃতি জড়িয়ে থাকে নানার বাড়ির সঙ্গে, তখন তা যেন আরও বিশেষ হয়ে ওঠে। আমার শৈশবের অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত কাটিয়েছি নানার বাড়িতে, আর তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর একটি হলো পুকুরপাড়ে বসে মাছ ধরা দেখা। আমি নিজে মাছ ধরতে পারতাম না, তবে মাছ ধরা দেখতে আমার খুবই ভালো লাগত।

1000034939.jpg

সোর্স

প্রতিবছর স্কুল ছুটি হলেই আমরা নানার বাড়ি যেতাম। নানার বাড়ি ছিল গ্রামে, যেখানে ছিল এক বিশাল পুকুর। সেই পুকুরের চারপাশে নারকেল, তাল, আর সুপারি গাছের সারি। পুকুরের একপাশে বড় আমগাছের ছায়া, আর অন্য পাশে বাঁশঝাড়। পুকুরের শান্ত পানিতে প্রতিফলিত হতো সেই গাছপালার সবুজ ছায়া। পুকুরটি যেন গ্রামের প্রাণ। গরমের দিনে পুকুরের ঠান্ডা জলে গোসল করা গ্রামের মানুষের প্রিয় কাজ। কিন্তু আমার সবচেয়ে পছন্দ ছিল পুকুরে মাছ ধরা দেখার সেই মুহূর্তগুলো।আমার নানা একজন খুব দক্ষ মৎস্যজীবী ছিলেন। গ্রামের মানুষদের কাছে তাঁর মাছ ধরার খ্যাতি ছিল বেশ। পুকুরে যখন মাছ ধরার আয়োজন হতো, তখন গ্রামের অনেক মানুষই এসে জড়ো হতো। মাছ ধরা ছিল গ্রামের মানুষের জন্য এক ধরনের উৎসব। নানার বাড়িতে গেলে এই উৎসবের মাঝেই পড়তাম আমি। মাছ ধরার দিনগুলোতে আমি একদম সকাল সকাল পুকুরপাড়ে চলে যেতাম। পুকুরের চারপাশে তখন এক উৎসবের আমেজ তৈরি হতো। নানা আর তার সহকারীরা মাছ ধরার জাল নিয়ে প্রস্তুত হতেন, আর আমি দূর থেকে সেসব দেখতাম।

মাছ ধরার প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ মজার। প্রথমে বড় জালটি পুকুরে ফেলা হতো। নানার পুকুরে অনেক বড় বড় রুই, কাতলা আর মৃগেল মাছ ছিল। জাল ফেলার পরপরই শুরু হতো উত্তেজনা। জালের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নানা আর তাঁর দল একসঙ্গে টানতেন। আমি পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আগ্রহ নিয়ে দেখতাম কিভাবে জালের ভেতর মাছগুলো ধীরে ধীরে ধরা পড়ে। জাল টানা শুরু হলে পুকুরের পানিতে মাছগুলোর ছটফটানি দেখতে দারুণ লাগত। পানির ওপর মাছের লাফালাফি দেখে মনে হতো, যেন তারা পালানোর শেষ চেষ্টা করছে।মাছ ধরা শেষ হলে বড় বড় মাছগুলো জালের ফাঁক দিয়ে মাথা উঁচিয়ে উঠত। তখন পুরো পুকুরপাড়ে হৈচৈ পড়ে যেত। নানা আর তার সহকারীরা মাছগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করতেন, আর আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য দেখতাম। আমার ছোট্ট মনে এই মাছ ধরা ছিল এক ধরনের জাদুর মতো—প্রকৃতির সঙ্গে এক অদ্ভুত সংযোগ। মাছের চমৎকার দেহ, তাদের সোনালী-রুপালী ঝলমলে আঁশ, আর সেই পুকুরের স্বচ্ছ পানির ভেতর তাদের দৌড়ঝাঁপ দেখে আমি বারবার বিস্মিত হতাম।

আমি মাছ ধরতে পারতাম না। তবে এটা নিয়ে কোনো আফসোস ছিল না। মাছ ধরা দেখাতেই আমার আনন্দ ছিল। আমি মনে মনে ভাবতাম, মাছগুলো কীভাবে এত দ্রুত পুকুরে লুকিয়ে থাকে, আর কিভাবে জালে আটকা পড়ার পর এত দ্রুত পালাতে চেষ্টা করে। মাছ ধরার পুরো প্রক্রিয়াটি যেন এক ধরনের নাটকের মতো ছিল আমার কাছে। আর আমি সেই নাটকের নীরব দর্শক।মাছ ধরা শেষে সেই মাছগুলোকে ঝুড়িতে ভরা হতো। নানা তখন আমাকে ডেকে আনতেন এবং বলতেন, "এই মাছগুলো এবার তোমার নানি রান্না করবে।" আমি তখন আনন্দে মেতে উঠতাম। মাছ ধরা দেখার আনন্দের সঙ্গে যুক্ত হতো নানির হাতে তৈরি সুস্বাদু মাছের তরকারির স্বাদ। সেই মাছের তরকারি ছিল স্বাদে অতুলনীয়। মাছগুলোকে রান্না করতে দাদী কাঁচা মসলা ব্যবহার করতেন, আর সেই রান্নার গন্ধে পুরো বাড়ি ম-ম করত।এখনও মনে পড়ে, পুকুরপাড়ে বসে থেকে মাছ ধরা দেখার সেই নির্জন শান্ত মুহূর্তগুলো। যখন চারপাশে গাছের ছায়া, পাখির ডাক, আর পানিতে মাছের ছটফটানি মিলিয়ে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি হতো। সেই পুকুরের পাড়ে বসে থেকে আমি প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৌন্দর্য উপলব্ধি করতাম। সেই শান্ত পরিবেশ আর মাছ ধরা দেখার প্রতিটি মুহূর্ত আমার শৈশবকে রঙিন করে তুলেছিল।

আজও যখন গ্রামের কথা মনে পড়ে, তখন সেই পুকুর, সেই মাছ ধরা আর নানার সঙ্গে কাটানো সেই মুহূর্তগুলোই বেশি করে মনে আসে। যদিও আমি কখনো মাছ ধরার দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি, তবুও মাছ ধরা দেখার যে আনন্দ, সেটাই ছিল আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। সেই শৈশবের দিনগুলো আমার মনে আজও ভেসে ওঠে, আর সেই স্মৃতিগুলোই আমাকে জীবনের ছোটখাটো আনন্দগুলোর মূল্য বুঝতে শেখায়।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

নানার বাড়িতে গিয়ে মাছ ধরা হতো এবং বড় জালে রুই কাতলা সহ বিভিন্ন মাছ উঠতো। আসলে এই মুহূর্তগুলো খুবই আনন্দদায়ক হয়। আমি যখন মাঝেমধ্যে আমাদের পুকুরের মাছ ধরা দেখে খুব ভালো লাগে। কারণ ছোট থেকে বড় হয়েছি নিজের গ্রামের সেখানে এমন মাছ ধরার দৃশ্য দেখি নাই। কিন্তু বিয়ের পর থেকে নিজেদের বাড়িতে এমন পর্যায়ে গুলো দেখে খুব ভালো লাগে এবং এই ভালো লাগাটা আমি বুঝি।

ব্যস্ততার কারণে সেই ছোটবেলার মতো আর নানি বাড়ি যাওয়া হয় না।আর হয়তো কখনো আগের মত করে যাওয়া সম্ভব না।কিন্তু ফেলে আসা সেই স্মৃতিগুলো আজও ধরে আছি এবং থাকবো।যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।