“শৈশবে পেয়ারা চুরি: এক মজার স্মৃতি”

in hive-129948 •  2 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।আমি ঢাকা কলেজে অধ্যায়নরত আছি।

শৈশব মানেই এক রঙিন সময়। সেই সময়ের প্রত্যেকটি মুহূর্ত যেন রূপকথার গল্পের মতো মজার এবং চমকপ্রদ ছিল। আর সেই সময়ের সেরা আনন্দগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পেয়ারা চুরি। আজকে আমি আমার বন্ধু আকাশ, সুমন, জুয়েল এবং শফির সঙ্গে পেয়ারা চুরির সেই মজার ঘটনাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে এসেছি।চলুন তাহলে শুরু করা যাক...

1000026797.webp

সোর্স


আমরা তখন প্রায় আট-দশ বছরের পোলাপান। সবার বাসা কাছাকাছি, তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একসঙ্গে মিশে থাকতাম। প্রতিদিনই আমরা নতুন কোনো মজার পরিকল্পনা করতাম, কিন্তু পেয়ারা চুরির পরিকল্পনা ছিল সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ। আমাদের পাড়ার শেষ মাথায় একটা বিশাল পেয়ারা গাছ ছিল। গাছটা ছিল খানিকটা উঁচু, আর আশেপাশের লোকজন সেটা নিয়ে বেশ যত্নবান ছিল। তবুও, আমাদের চোখ ছিল পেয়ারার দিকে, এবং সেটা কোনোভাবেই হাতছাড়া করা চলবে না।

একদিন দুপুরে, আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম যে আজকেই পেয়ারা চুরি করতে হবে। আকাশ, সুমন, জুয়েল, আর শফি – আমরা সবাই মিলে গাছটার দিকে হাঁটা শুরু করলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমরা এক বিশেষ অভিযানে নামছি। পাড়ার রাস্তা তখন বেশ ফাঁকা ছিল, বড়দেরও কারো চোখে পড়ার ভয় কম। আমরা ধীরে ধীরে গাছের কাছে পৌঁছালাম। পেয়ারা গাছের কাছে এসে দেখি, গাছের পেয়ারা একেবারে পাকতে শুরু করেছে। পেয়ারাগুলো ঝুলছে, দেখে মুখে পানি চলে আসছিল।আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ছিল আকাশ। ও বলল, "আমি গাছে উঠছি। তোমরা নিচে দাঁড়াও, আমি পেয়ারা ফেলব, আর তোমরা ধরো।" আমরা সবাই নিচে দাঁড়িয়ে আকাশকে উৎসাহ দিতে লাগলাম। আকাশ গাছের ডাল ধরে উপরে উঠতে লাগল। গাছে ওঠার জন্য খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি, কিন্তু গাছের শীর্ষে পৌঁছাতে একটু সময় লাগল। আকাশ একের পর এক পেয়ারা ছুঁড়ে ফেলতে লাগল, আর আমরা নিচে দাঁড়িয়ে সেগুলো ধরছিলাম।ঠিক সেই সময় হঠাৎ করেই পাড়ার এক বড় চাচা গাছের দিকে আসতে দেখলাম। আমরা সবাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। শফি ধীরগলায় বলল, "কী করবো এখন? চাচা তো আমাদের দেখে ফেলবেন!" আকাশ তখনও গাছে উঠেই আছে, আর আমরা নিচে দাঁড়িয়ে। মুহূর্তেই এক বিচিত্র চিন্তা মাথায় এল। আমি বললাম, "শান্ত থাকো! শফি, তুমি দেখাও যে আমরা কেবল দাঁড়িয়ে গল্প করছি। চাচা কিছুই বুঝতে পারবেন না।"

চাচা কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, "এই তোমরা এখানে কী করছ?" শফি ধূর্তভাবে বলল, "কিছু না চাচা, আমরা কেবল দাঁড়িয়ে গল্প করছি।" চাচা কিছুক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, "তোমরা যেন গাছে উঠতে যাও না, এই পেয়ারাগুলো অনেক যত্ন করে রাখা হয়েছে।"চাচা চলে যাওয়ার পর আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আকাশ তখন নিচে নেমে এসে পেয়ারাগুলো ভাগ করে দিল। হাসতে হাসতে সবাই মিলে পেয়ারা খেলাম। সেই পেয়ারাগুলো যেন তখন সবচেয়ে সুস্বাদু ফল ছিল আমাদের কাছে। চুরির মজা আর ঝুঁকি সব মিলিয়ে আমাদের শৈশবের সেই দিনগুলো সত্যিই রোমাঞ্চকর ছিল।

পরে বড় হয়ে যখন আমরা সবাই একসঙ্গে বসি, তখন এই পেয়ারা চুরির ঘটনাগুলো স্মৃতিচারণ করে এখনো অনেক হাসাহাসি করি। আকাশ এখনও বলে, "যদি আমি না থাকতাম, তোমরা কেউ গাছে উঠতে পারতে না।" শফি বলে, "আমি না থাকলে, চাচা তোমাদের ধরে ফেলত।" আমরা সবাই একসঙ্গে হেসে উঠি। শৈশবের সেই দিনগুলো যেন প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের জীবনে হাসি এবং আনন্দ নিয়ে আসে।শৈশবের এই পেয়ারা চুরির ঘটনাগুলো আমাদের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করেছে। সেদিনের সেই ছোট ছোট দুষ্টুমি আমাদের একে অপরের সঙ্গে বন্ধনের গভীরতাকে বাড়িয়েছে। এখনও আমরা যখন একসঙ্গে হই, তখন সেই দিনগুলোর কথা মনে করে বলি, "কী সুন্দর দিন ছিল! কী নিঃস্বার্থ, আনন্দে ভরা শৈশব!"

আকাশ, সুমন, জুয়েল আর শফি – আমাদের এই পেয়ারা চুরির ঘটনাগুলো শুধু মজার নয়, সেই সঙ্গে শৈশবের সরলতা এবং বন্ধুত্বের সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। সময় বদলে গেছে, কিন্তু আমাদের সেই বন্ধুত্বের মজার স্মৃতিগুলো আজও একই রকম উজ্জ্বল।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

অতীতের খুব সুন্দর একটি স্মৃতি স্মরণ করে আজকে আপনি আমাদের মাঝে পোস্ট শেয়ার করেছেন। আসলে আমাদের জীবনে কমবেশি এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে যেগুলো ব্যক্ত করলে অনেকের জানার সুযোগ করে দেওয়া যায়। ঠিক তেমনি একটা বিষয় আপনার লাইফের আর জানতে পারলাম।

ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে শৈশবে পেয়ারা চুরি এক মজার স্মৃতিময় গল্প শেয়ার করেছেন। আপনার শেয়ার করা গল্প পড়তে সত্যি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। জীবনে কম বেশি শৈশব জীবনে প্রত্যেকটা মানুষ চুরি করে কিছু না কিছু খেয়েছে আপনিও সেই তালিকায় রয়ে গেলেন। আসলে আমার জীবনেও এমন ঘটনা অনেক রয়েছে।। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

অনেক সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ছোটবেলার এমন মধুর স্মৃতি মানুষের কমবেশি থেকেই থাকে। তবে ছেলেদের গুলো একটু বেশি হয়ে থাকে। যাইহোক আপনার মাধ্যমে কিন্তু আপনার অতীতের ঘটনা জানতে পারলাম।

আসলে ছোটবেলা আমরা ও লিচু পেয়ারা অনেক চুরি করে খেয়েছি। আপনার পেয়ারা চুরি করার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলেই দারুন একটা মুহূর্ত আপনার উপভোগ করেছেন তখন।

পেয়ারা চুরি করে খাওয়ার গল্পটি বেশ ভালো লাগলো।আসলে সব বন্ধুরা এক হলে এরকম দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় চেপে বসে।বেশ ভালো লাগলো পুরা গল্পটি পরে।সত্যি নিঃস্বার্থ, আনন্দে ভরা শৈশব হয় সবার জীবনেই।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।